কীভাবে ইউটিউবে দ্রুত ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম পূর্ণ করবেন?

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আমরা আজকে আলোচনা করব কিভাবে আপনি ইউটিউব চ্যানেলে তাড়াতাড়ি ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম ফিল-আপ করবেন এবং মনিটাইজেশন এনেভল করবেন। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।

আমরা সবাই ইউটিউব এর ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম সম্পর্কে জানি। এই রিকুয়ারমেন্ট ফিল-আপ না হলে চ্যানেলে মনিটাইজেশন আসে না। নতুন ইউটিউবদের কাছে এই নিয়মটি বেশ কষ্টের। অনেকে কিছু দিন চ্যানেল রান করে হতাশ হয়ে বন্ধ করে দেয়। তো আজকের টিউনটি বিশেষ করে নতুন ইউটিউবারের জন্য যারা ইউটিউবের প্রথম মাইলস্টোন ফিল করতে চাচ্ছেন।

আলোচনার প্রথমেই বলতে চাই, ইউটিউবটা মূলত একটি বিজনেস এর মতই। একটি ব্যবসায় দাড় করাতে প্রতিষ্ঠিত হতে যেমন সময় লাগে তেমনি ইউটিউবের চ্যানেলকে লক্ষ্যে নিয়ে যেতেও আপনাকে সময় দিতে হবে পরিশ্রম করতে হবে। চ্যানেল খুলে বসে থাকলে হবে না বা কয়েকদিন পরেই হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।

কেন সব সময় ওয়াচ টাইমকে গুরুত্ব দিতে হয় না

ইউটিউবে চ্যানেল খুলেই আপনি হয়তো ৪০০০ ঘণ্টা ফিল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন! কিন্তু এটা কি আসলেই হওয়া উচিৎ? একদমই না। চ্যানেল খুলার পর আপনাকে কন্টেন্টে গুরুত্ব দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল পাবার মত কাজ করতে হবে। হয়তো আপনি কোন মতে ৪০০০ ঘণ্টা পূর্ণ করে ফেললেন, তারপর কী হবে? যদি কন্টেন্ট ভাল না হয় তাহলে সেটা অডিয়েন্স দেখবে না আপনার ইনকামও আসবে না।

অন্যদিকে আপনি যদি মার্কেট রিসার্চ করে চমৎকার সব কন্টেন্ট দিতে পারেন তাহলে এটি একই সাথে যেমন ওয়াচ ঘণ্টা ফিল আপ করবে তেমনি দিন যত যাবে কন্টেন্ট আরও রিচ পাবে এবং ভাল একটা প্রফিট আসবে।

যেভাবেই হোক আমি ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম চাই

আমার পরামর্শ থাকবে আপনি অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলের জন্য কাজ করুন। তারপরেও এখন আমি কিছু টিপস শেয়ার করতে পারি যেগুলো ফলো করে আপনি চ্যানেলের ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ-টাইম ফিল করতে পারবেন।

২০-৬০ মিনিটের পডকাস্ট তৈরি করুন

আপনি নির্দিষ্ট একটা টপিকের উপর পডকাস্ট তৈরি করতে পারেন। পডকাস্ট স্বাভাবিক ভাবে যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে হয় সেহেতু আপনি এটা থেকে উপকার পাবেন। প্রতি ভিজিটর থেকে আপনি এর মাধ্যমে ভাল ওয়াচ টাইম পেতে পারেন। তাছাড়া পডকাস্টের আরেকটা সুবিধা হল আপনাকে কষ্ট করে ভিডিও এডিট করতে হবে না। রেকর্ড অন করুন এবং পডকাস্ট শেষে End প্রেস করুন আর ভিডিও পাবলিশ করে দিন, ব্যাস কাজ শেষ।

লাইভ স্ট্রিম করুন

লাইভ স্ট্রিমিং এ কোন ধরনের এডিটের প্রয়োজন হয় না একই সাথে এটি আপনাকে চমৎকার ওয়াচ টাইম দিতে পারে। ৪ ঘণ্টার একটা স্ট্রিম যদি ৫০ জন দেখে তাহলে কিন্তু আপনি ২০০ ওয়াচ টাইম পেয়ে যাচ্ছেন।

সাধারণ ভিডিও এর ডিউরেশন বৃদ্ধি করুন

দীর্ঘ ভিডিও আপনার চ্যানেলের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে। ইউটিউব স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী শর্ট ভিডিও শেয়ার কম করাই ভাল, আপনার ভিডিও দশ মিনিট বা তার বেশি হওয়া ভাল। তাছাড়া আপনি যদি ভিডিও এর ডিউরেশন বেশি রাখেন সেটা ওয়াচ টাইম ফুল ফিল করতেও কিন্তু সাহায্য করবে।

উপরের এই মেথড গুলো দিয়ে আপনি ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম পেয়ে যেতে পারেন তবে আমি বলব আপনার লক্ষ্য আরেকটু বড় করুন। ওয়াচ টাইমের পাশাপাশি কিভাবে ইনকামও করা যায় সেদিকে নজর দিন।

৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইমের পাশাপাশি আরও বাড়তি কিছু

যেহেতু এই পর্যায়ে আমরা শুধু মাত্র ওয়াচ টাইম কে গুরুত্ব দিচ্ছি না সেহেতু এখন দেখব কিভাবে ভাল আর্নিং করা যায়।

প্রতিটা নতুন ইউটিউবারদের জন্যই শুরুটা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কারণ প্রায় প্রতিটি টপিকের উপরই প্রতিষ্ঠিত ইউটিউবার রয়েছে। যেহেতু তারা প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় সেহেতু ইউটিউব কেন আপনার চ্যানেল এর ভিডিও রিকোমেন্ড করবে? হয়তো আপনি কোন ধরনের স্ট্রেটেজি ছাড়া একটি ভিডিও আপলোড করে দিলে কিছু ভিউ চলে আসতে পারে তবে লং টার্মে এটা আপনাকে খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারবে না।

তো আপনাকে সফল হতে হলে কী করতে হবে? আপনাকে সফল হতে হলে নির্দিষ্ট Niche এ আপনাকে এক্সপার্ট হতে হবে। ট্রেন্ড গুলো খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আপনাকে ট্রেন্ডিং টপিকের উপর ভিডিও বানাতে হবে অন্য যেকারো আগে। এতে করে অন্যের ভিডিও এর আগে আপনার ভিডিও রিকোমেন্ড করা হবে কারণ আপনি ট্রেন্ডিং টপিক নিয়ে নিয়মিত লিখছেন। চলুন দুটি উদাহরণ দেয়া যাক,

আপনি একজন গেম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর: ধরে নিলাম আপনি একজন গেম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। হটাৎ করে গুজব শুনা যাচ্ছে Call of Duty তে নতুন একটি আইটেম যুক্ত হতে যাচ্ছে। এখন আপনার কাজ হবে, এই বিষয়ে রিসার্চ করা, বিস্তারিত তথ্য খুঁজে বের করা এবং এই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে সবার আগেই পাবলিশ করা।

আপনি একজন বিনোদন চ্যানেলের ক্রিয়েটর: ইন্টারনেটে শুনা যাচ্ছে জনপ্রিয় পরিচালকের একটি সিনেমা আসতে যাচ্ছে এ বছর। আপনার কাজ হবে এ বিস্তারিত খোঁজ নেয়া এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েট করা।

এর বড় সুবিধা হল, মানুষ জন বিষয় গুলো সার্চ করবে কিন্তু অন্য কোন চ্যানেলে এই বিষয় গুলো না থাকাই ইউটিউব আপনার চ্যানেল এর ভিডিও কেই রিকোমেন্ড করবে। ফলাফল আপনি ভাল একটা রিচ পাবেন। ইউটিউব এর এলগোরিদম গুলো আপনাকে সাজেস্ট করবে। কোন অডিয়েন্স আপনার একটা ভিডিও দেখা মানে, তার কাছে আপনার অন্য আরেকটি ভিডিও এর সাজেশন যাবেই। একই সাথে ইউটিউব তার প্লাটফর্মকে আপডেট রাখতে আপনার ভিডিও ইউজারদের নোটিফিকেশনেও পাঠাতে পারে।

বড় বড় চ্যানেল গুলো অবশ্যই ওই টপিকে ভিডিও তৈরি করবে এবং আপনার ভিডিও নিচের দিকে যেতেই পারে, তবে ততক্ষণে আপনি কিন্তু অনেক গুলো ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার পেয়ে যাবেন।

ফলাফলস্বরূপ পরবর্তীতে আপনি চ্যানেলে যখন নতুন ভিডিও আপলোড দেবেন, অডিয়েন্সরা আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব না করলেও নতুন ভিডিও এর সাজেশন পাবে। এজন্য আপনার পরবর্তী ভিডিও এর টাইটেল এবং থাম্বনেইল অবশ্যই আকর্ষণীয় রাখার চেষ্টা করুন।

এখন আপনি বলতে পারেন ভিডিও টপিক আপনি কোথায় পাবেন? আপনি যে Niche নিয়ে কাজ করবেন সেই Niche রিলেটেড ফেসবুক, Reddit, Twitter একাউন্টে নিয়মিত একটিভ থাকুন৷ কোম্পানি বা ব্যক্তি অফিসিয়াল কোন ঘোষণা দিলে এটা প্রথমে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতেই দেয়। ওই সব জায়গা থেকে ইনফরমেশন নিয়েই মূলত ইউটিউবাররা ভিডিও বানায়।

সব সময় এমন টপিক বা Niche নিয়ে কাজ করুন যেখানে আপনার আগ্রহ রয়েছে। এটা আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদি সফলতা দেবে। একই সাথে আগ্রহের বিষয় গুলো সম্পর্কে এমনিতেই আমরা বেশি জানি, যা একটি চমৎকার কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করবে।

এতক্ষণ আমরা টপিক নিয়ে কথা বললাম। এখন চলুন আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে জানি,

আপনাকে ট্রেন্ডিং টপিকের উপর কন্টেন্ট ইনফরমেশন রেডি করে কিভাবে দ্রুত তা পাবলিশ করতে হয় সেটা জানতে হবে। দ্রুত ভিডিও এডিটও শিখতে হবে। এই বিষয়ে আপনি এগিয়ে থাকতে পারেন কন্টেন্ট নির্বাচনে। ধরুন আপনার কন্টেন্টে যদি এনিমেশন যুক্ত করা লাগে বা টপিকটাই এমন হয় তাহলে কিন্তু আপনাকে আরও ক্রিয়েটিভ এবং দক্ষ হতে হবে।

৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম ফিলআপ করার সারাংশ

চলুন জেনে নেয়া যাক আমরা এতক্ষণ কী কী জানলাম বা আলোচনা করলাম,

  • আপনাকে আপনার Niche সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে হবে, অনলাইনে এই সম্পর্কে নিয়মিত পড়াশুনা করতে হবে
  • ট্রেন্ডিং টপিক দেখার সাথে সাথে কন্টেন্ট তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে
  • দ্রুত এডিট করা এবং পাবলিশ করা জানতে হবে
  • কিছু ভিউ এবং সাবস্ক্রাইব হলে, অবশ্যই পরবর্তী ভিডিও সময় নিয়ে গবেষণা করে তৈরি করতে হবে। টাইটেল থাম্বনেইলে বেশি মনোযোগে হতে হবে।
  • প্রতিবার একই প্রসেস রিপিট করতে হবে

শেষ কথাঃ

উপরের স্ট্রেটেজি গুলো সব সময় কাজ করবে এমনটি নয়। কিন্তু যখন কাজ করবে তখন আপনাকে অবাক করে দেয়ার মত ফলাফল দেবে।

ট্রেন্ডিং টপিক নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আপনি রেগুলার কন্টেন্ট গুলোর প্রতি মনোযোগী হোন। ভাল করে এডিট শিখুন, কিভাবে চমৎকার থাম্বনেইল তৈরি করা যায় জানুন।

আশা করছি টিউনটি আপনাদের ভাল লেগেছে, তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 568 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 112 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস