
আজকের পৃথিবীটা আগের মতো নেই। আগে যেখানে একটি কাজ শেষ করতে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যেত, এখন মাত্র কয়েক মিনিটেই তা শেষ করা সম্ভব হচ্ছে। আর এই পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে নানা ধরনের ডিজিটাল টুল। আমরা যাকে সহজ ভাষায় বলি – “অল টুল”।
ভাবুন তো, একটি সময়ে টিউনার বা ব্যানার বানাতে হলে ডিজাইনার খুঁজতে হতো, টাকা খরচ করতে হতো, দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। অথচ আজকে আপনি চাইলে নিজের মোবাইলেই Canva ব্যবহার করে মিনিটের মধ্যেই দারুণ একটি ডিজাইন বানিয়ে ফেলতে পারেন।
একইভাবে লেখালেখি করতে গেলে আগে বড় বড় বই পড়তে হতো, ডিকশনারি দেখতে হতো। কিন্তু এখন আছে ChatGPT বা Grammarly-এর মতো টুল, যা আপনার লেখাকে শুধু সুন্দরই করছে না, বরং পেশাদার মানেও তৈরি করছে।
অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনা থেকে শুরু করে মার্কেটিং, শিক্ষা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উন্নয়ন—সবখানেই আজকে টুলের জয়জয়কার। তাই বলা যায়, যে ব্যক্তি টুল ব্যবহার করতে জানে, সেই-ই আসলে এগিয়ে থাকে।
আমাদের এই টিউনে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হবে:
এই টিউনটি পড়ে আপনি শুধু টুল সম্পর্কে জানবেন না, বরং নিজের জীবনে সঠিকভাবে ব্যবহার করার একটি রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।
অনেকের মনেই প্রথম প্রশ্ন আসে—অল টুল মানে কী?
সোজা ভাষায়, অল টুল হলো সেই সব ডিজিটাল টুল, সফটওয়্যার বা অ্যাপ যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো অনেক সহজ, দ্রুত ও দক্ষভাবে করতে পারবেন।
👉 যেমন—
আমার এক পরিচিত ভাই ফ্রিল্যান্সিং করতেন। আগে শুধু ডেটা এন্ট্রি করতেন, কিন্তু পরে তিনি Canva আর Grammarly শিখে নিলেন। এখন শুধু ডেটা এন্ট্রিই করেন না, বরং ক্লায়েন্টদের জন্য প্রেজেন্টেশন বানান, ব্লগ এডিট করেন, ডিজাইন তৈরি করেন। তার আয়ও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে আমার নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করি। আমি যখন লেখালেখি শুরু করি, তখন ছোটখাটো ভুল থাকতো—কমা, ফরম্যাটিং ইত্যাদি। Grammarly ব্যবহার শুরু করার পর লেখার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্লায়েন্টরাও প্রশংসা করেছেন।
এখনকার যুগে যদি আপনি টুল ব্যবহার না জানেন, তাহলে পিছিয়ে পড়বেন।
অর্থাৎ, টুল ব্যবহার করা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা।
আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময় ম্যানেজমেন্ট। প্রতিদিন এত কাজ, এত দায়িত্ব যে আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না কোনটা আগে করবো আর কোনটা পরে। ঠিক এখানেই আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রোডাক্টিভিটি টুল।
প্রোডাক্টিভিটি টুল মানে হলো এমন সব ডিজিটাল অ্যাপ, সফটওয়্যার বা প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহার করে আপনি আপনার কাজগুলোকে সাজিয়ে নিতে পারবেন, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারবেন, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—অল্প সময়ে বেশি কাজ শেষ করতে পারবেন।
👉 ধরুন, আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার। প্রতিদিন ক্লায়েন্টের কাজ, নিজের শেখার কাজ, পরিবারের জন্য সময়—সব একসাথে ম্যানেজ করতে হবে। যদি এগুলো মাথার ভেতরে রাখেন, নিশ্চিতভাবে অগোছালো হয়ে যাবে। ফলাফল? কাজের মান খারাপ, সময় নষ্ট, আর আয়ও কমে যাবে।
কিন্তু যদি আপনি Trello, Notion, Google Keep-এর মতো টুল ব্যবহার করেন—তাহলে প্রতিটি কাজ সুন্দরভাবে ভাগ করে নিতে পারবেন।
সব কিছু চোখের সামনে সাজানো থাকবে।
Trello একটি দারুণ টুল যেখানে আপনি আপনার কাজগুলোকে বোর্ড, লিস্ট আর কার্ড আকারে ভাগ করতে পারবেন।
যেমন, একটা বোর্ড বানালেন “আজকের কাজ”
আরেকটা বোর্ড “চলমান কাজ”
আরেকটা বোর্ড “শেষ হয়েছে”
প্রতিটি কাজ কার্ড আকারে থাকবে, আর আপনি টেনে এনে এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডে সরিয়ে নিতে পারবেন। এতে করে পরিষ্কার বোঝা যাবে কোন কাজ কোন পর্যায়ে আছে।
👉 বাস্তব অভিজ্ঞতা: আমি নিজে Trello ব্যবহার করি যখন একসাথে একাধিক প্রজেক্ট হাতে থাকে। কোনটার ডেডলাইন কবে, কোনটা ফাইনাল রিভিউতে আছে—সব পরিষ্কার বোঝা যায়।
Notion হলো “অল-ইন-ওয়ান” প্রোডাক্টিভিটি টুল।
এক কথায়, Notion এমন এক টুল যা দিয়ে আপনি পুরো অফিস বা পড়াশোনার কাজ এক জায়গায় রাখতে পারবেন।
👉 উদাহরণ: একবার আমি একটি অনলাইন কোর্স তৈরি করার সময় Notion ব্যবহার করেছিলাম। কোর্সের আউটলাইন, লেসনের কনটেন্ট, রিসোর্স লিংক—সবকিছু Notion-এ সাজানো ছিল। ফলে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগই ছিল না।
Google Keep হলো সবচেয়ে সহজ প্রোডাক্টিভিটি টুল। এটা মূলত নোট নেওয়ার জন্য।
👉 উদাহরণ: অনেক সময় ব্লগ বা টিউনের আইডিয়া হঠাৎ মাথায় আসে। তখন Google Keep-এ লিখে রাখি। পরে সময় হলে সেই আইডিয়াগুলো বড় করে লিখতে পারি।
Todoist হলো এমন একটি অ্যাপ যেখানে আপনি প্রতিদিনের কাজ টু-ডু আকারে সাজিয়ে রাখতে পারবেন।
👉 মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: প্রতিবার একটি কাজ শেষ হলে যখন আপনি টিক চিহ্ন দেন, তখন মস্তিষ্কে এক ধরনের আনন্দ তৈরি হয়। এটি আবার আপনাকে নতুন করে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।
অনেকে মনে করে প্রোডাক্টিভিটি টুল মানে জটিল সফটওয়্যার। আসলে তা নয়। এগুলো এত সহজ যে একটু চেষ্টা করলেই আয়ত্তে আনা যায়।
আরেকটি ভুল ধারণা হলো—“সব টুল একসাথে ব্যবহার করতে হবে। ”
না, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ১-২টা টুল বেছে নিলেই যথেষ্ট।
আমি নিজে সবসময় একসাথে অনেক টুল ব্যবহার করি না।
এভাবেই সীমিত কিছু টুল বেছে নিয়ে ব্যবহার করি। এতে বিভ্রান্তিও হয় না, আবার কাজও এগোয়।
প্রোডাক্টিভিটি টুলকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে আপনার সময় ব্যবস্থাপনা এবং কাজের দক্ষতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আপনি ফ্রিল্যান্সার হোন, ছাত্র হোন, ব্যবসায়ী হোন কিংবা চাকরিজীবী—সবাইয়ের জন্যই এই টুলগুলো অপরিহার্য।
যে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, সেই-ই আসল সফল মানুষ। আর সময়কে কাজে লাগানোর সবচেয়ে বড় সহায়ক হলো এই প্রোডাক্টিভিটি টুল।
আমি জান্নাতুল খাতুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 31 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোছা:জান্নাতুল খাতুন, চুয়াডাঙ্গা জেলার বাংলাদেশ থেকে। আমি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ডিজিটাল কনটেন্ট, আর্টিকেল এবং সৃজনশীল লেখা তৈরি করতে পারদর্শী। আমি মানসম্পন্ন কাজ প্রদান করতে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট রাখতে উৎসাহী।