ডোমেইন হোস্টিং কী? কীভাবে কাজ করে? প্রাথমিক ধারনা ও বিস্তারিত আলোচনা

টিউন বিভাগ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 4
Sonic টিউনার, টেকটিউনস, গাইবান্ধা, রংপুর

আসসালামু আলাইকুম। টেকটিউনস এর নতুন আরো একটি টিউনে আপনাকে স্বাগতম। আশাকরি সকলেই অনেক অনেক ভালো আছেন। আজকাল আমরা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের টেক ওয়েবসাইট, ই-কমার্স ওয়েবসাইট ছাড়াও সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্টান এর তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট দেখতে পাই। এসব ওয়েবসাইট তাদের নিজস্ব ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যেমন বাংলাদেরশের একটি বড়ো ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটার একটি ওয়েবসাইট হলো Daraz.com.bd আর আমাদের চেনা সবার জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট হলো Techtunes.io এটি কিন্তু একটু টেকনোলজি বিষয়োক ওয়েবসাইট। তো এসব ওয়েবসাইট গুলো দেখার পর আমরা ভাবতে থাকি ইসস আমাদের ও যদি এমন পপুলার জনপ্রিয় একটা ওয়েবসাইট থাকতো, তাহলে আমাদের ও বুজি মন যাকে বলি আমরা শখ সেটি পূরন হতো।

কিন্তু আপনারা অনলাইনে এই ওয়েবসাইট তৈরিতে সঠিক গাইড লাইন পান না জন্য একটি সঠিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন না। তো আজকে আমি ধারাবাহিক (২) টি টিউন এর মাধ্যমে আপনাদের কম্পিলিট ওয়েবসাইট তৈরির প্রসেস সম্পর্কে আলোচনা করবো। প্রথম পর্বে আলোচনো করবো ডোমেইন কি? হোষ্টিং কি? কেনো ডোমেইন হোষ্টিং একটি ওয়েবসাইট এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়াও দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানতে পারবো একটি ওয়েবসাইট কি কি যন্ত্রপাতি লাগে, তৈরিতে কতো খরচ হতে পারে সেসব বিষোয়েও বিস্তারিত ক্লিয়ার একটি ধারনা পেয়ে যাবো। তো আজকে আর বেশি কথা না বলে, ❝ডোমেইন হোষ্টিং কি এই বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ধারনা নেওয়া যাক।

তো শুরুতেই আমরা জানবো ডোমেইন কি?

ডোমেইন (Domain) এর বাংলা হলো নাম/ঠিকানা। অনলাইনে আপনি কেমন সার্ভিস প্রভাইড করবেন তার সাথে মিল রেখেই মূলত ডোমেইন নাম বাছাই করা হয়। মনে করুন আপনি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা কেনাকাটা একটি ওয়েবসাইট বানাবেন, সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই Online-Shop এমন একটি নাম দিবেন। মূলত এই নামটি কিন্তু ডোমেইন না, এটি তো নাম। ডোমেইন হলো সাথে লাগানো এক্সটেনশন বা (.)এর পরেই বাকি অংশ। তো যেমনঃ Techtunes.io এখানে টেকটিউনস কিন্তু একটি নাম, এই নামের সাথে লাগানো বার্তি বা (.) এর পরে (.io) এটিই হলো একটি ডোমেইন। আর এখান Techtunes.io এই পুরোটাকে নিয়েই হলো একটি ডোমেইন নাম। এই ডোমেইন নাম গুলো দবার ক্ষেত্রে এক হয় না। প্রতিটি আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে তাদের আলাদা আলাদা নাম হয়ে থাকে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ইউনিক ডোমেইন নাম বাছাই করে ক্রয় করে নিতে হবে।

তো এখানে আমরা আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করে বুঝানোর চেষ্টা করি, মনে করুন আপনার নাম ❝ স্বপন ❞ তো এখন আপনার এলাকায় কিন্তু সবাই আপনাকে স্বপন নামেই চেনে। এক্ষেতে অপরিচিত কেউ এসে যদি আপনার এলাকায় একটি বাচ্চা পোলাকেই জিগায় স্বপন কে তাহলে কিন্তু সে আপনাকে দেখিয়ে দিবে। মানে হলো স্বপন শুধু আপনার নাম তাই আপনি নিদিষ্ট এখানে অন্য কেউ আসার প্রশ্নই আসে না। এইযে আপনি এক নামে যাকে চিনলেন সেই নামটিই মূলত অনলাইন যগতে একটি ডোমেইন নাম। এটিই মূলত প্রতিটি ওয়েবসাইট কে তাদের নিজস্ব যোগ্যতা থেকে আলাদা করে রাখে। তো এই নামের সাথে আলাদা এক্সটেনশন যুক্ত নাম গুলোই হলো মূলত ডোমেইন নাম।

বেশি জনপ্রিয় আর টপ লেভেল এর কিছু ডোমেইন হলো (.com.org. xyz.info.net) এছাড়াও আরো অনেক ডোমেইন নাম আছে যেগুলো আপনি চাইলেই কিনে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি ডোমেইন এর বার্ষিক চার্জ ৮০০-১২০০ টাকা হয়।

তো এবার আসি একটি ডোমেইন কিভাবে কাজ করে?

আপনি যখন আপনার ফোনে অথবা কম্পিউটারে থাকা যেকোন ব্রাউজারে আপনার ওয়েবসাইট এড্রেস বা ডোমেইন নামটি লিখে থাকেন তখন মূলত ডোমেইন নামটি ঠিক এইভাবে কাজ।

  1. ব্রাউজার সর্বপ্রথম আপনার ফোনের আইপি এড্রেস অনুসন্ধান করে।
  2. তারপর আপনার ফোনের আইপি সেই (SG) সিংগাপুর মেইনটেইন সার্ভারে একটি রিকোয়েস্ট পাঠায়।
  3. তারপর (SG) সার্ভার সেই রিকোয়েস্ট টি গ্রহন করে এবং আপনার আইপি টি লোকাল সার্ভার থেকে প্রাইমারি সার্ভারে পাঠানো হয়।
  4. প্রাইমারি সার্ভার আপনার সেই আইপি এড্রেস টি হোষ্টিং এর লোকাল সার্ভারে পাঠায়।
  5. ফাইনালি আমরা আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারের স্কিনে সেই ভিজিট করা নিদিষ্ট ওয়েবসাইট টি দেখতে পাই।

বিদ্রঃ প্রসেস গুলো আমি তো বিস্তারিত বললাম জন্য ৫ টা লাইন হয়ে গেলো। আপনারা আবার ভাববেন না এই কাজ গুলো সম্পূর্ণ হতে অনেক সময় লাগে। এই কাজগুলো সম্পুর্ন হতে মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ড সময় লাগে। হা হা হা অবাক হয়ে গেলেন তাই না? এজন্যই তো বলা হয় ডিজিটাল বিশ্ব।

ভালো মানের ডোমেইন কোথা থেকে কিনবেন আর দাম কতো?

মূলত বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক ওয়েবসাইট ই ডোমেইন নেম বিক্রি করে থাকে। তবে মূলত হাতে গোনা কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে যারা বিশ্বস্ত এরা মার্কেটে অনেক দিন যাবত তাদের সার্ভিস প্রভাইড করে আসছে।

এসব ওয়েবসাইট আপনি যদি আপনার পছন্দের একটি ডোমেইন কিনতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার একটি মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড থাকতে হবে। কারণ একমাত্র ডলার এর বিনিময়ে আপনি এসব সাইট থেকে ডোমেইন কিনতে পারবেন। এছাড়াও আপনার যদি একটি মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড না থেকে থাকে তাহলে আপনি বাংলাদেশের একটি বিশ্বাস্ত ওয়েবসাইট থেকে বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করেও আপনার পছন্দের ডোমেইন কিনতে পারবেন। প্রতিটি ডোমেইন এর মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা হতে পারে।

এত্তোক্ষন তো আমরা ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক কিছুই জানলাম তো এবার আসুন আমরা হোষ্টিং সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নিই। একটি ওয়েবসাইট অনলাইনে রান করানোর জন্য বা হোষ্ট করানোর জন্য হোষ্টিং এর গুরুত্ব অপরিসিম। হোষ্টিং ছাড়া একটি হোষ্টিং কখনো অনলাইনে হোষ্ট করা সম্ভব নয়।

হোষ্টিং কি?

হোষ্টিং (Hosting) এর বাংলা অর্থ হলো স্থান বা রাখার যায়গা। আপনি একটি ওয়েবসাইট রার্ন করাতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে হোষ্টিং এর প্রতি মনোযোগি হতে হবে। কারণ হোষ্টিং ছাড়া কখনোই আপনি আপনার ওয়েবসাইট কে রার্ন করাতে পারবেন না। হোষ্টিং কে একটি ওয়েবসাইট এর প্রান বার সার্ভার ও বলা হয়ে থাকে। একটি ওয়েবসাইটকে দিনের ২৪ ঘন্টা ও বছরের ৩৬৫ দিন সচল বা চালু রাখাটাই মূলত হোষ্টিং এর কাজ। হোষ্টিং একটি সাইডের সকল ডেটাকে তার মাঝে সংরক্ষিত করে রাখে যা পরে ইউজার বা ভিজিটরের চাহিদা অনুযায়ি তাদের সামনে তুলে ধরে। হোষ্টিং মূলত Video, Image, Text ইত্যাদিকে যায়গা করে দিয়ে সেভ করে রাখে। এটি অনেকটাই ফোনের ম্যামরি কার্ড এর মতো কাজ করে থাকে।

চলুন এই বিষয়ে আরো একটু ব্যাখা করা যাকঃ ধরুন আপনি একটি ১৬ জিবি ম্যামরি কার্ড কিনলেন। এখানে আপনার ম্যামরিতে কিন্তু ১৬ জিবি আপনার ইচ্ছামতো ছবি, ভিডিও, টেক্স ইত্যাদি রাখতে পারবেন এর বেশি বা ১৬ জিবির বেশি কিন্তু কোন কিছু রাখতে পারবেন না। ঠিক এই ভাবেই হোষ্টিং এরো স্পেস বা যায়গা কিনে আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য ব্যবহার করতে হবে। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে ডোমেইন আর হোষ্টিং কিন্তু দুটি সম্পুর্ন আলাদা জিনিস এখানে ডোমেইন আর হোষ্টিং আপনাকে আলাদা আলাদা করে কিনে ব্যবহার করতে হবে। ডোমেইন এবং হোষ্টিং ২ টিই প্রতিবছর টাকা দিয়ে রিনিউ করে নিতে হবে।

হোষ্টিং কেনার সম্য মূলত আপনাকে ভালো মানের হোষ্টিং কিনে ব্যবহার করতে হবে কারণ খারাপ বা সল্প মূল্যর হোষ্টিং গুলো বেশি ভিজিটর ধরে রাখতে পারে না। অল্প ভিজিটরেই ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়। তাই আপনার ওয়েবসাইট কে ভালো রাখতে অবশ্যই ভালো মানের হোষ্টিং এর দিকে নজর দেওয়া উচিত।

আপনি মূলত বিভিন্ন ধরবের হোষ্টিং সার্ভিস কিনতে পারবেনঃ শেয়ার হোষ্টিং, ভিপিএস হোষ্টিং, ডেডিকেটেড সার্ভার হোষ্টিং ইত্যাদি। আপনি মুলত যে সকল ওয়েবসাইট থেকে ডোমেইন কিনবেন সেসব ওয়েবসাইটেই হোষ্টিং প্লান পেয়ে যাবেন।

হোষ্টিং কিভাবে কাজ করে?

যখন কোন ইউজার আপনার ওয়েবসাইট এর নামটি তার ব্রাউজারে সার্চ করবে তখন তখন তার মোবাইল আইপি এবং ডোমেইন আইপি আপনার ওয়েবাসাইটের হোষ্টিং বা সার্ভারে একটি রিকোয়েস্ট পাঠাবে। মূলত আপনার হোষ্টিং একটি ম্যামরি কার্ড এর মতো যা আমি আগেই বলেছিলাম। তো আপনার হোষ্টিং এ আপনি আপনার ওয়েব সাইট ডেটা যেমনঃ পিকচার, ভিডিও, টেক্স ইত্যাদি জমা রেখেছেন। যখন আপনার আইপি এড্রেস হোষ্টিং সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠাবে ঠিক তখন হোষ্টিং আপনার চাহিদা অনুযায়ি তার মাঝে থাকা ডেটা আমাদের সাত্মনে শো করাবে। এভাবেই মূলত একটি হোষ্টিং কাজ করে থাকে।

তো এই ছিলো আমাদের ডোমেইন হোষ্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আশাকরি আজকের এই আলোচনা আপনাদের নতুন কিছু জানাতে পারলাম। দেখা হয়ে পরবর্তী টিউনে ততোক্ষন সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।

Level 4

আমি স্বপন মিয়া। Sonic টিউনার, টেকটিউনস, গাইবান্ধা, রংপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 39 টি টিউন ও 28 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

টেকনোলজি বিষয়ে জানতে শিখতে ও যেটুকু পারি তা অন্যর মাঝে তুলে ধরতে অনেক ভালো লাগে। এই ভালো লাগা থেকেই আমি নিয়মিত রাইটিং করি। আশা করি নতুন অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারবেন।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।