FL Studio টিউটোরিয়াল [পর্ব-১৬] :: বিভিন্ন Effect এর ব্যবহার

FL Studio টিউটোরিয়াল

গত টিউনে বলেছিলাম একটা গানে কী কী Effect লাগে তা আলোচনা করব। হ্যাঁ। একটা গান খুব সুন্দরভাবে গাইলেই শুধু হবে না। উপযুক্ত Effect প্রয়োগের মাধ্যমে গানটিকে শ্রুতিমধুর করতে হবে। আর এটা না করলে গানটি শুনে মজা পাবেন না। কেমন খাপছাড়া শোনাবে। পুরাতন গানগুলো বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ না।

এর কারণ কিন্তু এটাই। সেগুলোতে তেমন কোনো Effect নেই। ঐ গানগুলো শুধু তাদের কথা আর সুন্দর সুরের জন্যই বিখ্যাত ছিল। যেমন: অনেক সাধের ময়না আমার, তুমি যে আমার কবিতা, এই পৃথিবীর পরে, ও মেয়ের নাম দেব কি, আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরুপ, আমি যখন আগে চিন্ময়-এর কন্ঠে ‘মায়াবন বিহারীনি হরিনী’ শুনতাম তখন অনেকেই বলত, “এসব কী গান শুনিস!” অথচ পরে যখন ইন্ডিয়ান এক মুভিতে এই গান শুনলো তখন দেখি তাদের ফোনে সারাদিন এই গান বাজে। হাস্যকর। ওটা যে রবীন্দ্র সংগীত তাও অনেকে জানে না।

তাই একটা গানে Effect প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা খুবই সফলভাবে। আসুন দেখে নেয়া যাক কী কী ইফেক্ট আমরা সাধারণ গানগুলোতে প্রয়োগ করতে পারি।

Reverb:
অডিটোরিয়াম তো অনেকেই দেখছেন। সেখানে বসলে আপনি দুইভাবে বক্তার বক্তৃতা শুনতে পারবেন। এক-তার কথা সরাসরি আপনার কানে এসে লাগবে। দুই-তার কথা অডিটোরিয়ামের বিভিন্ন দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে তার পরে আপনার কানে পৌছাবে।

আর এই দুই শব্দ গ্রহণের পদ্ধতি এক ধরনের শব্দ তীব্রতা তৈরি করবে। অনেকটা গুম-গুম ভাব চলে আসবে শব্দের মধ্যে। একে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Reverberation. আর সঙ্গীতে আমরা একে বলে থাকি সংক্ষেপে Reverb.
শুধু অডিটোরিয়ামে না। একটা স্টুডিওতে শব্দ কীভাবে গৃহীত হয় এটাও Reverberation এর অন্তর্ভূক্ত।

অর্থাৎ শব্দ তৈরির স্থান সাপেক্ষে শব্দের যে পরিবর্তিত রুপ যা আমরা শোনার সময় টের পাই সেটাই হলো Reverb.FL Studio-তে Reverb প্রয়োগ করার বেশ কয়েকটা Effect আছে। তবে মেইন হলো নিচের দুইটা।

  • 1. Fruity Reverb
  • 2. Fruity Reverb 2
    Vocal এর ফাইলটি Mixer-Master প্যানেলের Send/Insert এ সিলেক্ট থাকা অবস্থায় FX Slot এর ড্রপডাউনে ক্লিক করলে Effect-গুলোর দেখা মিলবে। সেখান থেকে সিলেক্ট করবেন। এদের Presets-গুলো বিভিন্ন রকম। সেটা প্রত্যেকটা Effect-গুলোর উপরে ডানপাশে চিহ্নে এসে মাউসের ডান বাটনে ক্লিক করলেই হবে।

গানের উপর নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের Reverb ব্যবহার করে। তবে সকল গানেই হালকাভাবে (ভলিউম বার কমিয়ে) Reverb (যেমন The Venue, Large Hall, Drum Room, Small Studio ইত্যাদি) ব্যবহার করতে পারেন। এটা আসলে আপনার চর্চার উপর নির্ভর করবে। চর্চার ফলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোন Reverb টা কী মাত্রায় দিলে গানটা সুন্দর লাগবে। এটা করলে হবে কী গান আর মিউজিকটা যে আলাদা তা আর বোঝা যাবে না।

Flanger:
এটি হলো মূলত এমন একটি ইফেক্ট যখন আপনি উঁচু গলায় গান গাইবেন তখন হঠাৎ করে উঁচুতে গেলে গানটিতে যদি ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে এটার সাহায্যে তা অনায়াসেই কমিয়ে আনা সম্ভব। মূলত এটি গলার স্বরের সামঞ্জস্য রক্ষার একটা Effect. অর্থাৎ এটার সাহায্যে অত্যন্ত সফলভাবে উঁচু নিচুতে গান গেয়ে বেড়ানো যায়।

আবার অনেক সময় কষ্ট করে উঁচুতে স্বর ধরে থাকলে আপনার গলার উপর যে চাপ সৃষ্টি হয় (তাহসানের বেশ কিছু গানে লক্ষণীয়) তা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। মডার্ণ গানগুলো এইজন্যই ভাল লাগে না যে এতে গলা কাক,কোকিল,মোরগ যাই হোক না কেন এসব ইফেক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে তা সুমধুর করে তোলা যায়। ভালভাবে এতটুকু মনে রাখুন যে আমাকে গানের উঁচু সুরের জায়গাগুলো Flanger ব্যবহার করতে হবে। FL Studio তে Flanger এর দুটি ইফেক্ট উল্লেখযোগ্য।

  • 1. Fruity Flanger
  • 2. Fruity Flangus
    এই দুটো দিয়েই সাধারণত Flanger সম্পর্কিত সকল কাজ করা সম্ভব। এছাড়াও আরো কিছু ইফেক্ট আছে যেগুলো দিয়েও Flanger এর কাজ করা যায়।

Chorus:
একসঙ্গে অনেকজন মিলে একটি গান গাওয়াকে বলা হয় কোরাস (Chorus). তবে যদি আপনার অনেক শিল্পী না থাকে তাহলে কী করবেন? সে জন্যই এই কোরাস। এক ভোকাল দিলে সেই অনুপাতে এটি এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করে মনে হবে যে অনেকজন মিলে গাচ্ছে। এটি গানের অনেক জায়গাতেই লাগে। তো FL Studio তে আপনি Fruity Chorus ও এর Presets গুলো থেকে বাছাই করে কোরাস তৈরি করতে পারেন।

Delay:
এটা নিয়ে আগেও একবার আলোচনা করেছি। এটা মূলত করা হয় একটি লাইন শেষ হলে এক মুহূর্ত পর আবার ঐ লাইনটাই গাওয়া হয় এই কাজটা করতে। এটা নিয়ে বিস্তারিত আগের এক টিউনে আলোচনা করেছি তাই আর ডিটেইলস লিখলাম না।

***গুরুত্বপূর্ণ কথা: আপনি যদি একটা গান সঠিকভাবে সুরে গাইতে পারেন এবং কেউ গান গাইলে যদি বুঝতে পারেন যে সে তার সুরটা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তাহলেই কেবল আপনি FL Studio শেখা শুরু করতে পারেন। নতুবা না। তবে দেখেছি ঐ বেসুরো গলার ব্যক্তিরাও শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতে ঢোকার চেষ্টা করেছে Rap এর মাধ্যমে।

আমি বলছি না যে বেসুরো গলার লোকেরাই Rap গায়। আমি দেখেছি আমার পরিচিত এমন কিছু ছেলে আছে যাদের সঙ্গীতের কোনো জ্ঞানই নেই, তারাই হঠাৎ দেখি একটা কোনো একটা এফ এল স্টুডিও’র Template পেয়েই সেটা দিয়ে Rap গাওয়া শুরু করে দিয়েছে। অনেকে মনে করেন শুধু দ্রুত কথা বলতে পারলেই মনে হয় Rap গাওয়া যায়। জিনিসটা মোটেই ঠিক নয়।

এই বেসুরো পাবলিকদের অত্যাচার সামাল দিতে গিয়ে তথা সঙ্গীতের জ্ঞানকে সমুন্নত রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন নামিদামি শিল্পীরা Rap এর মধ্যেও বৈচিত্র এনেছেন যা সঙ্গীতের ব্যাকরণকেই অনুসরণ করে। তাই সবরকম Rap সঙ্গীতের আওতাভুক্ত নয়। আমাদের দেশের ঐ কিছু বেসুরো পাবলিকদের এক ধরনের Rap-ই গাইতে শুনেছি যার বলার ভঙ্গিটা কিছুটা ছেলেবেলার সেই-
"আম পাতা জোড়া জোড়া,
মারব চাবুক চড়ব ঘোড়া"
এই টাইপের।
এরা এভাবেই সঙ্গীতের ঘোড়াকে চাবুক মেরে চলেছে। এদের জন্য একটা কথাই বলব-
“ওরে বাছা, সরে দাঁড়া”

আমি সবসময় সুস্থ সঙ্গীতের পক্ষে। কারণ, Rap গুলোতে দেখবেন খুব ভালো কথাবার্তা হয় না। আর জানেনই তো আমাদের পোলাপাইনদের স্বভাব। অশ্লীলতায় ভরপুর তার লিরিক।
“সুরে অশ্লীলতা হয় না। অশ্লীলতা হয় মানুষের কথাতে।”

কথাটি সবসময় মনে রাখবেন। এতদিন টিউটোরিয়াল লিখছি কেউ কখনও বলল না যে ভাই আমিও আপনার মতো। সুস্থ ধারার সঙ্গীতের পক্ষপাতি। সবাই শুধু DJ, Rap এগুলোর কথাই বলে। ভাই, আমি সঙ্গীতের মর্যাদা অনুযায়ী শিখাচ্ছি। এমন কিছু শিখাব না যা সঙ্গীতের আওতার বাহিরে।
Carry On.

আজ আর নয় এতটুকুই লিখলাম। সামনে দিন Plugin Picker এর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও কন্ট্রোলার নিয়ে আলোচনা করব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।
ফেইসবুকে আমি:

Me on Facebook>>

FL Studio Group>>

Youtube Channel>>

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Thnx For share