বর্তমান যুগে, অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন, উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। বর্তমান বাংলাদেশে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা আছে যারা কম পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী। তবে একথা সত্য, যে যদি সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম থাকে, তাহলে কোনো ব্যবসা শুরু করতে ৫, ০০০ টাকাই যথেষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণী, কর্মজীবী, বা চাকরি খুঁজে যারা নতুন কিছু শুরু করতে চান, তারা সবাই কম বিনিয়োগে ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন। বাংলাদেশের বর্তমান বাজারে কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলি খুব কম পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব এবং তা লাভজনকও বটে। আজকে আমি এমন ৭টি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলি আপনি মাত্র ৫, ০০০ টাকা দিয়েই শুরু করতে পারেন।
আজকাল ফ্রিল্যান্সিং একটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে আপনি পেশাগত কাজ করতে পারেন একদম নিজের সুবিধামত। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, বা ট্রান্সলেশন কাজ জানেন, তবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা আপনার জন্য চমৎকার হতে পারে।
এটা আপনাকে কম বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দিবে। ৫, ০০০ টাকায় আপনার কাছে একটি ভালো ইন্টারনেট কানেকশন, একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এবং প্রাথমিকভাবে একটি প্রোফাইল তৈরি করা সবকিছুই করা সম্ভব। আপনি Fiverr, Upwork, Freelancer, Toptal ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে পছন্দমত কাজ শুরু করতে পারেন। এ ধরনের কাজ করতে কোনো অফিস বা বসার জায়গার প্রয়োজন হয় না। আপনি ঘরে বসেই অথবা যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এই সেক্টরে সুযোগও অনেক বেশি। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর সাথে সাথে আপনি একে একটি পূর্ণকালীন ব্যবসা হিসেবে চালাতে পারবেন।
বর্তমানে অনলাইন প্রোডাক্ট সেলিং একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। ৫, ০০০ টাকায় আপনি অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে পারেন খুব সহজেই। এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে আপনি নিজের তৈরি পণ্য বা কারিগরি কাজ বিক্রি করতে পারবেন। এটি হতে পারে হ্যান্ডমেড জুয়েলারি, পোশাক, ঘর সাজানোর সামগ্রী, অথবা এমন কিছু যা আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন।
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে বর্তমানে এই ধরনের ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয়। আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, বিক্রয় ডটকম বা শপিওয়ালা ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। ৫, ০০০ টাকায় আপনি প্রাথমিকভাবে আপনার পণ্যের প্রচারের জন্য কিছু অর্থ খরচ করতে পারেন এবং প্যাকেজিং ও শিপিং এর জন্য কিছু প্রাথমিক সরঞ্জাম নিতে পারেন।
আপনি যদি পণ্যটি তৈরি করতে পারেন, তবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া, আপনি যদি dropshipping মডেল অনুসরণ করেন, তাহলে পণ্য উৎপাদনের ঝামেলাও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। এতে পণ্য সরবরাহকারী সরাসরি আপনার ক্লায়েন্টের কাছে পণ্য পাঠিয়ে দেবে এবং আপনি কমিশন পাবেন।
বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে, এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আপনি যদি ভালো ভিডিও তৈরি করতে পারেন বা লেখালেখি করতে পছন্দ করেন, তবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। ৫, ০০০ টাকায় আপনি একটি ভালো স্মার্টফোন বা ক্যামেরা কিনে শুরু করতে পারেন।
বিশেষত, ইউটিউব, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আপনি প্রচুর মানুষকে আপনার কনটেন্ট দেখাতে পারেন এবং এটি থেকে আয় করতে পারবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট শেয়ার করে আপনি স্পনসরশিপ, অ্যাডভারটাইজিং বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এছাড়া, ব্লগিংও একটি চমৎকার বিকল্প। আপনি যদি লিখতে ভালোবাসেন এবং আপনি কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন (যেমন—ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা ইত্যাদি), তবে ব্লগ শুরু করতে পারেন। ব্লগে ভালো কনটেন্ট টিউন করে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স অথবা অন্যান্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ব্যবহার করে আয় করতে পারবেন।
আজকের যুগে, ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য সেবা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল, প্রতিটি ব্যবসা অনলাইনে নিজেদের প্রচারণা চালানোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সাহায্য নেয়। আপনি যদি SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল অ্যাডস অথবা কনটেন্ট মার্কেটিং জানেন, তবে এটি আপনার জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
৫, ০০০ টাকায় আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করতে পারেন, কিছু অনলাইন টুলস ব্যবহার করতে পারেন এবং নিজের অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করে ক্লায়েন্টের কাছে পৌঁছাতে পারেন। ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বা ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্টরা আপনার সেবা নিতে চাইতে পারে। এটি একটি গ্লোবাল ব্যবসা, যা আপনি বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করতে পারবেন। অনলাইনে নিজের প্রচারণা চালিয়ে আপনি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং এতে ভালো লাভ করতে পারবেন। আজকের দিনে ডিজিটাল মার্কেটিং এক ধরনের চাহিদা পূরণকারী সেবা এবং এর সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
যদি আপনার রান্নার প্রতি আগ্রহ থাকে এবং আপনি পেশাগতভাবে কিছু রান্না বা বেকিং শিখেছেন, তবে আপনি কুকিং বা বেকিং ক্লাস শুরু করতে পারেন। এটি একটি সৃজনশীল ব্যবসা যেখানে আপনি মানুষকে রান্নার কৌশল বা নতুন নতুন রেসিপি শেখাতে পারবেন। ৫, ০০০ টাকায় আপনি কিছু রান্নার উপকরণ কিনতে পারবেন এবং আপনার প্রথম ক্লাস আয়োজন করতে পারেন। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে আপনি আপনার ক্লাসের প্রচার করতে পারবেন।
বর্তমানে অনেক গৃহিণী বা যুবতী এই ধরনের ক্লাসে আগ্রহী। ৫, ০০০ টাকার মধ্যে আপনি আপনার ক্লাস শুরু করতে পারবেন এবং অনলাইনে বা অফলাইনে ক্লাস পরিচালনা করে আয় করতে পারবেন। এছাড়া, আপনি নিজের ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেলও শুরু করতে পারেন যেখানে আপনি রান্না বা বেকিং টিউটোরিয়াল শেয়ার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আয় করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যদি আপনি ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফিতে আগ্রহী হন, তবে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ইভেন্ট, যেমন বিয়ে, জন্মদিন, কর্পোরেট অনুষ্ঠান ইত্যাদি, এধরনের সেবা চাই। ৫, ০০০ টাকায় আপনি একটি ভালো ক্যামেরা বা স্মার্টফোন কিনে ফটোগ্রাফি শুরু করতে পারেন।
বাংলাদেশে এই ধরনের কাজের চাহিদা বেশ রয়েছে, বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তারা বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যারা নিজেদের প্রোডাক্টের ছবি বা ভিডিও চায়। আপনি তাদের জন্য ছবি তুলে দিতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। এছাড়া, আপনি যদি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, পার্টি ফটোগ্রাফি অথবা অন্যান্য ইভেন্টের ভিডিওগ্রাফি করেন, তাহলে খুব সহজেই ব্যবসাটি সম্প্রসারিত করতে পারবেন। এর জন্য প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে ভালো হবে।
আপনি যদি লিখতে পছন্দ করেন এবং আপনার কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর জ্ঞান থাকে, তাহলে ব্লগিং হতে পারে আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত ব্যবসা। ব্লগিং থেকে আপনি বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ও বিজ্ঞাপণ ইনকাম করতে পারবেন। ৫, ০০০ টাকায় আপনি একটি ব্লগ শুরু করতে পারেন। এটি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর হতে পারে যেমন ট্যাভেল, লাইফস্টাইল,
প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। ব্লগটি যখন জনপ্রিয় হবে, তখন আপনি গুগল অ্যাডসেন্স, অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট বা অন্যান্য প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
এছাড়া, আপনি যদি ভালো ফটো তুলতে পারেন বা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন, তাহলে আপনার ব্লগে সেগুলিও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। ব্লগিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা হতে পারে, যেখানে আপনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সুযোগ পেতে পারেন।
বর্তমানে, কম পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব এবং বাংলাদেশের নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এই সুযোগগুলো সত্যিই গ্রহণযোগ্য। ৫, ০০০ টাকায় শুরু করার মতো অনেক ব্যবসা রয়েছে, যেগুলি আপনি খুব সহজেই শুরু করতে পারেন। আপনার প্রচেষ্টা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে আপনি এগুলিকে একটি সফল ব্যবসায় পরিণত করতে পারবেন। সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে আপনি যেকোনো ব্যবসা চালিয়ে সফল হতে পারবেন। তাই, আপনি যদি নতুন কিছু শুরু করার জন্য প্রস্তুত হন, তবে এখনই সেই পদক্ষেপ নিন!
আমি এম আর শাকিল। সহকারী নির্বাহী, রকমারি ডট কম, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তির নতুন নতুন বিষয়াদি জানতে ও শিখতে আমার ভালো লাগে। যেটুকু শিখতে পারি তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতেও ভালো লাগে। তাই আমি নিয়মিত প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগ টেকটিউনসে লেখালেখি করি। আমার লেখালেখির উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও জ্ঞান বৃদ্ধি করা। আশা করি আমার লেখাগুলো আপনাদের প্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন কিছু...