মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার ১০ টি কার্যকরী টিপস!

Level 6
শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর

মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি চিন্তিত থাকি। কারন মোবাইল এর মূল চালিকাশক্তি হলো এর ব্যাটারি। ব্যাটারির কার্যক্ষমতা যতো কমতে থাকে ততোই এর ভ্যালু কমতে থাকে৷ আর এখন তো সব ফোনেই ব্যাটারি ফিক্সড থাকে, তাই একবার ব্যাটারি ড্যামেজ হলে তা পরিবর্তন করাটাও অনেক খরচ সাপেক্ষ। তাইতো নতুন অবস্থা থেকেই মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু বৃদ্ধির দিকে যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে যে মোবাইল এর ব্যাটারি কতোদিন ভালো সার্ভিস দিবে৷ সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে দেখা যায় কয়েক মাস পর থেকেই মোবাইল এর ব্যাটারি ব্যাকআপ কমতে থাকে। কোথাও ঘুরতে গিয়ে শান্তি নেই, লোডশেডিং হলে শান্তি নেই এমনকি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে নিলেও তা শেষ পর্যন্ত করা যায় না। এজন্য ব্যাটারির পাওয়ার সেইভ করার কিছু টেকনিক ফলো করার পাশাপাশি ব্যাটারি যাতে খুব তারাতাড়ি ড্যামেজ না হয় সেদিকে নজড় রাখতে হবে।

চলুন জেনে নেয়া যাক মোবাইল এর ব্যাটারি ভালো রাখার ১০ টি কার্যকরী টিপস। এই টিপস গুলো ফলো করলে অল্প চার্জেই আপনি কয়েকঘন্টা ব্যাকআপ পাবেন। সেই সাথে ব্যাটারি লং লাস্টিং হবে।

১. মোবাইলের মডেল এর সাথে মানানসই চার্জার ব্যবহার করুন

মোবাইলের মডেল এর সাথে মানানসই চার্জার ব্যবহার করুন

আমরা ব্রান্ড নিউ মোবাইল কিনলে তার সাথে একটি একই ব্রান্ডের চার্জার দেয়া হয়। এই চার্জার মোবাইল এর মডেল সাথে মিল রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই ঐ চার্জার দিয়েই মোবাইল চার্জ করুন। কেননা অন্য চার্জার ব্যবহার করলে তা ব্যাটারির চার্জিং ক্যাপাসিটির সাথে ম্যাচ হবে না। ফলে ব্যাটারির ওপর একটি নেগেটিভ প্রভাব পড়বে৷।

এভাবে মোবাইল এর মডেল এর সাথে মাইনাস চার্জার ছাড়া দিনের পর দিন চার্জ করলে ব্যাটারি ড্যামেজ হতে থাকবে৷ ফলে ব্যাটারি ব্যাকআপ দিন দিন কমতে থাকবে।

২. সঠিক সময়ের মধ্যে মোবাইল চার্জ করুন

সঠিক সময়ের মধ্যে মোবাইল চার্জ করুন 

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে মোবাইল এর চার্জ কত পারসেন্টে নেমে গেলে চার্জ দেয়া উচিত? মূলত মোবাইল এর চার্জ ২০ পারসেন্টে নামার আগেই মোবাইল চার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ ২৫ পারসেন্ট এর নিচে নেমে গেলে মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন। কেননা ব্যাটারি পাওয়ার কমে গেলে তা নিজের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ধীরে ধীরে ব্যাটারি ড্যামেজ হতে থাকে।

পুরপুরি চার্জ শেষ করে চার্জ দেয়া যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনই পুরোপুরি ভাবে চার্জ করাও ঠিক না। অর্থাৎ ১০০ পারসেন্ট হওয়া পর্যন্ত চার্জার লাগিয়ে রাখা উচিত না৷ মোটামুটি ৮০ থেকে ৮০ পারসেন্ট চার্জ হওয়ার পরেই চার্জার ক্যাবল খুলে ফেলা উচিত। এভাবে সঠিক সময়ের মধ্যে মোবাইল চার্জ করলে ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো থাকবে।

৩. মোবাইল থেকে অপ্রয়োজনীয় App ডিলিট করে দিন

মোবাইল থেকে অপ্রয়োজনীয় App ডিলিট করে দিন

মোবাইলের প্রতিটি App পরিচালনা না করলেও প্রতিটি App এর নিজস্ব কিছু কার্যাবলি রয়েছে। মূলত প্রতিটি ডাউনলোড করা App প্রতিনিয়ত শক্তি ক্ষয় করতে থাকে। আর ব্যাটারির ওপরে যতো চাপ পড়বে এটি ততোই কম লাস্টিং করবে। তাই আপনার প্রয়েজন নেই এমন App মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিন। এতে মোবাইল এর স্টোরেজ এবং ব্যাটারি উভয়ের ওপরেই চাপ কম পড়বে।

৪. চার্জ দেয়া অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন

চার্জ দেয়া অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন

আমরা অনেকেই মোবাইল এর প্রতি এতোটা আসক্ত হয়ে গেছি যে চার্জ দিয়েও মোবাইল চালাতে থাকি। এর ফলে একদিকে ব্যাটারিতে পাওয়ার যুক্ত হতে থাকে অন্যদিকে ব্যাটারির পাওয়ার মাইনাস হতে থাকে। এই চলমান প্রক্রিয়া মোবাইল এর ওপর খুবই মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এতো লোড না নিতে পেরে মোবাইলের ব্যাটারি ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

তাছাড়া নিয়মিত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে মোবাইল এর ব্যাটারি পুরোপুরি ভাবে ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই মোবাইল চার্জে দেয়া অবস্থায় খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বিশেষ করে কোনো ভাড়ী App বা গেমিং সফটওয়্যার তো একদমই ব্যবহার করা উচিত না। সবথেকে ভালো হয় মোবাইল এর পাওয়ার অফ করে চার্জিং করলে।

৫. অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় মোবাইল ফেলে রাখবেন না

অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় মোবাইল ফেলে রাখবেন না

আমাদের দেশের গড় তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে এদেশের মার্কেটের জন্য মোবাইল গুলো ডিজাইন করা হয়। এই সাধারণ তাপমাত্রায় মোবাইল এর ব্যাটারি পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকে। অতিরিক্ত গরম তাপমাত্রায় বা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ মোবাইল ফেলে রাখলে ধীরে ধীরে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মোবাইলের ব্যাটারির শক্তি মাইনাস হতে থাকে।

আবার খুব কম তাপমাত্রায় একটানা মোবাইল ফেলে রাখলে এর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। সুতরাং মোবাইল এর ব্যাটারি লং লাস্টিং করতে চাইলে একে সব সময় একটি সুরক্ষিত তাপমাত্রার মধ্যে রাখুন। ওভেন, গ্যাস স্টোভ, ফ্রিজ, সূর্যের আলোর কাছ থেকে মোবাইলকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন।

৬. লোকেশন অফ করে রাখুন

লোকেশন অফ করে রাখুন 

মোবাইল এর বেশিরভাগ App লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে। আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই লোকেশন খুঁজতে থাকবে আপনার হাতে থাকা মোবাইলটি। এই লোকেশন এর জন্য একসাথে কয়েকটি App অটোমেটিক কাজ করতে থাকে। ফলে ব্যাটারির ওপর অযথাই বেশি প্রেশার তৈরি হয় এবং দ্রুত চার্জ শেষ হতে থাকে।

আর অনেকেই অকারণে মোবাইল এর লোকেশন অপশনটা অন করে রাখেন। এখন থেকে ব্যাটারি ব্যাকআপ এর স্বার্থে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মোবাইল এর লোকেশন অপশন চালু করে রাখবেন না।

৭.মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস অটো মোডে রাখুন

মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস অটো মডে রাখুন

এখন বেশিরভাগ মোবাইলেই লাইট সেন্সর রয়েছে। এটি মোবাইলের আশেপাশের আলোকরশ্মি পর্যবেক্ষণ করে মোবাইল স্ক্রিনের আলো কমাতে বাড়াতে পারে। আপনার মোবাইলে এই অটো ব্রাইটনেস অপশনটি থাকলে সেটি চালু করে রাখতে পারেন। ফলে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস অটোমেটিক ভাবে কমবে এবং বাড়বে। আপনাকে আলাদা করে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমাতে বা বাড়াতে হবে না।

স্ক্রিনের ব্রাইটনেস যতো কম রাখবেন ততোই ব্যাটারির চার্জ কম খরচ হবে। ফলে ব্যাটারির ওপর কম প্রেশার পড়বে। আর বারবার ব্রাইটনেস কমানো বা বাড়ানো তো একটা ঝামেলার বিষয়। তাই অটো ব্রাইটনেস মোড হবে উপযুক্ত উপায়।

৮. স্ক্রিনের টার্ন অফ টাইম কমিয়ে রাখুন

স্ক্রিনের টার্ন অফ টাইম কমিয়ে রাখুন

আমাদের মোবাইল ব্যবহার করা না হলে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সেটা আপনাআপনি টার্ন অফ হয়ে যায়। কারো ফোন ১৫ সেকেন্ড পর, কারোটা ৩০ সেকেন্ড পর, আবার কারোটা কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টা পরে টার্ন অফ হয়৷ এটা যার যার সেটিংস এর ওপর নির্ভর করছে। যতোক্ষণ মোবাইল এর স্ক্রিন জ্বলে থাকবে ততোক্ষণ মোবাইল এর যাবতীয় ফাংশন চলমান থাকবে ও ব্যাটারির শক্তি অপচয় হতে থাকবে। অর্থাৎ স্ক্রিনে যতো দ্রুত টার্ন অফ হয়ে যাবে ততোই ব্যাটারির পাওয়ার সেভিংস হবে।

দেখা যায় হঠাৎ ফোন আসলো অথবা মোবাইল রেখে আপনি জরুরি কোনো কাজে চলে গেলেন। মোবাইলের স্ক্রিন কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগে টার্ন অফ হলো না। তাই টার্ন অফ টাইম একদম সর্বনিম্ন স্কেলে কমিয়ে রাখুন।

৯. মোবাইলের ভাইব্রেশন মোড বন্ধ করে রাখুন

ভাইব্রেশন

আপনি কি জানেন রিংটোন এর থেকে ভাইব্রেশন মোডে মোবাইলের বেশি শক্তি খরচ হয়? আমরা অনেকেই রিংটোন এর পাশাপাশি ফোন ভাইব্রেট করে রাখি। এতেকরে কিন্তু ব্যাটারির ওপরে চাপ বেশি পড়ে। তাই যদি খুব বেশি প্রয়োজন না হয় তাহলে অবশ্যই ভাইব্রেশন মোড অফ করে রাখা উচিত। বিশেষ করে যখন মোবাইলের চার্জ একদম কমে যায় আর চার্জ দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না তখন এই ট্রিকস টি কাজে লাগাতে পারেন।

১০. ডার্ক মোড ব্যবহার করুন

ডার্ক মোড ব্যবহার করুন

ডার্ক মোড অন করা থাকলে মোবাইল এর চার্জ তুলনামূলক কম খরচ হয়। এখন বেশিরভাগ মোবাইলেই ডার্ক মোড অপশন রয়েছে। তাছাড়া ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারে তো এই ফিচারটি আছেই৷ তাই মোবাইল এর ডার্ক মোড অন করে নিতে পারেন। এতে করে ব্যাটারি ব্যাকআপ তুলনামূলক বেশি পাবেন।

শেষকথা

আশাকরি আজকের টিপস গুলো সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে যাদের একটু কম বাজেট এর মোবাইল তাদের অবশ্যই এই টিপস গুলো মাথায় রেখে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। একই মোবাইল শুধুমাত্র আপনার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে এর মেয়াদ নির্ভর করবে। তাহলে আপনার মোবাইলটি কতোদিন লাস্টিং করবে তা পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনার ওপর।

টিউনটি ভালো লাগলে একটি জোসস করে দিন প্লিজ। এমন নতুন নতুন টিপস পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।

Level 6

আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 98 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস