আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।
বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। ইন্টারকানেক্টেড বিশ্বে আমরা বসবাস করি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, নেটওয়ার্ক আরও উন্নত হচ্ছে, হ্যাকাররা ব্যবহার করছে ভিন্ন ভিন্ন পথ। প্রযুক্তির এই যুগে তাল মিলিয়ে চলতে আপনাকে নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন হ্যাকিং নিউজ, নতুন প্রযুক্তি আপডেট ভাল করে বুঝতে আপনাকে জানতে হবে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং টার্ম।
আজকের এই টিউনে আমরা নেটওয়ার্ক রিলেটেড ১০ টার্ম সম্পর্কে জানব যেগুলো আপনার প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়াবে, আপনাকে নেটওয়ার্কিং বুঝতে সাহায্য করবে।
WLAN এর পূর্ণরূপ Wireless Local Area Network। এটি ওয়ারলেস ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে দুটি ডিভাইসকে কানেক্ট করে। WLAN সাধারণ ভাবে নির্দিষ্ট রেস্ট্রিকটেড এরিয়াতে ব্যবহার করা হয়, নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে অবস্থান করা ডিভাইসেই কেবল এক্সেস পাওয়া যায়। নেটওয়ার্ক এরিয়ার বাইরে গেলে ডিভাইস কানেকশন হারায়।
WLAN মূলত অপারেট করা হয় হোম নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে। হোম নেটওয়ার্কের Wi-Fi ই হচ্ছে WLAN।
WPAN হচ্ছে Wireless Personal Area Network ব্যক্তিগত ডিভাইস গুলো কানেক্ট করার জন্য এই নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। আপনি যখন ডেক্সেবসে Bluetooth মাউস, Bluetooth হেডফোন, ওয়ারলেস কিবোর্ড, মাউস ব্যবহার করবেন সেটাকে বলা হবে WPAN। মোবাইল পিসির সাথে ব্লুটুথে কানেক্ট করা হলেও সেটাকে WPAN বলা হবে।
কাছাকাছি পারসোনাল ডিভাইস গুলোর মধ্যে কমিউনিকেশন হচ্ছে WPAN। Wireless Local Area Network এর মাধ্যমে একটু বৃহৎ পরিসরে ডিভাইস কানেক্ট থাকাকেও WPAN বলা যাবে।
নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশনের জন্য ইন্টারনেট অনেক ধরনের প্রোটোকল ব্যবহার করে। ইন্টারনেট প্রোটোকল Suite, TCP/IP নামে পরিচিত। এর পূর্ণরূপ Transmission Control Protocol/Internet Protocol।
TCP/IP এর প্রথম ভার্সন হচ্ছে Internet Protocol Version 4 (IPv4)। এর উত্তরসূরি হচ্ছে Internet Protocol Version 6 (IPv6)। তবে দুইটি প্রোটোকলই ব্যবহৃত হয়।
IPv4 প্রোটোকল বিশিষ্ট আইপি এড্রেস এর উদাহরণ হচ্ছে "192.19.254.1"। সাধারণ ভাবে আমরা এই ধরনের আইপি এড্রেসই দেখতে পাই। ইন্টারনেটে কানেক্ট হওয়া প্রতিটি ডিভাইসের আলাদা আলাদা আইপি এড্রেস আছে। IPv4 প্রোটোকল ব্যবহার করে মোট কতটি আইপি জেনারেট করা যাবে তার একটি লিমিটেশন আছে। IPv4 দিয়ে মোট ৪২৯৪৯৬৭২৯৬ বা ৪ বিলিয়ন আইপি এড্রেস জেনারেট করা যাবে। এটি ৩২ বিটের একটি প্রোটোকল। এর মানে ৩২ বিট ইন্টেজার দিয়ে এই প্রটোকল ডেভেলপ করা।
IPv6 লঞ্চ করা হয়েছে এই লিমিটেশন দূর করতে। এর মাধ্যমে ১২৮ বিট হেক্সাডেসিমেল আইপি এড্রেস এর সূচনা হয়। যার মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন প্রায় ৩৪০০, ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ টি আইপি এড্রেস। IPv6 এর আইপি এড্রেস দেখতে 4532:1cb8:75a3:4942:1771:9e2c:1350:8331।
IPv6 এবং IPv4 এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও রয়েছে, IPv6 প্যারালাল নেটওয়ার্কে অপারেট হয়। এখনো IPv6 আমরা সব জায়গায় দেখতে পাই না কারণ এখনো IPv4 এই আমাদের চাহিদা পূরণ করে চলেছে। আপনার মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, এখনো কি ৪ বিলিয়ন আইপি শেষ হয়ে যায় নি? উত্তর হল, বিভিন্ন IP Translation Gateways এই সমস্যা সমাধান করে চলেছে তাই এখনো আমরা IPv4 প্রোটোকল ব্যবহার করতে পারছি।
Network Address Translation সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রাউটারে, যেখানে সিঙ্গেল একটি আইপি মাল্টিপল ডিভাইসে শেয়ার করা হয়। আপনার বাসার রাউটার সিঙ্গেল একটি গেটওয়ের মাধ্যমে সব গুলো ডিভাইসকে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট করে।
রাউটার থেকে একটি আইপিই বের হয় কিন্তু রাউটার কানেক্টেড ডিভাইস গুলোকে আলাদা আলাদা আইপি এসাইন করে। এর মানে ইন্টারনেটে একটি আইপি প্রকাশিত হবে কিন্তু কানেক্টেড ডিভাইস গুলোর আলাদা আলাদা আইপি থাকবে।
এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ফ্রিতে ট্রাফিক মুভ হতে সাহায্য করে গেটওয়ে। হোম নেটওয়ার্কে রাউটার Gateway হিসেবে কাজ করে। রাউটারের মাধ্যমে কানেক্টেড ডিভাইস গুলো ইন্টারনেটে ট্রাফিক মুভ করতে পারে।
ডাটা ইন্টারনেটে চলাচল করাকে বুঝাতে এর কমন একটি ফরমেট হচ্ছে প্যাকেট। একটি প্যাকেটে অনেক ডাটা থাকে বিষয়টি এমন নয়। প্রতি প্যাকেট 65, 535 bytes ইনফরমেশন বহন করতে পারে। আর এভারেজে ইন্টারনেট প্যাকেট এত বড়ও না। ইন্টারনেট প্যাকেট মাত্র 1, 500 স্টোর করতে পারে।
একটি Packet সাধারণত দুই ধরনের ডাটা দিয়ে গঠিত, Control information এবং User data।
নেটওয়ার্ক, ইউজার ডাটা ডেলিভার করতে যে সকল তথ্য চায় সেগুলোকে বলা হয় Control information। Control Information এর উদাহরণ হচ্ছে, Source and Destination Addresses, Sequencing Information, এবং Error Detection Code।
অন্যদিকে User data হচ্ছে সাধারণ ডাটা যা ইউজার পাঠায়, ওয়েবসাইট লিংক, ইমেজ, ভিডিও, ইত্যাদি।
ইউজারকে সরাসরি কোন ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্কে কানেক্ট করা হচ্ছে P2P অথবা Peer to Peer। নেটওয়ার্কে কানেক্টেড প্রতিটি কম্পিউটারকে বলা হয় Peer। P2P এর মাধ্যমে কানেক্টেড ইউজাররা একই সময়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
ফাইল শেয়ারিং নেটওয়ার্ক হিসেবে P2P সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এর মাধ্যমে এমন কন্টেন্টও শেয়ার করা যায় যা কপিরাইট লঙ্ঘন করতে পারে। তবে বড় ফাইল আদান-প্রদান এর ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী।
অপারেটিং খরচ কম রাখতে বিভিন্ন linux Distors, P2P ব্যবহার করে। বিটকয়েন P2P ব্যবহার করে, Tor এবং I2P এর মত মডেল গুলোও এটি ব্যবহার করে। আপডেট ডেলিভারি আরও এফিসিয়েন্ট করতে Windows 10, ও Peer to Peer নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
ইন্টারনেটে আপনার ডেটা নিরাপদ রাখতে সাহায্য করতে TLS/SSL। TLS হচ্ছে Transport Layer Security এবং এর উত্তরসূরি Secure Sockets Layer, মানে হল SSL। এগুলো হল ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটোকল যার মাধ্যমে আপনার সেনসিটিভ ডাটা নেটওয়ার্কে নিরাপদে চলাচল করে। ব্যাংক, রিটেইলিং, সরকারি ওয়েবসাইটে ডেটা তৃতীয় পক্ষের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে এই প্রোটোকল ব্যবহৃত হয়।
TLS/SSL বিদ্যমান হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (HTTP) এ এনক্রিপশন লেয়ারিং হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে আমরা Hypertext Transfer Protocol Secure বা (HTTPS) সিকিউরিটি পাই। ব্যাংকি ওয়েবসাইট, রিটেইল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে আপনি এই ধরনের সিকিউরিটি দেখতে পারবেন। এখন অবশ্য সব ওয়েবসাইটেই এটা দেখা যায়, কোন ওয়েবসাইটের কানেকশন HTTPS না হলে ক্রোমে আমরা ওয়ার্নিং দেখতে পাই।
DDoS এটা এক ধরনের সাইবার এটাক। মাত্রাতিরিক্ত বা বিলিয়ন বিলিয়ন সার্ভার রিকুয়েস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটকে ডাউন করে ফেলার পদ্ধতি হচ্ছে DDos। হ্যাকার নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট, ভিডিও গেম সহ আরও অনেক ধরনের অনলাইন সার্ভিসকে টার্গেট করতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত রিকুয়েস্ট হ্যান্ডেল করতে পেরে হোস্টিং সার্ভিস পর্যন্ত অফ হয়ে যেতে পারে।
DDoS এর মাধ্যমে একটি আইপি এড্রেসে অনেক ইউজার এক সাথে এক্সেস নিতে চায়। যা হোস্টিং সার্ভারকে ওভারলোড করে দেয়। ফলে সাধারণ ইউজাররাও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারে না।
DDoS, ছাড়া Reddit এর কোন Post এ যদি কেউ কোন ছোট ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করে এবং সবাই এখানে ঢুকতে চায় তাহলে সেটাও অফলাইনে চলে যেতে পারে। এটাকে অবশ্য "the Reddit hug of death." বলা হয়
প্রায় সময়ই বিশ্বজুড়ে DDoS হতে থাকে তবে আমরা সেটা তখনই জানি যখন বড় কোন ওয়েবসাইটে এই এটাক করা হয়।
DNS বা Domain Name System এর মানে হচ্ছে কিভাবে কম্পিউটার আমাদের রেগুলার টেক্সটকে আইপি এড্রেসে ট্রান্সলেট করবে। আপনি যখন ব্রাউজারে Techtunes.co লিখে পিসিতে এন্টার দেবেন কম্পিউটার এর DNS সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করবে। DNS তখন নির্দিষ্ট আইপি এড্রেস দিয়ে রেসপন্স করবে এবং আপনি ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন।
ডিফল্ট বাদে আপনি ইচ্ছে মত DNS সার্ভার সেট করতে পারেন। যেমন বিকল্প হিসেবে রয়েছে, Google Public DNS, OpenDNS ইত্যাদি। বিকল্প DNS ব্যবহারের ফলে আপনার ওয়েবসাইট দ্রুত লোড হতে পারে, অতিরিক্ত সিকিউরিটি ফিচারও যুক্ত হতে পারে।
কমন নেটওয়ার্ক টার্ম গুলো বুঝতে আপনাকে কখনই ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না। আশা করছি সহজ ভাষায় টার্ম গুলো বুঝাতে পেরেছি। টার্ম গুলো জেনে রাখলে আপনি ভবিষ্যতে অনেক কিছুই সহজে বুঝতে পারবেন। নেটওয়ার্ক রিলেটেড কোন ইস্যু সলভ করতে গুগলের সমাধানও বুঝতে পারবেন।
তো আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 585 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।