দুর্বল অর্থনীতির দেশে ভাল অর্থ উপার্জন করার ১৬ টি পদ্ধতি

টিউন বিভাগ টিপস এন্ড ট্রিকস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আমি দুর্বল অর্থনীতির দেশে ভাল উপার্জনের পথ নিয়ে আলোচনা করব। বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।

করোনা পরবর্তী বিশ্বের অর্থনীতিতে এখনো খুব একটা স্থিতিশীলতা আসে নি। ফলে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি, বেকার সমস্যা, কমেছে জীবন যাত্রার মান। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালীই দেশ গুলোতেই যেখানে বেকার সমস্যা বেড়েছে অনেকের চাকরি চলে গিয়েছে সেখানে তুলনামূলক দুর্বল অর্থনৈতিক দেশ গুলোর অবস্থা আরও খারাপ। আজকের এই টিউনে আমি আলোচনা করব কিভাবে দুর্বল অর্থনীতির দেশে আপনি ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

১. গাড়িকে চলমান বিলবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন

যখন আর্থিক ভাবে আপনি সমস্যায় থাকবেন তখন এই মেথডে আপনি মোটামুটি ভাল মানের একটা ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন কোন ধরনের পরিশ্রম ছাড়া। বর্তমানে অনেক কোম্পানি ডিজিটাল মার্কেটিং এর পাশাপাশি ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং মেথডও ফলো করে। এবং গাড়িতে এড লোগো বা স্টিকার লাগানো বেশ কমন একটা মার্কেটিং।

আপনার গাড়ি থাকলে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপণী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে, প্রয়োজনীয় রুল রিগুলেশন মেনে নিজের গাড়িতে স্টিকার, লোগো বা অন্যান্য মেথড এপ্লাই করতে পারেন।

৩. Etsy তে কারুশিল্পের স্টোর খুলুন

সবাই হস্ত শিল্পে পারদর্শী নয়। এটা আলাদা গুণ যা সবার মধ্যে থাকে না। আপনার যদি এই দক্ষতা থাকে তাহলে অবশ্যই এটিকে কাজে লাগাতে পারেন। আপনি হস্ত শিল্পে দক্ষ হলে Etsy এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলোতে নিজের প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। Etsy ওয়েবসাইটে যান এবং সেখানে একটা স্টোর খুলুন এবং আপনার তৈরি প্রোডাক্ট লিস্ট করুন। আপনি একই সাথে ভিন্টেজ প্রোডাক্টও তৈরি করতে পারেন।

Etsy তে স্টোর খুলে সেগুলো আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন। যেমন ইন্সটাগ্রামে শেয়ার দেয়া ফেসবুকে রিলেটেড গ্রুপ যুক্ত হওয়া। আগ্রহীরা আপনার প্রোডাক্ট পছন্দ হলে কিনতে পারে। তাছাড়া Etsy তে প্রচুর কাস্টমার আছে যারা এসব পণ্য কেনার জন্য খোঁজাখুঁজি করে। আপনার প্রোডাক্ট ভাল হলে আপনি খুব সহজে ভাল মূল্যে এই প্ল্যাটফর্মে বিক্রি কর‍তে পারবেন।

৩. ফ্রিল্যান্সিং

আপনি চাকরি করলেও নির্দিষ্ট কিছু কাজ আছে যেগুলো আপনি করতে পারেন। এতে আপনার অতিরিক্ত কিছু ইনকামের সুযোগ হবে। আপনার নির্দিষ্ট কোন স্কিল থাকলে সেটা Craigslist, বা লোকাল ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটে Post করতে পারেন। fiverr, upwork এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলোতে একাউন্ট খুলে সেখানে নিজের স্কিল সেল করতে পারেন। আপনার জবে যদি ওভারটাইমে সুযোগ না থাকে এবং প্রমোশন না থাকে তাহলে এই পদ্ধতি গুলো আপনাকে অতিরিক্ত কিছু অর্থের যোগান দেবে।

ফ্রিল্যান্সিং এর মত মুক্ত পেশায় যুক্ত হয়ে আপনি স্বাধীন ভাবে ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারবেন।

৪. সিচুয়েশন বুঝে ব্যবসায়

আপনি যদি দুর্বল অর্থনীতির দেশে থাকেন তাহলে বিভিন্ন ঋতু, বা সিচুয়েশন বুঝে বিজনেস করতে পারেন। চলমান চাহিদার উপর ভিত্তি করে এটা পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন বর্ষা কালে ছাতার বিজনেস, গরমের সময় জুসের বিজনেস। বিভিন্ন ফলের সিজনে ফলের বিজনেস, শীতের সময় গরম কাপড়ের বিজনেস ইত্যাদি।

করোনা মহামারির সময় যেমন ফেস মাস্কের বিজনেস ব্যাপক লাভজনক ছিল তেমনি আপনার আশেপাশের চাহিদার উপর ভিত্তি করে, সেই অনুযায়ী বিজনেস দাড় করার চেষ্টা করুন।

৫. অতিরিক্ত কাজ করা

আপনি একটা চাকরি বা কাজ করলেও অর্থনীতির দিক বিবেচনা করে একাধিক কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের আগ্রহ এবং স্কিল বিবেচনা করা উচিৎ হবে। যেমন আপনি অনলাইনে টিউশন করাতে পারেন, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে কোর্স তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় দক্ষ হোন তাহলে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন। দুর্বল অর্থনীতির দেশের ফিজিক্যাল পরিশ্রম না করে অর্থ উপার্জনের ভাল পথ হতে পারে এমন রিমোট ওয়ার্কিং।

৬. Airbnb তে রুম ভাড়া দিন

আপনার দেশে যদি Airbnb এভেইলেবল থাকে তাহলে আপনি এ থেকে সুবিধা নিতে পারেন। আমরা জানি Airbnb এর মাধ্যমে পর্যটকরা রাত যাপনের সুবিধা পায়। আপনার বাসায় যদি অতিরিক্ত কোন রুম থাকে তাহলে সেটা Airbnb তে লিস্ট করে দিতে পারেন এতে করে আপনি কোন কাজ ছাড়াই বাড়তি কিছু টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

Airbnb তে একটি একাউন্ট খুলুন এবং প্রয়োজনীয় ধাপ গুলো ফলো করে নিজের রুমটি লিস্ট করে দিন। ভাল অফার দিন যাতে টুরিস্টরা আগ্রহী হয়। আর এভাবে নতুন উপার্জনের সুযোগ তৈরি করুন।

৭. ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করুন

দুর্বল অর্থনীতির দেশের থেকে আপনি লাখ লাখ টাকা কামাতে পারেন ড্রপশিপিং বিজনেসের মাধ্যমে। ড্রপশিপিং বিজনেসের ইনকামের কোন লিমিট নেই। সঠিক ভাবে করতে পারলে প্রতি মাসে লাখ টাকার বেশি উপার্জন করা সম্ভব।

Amazon এ শুধু পণ্য কেনায় যায় না এখানে বিক্রিও করা যায়। আপনি Amazon এ পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। ড্রপশিপিং এর বড় সুবিধা হল আপনাকে সেই সমস্ত পণ্য কিনেতে হবে না স্টোর করতে হবে না। প্রোডাক্ট গুলো আপনি লিস্ট করবেন এবং কেউ অর্ডার করলে ম্যানুফেকচারকে আপনি পে করে কাস্টমারের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারবেন।

এই কাজে নিজের প্রোমোশন করাটা বেশি জরুরি আপনি যত বেশি সফল ভাবে এটা করতে পারবেন তত বেশি ইনকাম জেনারেট হবে। তবে এখানে শিপিং বাবদ কিছু খরচ আপনাকে বহন করতে হবে তারপরেও সেই খরচ আপনি পণ্যের মূল্যের সাথে এডজাস্ট করে দিতে পারেন।

৮. ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি

কার মার্কেটের উত্তান পতন আছে কিন্তু পুরনো কার বিক্রি মার্কেট সব সময়ই লাভজনক। আপনার আশেপাশে যদি পুরনো গাড়ি বিক্রির শো রুম থাকে তাহলে আপনি এটির সুযোগ নিতে পারবেন।

কম টাকায় পুরনো নষ্ট গাড়ি ক্রয় করুন এবং ফিক্স করে বেশি দামে অন্য মার্কেটে বিক্রি করুন। আপনি অর্থনীতির দেশেই বসবাস করেন না কেন এটা বেশ লাভজনক একটা বিজনেস।

এটা শুধু গাড়ির ক্ষেত্রে অন্য ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে যেমন মোবাইল ফোন ফ্রিজ ইত্যাদি।

৯. ঘরের অব্যবহৃত জিনিস পত্র বিক্রি

আপনি ঘরের অব্যবহৃত জিনিস বিক্রি করেও ভাল টাকা পেতে পারেন। পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ার, ডিভিডি, পুরনো মনিটর ইত্যাদি। ঘরের অব্যবহৃত জিনিস পত্র বিক্রি করার অনেক ওয়েবসাইট আছে যেমন, Poshmark, Bikroy

তো আর দেরি কেন অব্যবহৃত জঞ্জাল ময় জিনিস গুলোকে আজকেই টাকায় পরিণত করে নিন।

১০. ফুড ডেলিভারি

অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার সময় গুলোতে আপনি ফুড ডেলিভারি করতে পারেন। এজন্য তেমন কিছুই লাগে না, আপনার একটা সাইকেল এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলেই চলে। এই জব কখনো বিলুপ্ত হবে না কারণ বিশ্বে যাই চলুক মানুষ খাওয়া দাওয়া তো আর বন্ধ করবে না। তাছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার অবশ্যই মহামারীর সময় খেয়াল করেছি এই সার্ভিস গুলোর চাহিদা কতটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

Uber Eat, এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলোতে সাইনআপ করুন এবং কাজে লেগে যান। এই কাজের বড় সুবিধা হল এখানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই আপনি যখন ইচ্ছে কাজ কর‍তে পারেন।

১১. অনলাইনে লেখালেখি

আপনার মধ্যে যদি ভাল রাইটিং স্কিল থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে লিখে ভাল একটা ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন। অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার লিখা প্রকাশ করতে পারবেন। তাছাড়া Fiverr, Upwork এর মত ওয়েবসাইট গুলোতে ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ তো রয়েছেই।

এই সমস্ত মার্কেট প্লাস গুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং ভাল পেমেন্ট পাওয়া যায়। চাহিদা অনুযায়ী আপনি ইংরেজি অথবা নিজ ভাষায় আর্টিকেল লিখে আয় করতে পারেন।

১২. ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হোন

এমন অনেক মানুষ আছে যারা এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে নিজেদের প্ল্যান করার সুযোগ পায় না আবার এমন মানুষ আছে যারা অর্গানাইজিং এ দক্ষ। আপনার যদি অর্গানাইজিং দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন এবং ভাল একটা স্যালারি পেতে পারেন।

এটার ভাল একটা দিক হলো একই দেশে কাজ করা জরুরি নয়, অনলাইনের মাধ্যমে বাইরের দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করা যায়। অনলাইন মার্কেট প্লেস গুলোতে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট লিখে সার্চ দিলে এমন অনেক সার্ভিস পাওয়া যায়। আপনিও আপনার স্কিল অনুযায়ী একটা সার্ভিস সেখানে অফার করতে পারেন।

১৩. অনলাইন আইনি সহায়তা

অনলাইনে আইনি বিষয়ে পরামর্শ দেয়ারও অনেক প্লাটফর্ম আছে এবং মানুষ সহায়তা নেয়ার জন্য সেখানে পে করে। আপনার যদি এই বিষয়ে ভাল জ্ঞান থাকে এবং আইনি পেশায় জড়িত থাকেন তাহলে এই সমস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।

কাজ খুবই সহজ যারা আপনার কাছে পরামর্শ চাইবে তাদের মামলা ভাল করে পড়বেন এবং আপনার সুচিন্তিত দিক নির্দেশনা বা মতামত প্রদান করবেন। এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম হল, eJury.com, Helpfull ইত্যাদি।

১৪. ভাল শ্রবণ দক্ষতা

আপনার যদি ভাল শ্রবণ দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি এর মাধ্যমে ভাল একটা ইনকাম করতে পারবেন। অনেক কোম্পানি আছে যারা অডিও অথবা ভিডিও ফাইল ট্রান্সক্রিব করার জন্য লোক খুঁজে। বেশির ভাগ ইউটিউবের বিভিন্ন লেকচার বা সেমিনার শুনার কাজ থাকে। আপনি ভিডিও গুলো দেখবেন, টাইপ করবেন এতে করে ভাল টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

১৫. যা ভাল পারেন সেটা শেখান

আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে সেটা অন্যদের শেখানোর মাধ্যমে ভাল টাকা ইনকাম করতে পারেন। এই কাজটি আপনি অনলাইন অফলাইন উভয় মাধ্যমেই করতে পারেন।

অনলাইনে কোর্স সেল করতে পারেন অথবা ইউটিউবে ভাল মানের কন্টেন্ট আপলোড করে ইনকাম করতে পারেন। ইউটিউবে নিয়মিত আপলোড করে চ্যানেল মনিটাইজ করে ভাল টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

১৬. কাজের মধ্যে লেগে থাকুন

অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হবার আগ পর্যন্ত কাজ খুঁজতে থাকুন এবং নির্দিষ্ট কাজে লেগে থাকুন। যে কাজটি আপনার জন্য উপযুক্ত মনে হয় সেটা করুন। মার্কেট প্লেস গুলো যেমন, নিয়মিত ব্রাউজ করুন দেখুন কোন স্কিলটি আপনার সাথে ম্যাচ করে এবং সে অনুযায়ী সার্ভিস তৈরি করে পাবলিশ করুন।

শেষ কথা

অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় বেকারত্বের সময় গুলোতে আপনি অনলাইনে বিভিন্ন কাজ দেখতে পারেন যা এই টিউনে আলোচনা করা হল। অনলাইনের কাজ গুলোর ভাল একটা দিক হল নিজ দেশের যে অবস্থাই হোক না কেন বাইরের দেশ থেকে ভালই ইনকাম জেনারেট করা যায়।

তো আজকে এই পর্যন্তই কেমন লাগল এই টিউনটি জানাতে ভুলবেন না পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 568 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 112 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস