প্রযুক্তির উন্নয়ন আধুনিক করেছে শিক্ষাব্যবস্থা

ভূমিকাঃ

শিক্ষাকে বলা হয় একটি জাতির মেরুদন্ড। মানুষের সাথে জন্মগ্রহণ করলে আসল মানুষ হওয়া যায়না।

একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য দরকার শিক্ষা। মানুষকে ভালো-মন্দের জ্ঞান যোগান দেয়, বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত করে, আচার-আচরণ মার্জিত  করা শেখায়। একটা মানুষের ভিতরকার মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে পারে শিক্ষা। শিক্ষা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু যে কোন কিছু শিক্ষা হলেই চলবে না। অর্জন করতে হবে ভালো শিক্ষা। আর এজন্য প্রয়োজন উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার। শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করনের জন্য ভূমিকা রাখছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের  ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে প্রযুক্তি।

প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নতুন নতুন গবেষণার ফলে আবিষ্কৃত হচ্ছে  নতুন নতুন কৌশল এবং যন্ত্রপাতির। যেসব কৌশলগুলো যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে মানুষ তাদের জীবনকে আরাম-আয়েশে পূর্ণ করে উন্নত করতে পারছে।

সেই আদিম যুগ থেকে হিসাব করলে দেখা যায় প্রযুক্তি কিভাবে দিনের পর দিন শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতি  বর্ধন করেছে। একটা সময় ছিল গুহা মানবরা  নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের জন্য ব্যবহার করতে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন।

কিছুকাল পরে এই অবস্থার উন্নতি হয়। মানুষ নতুন কৌশল শেখে। আবিষ্কার হয় ভাষার। সৃষ্টি হয় শিক্ষা ব্যবস্থার। এরপর থেকে মানুষ ভাষা বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে  নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে শেখায়।

এভাবে দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়। একের পর এক নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কৃত হয়। যেকোনো অবলম্বন করে  বেঁচে থাকা অনেক সহজ ও আরামদায়ক হয়। একজন যা জানে সে তার জ্ঞানকে অন্য জনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া  শুরু করে।

একজন থেকে আরেকজনে জ্ঞান বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয় শিক্ষাব্যবস্থা। তখনকার যুগে যেরকম বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করত এখনকার জীবনযাপন কিন্তু ভিন্ন। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি মানুষের জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।

তাই এখনকার মানুষকে  আদিম কালের মানুষের মত  কঠিন সংগ্রাম করে প্রকৃতিতে টিকে থাকার  মত কঠিন শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন হয় না। এখন যেমন দিন পাল্টেছে তেমনি শিক্ষাব্যবস্থা এসেছে পরিবর্তন।

মানুষ এখন কেতাবি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। উন্নত জীবন যাত্রাকে আরো উন্নয়নের পথে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই তাগিদে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির ভূমিকাঃ

শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বা লিখে শেষ করা  যাবেনা। আমরা যদি কয়েক বছর পিছিয়ে  গিয়ে তখনকার শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখা  যাবে তখনকার শিক্ষাব্যবস্থা এখনকার আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা  একরকম নয়।

অনেক তফাৎ। আগে শিক্ষকরা পাঠশালায়  শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা  পাঠশালায় তালপাতার  দোয়াত কালি দিয়ে লেখাপড়া করতো।  কারণ তখন কাগজ-কলম  ছিলনা। এর কয়েক বছর পর প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটলো আবিষ্কৃত হল কাগজ-কলম।

তখন থেকে শিক্ষাব্যবস্থা একটু পরিবর্তন আসলো। লেখকরা কাগজে তাদের বই লেখা শুরু করলেন, শিক্ষার্থীরা  কলম দিয়ে কাগজের উপর লেখা শুরু  করল। এরপর আবিষ্কৃত হল  মুদ্রণ যন্ত্র/ছাপার যন্ত্র বা প্রিন্টার।

তারপর আস্তে আস্তে তৈরি হলো  বড় বড়  স্কুল-কলেজ। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে গিয়ে লেখাপড়া শুরু করে। এরপর আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের  ক্লাস শুরু হয় ঘড়ির টাইম দেখে এবং শেষ হয় টাইম দেখেই ঘন্টা বাজিয়ে।

ঘড়ি এবং ঘন্টা দুটোই প্রযুক্তির  দান। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ভূমিকা: প্রযুক্তির উন্নয়ন শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে আমুল পরিবর্তন। সারাবিশ্ব তথা দেশ ডিজিটাল হওয়ার সাথে সাথে হয়েছে স্টুডেন্টস, টিচারস, এবং এডুকেশন সিস্টেম।

আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  সার্বিক কাজকর্ম সম্পাদিত হয় অনলাইনের মাধ্যমে। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর থেকে অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ে অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। যেকোনো পরীক্ষার  সিলেবাস,   সাজেশন, প্রশ্নপত্র, মার্কশিট, রেজাল্ট  সবকিছু পাবলিশড করা হচ্ছে  অনলাইন ওয়েবসাইটে।

স্পেশালি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা গুলোর  সবকিছু প্রকাশিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এছাড়া এখনকার শিক্ষার্থীরা আইসিটি  ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত সাবজেক্ট গুলো ব্যবহারিকভাবে শিখতে পারছে  বিদ্যালয়স্থ ল্যাবরেটরীতে গিয়ে।

এতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। কারণ শুধুমাত্র বই পড়ার কারণে যে  জ্ঞান আসে  প্র্যাকটিক্যালি শেখার মাধ্যমে তার থেকে অনেক বেশি জ্ঞান  আহরণ করা সম্ভব হয়। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে অনেক বেশি উন্নত ও আধুনিক।

এর একটাই কারণ তাহল অন্যান্য দেশে  অনেক দ্রুত ঘটেছে যার ফলে তারা অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশ এখন আর খুব বেশী পিছিয়ে নেই। সময়ের সাথে  তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায়ও  পরিবর্তন ঘটছে।

শিশুরা কিন্ডারগার্টেন থেকেই প্রযুক্তির  মাধ্যমে ডিজিটাল পাঠদান নিতে পারছে। আবার আমরা যদি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কতটা অবদান রেখেছে।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর এই সময়ে  যখন  সর্বসাধারণের ঘরের বাইরে বেরোনো নিষেধ এই অবস্থার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে। অবশেষে টা প্রযুক্তির কল্যাণে সম্ভব হচ্ছে।

অনলাইনে পড়াশোনা কার্যক্রমঃ

প্রযুক্তির  বদৌলতে  শিক্ষার্থীরা  ঘরে বসেই তাদের স্মার্টফোন, টপ বা কম্পিউটারের সাহায্যে জুম অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি শিক্ষকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে ক্লাস করতে পারে।

শিক্ষকরাও ঘরে  বসে  পাঠদান করতে পারেন। এতে যেমন শিক্ষার্থীরা লাভবান হচ্ছেন  শিক্ষকরা উপকৃত হচ্ছেন। কারণ তাদের কাউকেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে এই অবস্থার মধ্যে বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন পরছে না। এদিকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীরাও  তাদের স্টাডি  কন্টিনিউ করে যেতে পারছে।

আধুনিক বিশ্বে আমরা শিক্ষা কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারছি। যেমন: কেউ পড়াশোনা শেষ করে পাইলট হচ্ছে। সে কিন্তু তার ট্রেনিং টা প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রে।

গবেষণাগারে গবেষণা করছে। গবেষণা তারা  শিক্ষা কেন্দ্রে বসেই শিখেছে।  মূলত  প্রাচীন যুগের  পর পৃথিবীর ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কৃতিত্ব রয়েছে। কারণ  শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত না হলে  জীবন যাপন এতো উন্নত হতে পারতো না।

সবশেষে, আধুনিক বিশ্ব  গড়ে ওঠার পেছনে  প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য।

শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি প্রযুক্তির ছোঁয়া না লাগতো আমরা হয়তো এখনও আদিমকালের সমাজ ব্যবস্থায় পড়ে থাকতাম।

যেহেতু প্রযুক্তির উন্নয়ন থেমে নেই  সেহেতু ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থা হয়তো আরো অনেক বেশি উন্নত হবে যা আমরা এখনকার সময়ে বসে কল্পনাও করতে পারছিনা।

Level 1

আমি সুমাইয়া আমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস