অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন

জন্ম নিবন্ধন হলো একজন মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, আমাদের দেশে বর্তমানে ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে ১৫ কোটি মানুষের। অর্থাৎ এখনও প্রায় এক কোটি মানুষের এটি করা হয়নি। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা ও সতর্ক হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একান্ত জরুরী।

 

জন্ম নিবন্ধন কী?

জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান এবং জন্ম সনদ প্রদান করা।

জন্ম নিবন্ধন যেসব কাজে লাগে

জন্ম সনদ একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। যেমন-

১) পাসপোর্ট ইস্যু

২) বিবাহ নিবন্ধন

৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি

৪) সরকারী, বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান

৫) ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু

৬) ভোটার তালিকা প্রণয়ন

৭) জমি রেজিষ্ট্রেশন

৮) ব্যাংক হিসাব খোলা

৯) আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি

১০) গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি

১১) ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি

১২) ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি

১৩) বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি

১৪) গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি

১৫) ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি

১৬) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি

জন্ম নিবন্ধন না করলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়

১) বর্তমানে স্কুলগুলোতে ভর্তির সময় বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ চাওয়া হয়। অনেক সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকার কারণে মেধা থাকা সত্ত্বেও ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় না।

২) অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে শিশুরা নানা ধরনের কিশোর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এক্ষেত্রে বিচার শুরু করার আগে বা শাস্তি প্রদানের আগে তার বয়স প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এজন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ মূল ভূমিকা পালন করে।

৩) পড়াশোনা, জীবিকা, ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যেতে প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের। পাসপোর্টের আবেদন ফরমের সাথে যেসকল কাগজপত্র জমা দিতে হয় তার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ অন্যতম। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে পাসপোর্ট তৈরি করা যায় না।

৪) ভোট প্রদান করা সকল নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে ভোটার আবেদন ফরমের সাথে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে হয়। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা যায় না, ফলে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।  

৫) সরকারী চাকরি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরির ক্ষেত্রেও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে মেধা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি হাতছাড়া হয়ে যায়।

৬) বিয়ের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিয়ের সময় বয়স প্রমাণের জন্য এটি ভূমিকা পালন করে। তাই এটি ব্যতীত বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে।

৭) সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। এই সনদ না থাকলে এক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

৮) সরকারী-বেসরকারী সেবা ও সম্পদের বরাদ্দ পাওয়া যায় না।

ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায় না।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া

জন্ম নিবন্ধনের নির্ধারিত অনলাইনে আবেদন করতে হবে (ছাপানো বা হাতে লিখা এখন আর হয় না) পূরণ করে নিবন্ধকের নিকট কিছু দলিল বা প্রত্যয়নসহ গিয়ে আবেদন করতে হবে। এছাড়া অনলাইনে  আবেদন করা যাবে।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন

http://bdris.gov.bd/br/application

যা যা লাগবে-

বয়স ০ হতে ৪৫ দিন হলে।

বয়স ৪৬ দিন হতে ৫বছর হলে।

 

বয়স ৫ থেকে অথিক বয়স  হলে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জন্ম তথ্য প্রদানকারী কারা?

শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন।

এছাড়া যারা কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের নিকট তথ্য প্রেরণ করতে পারবেন:

১) ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সচিব;

২) গ্রাম পুলিশ;

৩) সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর;

 ৪) ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী;

৫) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী;

৬) কোনো সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা;

৭) নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী;

৮) জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;

৯) পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;

নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।

জন্ম নিবন্ধন কোথায় করবেন?

ব্যক্তির জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমানে বসবাস করছেন এমন যেকোনো স্থানের নিবন্ধকের কাছে জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা নিবন্ধক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন:

১) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য;

২) পৌরসভার মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর;

৩) সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর;

৪) ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা; ও

৫) বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসারগণ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসমূহে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রধান কার্যালয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে পুরাতন পৌরসভা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ জন্ম নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন।

১। নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন লিংক-http://bdris.gov.bd/br/application

নিবন্ধক কার্যালয়ের জন্য আপনার জন্ম স্থান বা স্থায়ী ঠিকানার বিভাগ, জেলা, প্রভৃতি ধাপ পার হয়ে ওয়ার্ড পর্যন্ত নির্বাচন করতে হবে। অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম প্রথমে বাংলায় (ইউনিকোড) ও পরবর্তীতে ইংরেজিতে পূরণের পর প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন পত্রটি সংশ্লিস্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে স্থানান্তিরত হয়ে যাবে, আবেদনকারীর আর কোন সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। অতঃপর পরবর্তী ধাপে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে আবেদন পত্রের মুদ্রিত কপি পাবেন। সনদের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত আবেদন পত্রে নির্দেশিত প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপিসহ নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করুন।

জন্ম নিবন্ধন সনদ আপনার কোন ঠিকানার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে চান *

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

২। জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন-http://bdris.gov.bd/br/correction

* আপনার পিতা/মাতার নাম সংশোধন করতে হলে, নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন।
* যদি আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর থাকে, তাহলে তাদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন করে তাদের নাম সংশোধন করে আসতে হবে। এরপর যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন করার সময় আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে থাকেন, তবে তাদের নাম সংশোধন করার পর আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে সেখানে পিতা/মাতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে। আর যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন করার সময় আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না দিয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বরের সাথে পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ করতে হবে। পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ম্যাপ করার পর আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনর্মুদ্রণ করলে, সেখানে পিতা/মাতার সংশোধিত নাম দেখা যাবে।
* যদি আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে এবং আপনার জন্ম তারিখ 01/01/2001 এর পূর্বে হয়, তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন করার সময় আপনার পিতা/মাতার নাম সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার পিতা/মাতা মৃত হলেও তাদের মৃত্যুর কোন প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে না।
* যদি আপনার পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না থাকে এবং আপনার পিতা/মাতা মৃত হয় এবং আপনার জন্ম তারিখ 01/01/2001 এর পরে হয়, তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন করার সময় আপনার পিতা/মাতার নাম সংশোধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার পিতা/মাতার মৃত্যুর প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।

৩। আবেদনপত্রের অবস্থা-http://bdris.gov.bd/br/application/status

৪। জন্ম নিবন্ধন এর প্রতিলিপির জন্য আবেদন-http://bdris.gov.bd/br/reprint/add

৫।  আবেদনপত্র প্রিন্ট-http://bdris.gov.bd/application/print

জন্ম নিবন্ধন ফি

শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। শিশু জন্মের ২ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন না করালে বাবা-মায়ের জন্য জরিমানা আছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনরকম ফি ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়া হয়। এ সময় বাড়ানো হয়েছিল ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে দেশের অধিকাংশ শিশু জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। জুনের পর জন্মনিবন্ধনের জন্য সরকার একটি ফি ধার্য করেছে। তবে ২ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্মনিবন্ধন যেকোন সময় বিনা ফিতে করানো যাবে। শুধু ২ বছরের বেশি সময় পার হলে এই ধার্যকৃত ফি দিতে হবে।

  • ঘরে থাকুন! বাইরে গেলে মাস্ক পরুন! COVID-19 থেকে নিরাপদ থাকুন!

সবার জন্য শুভকামনা রইলো, ভালো থাকুন এবং টেকটিউনস সাথেই থাকুন

টিউন টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Level 3

আমি মাকছুদ আলম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস