সেমিলগ (Semi-log) গ্রাফ ব্যবহারের সহজ নিয়ম

কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি ভাল। আজ কথা বলবো ইঞ্জিনিয়ারিং-য়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। আর সেটা হলো সেমিলগ গ্রাফ পেপারে বিন্দু বসানোর নিয়ম। আমরা কমবেশি সকলেই সেমিলগ গ্রাফের সাথে পরিচিত। কিন্তু এর ব্যবহার অনেকেই জানি না বা গ্রুপওয়ার্কের সময় বিন্দুগুলো সবার দেখাদেখি বসিয়ে দিই। এ কারণে আমরা অনেকে এটা শিখতে পারি না। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ভবিষ্যতে গবেষণা কাজে এ বিষয়টি অনেক কাজে লাগে।

তাছাড়াও এটি জানা সকল ইঞ্জিনিয়ারিং-স্টুডেন্ট'দের জন্য অাবশ্যিক। তবে, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বাইরেও যে এটি লাগে না তা কিন্তু না। যেখানেই ডাটা'র বড় ধরনের ভ্যারিয়েশন পাওয়া যাবে, সেখানেই এ গ্রাফটি কাজে আসে। তাই এ বিষয়টি আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চাচ্ছি। তার আগে চলুন সাধারণ গ্রাফ পেপার ও সেমিলগ গ্রাফ  পেপার সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক যা বিষয়টা বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে।

লগ (Log) এর ধারণা

একবার এক রাজ্যে অনেক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। কিন্তু নির্মম রাজা প্রজাদের জন্য কোনোরকম খাবারের ব্যবস্থা করলো না।এতে অনেক লোক মারা গেল ও দুর্ভিক্ষ চলতেই থাকলো। এক বুদ্ধিমান ভিক্ষুক রাজার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইলো। সে রাজার কাছে গিয়ে বললো, "আমি আপনার নিকট একমাস দান গ্রহণ করবো কিন্তু শর্ত হলো আমি প্রথমদিন যা নেব, দ্বিতীয়দিন নেব তার দ্বিগুণ, দ্বিতীয়দিন যা নেব তৃতীয়দিন নেব দ্বিতীয়দিনের দ্বিগুন। এভাবে একমাস নেব"।

রাজা হাসিমুখে বললেন, "তুমি প্রথমদিন কত চাও সেটাই এখন দেখার বিষয়"। ভিক্ষুকটি বললো, "আমি প্রথমদিন মাত্র ১ টাকা নেবো"। রাজা হাসিমুখে রাজী হয়ে গেলেন। ভাবলেন এ আর এমন কী? রাজা তার কোষাধ্যক্ষকে নির্দেশ দিলেন ঐ নিয়মে ভিক্ষুককে যাতে কোষাগার থেকে দৈনিক টাকা দেয়া হয়। প্রথম সপ্তাহ ভালভাবেই চললো। কিন্তু পুরো মাসের হিসাব করতেই কোষাধ্যক্ষের মাথায় হাত! কোটি কোটি টাকা চলে যাবে রাজকোষ থেকে! রাজার ভান্ডারে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা রাজাকে জানালেন। রাজা ভিক্ষুকটিকে ডেকে তার নিকট ক্ষমা চাইলেন। ভিক্ষুকটি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত লোকদের খাবার দেবার বিনিময়ে ক্ষমা করতে রাজী হলেন। রাজা এভাবে তার রাজ্যভান্ডার হারানো থেকে রেহাই পেলেন। লগ বা লগারিদম'ও ঠিক একই রকম। গ্রাফ-এ গেলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। আপাতত এটাই মাথায় রাখুন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক সাধারণ গ্রাফ পেপার ও সেমিলগ গ্রাফ পেপার কেমন হয় সে বিষয় সম্পর্কে।

সাধারণ গ্রাফ পেপার

সাধারণ গ্রাফ পেপারটা হয় সাধারণত একই সাইজের কিছু বর্গাকার ঘর নিয়ে। গণনার সুবিধার্থে ৫ ঘরের কাছে একটা বোল্ড লাইন টানা হয়। অনেকটা নিচের মতো। তবে এর ব্যতিক্রমও হয় কাজের সুবিধার জন্য। আমরা সাধারণত সুবিধাজনকভাবে প্রতি ঘরের মান নির্দিষ্ট একক ধরে গ্রাফ বসাই।

এবার আসুন সেমিলগ গ্রাফ পেপারটি দেখা যাক।

সেমিলগ গ্রাফ পেপার

সেমিলগ গ্রাফ পেপার সাধারণত নিচের মতো হয়ে থাকে। একটা চক্রে সাধারণত ১০ টি করে ঘর থাকে। অবস্থাভেদে এই ঘরের পরিমাণ ভিন্ন হয়। এই ঘরগুলোর ১ম'টির চেয়ে ২য়'টি দ্বিগুণ, ২য়'টির চেয়ে আবার ৩য়'টি দ্বিগুণ, ৩য়'টির চেয়ে আবার ৪র্থ'টি দ্বিগুণ। সেই রাজা ও ভিক্ষুকের গল্পের মতো। চিত্রের গ্রাফে একটু এদিক সেদিক হয়েছে। তবে মূল গ্রাফটা  ঐরকম।

এবার  আসুন দুই রকমের গ্রাফে বিন্দু বসানোর নিয়ম দেখে নেয়া যাক। প্রথমেই দেখাবো সাধারণ গ্রাফে বিন্দু বসানোর নিয়ম যেটা সবাই জানেন।

সাধারণ গ্রাফ পেপারে বিন্দু বসানোর নিয়ম

ধরুন, আমরা সাধারণ গ্রাফ পেপারে চারটি বিন্দু বসাবো। বিন্দুগুলো হলো (3,7), (6,11), (9,15), (12,20)। তো আমরা এর জন্য প্রথমেই কী করি। সুবিধাজনকভাবে প্রতি ক্ষুদ্রতম বর্গঘরকে ১ ধরে একটিতে ডানদিকে অনুভূমিক বরাবর ও অন্যটিকে উপরের দিকে উল্লম্ব বরাবর বসাই। তাহলে দেখুন চিত্রটা হবে নিচের মতো।

এবার আসুন সেমিলগ গ্রাফে। এটার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

সেমিলগ গ্রাফ পেপারে বিন্দু বসানোর নিয়ম

এখানে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আপনি কেন সেমিলগ গ্রাফ পেপার ব্যবহার করবেন। সাধারণ গ্রাফ পেপারে করলে ক্ষতি কী? হ্যাঁ সেটাই বলবো।

দেখুন উপরের সাধারণ গ্রাফ পেপারে যে মানগুলো বসিয়েছি সেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান বেশ কাছাকাছি। ডানদিকে বা উপরের দিকের সবগুলো মানই 1 থেকে 20 এর মধ্যেই আছে। কিন্তু বিজ্ঞানের এমনও পরীক্ষা আছে যেখানে অনেকসময় মানগুলো অন্যরকম আসতে পারে। যেমন, কোনোটার মান 20, আবার কোনোটার মান 0.5। আবার কোনোটার মান 112, আবার কোনোটার মান 0.003। এসকল ক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাফ পেপারে মানগুলো বসানো সম্ভব হয় না।

কারণ, অত ছোট বিন্দু ঘরের যেখানেই বসান না কেন মান সঠিক হবে না।এসকল ক্ষেত্রে যদি একদিকে মানের এরকম হেরফের হয় সেক্ষেত্রে সেমিলগ গ্রাফ পেপার ব্যবহার করা হয়। আর যদি ডানদিকে বা উপরের দিকে দুই ক্ষেত্রেই মানের এরকম হেরফের হয় তাহলে লগ-লগ গ্রাফ পেপার ব্যবহার করতে হয়। তবে সেমিলগ গ্রাফ পেপারে বিন্দু বসানো শিখলে লগ-লগ গ্রাফেও আপনি বিন্দু বসাতে পারবেন। কোনো অসুবিধাই হবে না। নিয়মগুলো নিচে সহজভাষায় তুলে ধরলাম।

ধরুন আমাদের (25,12), (58,6), (82, 3) এই বিন্দুগুলো সেমিলগ পেপারে বসাতে হবে। তারমানে ডান দিকে শুধুমাত্র 25, 58 ও 80 এর জন্য আমাদের সেমিলগে মান বসাতে হবে। আর বাকী 12, 6 ও 3 বসাতে হবে সমান ঘরবিশিষ্ট উপরের দিকে বসাতে হবে।

ধাপ ০১:

সেমিলগ গ্রাফ পেপারে সাধারণ গ্রাফ পেপারের মতো প্রতি 5 ঘর পরপর নাম্বারিং 5,10,15,20,25 এভাবে বসানো যাবে না। ক্রমবর্ধমান 10 ঘর বা 20 ঘর বা 30 ঘরের নাম্বারিং হবে এরকম 0.001, 0.01, 0.1, 1, 10, 100, 1000 এভাবে। নিচের চিত্রটি ভাল করে দেখুন। প্রতি ৩০ ঘর ব্যবধানে আমি নাম্বারিং করেছি। মানের ব্যবধান ছোট হলে আপনারা ১০ বা ২০ ঘর ব্যবধানেও করতে পারেন। আর উপরের দিকে আমরা প্রতি বর্গ ঘরকেই একক ধরলাম। কারণ, সেদিকে বসাতে হবে সাধারণ গ্রাফ পেপারের মতো করেই।

ধাপ ০২:

বলতে পারেন, 25 এর জন্য কোন্‌ ঘর হবে?

এজন্য আমাদের একটু ঐকিক নিয়মে চলে যেতে হবে।

দেখুন, 10 থেকে 100  পর্যন্ত মোট ঘর 30 টি। আর এই তিরিশ ঘরে মোট মান আছে = (100 - 10) = 90। তাইতো?

এবার 25 মান এর জন্য তাহলে কোন্‌ ঘর হবে? তার আগে দেখুন, যেহেতু 10 থেকে 100 পর্যন্ত আছে মানগুলো, তার মানে আমার 10 মান অলরেডি আছে।আর দরকার (25-10) = 15 মানের জন্য ঘর সংখ্যা। লাইনটি কয়েকবার পড়ুন। বুঝে যাবেন।

এবার সেই ঐকিক নিয়মে চলে যাই।

90 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30,

সুতরাং, 1 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30/90

সুতরাং, 15 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30 x 15/90 = 5 ঘর।

সুতরাং, 25 মানটি 10 থেকে ডানদিকে 5 ঘর সামনে যাবে।

সুতরাং, (25,12) বিন্দুটি হবে চিত্রের মতো এবং 12 ঘর উপরে যাবে।

এবার 58 মান এর জন্য তাহলে কোন্‌ ঘর হবে? তার আগে দেখুন, যেহেতু 10 থেকে 100 পর্যন্ত আছে মানগুলো, তার মানে আমার 10 মান অলরেডি আছে।আর দরকার (58-10) = 48 মানের জন্য ঘর সংখ্যা। লাইনটি কয়েকবার পড়ুন। বুঝে যাবেন।

এবার সেই ঐকিক নিয়মে চলে যাই।

একইভাবে, পরেরগুলোও হবে।

90 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30,

সুতরাং, 1 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30/90

সুতরাং, 48 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30 x 48/90 = 16 ঘর।

সুতরাং, 58 মানটি 10 থেকে ডানদিকে 16 ঘর সামনে যাবে।

সুতরাং, (58,6) বিন্দুটি হবে চিত্রের মতো এবং 6 ঘর উপরে যাবে।

এবার 82 মান এর জন্য তাহলে কোন্‌ ঘর হবে? তার আগে দেখুন, যেহেতু 10 থেকে 100 পর্যন্ত আছে  মানগুলো, তার মানে আমার 10 মান অলরেডি আছে।আর দরকার (82-10) = 72 মানের জন্য ঘর সংখ্যা। লাইনটি কয়েকবার পড়ুন। বুঝে যাবেন।

এবার সেই ঐকিক নিয়মে চলে যাই।

একইভাবে, পরেরগুলোও হবে।

90 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30,

সুতরাং, 1 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30/90

সুতরাং, 72 মানের জন্য ঘর সংখ্যা = 30 x 72/90 =24 ঘর।

সুতরাং, 82 মানটি 10 থেকে ডানদিকে 24 ঘর সামনে যাবে।

সুতরাং, (82,3) বিন্দুটি হবে চিত্রের মতো এবং 3 ঘর উপরে যাবে।

আর মান যদি দশমিকে আসে, তাহলে মুল ঘর -সংখ্যাটা বসানোর পর দশমিকের অংশটুকু আন্দাজ করে 0.5 এর উপরে হলে ডানে এবং নিচে হলে বামে বসাতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস