স্মার্টফোন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা ভাইটাল পার্ট। সকালের এলার্ম থেকে শুরু করে রাতের ঘুমোনো পর্যন্ত, সবকিছুতেই স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। আর এই স্মার্টফোনকে সচল রাখার জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিসটা কী? অবশ্যই এর ব্যাটারি! গেম খেলা, সিনেমা দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, অফিসের জরুরি কাজ - সবকিছুতেই ব্যাটারির চার্জ থাকা চাই। কিন্তু চার্জ যদি ফুরিয়ে যায়? তখনই শুরু হয় আসল যন্ত্রণা! এই সমস্যার সমাধানে Honor নিয়ে এসেছে তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইন “Power”। এই ফোনের মূল আকর্ষণ এর বিশাল ব্যাটারি। কিন্তু শুধু ব্যাটারি বড় হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? নাকি Honor Power-এর ভেতরে লুকানো আছে আরও কিছু চমক, যা একে বাজারের অন্য ফোনগুলো থেকে আলাদা করে তুলবে? চলুন, Honor Power-এর ক্ষমতা, দুর্বলতা, স্পেসিফিকেশন, ডিজাইন এবং পারফরম্যান্স - সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া যাক!
নতুন ফোন কেনার আনন্দটাই আলাদা! প্যাকেট খুলে নতুন ফোন হাতে নেওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। Honor Power এর বাক্স খুললে আপনি কী কী পেতে পারেন, তার একটা ধারণা দেওয়া যাক:
ডিজাইন একটা স্মার্টফোনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। দেখতে সুন্দর না হলে, ফোন ব্যবহার করতে ভালো লাগে না। Honor Power এর ডিজাইন বেশ স্লিক এবং স্টাইলিশ। ফোনটির ব্যাক প্যানেল গ্লাস নাকি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে দেখে এবং ধরে বেশ প্রিমিয়াম একটা অনুভূতি হয়।
সাধারণত, বড় ব্যাটারির ফোনগুলো একটু মোটা হয়ে থাকে। কিন্তু Honor Power এর ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। ফোনটি 8mm এর চেয়েও কম পুরু। ফলে, হাতে ধরে বেশ আরামদায়ক মনে হয়। ফোনটির ওজনও খুব বেশি নয়, তাই পকেটে বা হাতে নিয়ে ঘুরতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ফোনটা হাতে নিয়ে আপনি বেশ কনফিডেন্ট ফিল করবেন।
ডিসপ্লে একটা স্মার্টফোনের সবচেয়ে ভাইটাল একটা পার্ট। Honor Power-এ রয়েছে ‘micro quad-curved’ 6.78” OLED display (1, 224 x 2, 700px)। 120Hz refresh rate থাকার কারণে স্ক্রলিং এবং অ্যানিমেশনগুলো খুবই স্মুথ মনে হয়। গেম খেলার সময় বা ভিডিও দেখার সময় কোনো ল্যাগিং চোখে পড়বে না।
OLED display হওয়ার কারণে Colour গুলো বেশ প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল দেখায়। 10-bit color support থাকার কারণে ছবি এবং ভিডিওগুলো আরও ডিটেইলড এবং ন্যাচারাল মনে হয়। ডিসপ্লের Brightness 4, 000 nits পর্যন্ত। তাই কড়া রোদেও ডিসপ্লে দেখতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। 3, 840Hz high-frequency PWM dimming থাকায় দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের পরেও চোখের ওপর তেমন চাপ পড়বে না।
স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স নির্ভর করে এর চিপসেটের ওপর। Honor Power-এ ব্যবহার করা হয়েছে Snapdragon 7 Gen 3 chipset। এই চিপসেটটি Honor এর আগের Honor 100, 200 এবং 300 সিরিজেও দেখা গেছে। Snapdragon 7 Gen 3 একটি মিড-রেঞ্জ চিপসেট হলেও, দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এটি যথেষ্ট শক্তিশালী।
মাল্টিটাস্কিং, গেম খেলা বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো কাজগুলো এই চিপসেটে স্মুথলি করা যায়। পাবজি বা কল অফ ডিউটির মতো গেমগুলো মাঝারি গ্রাফিক্স সেটিংসে অনায়াসে খেলা যাবে।
এছাড়াও, ফোনটিতে থাকছে 12GB পর্যন্ত RAM এবং 512GB পর্যন্ত Storage। RAM বেশি থাকার কারণে ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলো অ্যাপ একসাথে চালালেও ফোন স্লো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আর 512GB Storage থাকায় আপনার পছন্দের সব ছবি, ভিডিও, গান এবং গেম অনায়াসে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
ক্যামেরা এখন স্মার্টফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলোর মধ্যে একটা। Honor Power-এ ক্যামেরার স্পেসিফিকেশন খুব বেশি আহামরি না হলেও, ছবি তোলার অভিজ্ঞতা খারাপ হওয়ার কথা নয়। ফোনটির পিছনে রয়েছে 50MP main module (f/1.95 lens এবং OIS সহ)। OIS (Optical Image Stabilization) থাকার কারণে ছবি তোলার সময় হাত কাঁপলেও ছবি ঝাপসা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
f/1.95 aperture থাকার কারণে কম আলোতেও ভালো ছবি পাওয়া যেতে পারে। এই ক্যামেরা 4K video record করতে পারে। দিনের আলোতে ছবিগুলো বেশ ডিটেইলড এবং কালারফুল হবে বলেই আশা করা যায়।
এছাড়াও একটি 5MP ultra wide লেন্সও রয়েছে। Ultra wide লেন্স দিয়ে গ্রুপ ছবি বা ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলার সুবিধা পাওয়া যায়। সেলফি তোলার জন্য থাকছে 16MP front camera, যা 1080p video support করে। সেলফি ক্যামেরার মানও যথেষ্ট ভালো হওয়ার কথা।
Honor Power-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর battery। ফোনটিতে 8, 000mAh battery ব্যবহার করা হয়েছে। Honor দাবি করছে, এই battery একবার ফুল চার্জ দিলে আপনি অনায়াসে ২৫ ঘণ্টা ভিডিও দেখতে পারবেন, ২৩ ঘণ্টা TikTok স্ক্রল করতে পারবেন, ২৩ ঘণ্টার বেশি Navigation করতে পারবেন এবং ১৪ ঘণ্টা Gaming খেলতে পারবেন। এই claim যদি সত্যি হয়, তাহলে Honor Power ব্যাটারি ব্যাকআপের দিক থেকে অন্য ফোনগুলোকে অনেক পেছনে ফেলে দেবে।
The Honor Power has an 8, 000mAh Si/C battery.
তবে ব্যাটারি ব্যাকআপ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি সারাদিন গেম খেলেন বা হাই-রেজোলিউশনের ভিডিও দেখেন, তাহলে ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আর যদি সাধারণ ব্যবহার করেন, যেমন - সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, কল করা বা মেসেজ পাঠানো, তাহলে অনায়াসে দুই দিন পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যেতে পারে।
এত বড় battery চার্জ করার জন্য ফাস্ট চার্জিংয়ের প্রয়োজন। Honor Power 66W SuperCharge ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। কিন্তু 8, 000mAh battery 0% থেকে 100% চার্জ হতে কতক্ষণ লাগবে, সে বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল তথ্য এখনো জানা যায়নি। কোম্পানির মতে, মাত্র ২% চার্জ দিয়েই এক ঘণ্টা কথা বলা বা ১০০টি WeChat কোড স্ক্যান করা সম্ভব।
66W চার্জিং 8, 000mAh battery-এর জন্য যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। বর্তমানে বাজারে অনেক ফোন 120W বা 150W ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। তবে 66W চার্জিংও খুব একটা খারাপ নয়। আশা করা যায়, প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে ফোনটি ফুল চার্জ হয়ে যাবে।
কানেক্টিভিটির জন্য Honor Power-এ রয়েছে Honor C1+ নামক একটি RF enhancement chip। এটি dual-SIM phone এবং 12/512GB variant এ BeiDou satellite texting এর সুবিধা রয়েছে। কোম্পানি দাবি করছে, triple-frequency BeiDou এবং dual-frequency GPS থাকার কারণে পজিশনাল Accuracy ২০% পর্যন্ত বাড়বে। এছাড়াও, Wi-Fi, Bluetooth 5.3 (LDAC, aptX HD) এবং NFC এর মতো আধুনিক সব ফিচার তো থাকছেই। তবে USB-C port টি USB 2.0 data rates support করে।
ফোনটি waterproof কিনা, তা নিয়ে কোনো official IP rating পাওয়া যায়নি। তবে আশা করা যায়, ফোনটি সামান্য পানি বা ধূলা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
Honor Power colorways: Snow White • Desert Gold • Phantom Night Black
Honor Power আপাতত চীনের বাজারে pre-order এর জন্য পাওয়া যাচ্ছে এ। গ্লোবাল মার্কেটে কবে আসবে, সে বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল ঘোষণা এখনো আসেনি। তবে আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই অন্যান্য দেশেও ফোনটি পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন Storage variant-এর দাম নিচে দেওয়া হলো:
Honor Power prices (MSRP)
শুরুর দিকে কিছু promotional prices থাকবে, যেগুলোতে 8/256GB model CNY 1, 700 এবং 12/512GB model CNY 2, 100 এর সামান্য বেশি দামে পাওয়া যাবে।
Honor Power তাদের জন্য পারফেক্ট, যারা দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ চান। যাদের সারাদিন গেম খেলতে হয়, প্রচুর ভিডিও দেখতে হয় অথবা যাদের কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়, তাদের জন্য এই ফোনটি খুবই উপযোগী। এছাড়া যাদের একটা নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী ফোন দরকার, তারাও Honor Power বিবেচনা করতে পারেন।
যেকোনো ফোন কেনার আগে এর ভালো এবং খারাপ দিকগুলো জেনে নেওয়া ভালো। Honor Power এর কিছু উল্লেখযোগ্য ভালো এবং খারাপ দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
ভালো দিক:
খারাপ দিক:
Honor Power নিঃসন্দেহে একটা আকর্ষণীয় ফোন। বিশাল battery, Snapdragon 7 Gen 3 chipset এবং আধুনিক ডিজাইন - সবকিছু মিলিয়ে ফোনটি অনেকের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে। তবে ক্যামেরার মান এবং চার্জিং স্পিড নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। ফোনটি বাজারে আসার পর রিভিউ দেখে সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
আপনি যদি দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ চান এবং ক্যামেরা আপনার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে Honor Power আপনার জন্য একটা ভালো বিকল্প হতে পারে। কিন্তু যদি ক্যামেরা এবং ফাস্ট চার্জিং আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে অন্য ফোনগুলোও দেখতে পারেন।
-
টেকটিউনস টেকবুম
আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 855 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।