বিজ্ঞান, এক অসীম যাত্রা। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কারের হাতছানি, আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাদের হাত ধরেই আমরা জানতে পারছি মহাবিশ্বের অজানা সব রহস্য। তেমনই এক রোমাঞ্চকর এবং যুগান্তকারী টিউন নিয়ে আজ আমরা হাজির হয়েছি।
CERN (European Organization for Nuclear Research)-এর বিজ্ঞানীরা Antimatter কণাগুলোকে "এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়" নিয়ে গেছেন! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মতো শোনালেও, এই অবিশ্বাস্য কাজটি সত্যি করে দেখিয়েছেন CERN-এর বিজ্ঞানীরা। আসুন, জেনে নিই এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনের গল্প।
এই সাফল্যের গল্প শুরু করার আগে, চলুন একটু Antimatter নিয়ে আলোচনা করি। কী এই Antimatter, কেন এটা বিজ্ঞানীদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার, তাই না?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, Antimatter হলো সাধারণ Matter-এর "mirror image", মানে প্রতিচ্ছবি। Matter বলতে আমরা যা বুঝি - যেমন, ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন - তাদের প্রত্যেকের Antimatter Counterpart রয়েছে। তবে এদের Properties (বৈশিষ্ট্য) গুলো সাধারণ Matter-এর ঠিক উল্টো। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেক্ট্রনের Negative Charge (ঋণাত্মক চার্জ) থাকে, কিন্তু একটি অ্যান্টি-ইলেক্ট্রনের (পজিট্রন) Positive Charge (ধনাত্মক চার্জ) থাকে। ভর (Mass) একই থাকলেও চার্জের ভিন্নতার কারণেই এরা সাধারণ Matter-এর থেকে আলাদা।
এখন প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীরা কেন Antimatter নিয়ে এত আগ্রহী? কেন তারা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই রহস্যের পেছনে ছুটে চলেছেন?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে মহাবিশ্বের গভীরে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, Antimatter মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিগ ব্যাং (Big Bang) তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের শুরুতে Matter এবং Antimatter সমান পরিমাণে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা যে মহাবিশ্ব দেখি, সেখানে Matter-এর প্রাধান্য অনেক বেশি। Antimatter প্রায় দেখাই যায় না। তাহলে Antimatter গেল কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা Antimatter নিয়ে গভীর ভাবে গবেষণা করছেন।
এছাড়াও, Antimatter Particle Physics-এর অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। Standard Model of Particle Physics অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মৌলিক কণা এবং তাদের মধ্যেকার Interaction গুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এই মডেল এখনও পর্যন্ত Antimatter-এর আচরণ সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাই, Antimatter নিয়ে গবেষণা Standard Model-কে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
মহাজাগতিক Collisions (সংঘর্ষ) বা Radioactive Decay-এর মাধ্যমে Antimatter প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হলেও, একে নিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন। কারণ, সাধারণ Matter-এর সংস্পর্শে আসা মাত্রই এটি Instant Annihilation (একেবারে ধ্বংস) হয়ে যায়! আর এই Annihilation-এর ফলে প্রচুর Energy নির্গত হয়, যা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে। কিন্তু সেই Energy-কে কাজে লাগানোর আগে, Antimatter-কে Control করা এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এতদিন Antimatter নিয়ে গবেষণা ছিল বেশ কঠিন, অনেকটা দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার মতো। কিন্তু CERN-এর বিজ্ঞানীরা সেই কঠিন কাজটিকেই সম্ভব করে তুলেছেন। তারা যেন দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় উঠে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন।
CERN, যা বিশ্বজুড়ে পরিচিত, পৃথিবীর অন্যতম সেই কয়েকটি Place-এর মধ্যে একটি, যেখানে Particle Accelerators ব্যবহার করে High-Energy Collisions-এর মাধ্যমে নিয়মিত Antimatter তৈরি করা হয়। সম্প্রতি, CERN-এর Researchers-রা Antimatter Transport করার একটা নতুন Method আবিষ্কার করেছেন।
এই Method-এর মাধ্যমে Antimatter-এর অল্প পরিমাণ External Laboratories-এ Transport করা যাবে। বিষয়টা একটু ভেঙে বলা যাক। এতদিন বিজ্ঞানীরা CERN-এর নিজস্ব Facility-র মধ্যেই Antimatter তৈরি করতেন এবং সেখানেই গবেষণা চালাতেন। কিন্তু এখন, এই নতুন Method-এর কল্যাণে, তারা Antimatter-কে অন্য Laboratory-তেও পাঠাতে পারবেন! ভাবুন একবার, কী বিশাল একটা Achievement! এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন, CERN-এর এই আবিষ্কারের ফলে সেই সমস্যার সমাধান হলো।
এই World-first Achievement-টা Standard Model of Particle Physics-এ যে Elusive (অধরা) Antiparticles-গুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে আরও ভালোভাবে Study করার সুযোগ করে দেবে। ফলে মহাবিশ্বের অনেক অজানা রহস্য উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে Antimatter নিয়ে আরও অনেক নতুন নতুন Research-এর পথ প্রশস্ত হবে।
এবার আসা যাক সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে। Antimatter-কে Transport করাটা এত কঠিন কেন ছিল, আর CERN-এর বিজ্ঞানীরাই বা কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করলেন?
Antimatter-কে Transport করার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, এটিকে সাধারণ Matter থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে রাখা। কারণ, আগেই বলেছি, Matter-এর সংস্পর্শে আসা মাত্রই এটি Annihilation-এর শিকার হবে, অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। CERN-এর বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধানে দুই মিটারের একটা Containment Device (সংরক্ষণকারী যন্ত্র) তৈরি করেছেন। এই Device-টা Antimatter Particles-গুলোকে সাময়িকভাবে আটকাতে পারে।
Device-এর ভেতরে এমন একটা শক্তিশালী Magnetic Field (চুম্বক ক্ষেত্র) তৈরি করা হয়, যা Antimatter Particles-গুলোকে Device-এর দেয়ালের সংস্পর্শে আসতে দেয় না। Magnetic Field-এর কারণে Antimatter Particles গুলো Device-এর মধ্যে ঘুরতে থাকে, কিন্তু কোনোভাবেই দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে না। এছাড়াও, Device-এর ভেতরে Vacuum (শূন্যস্থান) তৈরি করা হয়, যাতে Particles গুলো অন্য কোনো গ্যাসের সঙ্গে ধাক্কা না খায়।
শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা Device-টাকে Facility-র চারপাশে প্রায় চার Kilometers Truck-এ করে ঘুরিয়েছেন! Lab-এ ফিরিয়ে এনে তারা Confirm করেছেন যে Antimatter Particles-গুলো তখনও অক্ষত ছিল। তার মানে, Device-টা সফলভাবে Antimatter-কে ধরে রাখতে পেরেছিল। এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে যে Antimatter-কে Transport করার জন্য CERN-এর তৈরি করা Device-টি অত্যন্ত কার্যকরী।
আরও মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো Trip-টাতে কোনো External Power Source-এর দরকার হয়নি। Container টি এতটাই সুরক্ষিত যে Transport করার সময় Antimatter Particles গুলোকে ধরে রাখতে কোনো Extranal Power এর প্রয়োজন হয়নি। এর মানে হলো, Antimatter কণাগুলো Theoretically কয়েক Kilometers-এরও বেশি পথ যেতে পারবে! এবং এটা প্রমাণ করে যে Antimatter-কে সাধারণ Vehicle আর Europe-এর Public Road Network ব্যবহার করে দূরবর্তী Laboratories-এ নিরাপদে Transport করা সম্ভব।
CERN-এর Facility জেনেভার কাছে, France আর Switzerland-এর Border-এ অবস্থিত। Truck-টা যে Route-টা Follow করেছে, তাতে মনে হয় Researchers-রা France থেকে Switzerland-এ ঢুকেছিলেন, এবং পরে আবার Border Cross করে France-এ ফিরে এসেছিলেন। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে Antimatter Transport করার জন্য আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করাও সম্ভব।
CERN-এর এই আবিষ্কারের Practical Application অনেক। Physics-এর বিভিন্ন Research-এর ক্ষেত্রে এটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
Physicists-রা সম্প্রতি একটা Study-তে Antimatter Transport-এর Practical Application ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, CERN-এর Antimatter Factory-তে তৈরি Low-Energy Protons ব্যবহার করে Precision Measurements করতে কিছু Limit আছে। Facility-র Decelerators থেকে Magnetic Field Fluctuations-এর কারণে Experiments-এ সমস্যা হয়। কিন্তু Dedicated Off-site Laboratories থাকলে আরও Accurate Results পাওয়া যেতে পারে।
এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা CERN-এর Facility-র মধ্যেই Antimatter নিয়ে গবেষণা করতেন। কিন্তু Facility-র ভেতরে নানা ধরনের Magnetic Field এবং অন্যান্য Interferance-এর কারণে Accurate Measurement নিতে সমস্যা হতো। এখন যেহেতু Antimatter-কে অন্য Laboratories-এ Transport করা সম্ভব, তাই বিজ্ঞানীরা ঝামেলামুক্ত পরিবেশে আরও ভালোভাবে গবেষণা করতে পারবেন।
ভবিষ্যতে Antimatter Transport-এর মাধ্যমে আরও অনেক নতুন নতুন Research করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে কয়েকটির কথা নিচে উল্লেখ করা হলো:
CERN যেহেতু প্রমাণ করেছে যে তারা Antiparticles-গুলোকে নিরাপদে তাদের Grounds-এর বাইরে Transport করতে পারে, তাই তারা Antimatter Project-এর Next Phase-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। Germany-র Heinrich Heine University Düsseldorf-এ একটা State-of-the-art Facility তৈরি হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সেখানে Antimatter Cargo-র প্রথম Batch পাঠানো হবে। কণাগুলো প্রায় ৮০০ Kilometers পথ পাড়ি দেবে তাদের Destination-এ পৌঁছানোর জন্য!
ভাবুন একবার, Antimatter ভর্তি একটা Truck রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে! Science Fiction যেন সত্যি হতে চলেছে। CERN-এর বিজ্ঞানীরা যেন Science Fiction-কে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন।
CERN-এর এই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞানের জয় নয়, মানবতারও জয়। মানুষের অদম্য কৌতূহল আর নিরলস প্রচেস্টার ফলেই আজ আমরা মহাবিশ্বের গোপন রহস্য জানার এত কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছি। Antimatter নিয়ে এই গবেষণা ভবিষ্যতে Physics-এর অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে, এটা বলাই বাহুল্য। কে বলতে পারে, হয়তো এই আবিষ্কারের ফলেই একদিন আমরা Warp Drive তৈরি করে আলোর গতিতে মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারব!
CERN-এর বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করলেন, মানুষের চেষ্টা আর বিজ্ঞান এক হলে যেকোনো কঠিন কাজও সম্ভব। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা আরও নতুন নতুন আবিষ্কারের অপেক্ষায় রইলাম। বিজ্ঞান এগিয়ে যাক এই কামনাই করি।
-
টেকটিউনস টেকবুম
আমি টেকটিউনস টেকবুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 855 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।