নতুন তৈরি করা ব্যাটারির কার্যক্ষমতা হবে বর্তমানের চাইতে অনেক উন্নত এবং দীর্যস্থায়ী, যা ব্যবহার করা যাবে অর্ধযুগ ধরে

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলে আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আজকাল আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি। যেখানে আমাদের সারাক্ষণ ইন্টারনেটে ভিডিও দেখা, গেম খেলা সহ যাবতীয় কাজ করে থাকি।

আজকালকার স্মার্টফোন গুলোতে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি দেওয়া হয়। যেখানে 4000mAh থেকে শুরু করে 7000mAh পর্যন্ত ব্যাটারি পাওয়া যায়। যেটি একটি স্মার্টফোন কে সারাদিন চালানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটা যে, এই ব্যাটারিগুলোর কার্যক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। একটি ব্যাটারি কার্যক্ষমতা প্রথমদিকে 100% থাকলেও একবছর পরে গিয়ে সেটি 80% হতে পারে।

এক্ষেত্রে নতুন অবস্থায় আপনি সেই স্মার্টফোনটির Screen time যদি ১০ ঘন্টা পান, তবে এক বছর পরে গিয়ে আপনি আর সেই সময় ব্যবহার করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে হয়তোবা আপনি সাত থেকে আট ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবেন কিভাবে করে আপনি যখন আরো অধিক সময় ধরে সেই স্মার্টফোনটি যখন করবেন এক্ষেত্রে Screen time আরো কমতে থাকবে। এখানে এসেই স্মার্টফোনটির যে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি রয়েছে তা সময়ের সাথে সাথে কমে যাচ্ছে। আর এটিই কিন্তু স্বাভাবিক, যেখানে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি টি দিন দিন তার ক্যাপাসিটি হারিয়ে ফেলবে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোনগুলোর যেরকম উন্নতি সাধিত হয়েছে সে রকম ভাবে স্মার্টফোনের ব্যাটারি গুলোর কোন উন্নতি হয়নি। বরং, এখানে উন্নতি বলতে লিথিয়াম-আয়ন থেকে লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি এই দুইয়ের মাঝেই আছে। যেখানে 2000mAh থেকে 3000 mAh ব্যাটারি এবং 3 হাজার থেকে 5 হাজার এমএএইচ ব্যাটারিতে উন্নতি করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই 3000mAh ব্যাটারি এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে না। বলতে গেলে স্মার্টফোন কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের ক্ষেত্রে ব্যাটারি এর গবেষণা নিতান্তই অনেক কম পরিমাণে হচ্ছে, যেরকম ভাবে একটি স্মার্টফোন কিংবা কোন ডিজিটাল ডিভাইস এর ভিতর নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে।

যদিও একটি স্মার্টফোনের ব্যাটারির বয়স হবার বিষয়টি এর কার্যক্ষমতা নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে আপনি কতবার সেই ব্যাটারিটি রিচার্জ এবং ডিসচার্জ করেছেন। আপনি একটি ব্যাটারিকে যতবার রিচার্জ এবং ডিসচার্জ করবেন সেটির ক্যাপাসিটি ততই কমতে থাকবে। অর্থাৎ, আপনি যদি ব্যাটারি নাই ব্যবহার করেন এবং এটিকে ব্যবহার না করে যদি এক থেকে দুই বছর ফেলে রাখেন তবে এটির কোন সমস্যাই হবে না। আপনি যখন সেই ব্যাটারিকে রিচার্জ এবং ডিসচার্জ করবেন তখন সেই ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমতে থাকবে।

অর্থাৎ, আপনি একবার সেই ব্যাটারিটি রিচার্জ করলেন এবং সেটিকে ব্যবহার করলেন। এভাবে করে আপনার ব্যাটারির চার্জ সাইকেল যত বেশি হবে আপনার ব্যাটারি কার্যক্ষমতা ততই কমতে থাকবে। এটি একটি প্রধান সমস্যা যে কারনে কোন ব্যবহারকারী একটি ডিভাইস কে বেশিদিন ব্যবহার করতে পারে না। এক্ষেত্রে হয়তোবা সেই ডিভাইসটিকে পরিবর্তন করতে হয়, নয়তোবা সেই ব্যাটারিকেই পরিবর্তন করতে হয়। তাহলে আমরা কি এর কোন সমাধান পাব না, যে একটি ব্যাটারিকে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলেও এর চার্জ সাইকেল এর কিছুই হবে না? হ্যাঁ, এ সমস্যার সমাধান ও বিজ্ঞানীরা বের করার চেষ্টা করছে।

কেমন হবে সেই দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি?

সর্বশেষ এর একটি সমাধান পাওয়া গেছে। জাপানের কিছু গবেষক এমন একটি ম্যাটেরিয়াল খুঁজে পেয়েছে যেটির মাধ্যমে একটি ব্যাটারি ৫ বছর ব্যবহারের পরেও সেই ব্যাটারিটি ৯৫% কার্য ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। যার মানে, আপনি 5 বছর পরেও নতুন অবস্থার মতো সেই ব্যাটারি টির ব্যাকআপ পাবেন। যেটা কিনা একটি স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা। আপনি কি তবে জানেন যে সে ম্যাটেরিয়াল টির নাম কি?

সেই ব্যাটারি তৈরি করার ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়াল টির নাম হচ্ছে, bis-imino-acenaphthenequinone-paraphenylene (BP) copolymer। আমি জানিনা যে এই ম্যাটারিয়াল টির নাম কেন এতটা অদ্ভুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি চান তবে এই ম্যাটারিয়াল টি গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন। যেখানে এই ম্যাটেরিয়াল টির মাধ্যমে কোন একটি ব্যাটারির কার্যক্ষমতাকে বর্তমানের চাইতে অনেক উন্নত করা যাবে।

সেখানে এই ম্যাটেরিয়াল যুক্ত ব্যাটারিটি সবচাইতে বেশি কাজে দেবে ইলেকট্রিক কার গুলোতে। কেননা একটি ইলেকট্রনিক কারে অধিক পরিমাণ ব্যাটারির ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যদি সেই ব্যাটারি গুলো তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তবে এগুলোকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে এবং এতে করে অধিক পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে ব্যাটারিগুলো পাল্টানোর ক্ষেত্রে টাকার অংক টিকে না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু এই ব্যাটারিগুলো যে পরিবেশের ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা একবার কল্পনা করে দেখুন। যেখানে অনেক অনেক পরিমান ব্যাটারি পড়ে থাকবে এবং যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

এখানে যদি এই ম্যাটারিয়াল টিকে ব্যাটারীতে ব্যবহার করা হয় তাহলে ব্যাটারির যে ক্যাপাসিটি রয়েছে তা খুব কম ক্ষয় হবে। যে কারণে ব্যাটারি গুলোকে খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন ও করতে হবে না এবং এর ফলে অব্যবহৃত ব্যাটারির পরিমাণ কমে যাবে। যেটি কিন্তু আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। শুধু এটা যে আমাদের পরিবেশ এবং অর্থের সাশ্রয় করবে বিষয়টি তা নয়। বরং এই ব্যাটারিগুলো আমাদের ভোগান্তিকে ও অনেকটা লাঘব করে দেবে।

এই ম্যাটারিয়াল যুক্ত ব্যাটারিগুলো আমরা কখন পাবো?

এবার প্রশ্ন হতে পারে যে আমরা এই ম্যাটারিয়াল যুক্ত ব্যাটারিগুলো কখন পাবো। যেখানে আমরা লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার যুক্ত ব্যাটারি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের ডিভাইস গুলোকে পরিচালনা করছি। যেখানে আমাদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটিই হতেই পারে যে, আমরা কখন এই পলিমার যুক্ত ব্যাটারিগুলো আমাদের ইলেকট্রিক কার কিংবা স্মার্টফোনে দেখতে পাবো?

তো দেখুন, এই জিনিসটি এখনো ডেভলপমেন্ট করার কাজে রয়েছে। এক্ষেত্রে এটির ব্যবহার সাধারন ডিভাইসগুলো এবং ইলেকট্রনিক কার গুলোতে আসতে অনেক সময় লাগতে পারে, বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে। এবার আমাদের প্রশ্ন হতে পারে যে, কেনইবা স্মার্টফোনে এই ম্যাটারিয়াল যুক্ত ব্যাটারিকে দেরিতে ব্যবহার করা হবে? তো দেখুন, একটি স্মার্টফোন কোম্পানি কখনোই তাদের ফোনে এমন কোন ফিচার যুক্ত করতে চাইবে না যাতে করে তাদের স্মার্টফোনগুলো তারা অধিক সময় ধরে ব্যবহার করবে। একটি স্মার্টফোন কোম্পানি সবসময় এটাই চাই যে, আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই স্মার্টফোনটি পাল্টিয়ে নতুন একটি স্মার্টফোন ক্রয় করেন।

এক্ষেত্রে তারা চাইবে যে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার পুরাতন ডিভাইসটি পাল্টিয়ে নতুন একটি ডিভাইস কিনুন। যেটি কিনা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো। স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি গুলো সবসময় এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবে এবং যতটা সম্ভব তারা সময় নিবে এই প্রযুক্তির ব্যাটারি গুলোকে তাদের স্মার্টফোনে যুক্ত করতে। কিন্তু হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই ভবিষ্যতে এই ম্যাটারিয়াল যুক্ত ব্যাটারিগুলো আমাদের স্মার্টফোনে দেখতে পাবো। যেখানে এই ব্যাটারিগুলো তাদের ক্যাপাসিটি কে খুবই কম পরিমাণে ক্ষয় করবে।

আমার মতে এই প্রযুক্তির ব্যাটারি গুলোকে সবার প্রথমে ব্যবহার করা হবে আর্টিফিশিয়াল অর্গান বা কৃত্রিম অঙ্গ গুলোতে। মানুষের দেহে যে সমস্ত কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো লাগানো হয় যেগুলোর ভেতরে ব্যাটারি রয়েছে, এই ব্যাটারি গুলোকে পরিবর্তন করা অনেক খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এটি আরও অনেক ঝামেলার কাজ। তো এই সাধারণ ব্যাটারির পরিবর্তে নতুন এই ম্যাটারিয়াল যুক্ত ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় তবে এগুলোকে খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা এর কার্যক্ষমতা থাকবে অনেকদিন ধরে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই খাতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে।

আর এভাবে করে আমরা পরবর্তী ধাপে ইলেকট্রিক কার এবং এর পরের ধাপে আমরা আমাদের স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস গুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যাটারি গুলোকে দেখতে পারি।

তো বন্ধুরা আমি আশা করছি যে এই টিউনটির মাধ্যমে আপনারা নতুন কিছু শিখতে পেরেছেন। যদি টিউনটি আপনার কাছে ভাল লেগে থাকে তবে জোসস করে শেয়ার করুন এবং সেইসঙ্গে আমাকেও ফলো করতে ভুলবেন না। কেননা আমি এরকমই নিত্যনতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে টিউন নিয়ে আপনাদের সামনে প্রতিনিয়ত হাজির হই। যদি কিন্তু আপনার কাছে নিতান্তই ভালো মনে না হয় তবে এক্ষেত্রে ও আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন, কেননা ভবিষ্যতের তো আপনার মনের মত কোন টিউন নিয়ে আসতেও পারি।

বন্ধুরা আজ তবে এখানেই বিদায় নিচ্ছি এবং পরবর্তী টিউন দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তীতে আরো নতুন কোন বিষয়ের উপর টিউন নিয়ে ইনশাআল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 332 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস