বিজ্ঞাপণ না দেখিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে আয় করে?

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমি নিশ্চিত যে আপনাদের মধ্যে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন অথবা কখনও না কখনও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছেন। হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে অন্যান্য মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন এর মতই মেসেজ আদান-প্রদান করা যায়। এখানে কোন মেসেজ আদান-প্রদান করার পাশাপাশি ভিডিও কিংবা অডিও কলিং, ফটো, ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়।

হোয়াটসঅ্যাপ এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হয় না। হোয়াটসঅ্যাপের অন্য প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে যেমন কারো সঙ্গে চ্যাটিং করার জন্য তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হয় সেখানে হোয়াটসঅ্যাপে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। এখানে আপনার ফোনে অপরপ্রান্তের ব্যক্তির মোবাইল নাম্বারটি সেভ করা থাকলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় স্বাভাবিকভাবে আমরা যেমন মোবাইলে এসএমএস করি। এখানে দেশে কিংবা বিদেশে কথা বলার জন্য কোন চার্জ প্রযোজ্য হয় না। আনলিমিটেড ভাবে ফ্রি ভিডিও কিংবা অডিও কলিং, ফটো, ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়।

তবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার এবং লক্ষণীয় বিষয় অন্যটি। আর আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তবে একটি জিনিস ভালভাবেই জানেন তাহলো, হোয়াটসঅ্যাপ ফ্রি হওয়া সত্বেও এখানে কোন বিজ্ঞাপণ দেখানো হয় না। যেখানে এত সব সুবিধা, মেসেজ আদান-প্রদান করার ক্ষেত্রে এনক্রিপটেড পদ্ধতি ব্যবহার করা এসব কিছুই ফ্রিতে।

যেখানে আর সকল প্ল্যাটফর্ম যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ওয়েবসাইট গুলো বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে টাকা ইনকাম করে সেখানে হোয়াটসঅ্যাপ আমাদেরকে বিনামূল্যে সেটি ব্যবহার করতে দেয়। যেখানে টাকা তো লাগেই না, আবার এখানে বিজ্ঞাপণ ও দেখানো হয় না। তো এবার প্রশ্ন হতে পারে যে হোয়াটসঅ্যাপ তবে কিভাবে টাকা ইনকাম করে। তো বন্ধুরা, হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা ইনকাম করে সেই বিষয়টি সম্পর্কে আজকের এই টিউনে আমি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। এজন্য আপনাদেরকে যা করতে হবে তা হলো সম্পূর্ণ টিউনটি মনযোগ দিয়ে পড়া।

বিজ্ঞাপণ না দেখিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা আয় করে?

হোয়াটসঅ্যাপ এর কাহিনীটি শুরু হয় 2009 সালে, যখন Jon Koum ও Brian Action মিলে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করে। তখন তাদের চিন্তা এমন ছিল যে, তারা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে যেখানে কোনো বিজ্ঞাপণ দেখানো হবে না। কিন্তু এটিকে তারা পুরোপুরি ফ্রি করতে পারেনি, কেননা তাদের সাইট চালানো, সার্ভার খরচ, বিদ্যুৎ খরচ, কর্মীদের বেতন সহ যাবতীয় বিষয়গুলোতে অর্থের প্রয়োজন ছিল। তখন তারা একটি সিদ্ধান্ত নিলো যে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীকে বাৎসরিক 1 ডলার করে পে করতে হবে।

এজন্য প্রথম এক বছর হোয়াটসঅ্যাপ ফ্রিতে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু তারপরের বছর থেকে ব্যবহার করতে হলে ১ ডলার সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে। তো এভাবে করে চলতে থাকে পাঁচ বছর। এরপর ২০১৪ সালে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ কে কিনে নেয় ১৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে এবং তখন হোয়াটসঅ্যাপকে সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেয়। আর এখানেই মূল কাহিনীটি শুরু হয়। এখন আপনি হয়তোবা এখানে ভাবতে পারেন যে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ কে ১৯ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিয়ে সেটিকে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিচ্ছে, এজন্য তো তাদের তো পুরো টাকায় লোকসান।

ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে অন্যভাবে আপনার থেকে ফায়দা লুটছে। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে আপনাকে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেওয়ায় লোকসান করছে ব্যাপারটি ঠিক এটি নয়। এই ব্যাপারটিকে আপনি যদি খুব গভীরভাবে চিন্তা করেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে তারা কিভাবে আপনার থেকে লাভ করছে। আর এজন্য আপনাকে একটি বিষয় বুঝাতে হবে।

আপনি একবার ভাবুন যে, ইন্টারনেটে আপনার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কোনটি? আপনার সবচাইতে মূল্যবান জিনিস কোনটি যেটি ইন্টারনেটে অনেক দাম। আর এটি হচ্ছে আপনার ডেটা। আপনারা যারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন তাদের প্রচুর ডাটা রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ এর কাছে, আর সেই ডেটাকে ফেসবুক কাজে লাগাতে পারবে তাদের টার্গেটেড অডিয়েন্স কে খুঁজে বের করার জন্য এবং তাদেরকে বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্য। তো অনেকেই বলতে পারে যে এই টার্গেটেড বিজ্ঞাপণ আসলে কি?

তো দেখুন, ধরুন আপনার একটি এলইডি টেলিভিশন এর দরকার। টেলিভিশন কিন্তু আপনার বাজেট ১৫০০০ টাকা। এবার আপনি সেই টেলিভিশনটি কেনার জন্য গুগলে কিংবা কোনো ই-কমার্স সাইটে অনুসন্ধান করলেন। এবার আপনি ফেসবুকে এসে যদি দেখতে পান যে সেখানে ১৫ হাজার টাকা দামের একটি সাইকেল দেখাচ্ছে আপনাকে কেনার জন্য, তবে এটি কিন্তু আপনার স্বাভাবিকভাবেই কেনার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা আপনার দরকার এলইডি টেলিভিশন, সাইকেল নয়।

এখানে আপনি সেই সাইকেল কেনার জন্য কিন্তু আসল গ্রাহক না। বরং এখানে অন্য কাউকে যদি সেই সাইকেলটি অফার করা হতো যে সাইকেল সম্বন্ধে আগ্রহী, তাহলে সেটি বিক্রি হতে পারত। এভাবে করে আপনাকে যদি সেই এলইডি টেলিভিশন এর বিজ্ঞাপণটি ফেসবুকে দেখানো হতো তবে আপনি হতেন তাদের টার্গেটেড অডিয়েন্স। কিন্তু আপনাকে অন্য বিজ্ঞাপণ দেখানো হলে সেটি যেমন আপনার জন্য কোন উপকারে আসবে না, ঠিক তেমনি যে কোম্পানিটি টাকা খরচ করে সেই বিজ্ঞাপনটি আপনাকে দেখাচ্ছে তারও কোন উপকারে আসবেনা। যেখানে সেই বিজ্ঞাপনদাতার লোকসান ছাড়া আর কিছুই নয়।

তবে এমন যদি হয় যে আপনার ছেলে রয়েছে, যার জন্য একটি সাইকেল দরকার তবে সে বিজ্ঞাপনটি উপকারী হবে। এখানে যদি বিজ্ঞাপনদাতা টি আপনার সন্তানকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনটি দেখায় তবে সেক্ষেত্রে আপনি তাদের মূল গ্রাহক। আপনি যদি অনলাইন প্লাটফর্ম এ আপনার সন্তানের জন্য সাইকেল খুঁজে থাকেন তবে সেটি আপনার যেমন উপকারে আসবে তেমনি সেটি বিজ্ঞাপনদাতারও কাজে দিবে। তো এতে কি বলা হয় টার্গেটেড অ্যাড। যে ব্যক্তি নিজের বিষয়ে আগ্রহ থাকে সেই বিষয়টির বিজ্ঞাপণ দেখানোই হয়েছে টার্গেটেড বিজ্ঞাপণ।

তো এখন প্রশ্ন হতে পারে এটা কোম্পানি কিভাবে করে? কিভাবে একটি কোম্পানি বোঝে যে আপনি এই বিষয়ে আগ্রহী এবং আপনাকে সেই পণ্য বা সেবাটি দেখাতে হবে?

বিজ্ঞাপণ দেখানোর কাজে এখানে মূলত ব্যবহার করা হয় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলোকে। আপনি কোথায় আছেন, কি বিষয়ে সার্চ করছেন, কি দেখছেন, কোন টিউনে বেশি লাইক করছেন ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য। ফেসবুকের ক্ষেত্রে যদি এটি বিবেচনা করা যায় তবে ফেসবুক আপনার সম্বন্ধে এসব তথ্য গুলো জানে। আপনি কোন বিষয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং কোনটি ভালোবাসেন না সেটি আপনার চাইতেও তারাই বেশি জানে। এখানে আপনার সমস্ত ডাটাগুলোকে এনালাইসিস করে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে তারা পৌঁছাতে পারে যে আপনি কোন বিষয়ে আগ্রহী।

কোন একটি গ্রাহক সম্বন্ধে একটি সঠিক ধারণা বা সেই ব্যক্তির আগ্রহ সম্বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দাঁড় করানোর জন্য সেই ব্যক্তিটির অনেকগুলো ডেটার প্রয়োজন হয়। এখানে আপনার ব্যবহারবিধি কে এনালাইসিস করে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দাঁড় করায় আপনার সম্পর্কে। হোয়াটসঅ্যাপে যেহেতু আপনার প্রচুর পরিমাণে ডেটা রয়েছে, আর এসব ডেটাগুলো তারা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপণ এর ক্ষেত্রে। হোয়াটসঅ্যাপ কে মূলত ব্যবহার করা হয় এজন্যই যে, ফেসবুকে যেন টার্গেটেড অডিয়েন্সকে বিজ্ঞাপণ দেখানো হয়। এজন্য হোয়াটসঅ্যাপ কে ফেসবুকের ডাটা কালেক্টর ও বলা চলে, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক এর জন্য ডেটা সংগ্রহ করছে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্য।

যদিও ফেসবুক প্রথমে বলেছিল যে, আমরা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীর কোনো তথ্য নেই না বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্য। কিন্তু বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ সেই প্রাইভেসি পলিসি তে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যেখানে আপনার থেকে অনুমতি নিয়েই তারা আপনার তথ্যগুলো ব্যবহার করবে ফেসবুকের জন্য, যেটি নিয়ে কিছুদিন আগে অনেক আলোচনা-সমালোচনা শোনা গেল। যে প্রাইভেসি পলিসি ছিল, আপনি যদি সেটি গ্রহণ না করেন তবে আপনি আর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

এখানে হোয়াটসঅ্যাপ এর ক্ষেত্রে তথ্যগুলো ফেসবুকের সঙ্গে শেয়ার করার বিষয়টি নিয়ে আমার মনে হয় না যে অতটা মাথা ঘামানোর রয়েছে, কেননা তারা তো এমনিতেই আমাদের তথ্যগুলোকে নিয়ে নিচ্ছে। আমরা কোন কিছু ইন্টারনেটে সার্চ করলে, কোন ওয়েবসাইটে গেলে কিংবা ফেসবুকে গিয়ে ও যদি কোন বিষয়ে বেশি আগ্রহ দেখায় তবে সেই বিষয়ের বিজ্ঞাপনগুলি আমরা দেখতে পারি। যেখানে সর্বক্ষেত্রেই আমাদেরকে ট্র্যাক করা হয় এবং আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলোকে নেয়া হয়। সেখানেও হোয়াটসঅ্যাপ আমাদের তথ্যগুলো নিলে দোষ কি। তবে এখানে দোষের বিষয়টি হতে পারে তারা আমাদেরকে বলছে যে আমাদের কোন তথ্য নেয় না, কিন্তু গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে সেটি নিবে।

আপনার তথ্যগুলো যে হোয়াটসঅ্যাপ আগে থেকেই নেয়নি এর তো কোনো গ্যারান্টি নেই। এটি আগে হয়তোবা ফেসবুক লুকিয়ে লুকিয়ে আপনার তথ্যগুলো কে ব্যবহার করত, এখন সেটি প্রকাশ্যে আপনার অনুমতি নিয়েই করছে। এখানে তারা আগে আপনার তথ্যগুলো নিয়েছে কিনা সেটি তাদের ব্যাপার। তবে আমাদেরকে অনলাইনে যেভাবে করে ট্র্যাকিং করা হয় তাতে করে আমরা এটি ধরে নিতে পারি যে, কোন না কোনভাবে আমাদের তথ্যগুলোকে তারা নিয়ে থাকতে পারে।

বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ আপনার তথ্যগুলো ফেসবুকের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আপনার থেকে অনুমতি নিচ্ছে। যেখানে কিছুদিন আগে তাদের নতুন শর্তে এসব বলা হয়েছে। তবে এখানে অনুমতি না দেবার কোন সুযোগ নেই, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ঠিকই তাদের শর্তে সম্মত হতে হবে। আর যদি আপনি তাদের শর্তে সম্মত না হন তবে আপনি আর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না।

হোয়াটসঅ্যাপ এ বিজ্ঞাপণ না দেখানোর আরও একটি কারণ হতে পারে যে, এটি এখনও তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ওপর নজর দিচ্ছে। এখানে তাদের প্রধান লক্ষ্য হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী বৃদ্ধি। যেটি কিন্তু তাদের অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ এর প্রায় ২ বিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে। এখন আপনাদের মনে হতে পারে যে, হোয়াটস্যাপ এর এই অতিরিক্ত ব্যবহারকারী দিয়ে কি হবে যদি সেখান থেকে কোন টাকাই আয় না হয়।

তো দেখুন, অনলাইন ব্যবসায় প্রধান যে বিষয়টি তা হচ্ছে অডিয়েন্স। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে যার কাছে যত বেশি গ্রাহক থাকবে সে তত বেশি ভালো ব্যবসা করতে পারবে। এটি একটি ব্যবসায় কৌশল। এই কৌশলটি কিন্তু প্রথমে ভারতের জিও এর ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে। প্রথমে ভারতে যখন জিও সিম আসলো তখন সেটি সবাইকে ফ্রিতে দেওয়া হল এবং সেইসঙ্গে ইন্টারনেট মিনিট এর অফুরন্ত অফার‌।

এমন পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিল যে, জিও সিম ফুটপাতে বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছিল। জিও সিম নিয়ে যাও, ফ্রিতে ডাটা, ফ্রিতে কলিং, ফ্রি এসএমএস ইত্যাদি সুবিধা। তো তারা এটি কেন করেছিল? তারা এটা ভেবে করেছিল যে, তাদের জিও সিমের যেন মার্কেট ভ্যালু বেড়ে যায় এবং অধিক থেকে অধিকতর লোকের কাছে জিও সিম পৌঁছে যায়। যখন তারা ভারতের বেশিরভাগ লোকের কাছে তাদের জিও সিম পৌঁছে দিল তখন তারা আস্তে আস্তে তাদের সেবার দাম গুলো বাড়িয়ে দিল।

ঠিক একই রকমভাবে দেশেও দেখা যায় বিভিন্ন টেলিকম এর সিম মেলায় ফ্রিতে অফার করা হয়। যেখানে আপনাকে মাত্র 10 থেকে 20 টাকায় একটি সিম দিচ্ছে। সেটিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা থেকে যাচ্ছে এবং সেইসঙ্গে কয় জিবি ইন্টারনেট, মিনিট, এসএমএস ও পাওয়া যাচ্ছে। এখানে আমাদের মনে হতে পারে যে মাত্র 10 টাকা কিংবা 20 টাকায় একটি সিম দিচ্ছে এবং সেটিতে এত সব সুবিধা দিচ্ছে তাহলে তাদের তো লোকসান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এক্ষেত্রে কোনো লোকসান ই হচ্ছে না।

আপনাকে যে ফ্রিতে সেই সিমটি দেওয়া হচ্ছে এখানে তারা সাময়িক লোকসান করলেও ভবিষ্যতে আপনার এই টাকার চাইতেও অনেক বেশি পরিমাণ টাকা আপনার থেকে তুলে নিতে পারবে। আপনি সেই সিমটা নিয়ে এখন ব্যবহার করে ফেলে রাখলে ও কোন না কোন দিন সেটিতে রিচার্জ করবেন এবং সেটি ব্যবহার করা শুরু করবেন। এক্ষেত্রে তারা তখন আপনার থেকে লাভ করবে। বর্তমানে তারা আপনার কাছে লোকসান করলেও ভবিষ্যতে আপনার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতিনিয়ত পেতে থাকবে, যেটি তাদের প্রথম বিনিয়োগ এর চাইতে অনেক বেশি। তো এখন আপনাদের মনে হতে পারে যে, আমি যদি সেই সিমটির মেগাবাইট, মিনিট ও এসএমএস গুলো ব্যবহার করে সেই সিম টি আর ব্যবহার না করি তাহলে তো আমার থেকে আর ভবিষ্যতে কোন টাকাই তারা পেল না।

এসব কথাগুলো চিন্তা করে আপনার মনে হতে পারে যে তারা লোকসান করলো। কিন্তু না, তারা আপনার কাছে লোকসান করলে ও অন্যান্য ব্যবহারকারীর থেকে সেই টাকাটি তুলে নিতে পারবে। সিমের মেলায় যদি ১০০ জনের কাছে সিম বিক্রি করে তবে সেখান থেকে হয়তোবা ১০ থেকে ২০ জন সিম ব্যবহার করবে না। কিন্তু বাকি লোক গুলো তো নিয়মিতই সিম ব্যবহার করবে এবং সেখান থেকে তারা আপনার টাকাটা তুলে নিবে। এখানে তারা দুই-একজন ব্যবহারকারীদের জন্য এতটা ভাববে না।

ঠিক একই রকম কৌশলটি কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ও নিচ্ছে। বর্তমানে হয়তোবা whatsapp-এ কোনো বিজ্ঞাপণ দেখানো হয় না, কিন্তু ভবিষ্যতে যে হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপণ দেখানো হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ভবিষ্যতে হোয়াটসঅ্যাপ কে যখন মনিটাইজ করা হবে বা বিজ্ঞাপণ দেখানো হবে তখন এমনও হতে পারে যে এটি ফেসবুক এর চাইতে তাদের বেশি রেভিনিউ এনে দিবে। তবে কে বলেছে যে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকে কোন লাভ এনে দিচ্ছে না? হোয়াটসঅ্যাপ ঠিক ঐ ফেসবুককে লাভ এনে দিচ্ছে, তবে যে পরিমাণ দেবার কথা তার চাইতে অনেক কম।

এর উদাহরণ হিসেবে, হোয়াটসঅ্যাপ এর বিজনেস এপিআই ব্যবহার করতে হলে আপনাকে কিছু পরিমাণ টাকা হোয়াটসঅ্যাপ কে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কিছু পরিমাণ টাকা ইনকাম করছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে ও সব দেশে ফ্রিতে ব্যবহার করা যায় না। কিছু কিছু দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করার জন্য পূর্বের মত ১ ডলার করে পে করতে হয়। এখান থেকেও তারা কিছুটা পরিমাণ টাকা ইনকাম করছে। তো, হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে ও কিছু পরিমাণ টাকা আয় করছে, কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের যে পরিমাণ টাকা আয় করার দরকার ছিল সে পরিমাণ না।

এক কথায় বলা যায় যে বর্তমানে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ কে লোকসানে রান করছে। যেখানে তারা প্রধানত হোয়াটসঅ্যাপ এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধির ওপর নজর দিচ্ছে। তো বন্ধুরা আমি আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে টাকা আয় করে। যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ ফেসবুক ডাটা কালেক্টর হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধির ওপর কাজ করছে। এছাড়া ভবিষ্যতে যদি হোয়াটসঅ্যাপ এ বিজ্ঞাপণ দেখানো হয় তবে সেখান থেকে তারা ফেসবুকের মতোই আয় করবে।

শেষ কথা

ফেসবুকের পরিচালিত হোয়াটসঅ্যাপ এর ব্যবসায়ী কৌশলটি এখানে আমাদের সিম কোম্পানির মতই, যেখানে তারা বর্তমানে লোকসান করলেও ভবিষ্যতে আপনার থেকে সেই টাকাটি উঠিয়ে নিতে পারবে। এছাড়া এখানে যদি আপনার থেকে সেই টাকাটি তুলে নিতে নাও পারে তবে অন্য একজনার থেকে সেটি তারা তুলে নিবে। এছাড়া বর্তমানে ও হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের মতোই কিছু পরিমাণ টাকা আয় করছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ এর ব্যবসায়িক কৌশলটি আসলে কি, সেটি হয়তোবা আমাদের সকলেরই অজানা।

তো বন্ধুরা আমি আশা করছি, হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কিত আজকের এই টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তো বন্ধুরা আপনি যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক নতুন নতুন টিউন দেখতে পছন্দ করেন তবে উপরের ফলো বাটনে ক্লিক করে রাখুন। আজ তবে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত দেখতে থাকুন টেকটিউনস। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস