ভিওআইপি কল কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আমরা প্রতিদিন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন কলে কথা বলে থাকি এবং সেখানে আমাদের প্রতি মিনিট কলে নির্দিষ্ট একটি চার্জ প্রযোজ্য হয়। কিন্তু দেশের ভেতরে আমাদের আত্মীয় স্বজন থাকার পাশাপাশি বিদেশে ও আমাদের কোনো স্বজন থাকতে পারে প্রবাসী হিসেবে। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও আমাদেরকে যোগাযোগ করতে হয়।

দেশের ভেতরে আমরা যেমন কোন একটি অপারেটরের সিম দিয়ে কাউকে কল করলে সেখানে খুব কম চার্জ প্রযোজ্য হয় বা খুব কম টাকা কাটে, সেখানে যদি অন্য কোন দেশে কল দেয়া হয় তখন সেখানে বিশাল একটি এমাউন্ট চার্জ করে। এক্ষেত্রে দেশের বাইরে আপনাকে কল দিলে ইন্টারন্যাশনাল চার্জ প্রযোজ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ফ্রিতে কথা বলা যায় দেশের বাইরে যে কারো সঙ্গে। এসবের মধ্যে যেমনঃ Imo, Skype, WhatsApp, Viber ইত্যাদি। এই অ্যাপ্লিকেশন যদি উভয় ব্যক্তির মোবাইলে ইন্সটল করা থাকে তবে এগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে ফ্রিতে কথা বলা যায় যদি সেই মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকে।

কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই ফোন কল কিভাবে সম্পূর্ণ হয় বা ফ্রি ইন্টারনেট কল কিভাবে কাজ করে? দেখুন ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি যেটির মাধ্যমে যেকোনো ডিজিটাল ডাটা সরবরাহ করা যেতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোন টেক্সট চ্যাট, ভিডিও শেয়ারিং ও ফটো শেয়ারিং ইত্যাদি করা যায়। তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভয়েস কল বা ভিডিও কল করা যাবে না কেন। তবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভয়েস কল কিংবা ভিডিও কল করা যাবে।

ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে ভয়েস কল কিংবা ভিডিও কল করার কথা চলে আসে এখানে আসবে ভিওআইপি এর কথা। কেননা একমাত্র এ পদ্ধতিতেই আন্তর্জাতিক কিংবা দেশের ভেতরে একে অপরের সঙ্গে ফ্রিতে কথা বলা যায়। যেখানে সাধারন কল করতে আমাদের সিম থেকে টাকা কাটে, সেখানে নামমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে ভয়েস কল কিংবা ভিডিও কল করা যায় ভিওআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে। একটি ভিওআইপি কলে কথা বলতে যে ইন্টারনেট খরচ হয় তা সাধারণভাবে কথা বলার চাইতে অনেক কম। চলুন বন্ধুরা এবার তবে জেনে নেওয়া যাক যে ভিওআইপি কিভাবে কাজ করে।

ভিওআইপি কল কি?

দেখুন আমি এখানে প্রথমেই বলেছি যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেখানে আমরা ভিডিও দেখতে পারছি এবং কোন কিছু জানার প্রয়োজন পড়লে সেটি খুঁজে নিতে পারছি‌‌ সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারো সঙ্গে কথাও বলা যাবে। এবার আমাদেরও প্রথমেই জেনে নেওয়া উচিত যে ভিওআইপি আসলে কি? ভিওআইপি (VoIP) যেটির সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, Voice Over Internet Protocol (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল)। যেটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার একটি মাধ্যম।

মোবাইল দিয়ে বিশ্বের যে কোন দেশের মানুষের সঙ্গে এমনকি একটি দেশের মধ্যে অবস্থিত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কথা বলার ক্ষেত্রে ভিওআইপি ব্যবহৃত হয়। আর এজন্য অবশ্যই উভয় প্রান্তে ব্যক্তির ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হয়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিল ব্যতীত অন্য কোন খরচ হয় না কথা বলার ক্ষেত্রে। ভিওআইপি কি, এটি নিশ্চয় আপনারা সকলেই বুঝে গিয়েছেন। এবার আমরা আলোচনা করব ভিওআইপি কল কিভাবে কাজ করে এটি সম্পর্কে।

এই কল কিভাবে কাজ করে এটি জানলে আপনি বিস্তারিত বুঝতে পারবেন ভিওআইপি সম্পর্কে। তবে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক যে ভিওআইপি কল কিভাবে কাজ করে? তবে এজন্য অবশ্যই সম্পন্ন টিউনটি মনোযোগ দিয়ে দেখার অনুরোধ করছি কেননা আজকের এই টিউন টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সে সঙ্গে বলে নিচ্ছি আপনার কাছে যদি ভালো লাগে তবে জোসস করবেন টিউন সম্পর্কিত কোনো মতামত জানাতে চাইলে টিউনমেন্ট করবেন। আরো একটি কথা, যদি টিউনটি আপনার কাছে ভালো লাগে তবে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং পরবর্তীতে আমার টিউন গুলো টেকটিউনসের হোমপেজে পেতে আমাকে ফলো করে রাখবেন। আর এতে করে আমি পরবর্তীতে আরো নতুন নতুন টিউন করার উৎসাহ পাবো।

ভিওআইপি কল কিভাবে কাজ করে?

ভিওআইপি হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার এক ধরনের মাধ্যম। মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা ডিজিটাল কোন ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসের মাধ্যমে কথা বলার প্রক্রিয়াকেই ভিওআইপি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে কথা বললে অরিজিনেশন বা উৎস এবং বিদেশ থেকে কথা বললে টারমিনেশন বা সমাপ্তি হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে (অরিজিনেশন) কল করলে ইন্টারনেট কল ব্যতীত সেই দেশে ফ্রিতে কল করা যায়।

এক্ষেত্রে আপনার এনালগ ডাটাকে ডিজিটাল ডাটা রূপান্তর করতে হবে, এরপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ডাটাগুলোকে সহজেই ট্রান্সফার করা যাবে। ঠিক এই আইডিয়ার উপর নির্ভরশীল VoIP। আপনি যেই ভিওআইপি অ্যাপটি ব্যবহার করুন না কেন সকলের কাজ করার পদ্ধতি কিন্তু একইরকম হয়ে থাকে।

এজন্য প্রথমে আপনার ভয়েস কে মাইক্রোফোন দ্বারা রেকর্ড করা হয়। এরপর সেই এনালগ ভয়েস টিকে আপনার ফোনে থাকা সফটওয়্যারটি ডিজিটাল ডাটাতে রুপান্তর করে। এখানে আপনার বলা কথাটি হচ্ছে একটি এনালগ ডাটা। যে ডাটাকে আপনার ফোনে থাকা সেই সফটওয়ারটি ডিজিটাল ডাটা তে কনভার্ট করবে। আপনার এনালগ ভয়েস কে ডিজিটাল ডাটা তে কনভার্ট করার জন্য আপনি যে অ্যাপটি ব্যবহার করছেন সেটি কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে এটি হতে পারে, Imo, Skype, WhatsApp, Viber ইত্যাদি অ্যাপ।

আপনার এনালগ ভয়েস টি ডিজিটাল ডেটাতে কনভার্ট হওয়ার পর এই ডিজিটাল ডাটাটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার ফোন থেকে অন্য ফোনে নিয়ে যাওয়া হয়, এক্ষেত্রে আপনি অপরপ্রান্তে যার সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর আবার রিসিভার এর ফোনে সেই ডাটাটি আবার ডিজিটাল ডাটা থেকে এনালগ ডাটাতে রূপান্তরিত করা হয় যাতে সে শুনতে পায়। এখানে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিকে মোবাইল থেকে ভয়েস এর আউটপুট ই হচ্ছে এনালগ ডাটা। আর এভাবে করে লাগাতার কাজ চলতে থাকে। আপনারা যে দুইজন কথা বলছেন তাদের ফোনে লাগাতার এভাবে করে ডাটা গ্রহণ এবং সেন্ড করে সেটি দুইজনকে শোনানো হয়।

যে সফটওয়্যারটি আপনার ফোনের অডিও কে ডিজিটালে রূপান্তর করার কাজ করে তাকে CODEC বলা হয়। আর CODEC শুধু এনালগ ডাটাকে ডিজিটাল ডাটাতে রুপান্তর করার কাজেই নয়, এটি বরং আপনার ফটো ভিডিও এবং ভিডিও কল সমূহ সমস্তই ডিজিটাল ফরম্যাটে রুপান্তর করার কাজে ব্যবহার হয়। আমরা যে ভাবে করে মেসেঞ্জার কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে কাউকে ভিডিও, অডিও কিংবা ফটো পাঠাই, সেখানেও এটির ব্যবহার হয়। ভিওআইপি কলে আমরা যেভাবে করে শুধুমাত্র একটি ভয়েস এর কোড কে আদান প্রদান করি, সেভাবে করে আমরা অনলাইনে কারো সঙ্গে চ্যাটিং করলে এভাবে করেই আমাদের ডাটাগুলো আদান-প্রদান হয়।

আপনার ভয়েস টি একবার ডিজিটাল ডাটা তে রুপান্তর হবার পর সেটি ভেঙ্গে হাজার টুকরায় পরিণত হয়। আর এই টুকরাগুলোকে ইন্টারনেট ডাটা Packets (প্যাকেট) বলা হয়। প্রত্যেককে ডাটা প্যাকেজ এর দুইটি অংশ থাকে Header এবং Payload। এই Header-এ প্যাকেট সম্পর্কে মেটাডাটা লেখা থাকে, অর্থাৎ প্যাকেটটি জুড়ে কিভাবে মূল ডাটায় ফেরত আসবে, প্যাকেটটির গন্তব্য কোথায়, প্যাকেটটি কোথা থেকে আসছে ইত্যাদি তথ্য। আর Payload-এ থাকে মূল ডাটাটির ডিজিটাল অংশ, অর্থাৎ আপনার ভয়েস এর ডিজিটাল ফরমেট।

এবার এই প্যাকেট গুলো আলাদা আলাদা পথে ভ্রমণ করে রিসিভারের মোবাইল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ এই ডিজিটাল ডেটাগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির মোবাইলের রিসিভারে গিয়ে পৌঁছায়। আর প্রত্যেকটি প্যাকেট একত্রে মিলিত হবার পর মূল ডেটাটি ফেরত আসে। অর্থাৎ, এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেটগুলো একত্রিত হয়ে মূল তথ্যটি তৈরি করে এবং সেটি অন্য ব্যক্তি শুনতে পারে। আর এভাবেই ভিওআইপি কল কাজ করে।

এমনিতেই তো ভিওআইপি কল ফ্রি কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। আপনার ব্যবহার করা অ্যাপ্লিকেশন এর Codec যদি উন্নত না হয় সে ক্ষেত্রে ভয়েস কোয়ালিটি কিছুটা খারাপ হতে পারে। অর্থাৎ, এখানে আপনি যে ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করছেন সেটিতে যেভাবে কোডিং করা হয়েছে তা যদি উন্নত না হয় তবে ভয়েস কোয়ালিটি কিংবা ভিডিও কোয়ালিটিও উন্নত হবে না। আপনি কত ভালো ভয়েস কোয়ালিটি কিংবা দুর্বল নেটওয়ার্কে ভালো ভিডিও কোয়ালিটি পাবেন সেটি নির্ভর করে সেই ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন এর ওপর।

তাছাড়া ভিওআইপি কলের সবচাইতে বড় অসুবিধাটি হচ্ছে কলের রেস্পন্স টাইম। যেখানে অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার কলটি পরিচালনা হয় সেখানে প্রথমে আপনার ভয়েস থেকে রেকর্ড করা, তারপর সেটিকে ডিজিটাল ডাটাতে কনভার্ট করা, তারপর ডিজিটাল ডেটাকে ইন্টারনেটে সেন্ড করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তাই ভিওআইপি কলে কথা কিছুটা দেরিতে আসছে বলে মনে হয়। আর এটি হয় সেই ডিভাইসের ইন্টারনেট কোয়ালিটি এর উপর।

আর হ্যাঁ, ভিওআইপি কলে কথা বলার জন্য আপনার ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন এবং পিং রেট যথেষ্ট ভালো হতে হবে। আর তা না হলে ভিওআইপি করার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট ভালো সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। কেননা এক্ষেত্রে পিং রেট যদি অনেক বেশি হয়ে যায় তবে আপনার ভয়েস এর ডাটাগুলোকে আদান-প্রদান করতে সময় বেশি নিবে এবং উভয় ব্যক্তির কাছে কথা দেরিতে শোনা যাবে। যেহেতু আমাদের গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি অনেক খারাপ সেজন্য এখানে ভিওআইপি কলের মাধ্যমে কথা বলা মুশকিল হতে পারে। তবে এখন সমস্ত এলাকা থেকেই মানুষ ভিওআইপি কলের মাধ্যমে কথা বলে থাকে, কেননা বর্তমানে দেশের সকল জায়গায় ইন্টারনেট অনেক ভালো।

শেষ কথা

ভিওআইপি কলের মাধ্যমে আমরা সকলেই কথা বলে থাকি একে অপরের সঙ্গে। যেটি আমরা লক্ষ্যই করি না যে, এটি আসলে ভিওআইপি কল। ভিওআইপি কলের জন্য আমাদের হাজার হাজার টাকা বেঁচে গিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কল এর চার্জ দেবার জায়গায়। যেখানে আমাদের দেশের বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলতে প্রতি মিনিটে কয়েক টাকা করে চার্জ প্রযোজ্য হত, সেখানে ভিওআইপি সেবার মাধ্যমে আমরা ফ্রিতেই কথা বলতে পারছি শুধুমাত্র ইন্টারনেট বিল ব্যতীত।

তো বন্ধুরা, আজকের এই টিউনে আমি আপনাদেরকে ভিওআইপি কল সম্বন্ধে আমার জানা থেকে বিস্তারিত তথ্য সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা সকলেই ভিওআইপি কল সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন যে এটি কি এবং কিভাবে কাজ করে। যদি টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তবে টিউনমেন্ট করে জানাবেন এবং টিউনটিতে জোসস করবেন। দেখা হবে তবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ। আজ তবে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস