Microsoft কেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথেই পার্টনারশিপ করছে? জেনে নিন পেছনের কাহিনী!

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আপনারা জানেন আমি প্রায়ই বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে বিশ্লেষণ মূলক টিউন করে থাকি। টিউন গুলোতে কোম্পানির বিভিন্ন ভাল দিক খারাপ দিক, তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, সুযোগ প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি উঠে আসে। তো আজকেও এমন একটি টিউন নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমরা জানব কেন মাইক্রোসফটের মত কোম্পানি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথেই পার্টনারশিপ করছে?

আমরা সবাই জানি মাইক্রোসফট এর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী গুলো হচ্ছে, এপল, গুগল, সনি। কোম্পানিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার লেভেল আমাদের সবারই জানা। তো হঠাৎ করে শুনলেন, মাইক্রোসফট তাদের নিজেদের লিনাক্স  বানানো শুরু করেছে, মাইক্রোসফট ক্রোমকে তাদের ডিফল্ট ব্রাউজার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সনির সাথে মাইক্রোসফটের নতুন গেম স্টেশন বানানোর প্ল্যানিং চলছে সাথে আই-ফোনকেও মাইক্রোসফট অফিসের জন্য উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে। বিশ্বাস হবে? না হবারই কথা কারণ যাদের সাথে বিজনেস ফিল্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই লেগেই থাকে তাদের সাথে কিভাবে পার্টনারশিপ? বিশ্বাস না হলেও এখন এটা বাস্তব।

"Microsoft" অন্যতম আক্রমণাত্মক কোম্পানি

বিট গেটস এর নাম শুনলে আপনার কি মনে আসে? বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব, একজন সমাজসেবী যিনি ম্যালেরিয়া থেকে বিশ্বকে বাচাতে আয়ের ৯৯% ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং মাইক্রোসফট নামক কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠা কর‍তে পেরেছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল টেক কোম্পানি হিসাবে। ২০০১ সালে কোম্পানিটি ছিল অন্য টেক কোম্পানিগুলোর সবচেয়ে আক্রমণাত্মক কোম্পানি। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে antitrust law অমান্য করার ও বিভিন্ন অভিযোগ উঠে।

মাইক্রোসফট যেভাবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে বিখ্যাত হওয়া শুরু করেছিল তাদের বিট করার মত সমসাময়িক কেউ ছিল না এবং অনেক ক্ষেত্রে ডেভেলপাররাও ভয় পাওয়া শুরু করে মাইক্রোসফটের কাছে তারা তাদের লাইসেন্স হারায় কিনা। এমনি Adobe এর মত কোম্পানিও ভয়ে ছিল।

Microsoft এর নতুন সিদ্ধান্ত গুলো

গত পাঁচ বছর যাবত আধুনিক টেক কোম্পানি হিসাবে তাদের বিজনেসে দারুণ কিছু বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। তারা বিভিন্ন কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপকে গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যারকেও আমলে নিচ্ছে।

২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের নতুন নিযুক্ত CEO, Satya Nadella আইপড এর জন্য মাইক্রোসফট অফিস ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে বুঝা যায় তারা তাদের পুরাতন আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে চায় এবং পার্টনারশিপে গুরুত্ব দিতে চায়। মাইক্রোসফট github এর বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য অনেক ডেভেলপার টুল বানাচ্ছে এবং বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা উইন্ডোজ এর বিভিন্ন ভার্সনে লিনাক্স যুক্ত করে দিচ্ছে এবং তাদের ক্লাউড সার্ভিসেও লিনাক্সের জন্য রেখেছে আলাদা ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থা। এমনকি তারা লিনাক্সকে বাচাতে ৬০, ০০০ এর বেশি প্যাটেন্ট এর সূচনাও করে।

তারা তাদের মেইন ব্রাউজার হিসাবে ক্রোমকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাথে সাথে উইন্ডোজে  প্রই-ইন্সটল করা থাকবে Alexa। Sony তদের প্লে স্টেশন বিল্ড করবে। এমনকি অ্যান্ড্রয়েড মাইক্রোসফট কোর সফটওয়্যার গুলোও পাওয়া যাচ্ছে।  প্লে স্টোরে উইন্ডোজের দারুণ এক লাঞ্চারও আছে যা সার্ভিসের সাথে সাথে দারুণ জনপ্রিয়। তাদের এই উদ্যোগ আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে।

খুব কম সময়ে বর্তমানে প্লেস্টোরে ৮০ টিরও বেশি মাইক্রোসফটের অ্যাপ আছে এবং সব গুলোই হাই রেটেড অ্যাপ। কোম্পানিটি বর্তমানে github এর ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কন্ট্রিবিউটর।

Microsoft এর নতুন সিদ্ধান্তগুলোর উদ্দেশ্য

অনেক মানুষ এখনো সন্দেহ করছে হঠাৎ করে মাইক্রোসফটের এভাবে বদলে যাবার কারণ কি হতে পারে। সবার পাশেই কেন এভাবে দাঁড়াচ্ছে কোম্পানিটি? এর পেছনে কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য জড়িত কিনা। তারপরেও যতদিন Satya চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে আছে মানুষ এটিকে পজিটিভ ভাবেই দেখছে।

মাইক্রোসফটের অনেক পুরাতন সমালোচকরাও দাবী করে তারা মাইক্রোসফটকে ক্ষমা করে দিয়েছে, মাইক্রোসফট তাদের ইভিল মাস্টারমাইন্ড থেকে বের হয়ে এসেছে।

যদি সরাসরি বলি তাহলে বলতে হবে, হ্যাঁ এমন সিদ্ধান্তের পচনে মাইক্রোসফট এর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য এবং লাভ জড়িত। চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে সামনে!

ইন্টারনেট সার্ভিসে মনোযোগ

মাইক্রোসফট তাদের আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য সামনের সারির ক্রেতাদের হারাচ্ছিল। তারা তাদের কম্পিউটার বিজনেসের বাইরে নতুন কিছু করতে পারছিল না। যেমন তাদের তেমন কোন সোশাল মিডিয়া পরিচিতি ছিল না স্মার্ট-ফোনের সুনাম ছিল। মাইক্রোসফটের কখনোই বিভিন্ন ওপেন সোর্স মুভমেন্ট যেমন, অ্যান্ড্রয়েড, লিনাক্স, আইও-এস-কে দমাতে পারে নি। তাই তারা আস্তে আস্তে ইন্টারনেট সার্ভিসের দিকে মনোনিবেশ করে যেমন তারা কোম্পানিকে সার্ভার, ক্লাউড সার্ভার, এবং বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার সরবরাহের প্রতি আগ্রহী হয়।

ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যবসায় বর্তমানে দারুণ এক ব্যবসায়। ফোন বাজারে ছাড়ার পর থেকে ইউজারের ব্যবহার পর্যন্ত তাদের সাপোর্ট দিতে হয় সফটওয়্যার আপডেট রাখতে হয়৷ অনেক ফোন কোম্পানি আবার ইন্টারনেট সার্ভিস এর মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করে।  আমরা যদি শাউমির দিকে দেখি তাহলে দেখতে পারব, শাউমি ফোন বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেয়ে ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যম মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা Amazon, Facebook, Microsoft, Alibaba, tencent এর মত লাভজনক কোম্পানি গুলো প্রমাণ করে দিয়েছে।

সুতরাং শাউমি তাদের প্রধান বিজনেস হিসাবে ইন্টারনেট সার্ভিসে বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। অন্যান্য গতানুগতিক ফোন কোম্পানি গুলো যা করে সেটা হচ্ছে তারা হার্ডওয়্যার বিক্রয় করে টাকা লাভ করতে চায় করে সেখানে শাউমি, প্রথমে কম মুনাফা করে ফোন বিক্রি করলেও পরবর্তীতে কাস্টমারকে ধরে রাখতে চায় এবং তাদের সার্ভিস ব্যবহারে মাধ্যমে অধিক মুনাফা করতে।

আপনি চাইলে শাউমিকে নিয়ে করা বিস্তারিত টিউনটি দেখে নিতে পারেন। শাউমি Xiaomi তাদের ব্যবসার মুনাফা কেন ৫ পারসেন্ট এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে?

বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি

অন্য কোম্পানিকে সার্ভিস প্রোভাইট করার মাধ্যম তাদের সেই আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন আসে। আর তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়া এই অবস্থায় তাদের জন্য জরুরীই ছিল। এটাই খুবই স্বাভাবিক যে যদি আপনি অন্য কোম্পানিকে আপনার সার্ভিস দিতে চান তারা হোক আপনার কম্পিটিটর তাহলে আগে তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আপনার ডাটাকে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।

নতুন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা

বড় বড় কোম্পানি গুলোতে যেসকল ডেভেলপার আছে যারা অ্যান্ড্রয়েড এবং আই-ফোন ব্যবহার করে তাদের কোডিং এর জন্য লিনাক্স দরকার হয় এবং তারা এজন্য বিভিন্ন কোডের ব্যবহার করে। একটি এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি হিসাবে শুধু মাত্র কম্পিউটার এবং অফিস বাজারে না এনে গুগল এই সকল ক্ষেত্রেই তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছিল। এবং এর মাধ্যমে তারা নতুন ভাবে sony এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে পারবে।

ডেভেলপারদের মনোযোগ আকর্ষণ

বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে পার্টনারশিপ এবং ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম গুলোতে তাদের উপস্থিতির কারণ ছিল তাদের নতুন ভাবে সবার সামনে তুলা ধরা এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। বিশ্বের বড় বড় ডেভেলপার যারা বিভিন্ন ভাবে UI, UX ডিজাইনের সাথে জড়িত, ওয়েব সাইট ডিজাইনের সাথে জড়িত তাদের আকৃষ্ট করাও ছিল তাদের অন্যান্য উদ্দেশ্য গুলোর মধ্যে একটি।

শেষ কথা:

বর্তমানে টেক কোম্পানি গুলো একেকটা আরেকটার উপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল। এক সময়ের সেই মাইক্রোসফট যখন নিজে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি কর‍তে চায় তখন বুঝতে হবে সেখানে অবশ্যই কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে। এই টিউনের মাধ্যমে আসলে এটাই প্রমাণ হয়। এটাই প্রথম না এর আগেও অনেক কোম্পানি তাদের নিজেদের স্বার্থেই এক হয়েছে।

কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।

পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 568 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 112 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই আপনি এত সুন্দর কীভাবে লেখেন ভেবে পাই না,,, আর এত তথ্য বা পান কীভাবে?

    ধন্যবাদ নাইম ভাই ! নিয়মিত ইন্টারন্যাশনাল নিউজ পোর্টাল গুলোতে চোখ রাখুন , আপনি এর চেয়েও ভাল লিখতে পারবেন।