অট্টালিকা আলোচন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা!!!

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান অপরিসীম। এর অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আজ পৃথিবী প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে। যা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের যে শুধু অবাক করে তাই নয়, বরং আমাদের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে যায়। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতা, মানুষের নিজের মেধা আর পরিশ্রমের দ্বারা অসাধ্য সাধনের এক অকাট্য প্রমাণ। আজ আমি প্রযুক্তির কিছু বিস্ময়কর সৃষ্টি, বর্তমান পৃথিবীর কিছু অবাক করা (কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমিও বটে!) অট্টালিকা বা স্থাপনা নিয়ে সচিত্র আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তবে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখি আসি কিছু চমকপ্রদ স্থাপনার, আশ্চর্যজনক তথ্যঃ

‘ক্যানসাস সিটি পাবলিক লাইব্রেরী’-মিসৌরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ

‘ক্যানসাস সিটি পাবলিক লাইব্রেরী’ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস সিটির একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর ৯টি শাখা রয়েছে। এ ভবনটি একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। এই লাইব্রেরীর প্রথম গোড়াপত্তন হয় ১৮৭৩ সালে। তখন এর নাম ছিল ‘পাবলিক স্কুল লাইব্রেরী অব ক্যানসাস সিটি’। তখন এটি শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তারপর বিভিন্ন পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটি বর্তমান রুপ পায় ২০০৪ সালে। এই লাইব্রেরীর প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার!

‘ক্যান্টন টাওয়ার’-চীনঃ

‘ক্যান্টন টাওয়ার’ চীনের গুয়াংডং (Guangdong) প্রদেশে অবস্থিত। ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১০ সাল থেকে এই টাওয়ারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ২০১০ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে টাওয়ারটি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করা হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনাগুলোর মাঝে অন্যতম। ক্যান্টন টাওয়ার ১০৮ তলা (মাটির নিচে এর আরো দুটি তলা আছে)। টাওয়ারটি ১৯৬৮.৫ ফুট উঁচু। এর সর্বমোট স্পেসের পরিমাণ ১২,২৭,৭০০বর্গ ফুট। টাওয়ারটিতে ব্যবহারের জন্য ৬টি এলিভেটর রয়েছে। টাওয়ারটি রেস্টুরেন্ট, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

‘হাসান ২ মসজিদ’-মরক্কোঃ

‘হাসান ২ মসজিদ’ (Hassan II Mosque) পৃথিবীর ১৫তম বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটি মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কাতে (Casablanca) অবস্থিত। মসজিদটি ডিজাইন করেছেন একজন ফ্রেন্স আর্কিটেক্ট, নাম-Michel Pinseau এবং মসজিদটি তৈরি করেছেন Bouvgues। মসজিদটির নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৯৩ সালে। মসজিদটি আটলান্টিকের তীরে অবস্থিত। এখানে একবারে ২৫,০০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারে এবং এর সামনের আঙ্গিনায় আরও ৮০,০০০ লোক একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। এর মিনারটি লম্বায় ২১০ মিটার (৬৮৯ ফুট), যা লম্বায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ।

‘বাস্কেট বিল্ডিং’-অহিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ

এই অদ্ভূত আকৃতির বাস্কেট বিল্ডিংটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভূত অফিস বিল্ডিংগুলোর মাঝে অন্যতম। এর আয়তন ১,৮০,০০০ বর্গ ফুট। বিল্ডিংটি নির্মানে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এর নির্মান সময়কাল ২ বছর।

‘অলিম্পিক স্টেডিয়াম’-মন্ট্রিল,কানাডাঃ

অলিম্পিকের এ স্টেডিয়ামটি একটি মাল্টি পারপাস স্টেডিয়াম, যা কানাডার মন্ট্রিলে অবস্থিত। ১৯৭৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ভেন্যু হিসেবে এটিকে তৈরি করা হয়। স্টেডিয়ামটি মন্ট্রিলের প্রফেশনাল বেসবল টিম এবং কানাডিয়ান ফুটবল টিমের হোম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি আসন ক্ষমতার দিক দিয়ে কানাডার সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটিকে কোন কনসার্ট বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে ৫৬,০৪০টি আসনের ব্যবস্থা করা যায় এবং খেলার সময় এটি সর্বোচ্চ ৬৬,৩০৮টি আসনের ব্যবস্থা করতে পারে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু inclined টাওয়ার, যার উচ্চতা প্রায় ১৭৫ মিটার। অলিম্পিকের পর ১৯৭৭ সালের ১৫ই এপ্রিল স্টেডিয়ামটিকে খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই স্টেডিয়ামটি বানানোর সময় প্রযুক্তির সব ধরণের সুবিধাকে কাজে লাগানো হয়েছে। আধুনিক পৃথিবীর সব ধরণের সুযোগ সুবিধাই এ স্টেডিয়ামে আছে। এর স্থাপনা শৈলীও অত্যন্ত চমৎকার, এককথায় মনোমুগ্ধকর।

‘পিকেল ব্যারেল হাউজ’-মিশিগান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ

‘পিকেল ব্যারেল হাউজ’ দুটি ব্যারেল সদৃশ কাঠামোর সহায়তায় তৈরি ২ তলা ভবন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত। ভবনটি নির্মান হয়েছে ১৯২৬ সালে। আর্কিটেক্ট Cunliff, Harold S.। ভবনটির প্রধান অংশ ১৬ ফুট উঁচু (৪.৮৮ মিটার)। এর নিচতলা লিভিং এরিয়া এবং উপরের তলা বেডরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাড়িটির সামনে বসার জায়গার পাশাপাশি ছোট একটি বাগানও রয়েছে।

‘জন হ্যানকক সেন্টার’-শিকাগোঃ

জন হ্যানকক সেন্টার শিকাগোর মিশিগান এভিনিউতে অবস্থিত। যা বিশ্বের উচ্চতম ভবনগুলোর মাঝে অন্যতম। এটি ১০০ তলা ভবন। ভবনটির উচ্চতা ১,১২৭ ফুট (৩৪৪ মিটার)। জন হ্যানকক ভবনটি একাধারে বাসস্থান, অফিস এবং  রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভবনটির চিফ ডিজাইনার Bruce Graham এবং কাঠামোগত প্রকৌশলী ফজলুর খান। ফজলুর খান!! নামটা অনেক পরিচিত লাগছে না? হুম্‌ , ইনি আমাদের দেশে জন্মগ্রণকারী একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী (জন্ম-৩রা এপ্রিল, ১৯২৯ এবং মৃত্যু-২৭ শে মার্চ, ১৯৮২)। নিচে তার ছবি দিলাম (যদিও এই লেখার সাথে তার ছবিটি অনেকের কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও লাগতে পারে। তারপরও তার ছবি দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারলাম না! হাজার হোক আমাদের দেশের মানুষ, আমাদের দেশের গর্ব….)-

'পাথর বাড়ি’-পর্তুগালঃ

‘পাথর বাড়ি’ নামের এ বাড়িটি পর্তুগালের গুইমারায়েস নামের জায়গাতে অবস্থিত। এটি সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। বাড়ির আশপাশ বেশ নির্জন। এ বাড়িতে আধুনিক দিনের প্রায় সকল সুবিধাই বিদ্যমান। বাড়িটি নির্মানের পর থেকেই ব্যক্তিগত আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

‘হাউজ এ্যাটাক’-অস্ট্রিয়াঃ

হাউজ এ্যাটাক অস্ট্রেলিয়ার ভিয়েনাতে অবস্থিত। আর্কেটেক্ট হচ্ছেন Erwin Wurm। মিউজিয়াম মডার্ণার কানস্টের একটি ভাস্কর্য হিসেবে এটিকে তৈরি করা হয়েছে। এটির নির্মান কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। ভবনটির এ ভাস্কর্যটি পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভূত ভাস্কর্যগুলোর মাঝে একটি এবং ভবনটিও সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ভবনগুলোর একটি হিসেবেই স্বীকৃত।

‘নর্ড এলবি বিল্ডিং’-হ্যাননভার, জার্মানিঃ

এই ভবনটি জার্মানির হ্যাননভারে অবস্থিত। যা ‘নর্ড এলবি ব্যাংকের’ নিজস্ব অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর আর্কিটেক্ট হচ্ছেন Behnisch, Behnisch এবং Partner। ভবনটির টাওয়ারের উচ্চতা ৭০ মিটার। ভবনটির ছাদের আয়তন ৫৩,৮২০ বর্গ ফুট। এই অফিসে ১,৫০০ লোক একত্রে অফিস করতে পারে। এর নির্মানশৈলী অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। এটি আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যার এক অসমান্য অবদান। যা প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত।

আসলে প্রতিনিয়ত পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রযুক্তির খেলা আজ আমাদের অবাক করে, চিন্তার অনেক কিছু টেনে বের করে এনে দেয়। আজ সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া, প্রযুক্তির কারিগরি। সৃষ্টিশীলতায়ও আজ প্রযুক্তিজ্ঞান পিছিয়ে নেই। তারই প্রমাণ উপরের স্থাপনাগুলো। অনেকে বলে, প্রযুক্তি হলো কাঠখট্টা বিষয়! তাদের বক্তব্যকে মিথ্যা করে দিতেই বুঝি আজ বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখার এত আয়োজন। সৃজনশীলতার সকল শাখাতেই আজ প্রযুক্তির সরব উপস্থিতি। এখন আমাদের শুধু অপেক্ষার পালা এর পরবর্তী আকর্ষণের প্রতীক্ষায়।

(তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট)

Level 2

আমি ফাহিম আহ্‌মেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 480 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ফাহিম আহ্‌মেদ। ভাল লাগে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে, গান শুনতে আর প্রচুর বই পড়তে। আমি মুক্ত মনের স্বাধীন মানুষ হতে চাই, চাই লেখার স্বাধীনতা। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। স্বপ্নের মাঝেই আমি বাস্তবতার খোঁজ করি। স্বপ্নের রঙ্গিন ভেলায় ভেসে, আমি সত্য জগতে পাড়ি জমাতে চাই। চাই স্বপ্নীল আলোতে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে।...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

উফ! অসাধারন বর্ননা। নির্বাচিত টিউনার ফাহিম ভাই যেহেতু টিউন করা শুরু করছে এখন আশা করি কোয়ালিটি টিউনের অভাব হবে না।
অসীম ধন্যবাদ ফাহিম ভাই। 😀 😀

    অসংখ্য ধন্যবাদ হাসান ভাই :D। আপনার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আপনার অনুপ্রেরণাই আজ আমার এ টিউন করার পেছনে মূল উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে। আবারও, অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂

দারুণ জিনিষ ভাই! 😮 আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 😀

Level 0

অদ্ভুত সুন্দর টিউন 🙂

চরম একটা টিউন …. কই ছিলেন ভাই?

প্রযুক্তির মিশেলে আনন্দ দেয়ার মত টিউন খুব কমই হয় | সেই কম টিউনের পরিমান আরেকটু বাড়ল | খুব ভালো লেগেছে |

সুন্দর টিউন…চালিয়ে যান..

Level 0

Nice…………. Want more…