র‍্যাম সম্পর্কে যে সব ভুল ধারনা কাজ করছে আপনার মাঝে | কম্পিউটার ও স্মার্টফোন এর র‍্যামের অদ্যোপান্ত | আপনার কী পরিমান র‍্যাম দরকার?

Ram বা র‍্যান্ডম এক্সেস মেমোরী এটি স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার এর ক্ষেত্রে একটি মৌলিক কম্পোনেন্ট বা হার্ডওয়্যার। এর কাজ হল নির্দিষ্ঠ কিছু সময়ের জন্য ডিভাইস এর প্রক্রিয়াকরন রত তথ্য বা কম্পিউটেশন স্মরনে রাখা। যেনো প্রোসেসর কে বারবার একই তথ্য প্রক্রিয়া করন করতে না হয়।

এটি অনেক গুরুত্ব পূর্ন একটি আইসিটি ডিভাইস এর জন্য তা জানা সত্ত্বেও; মানুষের ভেতর এই Ram নিয়ে অনেক ভুল ধারনা কাজ করে। অনেক সময় মানুষ এই কারনে র‍্যাম কেনার ক্ষেত্রেও ভুল করে ফেলে। আসুন আজকের টিউনে এরকম র‍্যাম নিয়ে কত গুলো ভুল ধারনা নিয়ে আলোচনা করি।

[র‍্যাম]

আমার অত র‍্যাম দরকার নেইঃ

অনেক সময় ডিভাইস কেনার সময় বা র‍্যাম পরিবর্তনের সময় আমরা কতিপয় কত গুলি সফটওয়্যার বা গেমস এর কথা ভেবে তা আপগ্রেড করি বা নতুন র‍্যাম কিনি। আমরা ভাবি এই সফটওয়্যার বা এই গেমস এর জন্য ৪ জিবি বা ৮ জিবি, স্মার্টফোন এর ক্ষেত্রে ২ জিবি এ রকম র‍্যাম পর্যাপ্ত। হ্যা সেই সফটওয়্যার বা গেমস চালানোর জন্য র‍্যাম পর্যাপ্ত ঠিকই; তবে র‍্যাম এর আরও কাজ আছে নাকি? না র‍্যাম কেবল আপনার কতিপয় অ্যাপ বা গেমস ছাড়া আর কোনো কাজ করবে না? তাই এর মানে এই না ডিভাইসটি ভালো ভাবে কাজ করবে।

ধরুন একটি সফটওয়্যার এর স্পেসিফিকেশন এ লেখা মিনিমাম ৪ জিবি র‍্যাম লাগবে, আপনি কেবল ৪ জিবি র‍্যামই লাগালেন! হবে না। কেননা ডিভাইস এর বাকি সব কিছুকেও ম্যানেজ করতে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এর জন্য র‍্যামই সেভাবে কাজ করতে পারবে না। যার দরুন আপনি পাবেন একটি স্লো ডিভাইস। তাই  র‍্যাম কেনার বা আপগ্রেড করার আগে ভাবুন আপনি আপনার ডিভাইসে কও রান করাবেন, সেসব সফটওয়্যার ও গেমস এর র‍্যাম চাহিদার থেকে ১ জিবি ২ জিবি বেশি ক্ষমতার র‍্যাম কিনুন।

র‍্যাম এর সাইজই সবকিছুঃ

আপনি হয়ত জানেন আপনার ফোনে বা কম্পিউটারে কত জিবি র‍্যাম আছে।আবার যখন আপনার বন্ধু বা আত্মীয় আপনাকে বলে আমার ফোনে এত জিবি র‍্যাম আমার কম্পিউটারে এত জিবি র‍্যাম অর্থাত আপনার থেকে বেশি; তখন আপনি নিশ্চয়ই ভেবে ফেলেন তার সিস্টেম আপনার থেকে ফাস্টার। হ্যা এটাই স্বাভাবিক।তবে সব সময় ঠিক নয়। র‍্যাম ক্যাপাসিটি বা সাইজ সবকিছু নির্দেশ করে না।

র‍্যাম এর পার্ফমেন্স বা কার্য ক্ষমতা যাছাই করার জন্য অনেক গুলো আলাদা বিষয়াবলী রয়েছে। র‍্যাম স্পীড বা ফ্রিকুয়েন্সী এর মধ্যে একটি। একই স্টোরেজ এর ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতার দুটি র‍্যাম এর পার্ফমেন্স অনেক ভালো-খারাপ পার্থক্য থাকতে পারে। একইভাবে একজন কম্পিউটার ইউজার ৮ জিবি র‍্যাম ও ১৬ জিবি র‍্যাম ব্যবহার কালে তেমন কোনো পার্থক্য কিন্তু খুঁজে পাবেন না। কেবল একজন হাই এন্ড কম্পিউটার ইউজার যেমনঃ গেমার, ভিডিও এডিটর কেবল তারাই এই পার্থক্যটি খুজে পেতে পারেন।

তাই আপনি যদি একটি ৮ জিবি র‍্যাম এর কম্পিউটার ইউজার হন; তবে ৮ জিবি থেকে ১৬ জিবি তে আপগ্রেড একান্ত প্রয়োজন না হলে করার দরকার নেই। আপনার একই কম্পিউটার পিসিতে পারফর্মেন্স যদি ভালো চান তবে ৮ জিবি র‍্যাম এর ভালো ফ্রিকুয়েন্সি সংস্করন কিনে ফেলুন। আসলে মূলত আপনি সাধারন কম্পিউটার ইউজার হলে এটি করবেন। হাই এন্ড গেমার, ভিডিও এডিটর দের ব্যাপার আলাদা; তাদের আসলেই বেশি ক্যাপাসিটি র‍্যাম লাগে।

আপনি আলাদা আলাদা সাইজের র‍্যাম লাগাতে পারবেন নাঃ

আমরা নিশ্চয়ই জানি কম্পিউটারে র‍্যাম এর জন্য অনেকক্ষেত্রে দুইটি বা তিনটি স্লট থাকে। আমাদের ভেতর একটি ভুল ধারনা কি! যে সেই স্লট গুলোতে কেবল একই সাইজের র‍্যাম লাগাতে হবে। যেমনঃ একটি স্লটে ৮ জিবি লাগানো থাকলে আরেকটি স্লটেও ৮ জিবি লাগাতে হবে। তবে বন্ধুরা! এমনটি কোথায় নেই। আপনি বিভিন্ন স্লটে আলাদা আলাদা সাইজের র‍্যাম লাগাতে পারেন।

কিন্তু! একই সাইজের একই ফ্রিকুয়েন্সির র‍্যাম লাগানো বেটার বা ভালো। দুইটি স্লটে একই তৈরিকারক, একই ক্যাপাসিটি,একই ফ্রিকুয়েন্সির র‍্যাম লাগানো থাকলে দুটির কাজের সামঞ্জসতা ভালো পাবেন এবং এ কারনে ভিন্ন সাইজের র‍্যাম লাগালে যে পারর্ফমেন্স পেতেন তাই চাইতে অনেক ভালো পারফর্মেন্স পাবেন।

তাই হ্যা আমার উপদেশ হবে একই সাইজের, ক্যাপাসিটির, ক্যাপাবিলিটির র‍্যাম লাগানোর চেষ্টা করবেন। তবে হ্যা একটি স্লটে ৪ জিবি থাকলে আরেকটি স্লটে ৮ জিবি লাগাতে পারবেন, কোনো সমস্যা হবে না। এখানেও আপনি ডুয়াল চ্যানেল মোড সেট করে, স্মুথ একটা পারফর্মেন্স পাবেন।

স্পীড বাড়াতে র‍্যাম ক্লিয়ার করতে হয়ঃ

এটা আমাদের ভেতরে থাকা র‍্যাম সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা। আর এই ভুল ধারনার ফলে আমরা  র‍্যাম বুস্টার বা মেমোরি আপটিমাইজার নামক সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করি এবং খাল কেটে কুমির ডেকে আনি। এখন আপনার র‍্যাম ধরুন ফুল, হ্যাঁ এটি ভালো; আপনার র‍্যাম কাজ করছে এবং সে কাজে টইটুম্বুর। র‍্যাম তো ফাঁকা থাকার জন্য তৈরি করা হয়নি। আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার কে তৈরি করা হয ওইভাবে যেনো তা  র‍্যাম জায়গা দখল করে রাখতে পারে।

তাই আপনার সিস্টেমের বিপরীতে যেয়ে ক্লিনার সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন কেনো ? এমনকি এসব ক্লিনার বুস্টার সফটওয়্যার আপনার ডিভাইসকে আরো স্লো করে ফেলছে কেনোনা আপনি সিস্টেমের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রক্রিয়াকরন কেও মুছে ফেলছেন। বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই ? র‍্যাম হার্ড ড্রাইভ এর মত নয়, এর অটো এডজাস্ট সিস্টেম রয়েছে। র‍্যাম এর যদি ৪ জিবি হয়, চলন্ত অবস্হায় এটি ৪ জিবি জায়গাকেই ব্যবহার করে Writing,Erasing,Rewriting করে যাবে। তাই র‍্যাম বুস্টার বা ক্লিনার অ্যাপস বা সফটওয়্যার আর ব্যবহার করবেন না।

তো আপনার কতটুকু র‍্যাম দরকারঃ

আপনি যদি ৩২ বিট উইন্ডোজ ইউজার হন, তবে নিশ্চয়ই জানেন আপনার সিস্টেম ৪ জিবি র‍্যাম পর্যন্তই আটকে থাকবে। অথ্যাৎ আপনি ৮ জিবি লাগালেও ৪ জিবিরই পারর্ফমেন্স পাবেন। এনড্রয়েড ফোনের দিকে তাকালে আমরা দেখব ওয়ানপ্লাস ৫ এ ৮ জিবি র‍্যাম, দারুন। তবে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার কি আসলেই অত র‍্যাম দরকার? আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন - নিচে টিউমেন্টে মতামত জানাবেন অবশ্যই।

আজ যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না! আবার ফিরব নিত্যনতুন কোন টিউন নিয়ে; ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন। টেকটিউনস এর সাথেই থাকবেন। 😀 

Level 12

আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

After Effect এবং Premeir pro দিয়ে কাজ করার জন্য কত জিবি র্যাম দরকার?
নোট: কোর আই৩ প্রসেসর 3.70GHz
এবং গিগাবাইট H110m মেইনবোর্ড