স্টারট্রেকের ওয়ানওয়ে টিকেট

আলোর গতিকে অতিক্রম করতে পারবো না বলে দূরবর্তী নক্ষত্রের গ্রহগুলো চিরদিনের জন্য আমাদের যোগাযোগঅসাধ্য যাবে, এটি  বুদ্ধিমান প্রজাতি হিসেবে মানুষের জন্য চরম অপ্রাপ্তির। কিন্তু টাইম ডায়ালেশন এবং লেংথ কনট্রাকশন নীতি এক্ষেত্রে নক্ষত্র ভ্রমণের অপার সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে তা ওয়ানওয়ে। এ দু’টো নীতির ফলে আমরা নক্ষত্র ভ্রমণের টিকেট পেলেও পৃ্থিবীতে ফিরে আসার টিকেট পাব না। তবে সেক্ষেত্রেও আমাদের মহশূন্যযানের গতি হতে হবে আলোর কাছাকাছি গতিসম্পন্ন। কিন্তু আলোর কাছাকাছি গতিসম্পন্ন মহশূন্যযান কি আদৌ সম্ভব?

ধরি, ২৫ আলোকবর্ষের দূরের নক্ষত্র ভেগায় মি.অয়ন সাহেব  যেতে চান। আবার তার মহশূন্যযানের গতিও ০.৯৯৯C অর্থাৎ, আলোর গতির কাছাকাছি। ধরি, অয়ন সাহেব ২০২৫ সালে আলোর কাছাকাছি গতিতে ভেগার উদ্দেশ্যে পৃ্থিবী ত্যাগ করলেন। ২০৫০ আতিথিয়েতা গ্রহণ না করে, তিনি যদি পৃথিবীর উদ্দেশ্যে ভেগা গ্রহ ত্যাগ করেন, তবে ২০৭৫ সালে তিনি পৃ্থিবীতে পৌছাঁবেন। যাহোক, অয়ন সাহেবের অবস্থান থেকে তিনি দেখবেন তিনি নিজে স্থির; তবে পৃথিবী তার কাছ থেকে ০.৯৯৯C গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে আবার পৃথিবী্তে ফিরে আসার সময় মনে হবে পৃথিবী সেই একই গতিতে তার দিকে ধেয়ে আসছে। এরপর অয়ন সাহেব দেখবেন দৈর্ঘ্য সংকোচন সূত্রানুসারে, পৃ্থিবী ও ভেগার মধ্যবর্তী দূরত্ব মাত্র এক আলোকবর্ষে পরিণত হয়েছে। তাহলে অয়ন সাহেবের সময় লাগবে মোট দু’বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালে ভেগার উদ্দেশ্যে পৃথিবী ত্যাগের মাত্র দু’বছর পর অর্থাৎ ২০২৭ সালে তিনি পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন। কিন্তু অয়ন সাহেবের ক্ষেত্রে যা দু’বছর, তার যমজ ভাই (যদি থাকে) নয়নের ক্ষেত্রে , তা হবে ৫০ বছর। যদি অয়ন সাহেব ২৫ বছর বয়সে মহাশুন্য ভ্রমণে বের হন, তবে পৃ্থিবীতে ফিরে আসলে তার বয়স হবে মাত্র ২৭ বছর। কিন্তু নয়ন পরিণত হবে ৭৫ বছরের বুড়োতে। ইতিমধ্যে অয়ন সাহেবের বাবা-মা কেউ বেঁচে থাকবেন না। আবার নয়ন সাহেবের নাতি-নাতনিরা বলবে- দাদু, ভাইয়া এতো হ্যান্ডসাম কেন! কিংবা কিভাবে তুমি যৌবন ধরে রেখেছো! এভাবে মি.অয়ন সাহেব যতবেশি দূরে মহাশূন্য ভ্রমণে যাবেন, ততই পৃথিবীর অধিবাসীদের সাথে মি.অয়ন সাহেবের বয়সের পার্থক্য বেড়ে যাবে। টাইম ডায়ালেশন এবং লেংথ কনট্রাকশন সূত্র ব্যবহার করে অয়ন সাহেব যদি দূর কোন গ্যালাক্সির কোন নক্ষত্রের গ্রহের বুদ্ধিমান বন্ধুদের সাথে ০.৯৯৯C গতিতে ভ্রমণে বের হন, তবে তাদের সাথে তার সাক্ষাত ঠিকই হবে। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে এসে অয়ন সাহেব দেখবেন মিলিয়ন মিলিয়ন বিছর পার হয়ে গেছে। হয়ত স্টারওয়ারের ফলে ততদিনে পৃথিবী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ঊর্ধ্বলোক ভ্রমণে (যদিও ঊর্ধ্বলোক বলতে কিছুই নেই) হয়ত কেউ যেতে পারে। কিন্তু ফিরে এসে পৃথিবীকে দেখতেই পাবে না। আসলে আপাতত নক্ষত্র ভ্রমণের ওয়ানওয়ে টিকেট প্রাপ্তির চেষ্টা করাই সঙ্গত। অর্থাৎ প্রাযুক্তিক গবেষনায় আত্মনিয়োগ করা প্রয়োজন। তবে কেউ স্বপ্নে ঊর্ধ্বলোক ভ্রমণে যেতে পারে। তা-ও আবার পূর্বাভিজ্ঞতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। যেমন কোন মহাকাশচারী প্রত্যক্ষভাবে পৃথিবী থেকে তিন’শ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত প্লুটো গ্রহে ভ্রমণের অভজ্ঞতা থাকে, তবে সে স্বপ্নযোগেও সেই গ্রহের শীতলতম এলাকায় যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে তার গতি হবে আলোর চাইতে অনেক বেশি। যেমন তিন’শ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত প্লুটো গ্রহে স্বপ্নযোগে গিয়ে ও ফিরে আসতে সে মহাকাশচারীর সময় লাগবে মাত্র কয়েক ন্যানোসেকেন্ড। কিন্তু এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। কিন্তু কেউ যদি ভেগার কথা কখনো না শুনে থাকেন, তাহলে তার পক্ষে স্বপ্নেও ভেগায় যাওয়া সম্ভব নয়। জীবনে একবারও ঢাকায় না এসে, ঢাকা ভ্রমণকারী কারো নিকট ঢাকার গল্প না শোনা কেউ কেরানীগঞ্জের অধিবাসী হলেও স্বপ্নযোগে ঢাকায় আস্তে পারবেনা। তবে ঢাকাকে নিয়ে হয়তো আজগুবি কাহিনী বানাতে পারবেন, অনেকটা বৈজ্ঞানি্ক কল্পকাহিনীর মতো। বাস্তবতার সাথে যার কোন মিলই নেই…

(বিঃদ্রঃ – টিউনটি করা হয়েছে একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে)

Level 0

আমি এন.সি.। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 208 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ফায়ান্টাস্টিক! 😀

    চলেন ‘ফেন্টাসী কিংডম’ থেকে ঘুরে আসি… 😀

(দৈর্ঘ্য সংকোচন সূত্রানুসারে) এটি কি বাস্তবভিত্তিক নাকি কল্পনা। যদি বাস্তব হয় তাহলে আরো খুলে বলুন। জানতে চাই। ইংলিশ মুভিতে এরকম কিছু একটা দেখি। ধন্যবাদ

    আলবার্ট আইনস্টাইন সময় ও স্থান সম্পর্কিত মৌলিক প্রস্তাবন উত্থাপন করেন। এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন, “আলোর কাছাকাছি বেগে চলমান সময়ে বস্তুর গতি ধীর হবে এবং দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়ে পড়বে”।