“ ইনফোসিস এ তিন মাস ”

আমি মোঃ জুলহাসসুজন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন থেকে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পূর্ণ করে বর্তমানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে USAID এ কর্মরত আছি।

ইনফোসিস লিমিটেড কি?

ইনফোসিস লিমিটেড একটি গ্লোবাল কনসালটিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়ার ডেভলপমেন্ট কোম্পানি। এটির হেড অফিস ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়াতে অবস্থিত। এটি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি ইন্ডিয়ার বৃহত্তম আইটি কোম্পানি। যাদের ৭০টি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। যারা ভারত তথা আধুনিক বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছে।

Global Education Center

কিভাবে সুযোগ পেলাম?

যদিও এটি অনেক কঠিন বিষয়ই ছিল ইনফোসিস এ যাওয়া। তথাপি এই কঠিন বিষয়টিকে সহজতর করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আই.সি.টি ডিভিশন। গত চার বছরের(২০১০-২০১৪) অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসলস্বরূপ গত জানুয়ারি মাসে ১০০ জন CSE গ্রাজুয়েট ইনফোসিস-এ তিন মাসের আবাসিক টেনিং এর সুযোগ পায়। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মাননীয় সচিব শ্যামসুন্দর শিকদার ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের মাননীয় প্রোজেক্ট ডিরেক্টর আ. ন. ম সফিকুল ইসলাম এর প্রচেষ্টার ফল হিসাবে তিন মাস সফলতার সাথে ট্রেনিং সম্পন্ন করে আমরা দেশে ফিরেছি।

এই ট্রেনিংএ সুযোগ পাওয়াটা ছিল অনেক কঠিন। কেননা হাইটেক পার্ক অথোরিটি তিনটি ধাপে, ৩৫০ জন আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ১০০ জন কে বাছাই করেন।

কি ছিল এই ট্রেনিং এ?

ট্রেনিং টি করানো হয়েছে “এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট” এর উপরে। এতে অন্তর্ভুক্তছিল-Java Programming, Oracle Database, Business Tier(Java), Persistence Tier(JPA) ও Presentation Tier(JSP and JSF) এবং Enterprise Application Maintenance।

ট্রেনিং আবাসিক ব্যবস্থাঃ

আমরা ইন্ডিয়ার কর্নাটক রাজ্যে ১২ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং ইন্সিটিউট এর আবাসিক ব্যবস্থায়ছিলাম। বিশ্বমানের এই ট্রেনিং ইন্সিটিউট এর আবাসস্থলে আমাদের খাবারব্যবস্থা, এসি রুম ও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। পুরো ইন্সিটিউটটি পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে আমাদের ক্লাস রুম গুলো ও আবাসিক হল গুলোর মধ্যে ছিল বেশ দূরত্ব। নয়নাভিরাম ক্যাম্পাসটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যুগোপযোগী ও অত্যানুকুল ব্যবস্থাপনা। আমাদের ১০০ জনের ক্লাসরুম টি আবাসিক হল থেকে প্রায় ২কিলোমিটার দূরে ছিল আর বাহন হিসাবে একমাত্র উপায় ছিল বাইসাইকেল। মনেরাখাভাল এই ক্যাম্পাস-এ একসাথে ১৪,০০০ ছাত্রছাত্রী প্রশিক্ষণ নিতেপারে। আর আমরা একসাথে ১২,০০০ ছাত্রছাত্রী প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলাম।

Infosys Campus Development Center

 

ট্রেনিং কোয়ালিটিঃ

একথা স্বীকার করতেই হবে যে তারা যেমানের ট্রেনিং প্রদান করেন তা বিশ্বমানের। কেননা তাদের প্রতিটি কোর্স কনটেন্ট তৈরি করা হয় তাদের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা। আর সমস্ত ট্রেনিং ডাটাগুলো ছিল সংরক্ষিত।

আমাদের পরীক্ষাগুলো দিতে হতো স্বয়ংক্রিয় এক্সাম ইভালুয়েশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। ইন্ডিয়ার ভিতরে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইনফোসিস থেকে ট্রেনিং কৃতদের আলাদা ভাবে মূল্যায়ন করা হয়। এরই মধ্যে আমাদের ১০০ জনের বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে চলে গিয়েছেন।

ট্রেইনার কারা ছিলেন?

আমাদের যারা ট্রেইনার ছিলেন তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা আইবিএম, SAP ও Microsoft এ দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। তাই একথা নির্দ্বিধাই বলতে পারি যে তারা বিশ্বমানের ট্রেনিং দেওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন।

আমরা কি শিখলাম?

আসলে আমরা যা শিখলাম তার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন তবে এতটুকু বলতেই হবে যে আমরা শুধু জাভা বা ওরাকল শিখি নাই। আমরা শিখেছি কিভাবে বিশাল একটি ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হয়, কিভাবে ফুটপাত সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হয়, একটি বিশ্বমানের কোম্পানি কেমন হয়, তাদের Development কেমন হয়, কিভাবে ট্রেনিং করাতে হয়, কিভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে মিশতে হয়। আর এই বিশ্বমানের সফটওয়্যার কোম্পানিতে তিন মাসে প্রাপ্ত অনন্য অভিজ্ঞতা আমাদেরকেও ঐ মানের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।

যেখানে ভ্রমণ করেছি?

রথ দেখাও হল কলা বেচাও হল অর্থাৎ পাঠকরা বুঝতেই পাড়ছেন বোনাস হিসাবে আমারা ইন্ডিয়ার চারটি রাজ্যে বিভিন্ন দর্শনীয়স্থান গুলো দেখার সুযোগ পেয়েছি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-টিপু সুলতান এর রাজধানী(মহিশুর), উটি(তামিলনাডু), কেরালা, সমুদ্রসৈকত(গোয়া), চামুন্ডীহিলস(মহিশুর), সাউথকুরগ(তামিলনাডু), শিবানাসামুদ্রা(মান্দাইয়া), মাইসোর প্যালেস(মহিশুর) এর মত উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে।

আমাদের থেকে দেশের প্রাপ্তি কি?

আমরা যে জ্ঞান আহরন করলাম ও যেকারনে বাংলাদেশ সরকার আমাদের পাঠিয়েছেন আমরা চাই আমাদের আহরিত জ্ঞান কে আমাদের দেশের আইটি খাতে প্রয়োগ করতে এবং তাদের মত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে।

পরিশেষে যিনি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়েছেন তিনি আ. ন. ম সফিকুল ইসলাম (প্রোজেক্ট ডিরেক্টর, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটি) তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ইনফোসিস কর্তৃপক্ষ (HR Department, Security Department, Course Instructors)এর প্রতি।

Level 0

আমি জুলহাস সুজন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস