অনাগত আগামী সম্ভাবনা, অপেক্ষায় আমরা

এই ব্যক্তিটি কি আমাদের পরিচিত? প্রায় সকলেই আমরা হয়ত তাকে চিনি। বিজ্ঞানী নিউটন, যার অবদান আজকের এই বিজ্ঞানে অনেক বেশি। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন। তাঁর বিখ্যাত একটি উক্তি “আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক যে কেবল সমুদ্র উপত্যকায় খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল"।

বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়েও তিনি যদি এই কথা বলেন ,তাহলে জানি না আমরা এই সমুদ্রের সন্ধান পেয়েছি কিনা। পেয়েছি আমরা ভার্চুয়াল জ্ঞানের সন্ধান, গুগল সার্চ দিলে আমরা আজ প্রায় সব প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাই। নিউটন যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয় অবাক হতেন, আজকের এই অকল্পনীয় বিষয় গুলো দেখে।

বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তার অবদান রয়েছে। অংকশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যায় তাঁর গবেষণাকে কেন্দ্র করে এককালে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট আলোড়ন। প্রকৃতপক্ষে ঐ তিন শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন নিউটন।

কিন্তু এই মহান বিজ্ঞানী যদি তিন শতক পর বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা দেখতন, তাহলে হয়ত তিনি নিজেও অবাক হতেন।

যদিও বিজ্ঞান পূর্ণ আছে বলে মনে হয় তথাপি প্রতিদিনই কিছু না কিছু বিজ্ঞান বহরে যুক্ত হচ্ছে। যোগ হওয়ার পর আমদের মনে হয়, হা এটি তো সম্ভব যা আবিষ্কারের পূর্বে আমরা কল্পনা ও করতে পারতাম কিনা জানি না।

বিজ্ঞান দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে তার নিজ পথে। দুই দিন পর হয়ত অনেক কিছুই বিজ্ঞান থেকে পাব যা আজ আমরা চিন্তা করতে কষ্ট হচ্ছে বা ভাবতেও পারছি না। তেমনি ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের কিছু কাল্পনিক আবিষ্কার তুলে ধরছিঃ

নিউক্লীয় শক্তি

পৃথিবীতে আমরা এখন নিউক্লীয় ফিশন বিক্রিয়ায় মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করছি(যেমনঃ-পারমানবিক বিদ্যুৎ বা শক্তি), যা কিনা অনেক ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ ও অনেক বিপদজনক। যদি সময় ও ব্যয়ের কথা ভাবি তাহলে বলা যেতে পারে ব্রাজিলের ANGRA-1 যার প্রক্কলিত ব্যয় ও সময় যথাক্রমে ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৫ বছর ধরা হয়েছিল । কিন্তু এটি ১৩ বছর পর উৎপাদনে যায় এবং ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ভুলে যেতে পারি না ১৯৮৬ সালের রাশিয়ার চেরেনোবিল পারমানবিক দূর্ঘটনার কথা যেখানে মারা গিয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার লোক ও তেজষ্কিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ৭০ লক্ষ লোক। কিংবা কিছু দিন আগে জাপানের ফুকুশিমা পারমানবিক দূর্ঘটনার কথা ও নিশ্চয় আমরা ভুলে যেতে পারি না ।

তেজষ্কিয় বিপর্যয়ের ফলাফল

এই সকল উপদ্রব হতে মুক্তি দিতে নিশ্চয় মানুষ কয়েক দশকের মধ্যে ফিউশান প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করবে। যা হয়ত আজকের ফিশন প্রক্রিয়ায় উপদ্রুত সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে আসছে।

গাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন

আজকের সৌর বিদ্যুৎ কিভাবে আবিষ্কার হয়েছে তা কি আমাদের জানা আছে ? উদ্ভিদ এক বিস্ময়কর উপায়ে পাতার সাহায্যে সূর্য শক্তি ধরে রেখে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে সঞ্চয় করে খাদ্য উৎপাদন করে। আর এই উপায়টিকে অবলম্বন করেই সৌর প্যানেল আবিষ্কার করা হয়েছে। এখানে পাতা হিসেবে কাজ করে সিলিকন বেস সেমিকন্ডাকটর।

সময় এসেছে সরা সরাসরি উদ্ভিদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের। এই প্রক্রিয়াটির আংশিক সত্যতা ইতিমধ্যে আমরা পেয়েছি। এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক হচ্ছেন আমাদের দেশেরই একজন ব্যক্তি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মোঃ কামরুল আলম খান। তিনি পাথর কুঁচি গাছের (বৈজ্ঞানিক নাম Bryophillum) পাতার দ্রবণকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করেন। সীমিত পরিসরে ইতিমধ্যে তিনি এর প্রমাণ দেখিয়েছেন। হয়ত খুব বেশি দিন দেরি করতে হবে না, যে দিন আমরা সরাসরি গাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারব ও আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারব।

বিধ্বংসী অস্ত্রের আবিষ্কার

সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার এই যুগে মানব সমাজ যেমন অপার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তেমনি মুদ্রার উল্টা পিঠের মত পেয়েছে মারাত্মক সব বিধ্বংসী মরণাস্ত্র । যার প্রমান আমরা ইতোমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,আরব-ইসরাইল যুদ্ধ,আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভিয়েনাম যুদ্ধ, ইরান-ইরাক যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ কিংবা আফগানিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে পেয়েছি যেগুলোর ভয়াবহতা আমাদের বিবেককে নিশ্চয় নাড়া দিয়েছে। কিন্তু উন্নত রাষ্ট্রগুলো তারপরও অস্ত্র নির্মাণে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। এই অস্ত্র নির্মাণ প্রতিযোগিতা কোন দিনই থামবে না বরং বিজ্ঞানের উৎকর্যতার সাথে অস্ত্র আবিষ্কারেও আসবে অভাবনীয় সাফল্য। মানুষ এমন সব অস্ত্র আবিষ্কার করবে, যে গুলো হবে অপরাজেয়। নিক্ষিপ্ত পারমানবিক অস্ত্রগুলো মহাকাশেই লেযার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে। এই কাজটি হবে লঞ্চ করা দেশের মাটিতেই অর্থাৎ যে দেশ মিসাইল নিক্ষেপ করবে তার মাটিতেই তেজষ্ক্রিয়তা থাকবে।

রোবটিক আর্মি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভিয়েনাম যুদ্ধ,আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ইরান-ইরাক যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধসহ আজ পর্যন্ত আজস্র যুদ্ধে শত্রু-মিত্র পক্ষের অগণিত সৈনিক প্রাণ দিয়েছে। যুদ্ধে মানব সৈনিকেরা ক্লান্ত হয়ে যায়, থাকে তাদের পিছুটান ও আবেগ –অনুভূতি। যা তাকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত করতে অদূর ভবিষ্যতে রোবটিক আর্মি রিক্রট করা হবে।

এরই মধ্যে মানুষ রোবটকে নানা কাজের উপযোগি হিসেবে গড়ে গড়ে তুলেছে। প্রক্রিয়া চলছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রোবটিক আর্মি ব্যবহারের। ইতোমধ্যে মার্কিন ড্রোন বিমান (চালকবিহীন) জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে নিঃসন্দেহে।

রোগ মুক্ত পৃথিবী

আদি কালে অনেক সভ্যতা আছে যা কোন কোন রোগে অনেকাংশে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কলেরা, বসন্ত, ডাইরিয়া এমনিই কিছু রোগ। আজ মানুষ ঐ সকল রোগ জয় করছে কিন্তু দেখা দিচ্ছে এইডস, ক্যান্সার, হেপাটাইটিসের মত মারাত্মক সব রোগের। যার কারনে মানুষকে আতংকে থাকতে হয়। খুবই অল্প সময় পরই মানুষ রোগ মুক্ত এক পৃথিবীর সন্ধান করবে বিজ্ঞানের অবদানে।

মানব শরীরের দুর্বল অঙ্গের প্রতিস্থাপন

আজকে পৃথিবীর মানুষ সর্বোচ্চ কত বছর বাঁচে। হয়ত ১০০ বছর অথবা কিছু কম বা বেশি। কেন? কারন মানুষের শরীরের কিছু অঙ্গ আছে যেগুলোর কার্যক্ষতা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। যেমন হৃদপিন্ড,কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি। এরই মধ্যে বাংলাদেশী বিজ্ঞানী শুভ রায় কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই কিডনি দুই থেকে তিন দশক স্থায়ী হবে। নিকট ভবিষ্যতে একে আরো শক্তিশালী করে তুলা হবে সুনিশ্চিত। তাছাড়া অন্যান্য দুর্বল অঙ্গ সমূহ প্রতিস্থাপন করার মাধ্যেম মানুষ অমরত্ব লাভ করবে না ঠিক কিন্তু তাদের আয়ু বেড়ে যাবে কয়েক গুন।

জিনকে মডিফাই করা

বংশগতির ধারক ও বাহক হচ্ছে জিন। মানুষ তথা সকল জীবের প্রকৃতি নির্ভর করে জিনের উপর। তাই জিন নিয়ে মানুষের গভেষণার অন্ত নাই। তাই কোন প্রাণীর মডিফিকেশনের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই তাঁর জিনোম এর নকশা আবিষ্কার করতে হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় কিছু দিন আগে বাংলাদেশের এক জন জিন গভেষক মাকসুদুল আলম পাটের জিনোমের নকশা আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

জিন সম্পর্কে পযাপ্ত জ্ঞান মানব সভ্যতাকে কয়েকগুণ এগিয়ে দিবে। নিকট ভবিষ্যতে মানুষ জিনকে মডিফাই করে তাদের জন্যে প্রয়োজনীয় জীব তৈরি করে নিবে। দেখা যাবে ঘোড়া ও গাধার জিনের মিশ্রনে এমন এক প্রানীর তৈরি হবে যা কিনা ঘোড়া ও গাধা উভয়ের কাজ করতে পারবে। মানুষের পিঠে হয়ত পাখির পাখনা লাগানো হবে তার যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে।

ভবিষ্যতের আবাসন

আপনি কি ঢাকায় আছেন? নাকি দেশের অন্য কোন স্থানে। দেখুন তো মনে করে এই সময় থেকে পাঁচ বছর আগে আপনি কি একই রকম লোকজন দেখতেন নাকি কম ? যাই হোক এই আবাসন সমস্যা কম বেশি সবাইকেই ভাবনায় ফেলছে। যে হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে তাতে অল্প কিছু দিনের মধ্যে হয়ত পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের জন্যে স্থান সংকুলান হবে না।

হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলেন যে আপনার চারপাশেই পানি কিন্তু আপনার গায়ে কোন পানি লাগছে না। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন , চারপাশেই কাচের দেওয়াল। বর্তমান ঢাকা সিটির মত পুরোপুরি শহরই গড়ে উঠবে পানির নিচে। জীবন ধারনের সকল কিছু পানির নীচেই তৈরি করা হবে। কি বিষয়টি আপনার কাছে অবাক করা মনে হচ্ছে। এটিই হবে আগামীর আবাসন পরিকল্পনা। মানুষ এক সময় পানির নিচে বসবাস করার সক্ষমতা অর্জন করবে। অপেক্ষায় থাকলাম কবে সেই যুগ কখন আসে, জানি না দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা।

হয়ত এই রকম হাজারো প্রজেক্ট আমরা পাব বিজ্ঞানের কল্যাণে । কিন্তু প্রযুক্তিকে ভাল কাজে ব্যবহার করার দায়িত্ব আমাদের, তবেই আমরা আগামী দিনগুলোতে শান্তিতে বসবাস করতে পারব। জয় হোক বিজ্ঞানের জয় হোক মানুষের।

Level 0

আমি মানজুরুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 16 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

এখনও লিখা হই নাই। ফেসবুকে আমাকে পেতে ক্লিক করুন। :D


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

মানুষের জানার ও আশা করবার কোন শেষ নেই । এমন একটা চমত্‍কার টিউনের জন্য ধন্যবাদ ।

খুব জ্ঞ্যানে পরিপুর্ন অসাধারণ টিউন।

সু-স্বাগতম!!! আর একটু সাবলিল হলে ভালো হতো।

আনেক তথ্যবহুল একটা পোস্ট পরলাম।

চরম পোস্ট! পিডিএফ করে রাখলাম, পরে পড়ব। ধন্যবাদ 😀

আমরা হয়ত সিঙ্গুলারিটি এর দিকে আগাচ্ছি।অমরত্ব আবিস্কার হওয়াটাও বিচিত্র কিছু না

ধন্যবাদ সবাইকে । Ochena Balok আপনার কথাটি সত্য হবার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। যদি আপনি মুসলিম হন, তাহলে তো জানেনই মানুষকে মরতে হবে। অথবা সাধারন ভাবে চিন্তা করুন। পৃথিবীতে যদি মানুষ অমরত্ব লাভ করে কি হবে। এমনিতেই লোক সংখ্যা পরিপূর্ণ , তার উপর যদি মানুষ মৃত্যুবরন না করে বাড়তে থাকে, তাহলে লোকজন কোথাই থাকবে। নিশ্চয় প্রকৃতি এটা হতে দিবে না।

অসাধারণ টিউন। এমন টিউন আরো চাই 😀
ধন্যবাদ মানজু ভাই 🙂

🙂 ধন্যবাদ হাসান ভাই। চেষ্টা চলবে।