
মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক হলো চুল। ঘন, মসৃণ, ও উজ্জ্বল চুল ব্যক্তিত্বে আনে এক বিশেষ মাত্রা। কিন্তু বর্তমান যুগে দূষণ, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রাসায়নিক প্রসাধনী ও অতিরিক্ত ট্রাভেলিং এর কারণে চুলের স্বাস্থ্য হারাচ্ছে অনেকেই। ফলস্বরূপ দেখা দিচ্ছে খুশকি, চুল পড়া, আগাম পাকা, চুল ভেঙ্গে যাওয়া, রুক্ষতা ও চুলের গোড়ায় দুর্বলতা। এইসব সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে মেহেদি (Henna) যা এক অসাধারণ ভেষজ গাছের পাতা। এটি শুধু রং নয়, চুলের পুষ্টি ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মেহেদি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Lawsonia inermis। এটি একটি ছোট আকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যা সাধারণত গরম ও শুষ্ক অঞ্চলে ভালো জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিশর ও আরব দেশগুলোতে এর চাষ বহুল প্রচলিত। মেহেদি পাতার মধ্যে রয়েছে লসোন (Lawsone) নামক একটি প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ, যা ত্বক ও চুলে লালচে-বাদামি রঙ প্রদান করে। পাশাপাশি এতে রয়েছে ট্যানিন, ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং উপাদান।
মেহেদি চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুলের ফলিকলকে পুষ্টি দেয়, ফলে চুল পড়া কমে যায়। অনেক সময় মেহেদি পেস্টে ডিম বা দই মিশিয়ে লাগালে চুল পড়া রোধে আশ্চর্য ফল পাওয়া যায়。
রুক্ষ, শুষ্ক ও জটধরা চুলের জন্য মেহেদি এক প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের মতো কাজ করে। এটি চুলকে কোমল ও মসৃণ করে তোলে, একই সঙ্গে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুলে এক ধরনের স্বাভাবিক চকচকে ভাব আসে。
মেহেদির অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মাথার ত্বকে জমে থাকা জীবাণু ও খুশকি দূর করে। এটি চুলের গোড়ার মৃত কোষ দূর করে মাথার ত্বককে সতেজ রাখে。
যারা কৃত্রিম হেয়ার কালার ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে চুলে রঙ আনতে চান, তাদের জন্য মেহেদি আদর্শ। এটি চুলে সুন্দর কমলা বা বাদামি রং দেয়, যা চুলকে ক্ষতি না করে বরং আরও পুষ্ট করে তোলে。
মেহেদি ব্যবহারের ফলে চুল ভাঙ্গা ও ফেটে যাওয়া কমে যায়। এটি গোড়া মজবুত করে এবং চুল দীর্ঘ ও ঘন হতে সাহায্য করে。
মেহেদির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চুলের রং ধরে রাখে এবং চুল আগেভাগে সাদা হওয়া প্রতিরোধ করে। যারা নিয়মিত মেহেদি ব্যবহার করেন, তাদের চুল দীর্ঘদিন পর্যন্ত কালো ও উজ্জ্বল থাকে。
উপকরণঃ
ব্যবহার:
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়া কমায় ও চুলকে নরম করে。
উপকরণঃ
ব্যবহারঃ
এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার খুশকি দূর করে ও মাথা ঠান্ডা রাখে。
উপকরণঃ
ব্যবহারঃ
এই মিশ্রণটি চুলে লাগালে সুন্দর লালচে-বাদামি আভা আসে। নিয়মিত ব্যবহার চুলের রঙ প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তোলে。
উপকরণঃ
ব্যবহারঃ
এই প্যাক চুলে লাগালে শুষ্কতা দূর হয় এবং চুল নরম, মসৃণ ও চকচকে হয়。
মেহেদি একা ব্যবহার করা যেমন উপকারী, তেমনি অন্য প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়。
দক্ষিণ এশীয় সমাজে মেহেদির ব্যবহার শুধু সৌন্দর্য বা চিকিৎসায় নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। বিয়েতে কনের হাতে-পায়ে মেহেদি লাগানো শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধু অলংকার নয়, বরং শরীর ঠান্ডা রাখারও একটি উপায়। প্রাচীনকালে নারীরা গ্রীষ্মকালে মাথায় মেহেদি লাগিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং চুলের যত্ন নিতেন。
চুলের যত্নে মেহেদি একটি যুগ পরম্পরায় পরীক্ষিত ও নিরাপদ উপাদান। এটি শুধু চুলে রং আনে না, বরং চুলের গোড়া শক্ত করে, খুশকি দূর করে, রুক্ষতা কমায় এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। বাজারের কৃত্রিম কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্টের তুলনায় মেহেদি একেবারে ক্ষতিহীন ও সাশ্রয়ী। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি চুলের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ প্রাকৃতিক যত্নের সমাধান হতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চর্চার মূলমন্ত্র হলো নিয়মিত যত্ন ও ধৈর্য। তাই চুলে নিয়মিত মেহেদি ব্যবহার, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক প্রশান্তি এই তিনটির সমন্বয়েই সম্ভব সুন্দর, ঘন ও প্রাণবন্ত চুলের অধিকারী হওয়া。
আমি ওবায়দুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একজন ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করছি। ক্লাইমেট চেঞ্জ, অ্যাডাপ্টেশন, মিটিগেশন ও রেজিলিয়েন্স বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ। পিএইচডি ডিগ্রিধারী হিসেবে গবেষণা, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, নলেজ ম্যানেজমেন্ট এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।