নেবুলা: মহাবিশ্বের রঙিন নার্সারি

ভূমিকা

মহাকাশে ভেসে থাকা ধুলিকণা ও গ্যাসের বিশাল মেঘমালা—এগুলোই নেবুলা (Nebula)। শব্দটির অর্থই হলো "মেঘ"। সাধারণ চোখে দেখা না গেলেও, দূরবীনে ধরা পড়ে এরা নানা রঙের অপূর্ব শৈল্পিক সৌন্দর্য নিয়ে। নেবুলাকে বলা হয় তারকার নার্সারি, কারণ এখানেই জন্ম নেয় নতুন নক্ষত্র, আর শেষ হয় বৃদ্ধ তারকার জীবনের অধ্যায়।

-

নেবুলার গঠন ও উপাদান

নেবুলা মূলত গঠিত হয় হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, এবং মহাজাগতিক ধুলিকণা দিয়ে। কখনো এরা আলোকিত হয় নিজের আলো বা কাছাকাছি নক্ষত্রের আলো প্রতিফলিত করে, আবার কখনো অন্ধকার ও রহস্যময়ভাবে আলোকে আড়াল করে রাখে।
গঠনগতভাবে নেবুলা কয়েক ধরনের হতে পারে—

1. এমিশন নেবুলা (Emission Nebula) – নিকটবর্তী তারার তাপে উত্তপ্ত হয়ে নিজের আলো ছড়ায়। যেমন, ওরিয়ন নেবুলা।

2. রিফ্লেকশন নেবুলা (Reflection Nebula) – নিজের আলো নেই, বরং পাশের তারার আলো প্রতিফলিত করে নীলাভ আভা সৃষ্টি করে।

3. ডার্ক নেবুলা (Dark Nebula) – ঘন ধূলিকণায় আচ্ছাদিত, যা আলোকে ঢেকে দেয়। যেমন, হর্সহেড নেবুলা।

4. প্ল্যানেটারি নেবুলা (Planetary Nebula) – নক্ষত্র মৃত্যুর পর বাইরের স্তর ছড়িয়ে দিয়ে যে বৃত্তাকার গ্যাসমণ্ডল তৈরি হয়।

-

নেবুলার সৃষ্টি ও বিবর্তন

নেবুলা সৃষ্টি হতে পারে—

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর ছিটকে পড়া গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ থেকে।

মহাবিশ্বের প্রাচীন গ্যাস মেঘের ধীরে ধীরে সংকোচন থেকে।

সময়ের সাথে সাথে, মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে নেবুলার ভেতরের কিছু অংশ ঘন হয়ে প্রোটোস্টার (Protostar) গঠন করে, যা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ নক্ষত্র। আবার কিছু নেবুলা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, কারণ ভেতরের পদার্থ শেষ হয়ে যায় বা চারপাশের বিকিরণে ছড়িয়ে পড়ে।

-

নেবুলার বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

নেবুলা শুধু চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের বস্তু নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ কারণ—

এখানে নতুন নক্ষত্র ও গ্রহের জন্ম হয়।

মহাবিশ্বের রাসায়নিক বিবর্তন বোঝার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এতে।

এর উপাদান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অতীতের মহাজাগতিক ইতিহাস জানতে পারেন।

-

বিখ্যাত নেবুলাগুলি

1. ওরিয়ন নেবুলা – পৃথিবী থেকে প্রায় ১, ৩৪৪ আলোকবর্ষ দূরে, খালি চোখেও দেখা যায়।

2. হর্সহেড নেবুলা – অন্ধকার নেবুলার একটি অনন্য উদাহরণ, ঘোড়ার মাথার মতো আকৃতি।

3. ক্র্যাব নেবুলা – একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের অবশেষ, ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে চীনা জ্যোতির্বিদরা এটি নথিভুক্ত করেছিলেন।

4. ঈগল নেবুলা – এখানে অবস্থিত “Pillars of Creation” চিত্রটি হাবল টেলিস্কোপের তোলা সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি।

-

নেবুলার রঙের রহস্য

নেবুলার যে রঙগুলো আমরা ছবি বা টেলিস্কোপে দেখি, তা মূলত গ্যাসের উপাদান ও আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে—

হাইড্রোজেন – লাল আভা

অক্সিজেন – সবুজাভ বা নীল আভা

ধূলিকণা – আলো ছড়িয়ে নীল রঙ তৈরি করে

-

উপসংহার

নেবুলা মহাবিশ্বের এক বিশাল শিল্পকর্ম, যা শুধু তারকার জন্ম ও মৃত্যু নয়, বরং মহাবিশ্বের জীবনের ধারাবাহিকতাকে প্রতিফলিত করে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এগুলো মহাকাশ গবেষণার ল্যাবরেটরি, আর শিল্পীর চোখে অনন্ত সৌন্দর্যের উৎস। প্রতিটি নেবুলা যেন মহাবিশ্বের ক্যানভাসে আঁকা একেকটি জীবন্ত চিত্রকর্ম।

Level 0

আমি Nazia Sultana। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস