অনলাইন মার্কেটিংয়ের রানী সামা কাবানীর জীবন গল্প পড়ে শিখেছি অনেক কিছু

টিউন বিভাগ এসইও
প্রকাশিত

যারা অনলাইন মার্কেটিংয়ের কাজ করেন কিংবা ভবিষ্যতে করার স্বপ্ন দেখেন তারা কি জানেন, ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের রানী কাকে বলে? আমি বলে দিচ্ছি, নাম তার সামা কাবানী। পুরো নাম সামা হায়দার কাবানী। এ তরুনী ১৯৮৫ সালের ২৫ এপ্রিল ভারতের গোয়াতে জন্মগ্রহন করেন।  ভারতে জন্ম হলেও মাত্র ৯ বছর বয়সে তার পরিবারে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০৩ সালে ক্যারলটনের আর. এল হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তারপর ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। তিনি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্গানাইজেশনার কমউনিকেশন এন্ড টেকনোলজি এর উপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৮ সালে। এখানে মাস্টার্সেন থিসিস করার জন্য তিনি বিষয় নির্ধারণ করেন, “সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং”। এ থিসিস চলাকালীন অবস্থাতে তার মাথাতে  এল মানুষ কেন টুইটারে বা অন্যান্য সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলো ব্যবহার করে। সেই সময় কিন্তু টুইটার, মাইস্পেস, লিংকডিন প্রভৃতি সোসাল মিডিয়া সাইট সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানত।  এমনকি ফেইসবুকের জনপ্রিয়তাও খুব বেশি ছিল না তখন। সামা তার থিসিসের কাজ করার সময় অনুধাবন করলেন যে, সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলোর মাধ্যমেও যে কোনো কোম্পানীর পন্য প্রমোশন করা সম্ভব। তিনি তার এ নতুন  ধারনাটি অনেকের সাথে শেয়ার করেন।  অনেকেই বিষয়টিকে পাত্তাই দেয়নি।  ম্যাকিনসি ওবং বেইন এন্ড কো. এর মতো  সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানও তার এই ধারনাটিকে বিশ্বাস করতে পারল না। এই প্রতিষ্ঠানটি ভাবল যে, সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট সমূহের দ্বারাআর যা-ই হোক কোনো ভাবেই পণ্যের মার্কেটিং করা সম্ভব নয়, ক্লায়েন্টদের কাছে এই মাধ্যম ব্যবহার করে পৌছানো যাবে না, কিংবা পৌছানো গেলেও আসলে মূল কাজটি কিছুই হবে না।

mmm

 সামা কাবানীর ফেসবুক পেজঃ  facebook.com/ShamaKabaniPage

একনজরে সামা কাবানীর কিছু কর্মঃ

সামা কাবানী একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, বেস্টসেলার বইয়ের লেখিকা, পাবলিক স্পিকার এবং টেলিভিশন  ব্যক্তিত্ব। তিনি মার্কেটিং জেন গ্রুপের সিইও। উল্রেখ্য যে, সামা কাবানী ২০০৯ সালে এই ওয়েব মার্কেটিং অ্যাজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ওয়েব মার্কেটিং এর উপর তিনটি বই লেখেছেন যেগুলো প্রত্যকটি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার লেখা সোসাল নেটয়ার্কিং সাইটগুলো নিয়ে একটি বই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে । সামার লেখা প্রথম বই “দ্যা জেন অব সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং” যেটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় এবং আমাজন ডট কমে বেস্ট সেলার বই হিসেবে বিবেচিত হয়।

তার প্রফেশনাল লাইফঃ

সামা কাবনী ২০০৯ সালে মার্কেটিং বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করার জন্য মার্কেটিং জেন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের সিইও হন।  মাত্র ১৫০০ ইউএস ডলার মূলধন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করলেও, তিনি তার ব্যবসায়িক নৈপুর্নতার মাধ্যমে খুব অল্পদিনেই একটি প্রভাবশালী বিজনেস জায়ান্টে পরিণত হয়। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মার্কেটিং জেন গ্রুপের মুনাফা ৪০০% বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটির কর্ম পরিধি বৃদ্ধি পায়। ফলে সামা প্রতিষ্ঠানটিকে সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য ২৫ জন তরুণকে নির্বাচিত করলেন তার প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়াল কর্মকর্তা হিসেবে। এই তরুণরা অনলাইনে ক্লায়েন্টদের অনলাইন ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিনা মূল্যে সেবা প্রদান করত। সামা কাবানীর মার্কেটিং জেন গ্রুপ ইউরোপ, এশিয়া, সাউথ আমেরিকা প্রভৃতি দেশের ক্লায়েন্টদের অনলাইনে প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন প্রকারের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে ক্লয়েন্টদের আস্থা অর্জন করে।

সামা তার অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বই লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি মনস্থির করলেন এমন একটি বই লেখবেন যার মাধ্যমে মানুষ সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলো সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা লাভ করতে পারবে। তাই সামা তার প্রথম বই “” দ্যা জেন অব সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং’ লিখলেন এবং বইটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হল। এই বইয়ে তিনি ফেইসবুক, লিংকডিন, টুইটার, মাইস্পেস এর ব্যবহার সম্পর্কে খুব চমৎকারভাবে আলোচনা করেন যাতে এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারে। তার বইটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করল। অবশেষে সামা কাবনী এই বইয়ের মাধ্যমে আমাজন ডট কমের হিসেবে বেস্ট সেলার বইয়ের লেখকের তকমা লাগান।

অনলাইন ব্যবসা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সামা কাবানীর সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পৃথিবীর তাবৎ মিডিয়াগুলো, ওয়ার স্ট্রিট জার্নাল, হাফিংটন পোস্ট, সিবিএস, ফক্স বিজনেস মুখিয়ে থাকে। তিনি পৃথিবীর সামনের সারির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সাথে একই কাতারে বসে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা এবং দালাই লামার মতো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সাথে একই মঞ্চে বসে, অগনিত দর্শকদের সামনে নিজের ভাবনা বিনিময় করেছেন।

sabanai

কর্মের স্বীকৃতস্বরুপ পুরস্কারসমূহঃ

তার কর্মের স্বীকৃতস্বরুপ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন। তিনি ২০০৯ সালে ২৫ বছরেরও কম বয়সী ২৫ জন তরুন উদ্যোক্তাদের একজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত মার্কেটিং জেন গ্রুপ কে  ফোবস ম্যাগাজিন ৫০০ টি বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত  ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম একটি হিসেবে উল্লেখ করেছে। সামা তার ব্যবসায়িক সাফল্যের কৃতিত্ব স্বরুপ “টেকনোলজি টাইটান ইমার্জিং কোম্পানী সিইও” পুরস্কারে ভূষিত হন । সম্প্রতি ২০১৩ সালে সামা কাবানীর সৃজনশীল কর্মের বিশেষ নৈপুন্যের ফল হিসেবে আমেরিকার টপ ৩০ জন উদ্যোক্তার তালিকায় তার নামও ওঠে এসেছে যাদের বয়স ৩০ বছরেরও কম। তাছাড়া তিনি হোয়াইট হাউসের সেরা ১০০ জন তরুণ উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন হিসেবে তিনি মনোনিত হয়েছেন।

তার কিছু আন্তরিক প্রয়াস

সামা কাবানী মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হিসেবে, আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে, স্ব প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর সিইও হিসেবে  ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আগামী দিনের ক্ষুদে উদ্দোক্তা তৈরিতে ভুমিকা রেখে যাচ্ছেন। তার বিশেষ আগ্রহ হচ্ছে তরুণ-তরুণীদের ক্ষমতায়নে যারা তাদের সৃজনশীল কাজের দ্বারা পৃথিবীকে আর সুশ্রী আরও মনোমুগ্ধকর করতে পারবে। তাইতো যখনই কোনো আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপগুলোতে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন, সেখানেই  তরুণ উদ্যোক্তাদের অনুপ্রানিত করেন, তাদের সম্ভাবনার ক্ষেত্র সমূহ তাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। ২০১১ সালের জুলাই মাসে আমেরিকার ১১ জন তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিদল কায়রো সফর করে। আমেরিকার এই উজ্জ্বল,মেধাবী ও অপরিসীম সম্ভাবনাময়  তরুণ প্রতিনিধি দলের একমাত্র নারী প্রতিনিধি ছিলেন সামা কাবানী। এ সফরটির আয়োজন করেছিল ইউএসএইড এর ইয়াং ইন্টাপ্রেনিউর কাউন্সিল, ডেনমার্ক সরকার এবং মিশরের বিভিন্ন উদ্যোক্তা সংস্থাসমূহ। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল মিশরের তরুন উদ্যোক্তাদের সাথে  নতুন ও সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারনা বিনিময় করা। প্রতিনিধি দলটি মিশরের তরুণদের পরামর্শ প্রদান করে কীভাবে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়।

NOVphoto_businessexpo2

এবার পুরো জীবনী পড়ে আমি যা শিখলাম

১। পরিশ্রম একজন মানুষকে কীভাবে বড় করে তুলে সামা কাবানী সম্পর্কে   জানলে খুব ভালভাবে সেটি অনুধান করা যায় ।  আমাদের আশেপাশের মানুষজন একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানে জব করেই  হাঁপিয়ে ওঠে, একদিন ছুটি পেলে সেটিকে ঘুমিয়ে কাটায়  কিন্তু সামা কাবানী একাধারে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর সিইও, আন্তর্জাতিক বক্তা, প্রযুক্তি পরামর্শক, টেলিভিশনের বিশেষ শো এর উপস্থাপনা ও করেন, লেখালেখিতেও তার অবস্থান বেশ উজ্জ্বল।

২। সামা কাবানী তার  এত ব্যস্ততার পরও তরুণদের কর্মক্ষম করার জন্য যা করছেন, মানুষের যে সেবা করে যাচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের সামনে একটি অনুকরনীয় দুষ্টান্ত।

তিনি সাপ্তাহিক বিজনেস পরামর্শক কলামে ”আস্ক কাবানী” নামক শিরোনামে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠকের নানা রকম প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি তার স্ব প্রতিষ্ঠিত “সামা টিভির” উপস্থাপক যেটি মূলত একটি ওয়েব টেলিভিশন শো যা নতুন মিডিয়া প্রযুক্তির মার্কেটিং কৌশল সংক্রান্ত  বিভিন্ন তথ্য সম্প্রচার করে থাকে । সামা দুটি টেলিভিশন স্টেশনে “সিডব্লিউথ্রিথি এবং কে.ডি.এ.এফ.”-এ সপ্তাহে একটি করে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। এগুলো মূলত মানূষকে সামাজিক ভাবে সচেতন করার লক্ষ্যে করে থাকেন।

৩। সামা কাবানী এত বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, কারন শুরুর দিকে এবং এখনও অনেক ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরও বিনামূল্যে অনেক ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমাদের দেশের মানুষদের বিখ্যাত হওয়ার পরতো দুরের কথা, যখন মাত্র অল্প বিস্তর কিছু শিখা শুরু করে, তখনই তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক চিন্তা শুরু হয়ে যায়। যেকাজে কোন আয় নাই, সেটি কেন করবে, এই অংকের হিসাব খুব ভাল জানে। এটা ভাবেনা, তার বিনামূল্যে করা সেবা তাকে অনেক বেশি পরিচিত করে তুলবে। তখন নিজেই ব্রান্ডে পরিণত হবে আর এ ব্রান্ডের জন্যই তার আয় বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের দেশের  সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে সামা কাবানীর মতো পরিশ্রমী এবং স্বাপ্নীক তরুণ-তরুণীর বেশ প্রয়োজন।

আমার ব্লগ প্রথম প্রকাশ করেছি।

১ম প্রকাশের লিংকঃ http://genesisblogs.com/technology/3449

Level 0

আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 103 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 2

কঠিন লিখছেন ভাই ভাললাগল

Level 0

লিখাটি পড়ে অনেক উৎসাহ পেলাম । ভবিষ্যতে এমন আরও Tune আসা করছি । ধন্যবাদ Ekram ভাই …!

why is her page’s link not working?

ভাল লাগল