এক্স-রে আবিষ্কারের গল্প

এক্স-রে আবিষ্কারের কৃতিত্ব পুরোটাই জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেনের। রন্টজেন একজন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী যিনি ১৯০১ সালে এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। তার জন্ম: ২৭ মার্চ, ১৮৪৫, লেনেপ, রেমশাইড, জার্মানি এবং তার মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারী, ১৯২৩, মিউনিখ, জার্মানি।

সাদাসিদে যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাঃ

ক্যথোড টিউব একটি কাচ নল, যার দুই প্রান্তে দুইটি ধাতব পাত এনোড এবং ক্যথোড হিসাবে থাকে। এই পাত দুটিকে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ পাত বলা যায়। নল হতে বাতাস বের করে ফেলা হয় যাতে বায়ুর চাপ নলের ভিতরে অনেক কম হয়ে যায়। দুই পাতের মধ্যে উচ্চ বিভব পারথক্য- বিশেষ ভাবে ৩০, ০০০ ভোল্ট -৪০, ০০০ ভোল্ট প্রয়োগ করলে যেমন ক্যাথোড থেকে এনোডের দিকে দ্রুত গতির ইলেকট্রন নির্গমন হয়, তেমনি পাতের বিপরীত পার্শ্ব হতে উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি বা X-ray নির্গত হয়।

আবিস্কারের মজার কাহিনী :

৮ নভেম্বর, ১৮৯৫ সাল, জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ার্জবার্গে রন্টজেন ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে পরীক্ষা চালানোর সময় তিনি কাকতালীয় ভাবে এক্স-রে আবিষ্কার করে ফেলেন। তিনি আমাদের ফ্লোরো- সেন্ট লাইট বাল্বের মতো ক্যথোড টিউব নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি সমস্ত টিউবটি বাতাস শূন্য করলেন, এটি একটিকে গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করলেন এবং এর মধ্য দিয়ে একটি উচ্চ বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ পাস করলেন। তারপরীক্ষার সময়, রন্টজেন লক্ষ্য করেছিলেন যে তার ল্যাবে রাখা একটি ফ্লুরোসেন্ট স্ক্রিন জ্বলতে শুরু করেছে, যদিও এটি ক্যাথোড রে টিউব থেকে কয়েক ফুট দূরে রাখা হয়েছিল। তিনি বুঝতে পারলেন যে টিউব থেকে কিছু অজানা বিকিরণ নির্গত হচ্ছে, যা বিভিন্ন পদার্থের মধ্য দিয়ে পাস হয়ে যেতে পারে এবং পর্দায় ছবি তৈরি করতে পারে। তখন তিনি ভাবলেন নিশ্চয় ক্যাথোডের বিপরিত দিক হতে এক প্রকারের অজানা রশ্মি নির্গত হচ্ছে যেটি চোখে দেখা যাচ্ছেনা। তিনি এই রহস্যময় বিকিরণটি নিয়ে আরও গবেষণা করেছিলেন এবং দেখতে পান যে, এটি মানুষের মাংস সহ অনেক কঠিন বস্তু ভেদ করার ক্ষমতা রাখে যদিও এটি হাড় এবং ধাতুর মতো ঘন পদার্থ নয়, বরং এটি তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ। রন্টজেন এই নতুন আবিষ্কৃত বিকিরণটিকে "এক্স-রে" বলে অভিহিত করলেন, কারণ ইংরেজি X অক্ষরটি একটি অজানা পরিমাণকে উপস্থাপন করতে গণিতে ব্যবহৃত হয়।
রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কার মেডিকেল ইমেজিং এবং ডায়াগনস্টিকস এ বিপ্লব ঘটিয়েছে। এটি ডাক্তারদের অপারেশন না করেই মানবদেহের অভ্যন্তরকে দেখতে সাহয্য করে, যা ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করে।
মজার ঘটনা :
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, রন্টজেন উত্তেজিতভাবে তার নতুন আবিষ্কারটি তার স্ত্রী আনা’র সাথে শেয়ার করতে চাইলেন। তিনি আনা’র হাতটিকে প্রথম এক্স-রে পরীক্ষার অবজেক্ট হিসেব নেন, আনা হাতে একটি মূল্যবান আংটি পড়া ছিলেন। যত্নের সাথে রন্টজেন আনা’র হাতকে এক্স-রে যন্ত্রের মধ্যে স্থাপন করেন। তিনি মেশিনটি সক্রিয় করলেন, এবং তারা উভয়ে বিস্ময়ের সাথে ফটোগ্রাফিক প্লেটে মূল্যবান আংটি সহ আনা’র হাতের একটি ক্ষীণ চিত্র অবলোকন করলেন। অদৃশ্য শক্তি দ্বারা বন্দী হাড় এবং গয়না - যাদুকরী দৃষ্টিতে দেখে তারা উভয়েই বিস্মিত হয়েছিলেন। এটি ছিল স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে শেয়ার করা বৈজ্ঞানিক বিস্ময়ের একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।

 

(প্রিয় ভিউয়ার, শুভেচ্ছা নিবেন। লেখাটি ভালো লাগলে আমা্কে ”ফলো” দিন, টিউমেন্টের মাধ্যমে মন্তব্য লিখুন। ধন্যবাদ। )

Level 1

আমি তৌহিদ মিয়া। Assistant Professor, Shariatpur Govt. College, Shariatpur। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 মাস 3 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 78 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস