মহাকাশের রহস্য Black Hole এর জন্ম কীভাবে হয়?

Level 2
Student, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি), ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সমস্ত নেটি-জেন বন্ধুরা? আশাকরি মহান আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও মহান আল্লাহর রহমতে ভালই আছি। আপনাদের জন্য আজকে একটি নতুন টিউন নিয়ে হাজির হলাম। আজকে কথা বলব ব্ল্যাক হোল বা কালো গহ্বর নিয়ে! ব্ল্যাক হোল এর নাম তো প্রায় সবাই শুনেছেন এবং জানেন যে ব্ল্যাক হোল এর অবস্থান অসীম মহাশূন্যের অজানা কোন স্থানে। ব্ল্যাক হোল নিয়ে বিজ্ঞানীদের যেমন আগ্রহের শেষ নেই তেমনি জ্ঞান পিয়াসু সাধারণ মানুষেরও কৌতূহলের শেষ নেই।

গত এক শতক ধরে এই অদৃশ্য রহস্যময় বস্তুটি বিজ্ঞানীদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ব্ল্যাক হোল কে আমি অদৃশ্য বললাম এই জন্য যে এর থেকে কোন আলো বের হতে পারে না এমনকি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গও এর আকর্ষণ বল থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে ছুটে আসতে পারে না। যেহেতু একটি ব্ল্যাক হোলের অকল্পনীয় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে তাই সেই আকর্ষণ বল থেকে মুক্ত হয়ে আলো বের হতে পারে না তাই বিজ্ঞানীদের কোন টেলিস্কোপে সেটি ধরা পরে না।

ছবি তুললে সেখানে শুধু নিকষ কালো রং ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। এমন নিকষ কালো বলে একে ব্ল্যাক হোল বা কালো গহ্বর বলে। আদতে ব্ল্যাক হোল কোন গর্ত বা হোল নয়। এটা কোন বস্তু যার স্বাভাবিকের চেয়ে অত্যধিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে এবং সেই কারণে সেই বস্তু থেকে আলো বের হতে পারে না। শুধু আলো নয় ব্ল্যাক হোল থেকে কোন কিছুই বের হতে পারে না। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্র থেকে এক প্রকার এক্স-রে রশ্নি বের হয়। এমনকি সেই ব্ল্যাক হোলের ছবিও তুলতে সক্ষম হয়েছে বিজ্ঞানীরা।

ব্ল্যাক হোল বা Black Hole

Black Hole হল মহাকাশের এমন একটি বা একাধিক স্থান যেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারে না এর অতিরিক্ত অস্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। মহাকাশের এই পদার্থ গুলোর এতো এতো বেশী আকর্ষণ ক্ষমতা যে এর আশপাশে যা কিছু থাকে সবই এর আকর্ষণে ব্ল্যাক হোলে পতিত হয়। ব্ল্যাক হোল তার আকর্ষণ বলয়ের মধ্যে যত পদার্থ বা গ্রহ নক্ষত্র পায় তাদের সবাই কে নিজের দিকে টেনে নেয়। এমনকি আলোক রশ্নি পর্যন্ত ব্ল্যাক হোল শুষে নেই এই কারণেই ব্ল্যাক হোল দেখা যায় না অদৃশ্য থাকে।

বড় কোন তারকা বা নক্ষত্র যদি কোন একটি ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আয়ত্তের মধ্যে এসে যায় তবে সেই নক্ষত্র আর নিজেকে তার কক্ষ পথে ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রটি ভেঙ্গে চূরে ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ঢুকে যাবে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর আপেক্ষিক তত্বের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছিল যে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব মহাকাশে। এবং এই তত্বের মাধ্যমে ধারণা করা হয় একটি ব্ল্যাক হোলের চারপাশের স্পেস টাইম বিকৃত হয়ে যায় এর অতিরিক্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে।

কীভাবে ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়?

সাধারণত বড় কোন নক্ষত্র তার কেন্দ্রে যদি ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে তবে তা এক সময় ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। নক্ষত্র কেন তার কেন্দ্রে সংকুচিত হতে থাকে তা জানতে হলে আগে জানতে হবে একটি নক্ষত্র কেন নক্ষত্র এবং অভ্যন্তরীণ বিক্রিয়া কিভাবে সংঘটিত হয়। প্রত্যেকটা নক্ষত্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি তৈরি হয়। ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি হাইড্রোজেন অণু মিলে একটি হিলিয়াম অণু গঠন করে।

যখন নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় দুটি হাইড্রোজেন অণু একটি হিলিয়াম অণুতে পরিণত হয় তখন প্রচুর তাপ, আলো এবং শক্তি নির্গত হয়। অসীম সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু অসীম সংখ্যক হিলিয়াম অণু তৈরি করে ফলে একটি নক্ষত্রে প্রচুর তাপ আলো এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। তাই আমরা পৃথিবী থেকে নক্ষত্র গুলো অনেক উজ্জ্বল রূপে দেখতে পাই। আমাদের সূর্যও একটি নক্ষত্র। সেখানেও চলে প্রতিনিয়ত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। তাই আমরা সূর্য থেকে প্রচুর তাপ এবং আলো পায়।

আমরা এখন সূর্য নিয়ে আলোচনা করব না শুধু মাত্র নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার কথা আসাতে সূর্যের প্রসঙ্গ চলে এসেছে। আমাদের আলোচনার কেন্দ্র ছিল কীভাবে ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়। তো আমরা জানলাম একটি বড় নক্ষত্রে এভাবে প্রতিনিয়ত ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন অণু গুলো হিলিয়াম অণুতে পরিণত হয়।

এই হাইড্রোজেন অণুকে মূলত নক্ষত্রের জ্বালানীর কাঁচামাল বলা যেতে পারে। আর এই জ্বালানী উৎপাদনের কাজ ততক্ষণ পর্যন্তই চলে যত ক্ষণ পর্যন্ত হাইড্রোজেন অণু শেষ না হয়ে যায়। যেহেতু একটি নক্ষত্রে এভাবে হাইড্রোজেন অণু গুলো একের পর এক নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় হিলিয়ামে পরিণত হওয়ার ফলে এক সময় সেই নক্ষত্র থেকে সমস্ত হাইড্রোজেন অণু শেষ হয়ে যাবে। আর সেই কারণে নক্ষত্রের অভ্যন্তরে আর নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া হতে পারে না। তখন নক্ষত্রটি জ্বালানী বিহীন গ্রহে পরিণত হয়। তখন একে মৃত নক্ষত্র বলা হয়।

প্রত্যেক বস্তু এবং গ্রহতে অভিকর্ষ শক্তি থাকে যাকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বলা হয়। নক্ষত্রে যখন আর ফিউশন বিক্রিয়া হওয়ার জন্য কোন হাইড্রোজেন থাকে না তখন সেখান থেকে কোন তাপ আলো  এবং শক্তিও নির্গত হয় না। এই জ্বালানী বিহীন মৃত নক্ষত্রটি তখন একটি বড় সড় গ্রহ ছাড়া কিছুই না। যেহেতু নক্ষত্রটি অনেক বড় হওয়াই এর অনেক পরিমাণ ভর বিদ্যমান। এই নক্ষত্রটির ভর যদি চন্দ্রশেখর সীমার নিচে অবস্থান করে তবে তা White Dwarf বা শ্বেত বামনে পরিণত হয়।

আর এর ভর যদি চন্দ্র শেকড় সীমার উপরে অবস্থান করে তবে সেই নক্ষত্রটি তার কেন্দ্র বরাবর সংকুচিত হতে থাকে। যেহেতু নক্ষত্রটিতে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে তাই নক্ষত্রটির পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রবিমুখী বলের অভাবে সে তার কেন্দ্র বরাবর সংকুচিত হয়ে কেন্দ্রে পতিত হতে যায় এবং একই সাথে নক্ষত্রটির ভেতরের কিছু অংশ কেন্দ্র থেকে বাইরে বের হয়ে আসতে চাই। এই ভেতরের চাপ এবং বাইরের চাপে এক সময় নক্ষত্রটিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। যাকে বিজ্ঞানী নাম দিয়েছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ। এতে নক্ষত্রটির বাইরের অংশ মহাশূন্যে ছিটকে পড়ে এবং ভেতরটি পরিণত হয় একটি ব্রান্ড নিউ ব্ল্যাক হোলে!

মৃত নক্ষত্রটিতে তো কেন্দ্র বরাবর সংকোচন প্রক্রিয়া বিদ্যমান ছিলই। ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার পর সে তার আশপাশের সমস্ত বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে টেনে নিতে থাকে এবং এই কারণে সদ্য জন্ম নেওয়া ব্ল্যাক হোলটির ভর দ্রুত ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভর যত বেশী বৃদ্ধি পেতে থাকবে ব্ল্যাক হোলটি তত বেশী শক্তিতে তত বেশী বস্তুকে তার কেন্দ্রে পতিত হতে বাধ্য করবে। এই ভর বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় এতো পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ বল এতে তৈরি হবে যে আশপাশের নক্ষত্রগুলোও তার পেটে চালান হয়ে যাবে। ব্ল্যাক হোলটি তখন বাচ্চা রাক্ষস থেকে দানব রাক্ষসে পরিণত হবে।

শেষ কথা

একটি ব্ল্যাক হোল কীভাবে তৈরি হয় এবং ব্ল্যাক হোল কী তাই নিয়ে আজকের টিউনে আলোচনা করলাম। এই মহাবিশ্বে যত বস্তু আছে তার প্রতিটা বস্তুই একে অপরকে তার নিজের দিকে টেনে নিতে চাই। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তুর এই একে অপরকে আকর্ষণ করার ক্ষমতার নাম দিয়েছে মহাকর্ষ বল। তেমনি একটি ব্ল্যাক হোলও মহাবিশ্বের একটি বস্তু যার এই আকর্ষণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে প্রতিনিয়ত।

সুপারনোভা বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলটি ছিল একটি মৃত নক্ষত্র যার হাইড্রোজেন অণু শেষ হওয়ার কারণে জ্বালানী উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছিল। তারও আগে মৃত নক্ষত্রটি ছিল একটি অপারেশনাল নক্ষত্র মানে যা থেকে প্রতিনিয়ত তাপ, আলো শক্তি নির্গত হতে থাকত। এই সুপারনোভা বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত নক্ষত্রটির স্বাভাবিক ভর ছিল। ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার কারণেই তার ভর বাড়তে থাকে ক্রমাগত অন্য গ্রহ নক্ষত্র গুলো ভক্ষণ করার কারণে। আমি ব্ল্যাক হোল কীভাবে তৈরি হয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চন্দ্র শেকড় সীমার কথা উল্লেখ করেছি।

যারা জানে না চন্দ্র শেখর সীমা কী তাদের বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছি। চন্দ্র শেখর সীমা হল একটি মৃত নক্ষত্রের বা শীতল নক্ষত্রের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ভর এর মান। নক্ষত্রের সর্বোচ্চ ভরের সেই মান (চন্দ্র শেকর সীমা) অতিক্রম করলে নক্ষত্রটি তার কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হতে হতে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায় যা এক সময় ব্লাক হোলে পরিণত হয় এবং যদি নক্ষত্রটির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ভর চন্দ্র শেখর সীমা এর নিচে থাকে তাহলে নক্ষত্রটি White Dwarf এ পরিনত হবে।

আশাকরি বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি তো বন্ধুরা আজকের টিউনটি এখানেই শেষ করলাম দেখা হবে আগামী কোন টিউনে।

সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Level 2

আমি মো সাদ্দাম হোসাইন। Student, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি), ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 5 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস