আসসালামুয়ালাইকুম টেকটিউনবাসি। আশাকরি সকলে ভালো আছেন। আমি আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি বিজ্ঞানের আরও একটি যুগান্তরকারী আবিষ্কার। আপনাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়ঃ আপনারা যখন গাড়িতে চড়ে কোথাও যান, তখন একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কী? জিনিসটা হলো, গাড়ি যখন মোড় নেয়, তখন গাড়ি যেদিকে মোড় নেয়, তার বিপরীত দিকে আপনারা কেন হেলে পড়েন? অনেকেই উত্তরটা পারবেন, আবার অনেকেই এই জিনিসটা খেয়ালই করেন নি। তো যাই হোক, আমি আজকে আপনাদের সামনে এই বিষয়টা পরিষ্কার করার চেষ্টা করব। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
প্রথমে আসি উদাহরণ দিয়ে। ধরেন, আপনি অটোতে চড়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাচ্ছেন। ভালো করে খেয়াল করুন। আপনার গতিপথ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। এখন ১০০ মিটার সামনে একটা বাঁক রয়েছে। এই বাঁকে গাড়ি বা অটোটা দক্ষিণ দিকে মোড় নিলো। অর্থাৎ, প্রথমে যাচ্ছিল পশ্চিম দিকে, এবার দক্ষিণ দিকে যাওয়ার জন্য বাম দিকে মোড় নিলো। ভালোভাবে খেয়াল করে বলুন তো, আপনি কোন দিকে হেলে পড়বেন। ডান দিকে, তাই না? ডান দিকে রয়েছে আপনার প্রথম যাওয়ার দিক, মানে পশ্চিম দিকে। অর্থাৎ, প্রথমে যেদিকে যাচ্ছিলেন সেদিকে আপনি হেলে পড়বেন। তো এটা কেন হচ্ছে?
নিউটনকে তো প্রায় কমবেশি সকলেই চেনেন। তার সুত্রগুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন। আমি নতুন করে তাই কোনো কিছুই বলছি না। নিউটনের প্রথম সুত্র থেকে আমরা একটা বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাই। আর সেটা হচ্ছে জড়তা। তো এই জড়তা কী? চলুন, জেনে আসি জড়তা সম্পর্কে।
স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকার প্রবণতা, আর গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিতে থাকার প্রবণতাকে জড়তা বলে। নিচে ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ধরেন আপনি স্থির হয়ে বসে আছেন। আপনার প্রবণতা হবে স্থির থাকা। আপনার মধ্যে গতিশীল হওয়ার কোনো প্রবণতা থাকবে না। আপনি কোনোভাবেই গতিশীল হতে চাবেন না। অনেকেই বলবেন, তাহলে আমরা বসে থাকার পর, দৌড়াতে ইচ্ছা হলে দৌড়াই কী করে? আসলে তখন, আপনারা বল প্রয়োগ করে দৌড়ান। আপনারা যদি বল প্রয়োগ না করেন, তবে কোনোভাবেই আপনারা দৌড়াতে পারবেন না। অর্থাৎ, আপনারা স্থির আছেন, স্থিরই থাকতে চাবেন চিরকাল।
এর ফলে কী ঘটবে, জানেন? আপনারা যদি মোটরসাইকেলে চড়েন, তবে দেখতে পাবেন- যখন মোটরসাইকেল স্থির থাকে, তখন আপনিও স্থির। কিন্তু যখনই হঠাৎ, করে মোটরসাইকেল চলতে শুরু করবে, তখন আপনি পিছনে কেন জানি না হেলে পড়েন। এখানে আসলে জড়তা কাজ করে। আপনি যখন মোটরসাইকেলের সাথে স্থির ছিলেন, তখন আপনার মধ্যে স্থির থাকার প্রবণতা কাজ করেছিল। কিন্তু, মোটরসাইকেলে যখন বল প্রয়োগ করে ড্রাইভার এটিকে গতিশীল করে, তখন আপনার নাভির নিচ পর্যন্ত দেহের অংশসমূহ গাড়ির বা মোটরসাইকেলের সাথে লেগে থাকায়, গতিশীল হয়। কিন্তু, আপনার উপরের অংশ তখনও স্থির থাকতে চায়, যার ফলে আপনার উপরের অংশ পিছনে হেলে পড়ে।
আবার আপনি যখন মোটরসাইকেলে গতিশীল অবস্থায় আছেন, তখন আপনার মধ্যে গতিতে থাকার প্রবণতা কাজ করবে। তাই হঠাৎ করে যদি ড্রাইভার ব্রেক মারে, তবে আপনার নিচের অংশ মোটরসাইকেলের সাথে লেগে থাকায়, তা ব্রেকজনিত কারণে স্থির হয়ে যাবে। কিন্তু, আপনার দেহের উপরের অংশ তখনও গতিতে থাকবে। ফলে আপনি সামনে ঝুঁকে পড়বেন।
তাহলে নিশ্চয়ই আপনারা জড়তা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
এখন আসি প্রথম উদাহরণে। আপনি অটোতে পশ্চিম দিকে যাচ্ছিলেন। তাই আপনি চাবেন পশ্চিম দিকেই যেতে। কিন্তু, অটোটা দক্ষিণ দিকে মোড় নেওয়ায় আপনার নিচের অংশ দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে নিয়েছে। আর আপনার দেহের উপরের অংশ অটোর সাথে লেগে না থাকায়, তা পশ্চিম দিকেই যেতে চাবে। ফলে আপনি পশ্চিম দিকে হেলে পড়বেন।
তাহলে বন্ধুরা, আমি যদি প্রশ্ন করিঃ
গাড়ি দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিল, পূর্ব দিকে মোড় নিয়েছে- আপনারা কোন দিকে হেলে পড়বেন?
গাড়ি উত্তর দিকে যাচ্ছিল, পূর্ব দিকে মোড় নিয়েছে- আপনারা কোন দিকে হেলে পড়বেন?
গাড়ি পূর্ব দিকে যাচ্ছিল, উত্তর দিকে মোড় নিয়েছে- আপনারা কোন দিকে হেলে পড়বেন?
আশাকরি, সকলে টিউমেন্ট করে উত্তর জানিয়ে দিবেন। টিউনটি ভালো লাগলে জোস দিন।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।