প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে কিছু তথ্য

 

 

প্যারালাল ইউনিভার্স গুলো মধ্যে থাকতে পারে সূক্ষ্ম পার্থক্য

স্ট্রিং তত্ত্বের এরকম সমাধানের পর মহাবিশ্বের ধারনা বদলে মাল্টিভার্স (Multiverse) বা বহুবিশ্বে রূপ নিয়েছে। এরকম অসংখ্য মহাবিশ্বের ভিতর এমন অনেক মহাবিশ্ব আছে যেগুলোর পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো হয়ত হুবহু আমাদের মত। আর এদের ভিতর অনেকেই আবার আকার আয়তন সবদিক থেকেই দেখতে আমাদের মহাবিশ্বের মত। এদেরকে বলা হয় প্যারালাল ইউনিভার্স (Parallel Universe) বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব। এরকম সমান্তরাল মহাবিশ্বের সংখ্যা যেহেতু অগণিত, তাই এমন কিছু মহাবিশ্ব পাওয়া যাবে যেগুলোর সবকিছুই হুবহু আমাদের মহাবিশ্বের মত। যেন ঠিক যমজ ভাই-বোন। ঠিক আপনার মতই আরেকজন আপনি হয়ত আরেকটি সমান্তরাল মহাবিশ্বে বসে ঠিক এই লেখাটি পড়ছে। সমান্তরাল মহাবিশ্বের কথা শুনতে হয়ত অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব ছাড়াও মহাবিশ্বের জন্ম রহস্য বর্ণনাকারী- ইনফ্লেশন তত্ত্বও একই রকম কথা বলে। কেওটিক ইনফ্লেশন তত্ত্ব অনুসারে বিজ্ঞানী আঁদ্রে লিণ্ডে কম্পিউটার সিমুলেশন করে দেখেছেন, এই ধরনের স্ফীতি তত্ত্বও স্ট্রিং তত্ত্বের মত আলাদা ধরনের পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম কার্যকর অসংখ্য মহাবিশ্বের কথা বলছে। এমআইটির(MIT) কসমোলজিস্ট ম্যাক্স টেগমার্ক আমাদের পরিচিত গণিতের সম্ভাবনার সাহায্যে হিসেব কষে দেখিয়েছেন, আমাদের এই মহাবিশ্ব থেকে প্রায় ১০^১০^২৮ মিটার দুরেই হয়ত হুবহু আপনার মত দেখতে একজন সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়েই ভাবছে। কিন্তু সমস্যা হল আপনি বা আপনার টুইন কেউই কারও সম্পর্কে জানতে পারবেন না। টেগমার্ক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থেকে পাওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে চার রকম প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলেছেন। লেভেল ওয়ান প্যারালাল ইউনিভার্স হল সবচেয়ে মজার। বলা যেতে পারে আপনি যদি আপনার বর্তমান অবস্থান থেকে যথেষ্ট দূরে ভ্রমণ করতে পারেন তাহলে আপনি আবার আপনার বাসাতেই ফিরে যাবেন। সেখানে দেখা যাবে হুবহু আমাদের পৃথিবীর মত গ্রহে আপনার মতই একজন বসে স্ট্রিং তত্ত্বের কোন লেখা পড়ছে। শুনতে অবাক লাগবে, বহুবিশ্বের কথা বিবেচনা না করলেও, এরকম প্যারালাল জগত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ইনফ্লেশন তত্ত্বের বিশ্লেষণ থেকে আমরা জানি মহাবিশ্বকে আগে যতটুকু বড় মনে করা হত এটি তার থেকে ঢের বেশি বড়। আক্ষরিক অর্থেই অসীম বলা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা গাণিতিক সম্ভাবনার সাহায্যে হিসেব কষে দেখেছেন, এই অসীম মহাবিশ্বে আমাদের সৌরজগতের একটি টুইন খুঁজে পাবার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। একই রকম এসব মহাবিশ্বকে লেভেল-1 প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়।

স্ট্রিং তত্ত্বের সমীকরণ বিশ্লেষণ করে একদল বিজ্ঞানী বলছেন আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল দুটি ব্রেনের সংঘর্ষের কারণে। দুটি ব্রেনের এরকম সংঘর্ষের ফলেই ইনফ্লেশনের সৃষ্টি হয়। এরকম সংঘর্ষ কিন্তু কোন নির্দিষ্ট একটি স্থানে হয় না, বরং আমাদের মহাবিশ্বের বাইরের শুন্যতায় এরকম সংঘর্ষ হয়েই চলেছে, ফলে সৃষ্টি হয়ে চলেছে অসংখ্য মহাবিশ্ব। এই অসংখ্য মহাবিশ্বের ভিতর আমাদের মহাবিশ্বের মত কোন একটি থাকা খুবই সম্ভব। ব্রেনের সংঘর্ষের কারণে এভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই তত্ত্বকে ইকপাইরোটিক থিওরি (Ekpyrotic Theory) বলা হয়। এই তত্ত্ব ঠিক হলে আমাদের মহাবিশ্বের মত দেখতে আরও কোন মহাবিশ্ব থাকাটা বাধ্যতামূলক। এরকম মহাবিশ্বগুলোকে লেভেল-2 প্যারালাল ইউনিভার্স বলে।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সম্ভাব্যতা ও এর বর্ণনাকারী ওয়েব ফাংশনকে ব্যাখ্যা করার জন্য আরেক ধরনের প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলা হয়। এ ধরনের মহাবিশ্বের কথা বুঝতে চাইলে “হিলবার্ট স্পেস” নামে এক ধরনের তাত্ত্বিক ও বিমূর্ত স্থানের কথা ভাবতে হবে। এই তাত্ত্বিক স্পেস অসীম-মাত্রিক এবং একটি কোয়ান্টাম জগত এই হিলবার্ট স্পেসের সাপেক্ষে বিভিন্নভাবে ঘুরতে পারে। এই তত্ত্ব মতে যে ধরনের মহাবিশ্বের কথা বলা হয়, সেগুলো প্রত্যেকটি একই জায়গায় এবং একই সময়ে সহ-অবস্থান করছে, কিন্তু প্রত্যেকে আলাদা ডাইমেনশনে অবস্থিত বলে কেউ কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। যোগাযোগ করতে না পারলে কি হবে, প্রতিটি মুহূর্তে নেয়া আপনার সিদ্ধান্তগুলো হয়ত আপনার মত অসংখ্য আপনার হুবহু প্রতিরূপের সাথে মিলিত ভাবেই নেওয়া হচ্ছে। আপনার নাকের ডগায়ই হয়ত একটি সমান্তরাল মহাবিশ্ব রয়েছে, শুধু আলাদা মাত্রায় অবস্থিত বলে তাকে ধরা ছোঁয়া যাচ্ছে না। এই তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতারা মনে করেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত নিয়মগুলোর উৎপত্তি আসলে এরকম অসীমসংখ্যক প্যারালাল ইউনিভার্সের যোগাযোগের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এ ধরনের সমান্তরাল মহাবিশ্বগুলোকে লেভেল থ্রি প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়। স্ট্রিং তত্ত্বে অন্তর্বর্তী জগতের মাত্রাগুলো বিভিন্ন ভাবে পেঁচিয়ে থাকার কারণে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক নিয়মাবলী সমৃদ্ধ মহাবিশ্বের উদ্ভব হতে পারে। এ রকম আলাদা আলাদা নিয়মের মহাবিশ্বগুলোর সবকিছুই আলাদা। এমন সব মহাবিশ্বের বেশিরভাগই প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য অনুপযোগী। যদিও আমরা এমন মহাবিশ্বের প্রমাণ পাইনি, কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে এরকম মহাবিশ্বের সংখ্যা প্রায় অসীম, ১০^৫০০। আর এর ভিতর আমাদের মহাবিশ্বের মত নিয়ম যুক্ত মহাবিশ্বের সংখ্যাও অগণিত। বর্তমান প্রযুক্তির ধরা ছোঁয়ার বাইরে হলেও, ভবিষ্যতে কোন দিন হয়ত আমরা এমন মহাবিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হব। এমন বিভিন্ন নিয়ম যুক্ত মহাবিশ্বকে বলা হয় লেভেল-4 প্যারালাল ইউনিভার্স। উপরে চার ধরনের প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা বলা হয়েছে। স্ট্রিং তত্ত্বের সমাধানগুলো শুধু লেভেল-3 ছাড়া বাকি সবগুলোর অস্তিত্ব দাবি করে। স্ট্রিং তত্ত্বের সমাধানগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় অবশ্যই কোথাও আমাদের মহাবিশ্বের মত অন্য মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে। এই তত্ত্ব আমাদের সামনে সৃষ্টির যে চিত্র তুলে ধরে তাতে বহুবিশ্ব ও সমান্তরাল মহাবিশ্বের অস্তিত্ব খুবই বাস্তব।

Level 2

আমি অপুর্ব আহমেদ। , Matlab, chandpur। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 8 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস