আশাকরি আল্লাহর দয়ায় আপনারা ভালোই আছেন। আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সুন্দর একটি টিউন। চলুন এখন আসল কথায় আসি।
আমরা যারা সুস্থ আছি তারা হয়তো দিনে একবারও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি না। আমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ তাদের দিকে দেখে অন্তত শুক্রিয়া আদায় করা উচিত।
হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটির কারণে আমরা যেমন সুস্থ আছি তেমনি এটির কারণে অনেকেই অসুস্থ। হৃৎপিণ্ড নিয়েই আজকের আলোচনা।
হৃৎপিন্ডের করোনারি ধমনীতে প্লাক জমার কারণে হৃৎপেশি যখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায়না তখন বুকে এক ধরনের ব্যথার সৃষ্টি হয় এ ব্যথাকে অ্যানজাইনা বলে।
এ ব্যাথা সাধারণত ৫-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। বুকে ব্যথা ছাড়াও হজমের গন্ডগোল ও বমি বমি ভাব হয়। ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া কিংবা দম ফুঁপিয়ে হাপানো দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ব্যাথা কোথা থেকে আসছে তাও বোঝা যায় না।
করোনারি ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। ধমনীর অন্তর্গাত্রে চর্বি জাতীয় পদার্থ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন প্রভৃতি জমা হয়ে প্লাক গঠন করে। একে করোনারি অ্যাথেরেমা বলে। প্লাক বড় ও শক্ত হতে হতে একসময় অনুচক্রিকা জমা হয়ে রক্ত জমাট বাঁধে। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডের হৃদপেশীতে সরবরাহ হতে না পারায় হৃদপেশী মরে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাক এর আরেক নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।
হৃৎপিন্ডের করোনারি ধমনী তে কোলেস্টেরল জাতীয় খাদ্য জমা হয়ে প্লাক সৃষ্টি করতে পারে। অতিমাত্রায় পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের কার্য কে বন্ধ করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন যে ১০০ টি কলায় যে পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে তা মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
হৃৎপিণ্ড যখন দেহের চাহিদা অনুযায়ী রক্তের জোগান দিতে পারে না তখন হার্ট ফেইলিওর ঘটে। হার্ট ফেইলিওর এর বিশেষ কারণ হচ্ছে করোনারি ধমনী প্লাক জমে যাওয়া। অনেক সময় হৃদপিণ্ড রক্তে পরিপূর্ণ হতে না পারায় কখনোওবা হৃৎপ্রাচীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকায় এমনটি হতে পারে।
আধুনিক বিশ্বে হৃদরোগের গবেষণার ফসল হিসেবে বেশ কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। যেমন, পেসমেকার, ওপেন হার্ট সার্জারি, করনারি বাইপাস সার্জারি, এএনজিওপ্লাস্টি ইত্যাদি।
হৃদপিন্ডের স্পন্দন সৃষ্টি কারি অঙ্গ বা যন্ত্রকে পেসমেকার বলে।
পেসমেকার দুই ধরনের হয়ঃ
মানুষের হৃদপিন্ডের সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড সঠিকভাবে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে একে প্রাকৃতিক পেসমেকার বলে।
এটি হৃদপিন্ডের বাম অ্যাট্রিয়াম এ উপস্থিত থাকে।
কোন কারণে সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড কার্যক্ষমতা হারালে বা অসুস্থ হয়ে গেলে সেখানে কম্পিউটারাইজড বৈদ্যুতিক যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এই যন্ত্রকে কৃত্রিম পেসমেকার বলে।
দুজন আমেরিকান বিজ্ঞানী উইলিয়াম চারড্যাক এবং উইলসন গ্রেটব্যাচ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে কৃত্রিম পেসমেকার আবিষ্কার করেন। পেসমেকারে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। পেসমেকারের তার কে লিড বলে। এ ব্যাটারির মেয়াদকাল পাঁচ থেকে দশ বছর।
শল্য চিকিৎসক যখন রোগীর বুক কেটে উন্মুক্ত করে হৃদপিণ্ড অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে তখন সে প্রক্রিয়াকে ওপেন হার্ট সার্জারি বলে। অন্যসব চিকিৎসার পরও যদি হৃদপিণ্ডে বড় ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এটি একটি জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি।
এক বা একাধিক করোনারি ধমনির লুমেন রুদ্ধ হয়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখতে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে দেহের অন্য অংশ থেকে একটি সুস্থ রক্তবাহিকা কেটে এনে রুদ্ধ ধমনীর পাশে স্থাপন করে রক্ত সরবরাহের যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করা হয় তাকে করনারি বাইপাস সার্জারি বলে।
বড় ধরনের অস্ত্র পাচার না করে হৃদপিন্ডের করোনারি ধমনীর সংকীর্ণ অঞ্চল প্রশস্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি বলে।
এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে হৃদপিন্ডে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ড এর ডাক্তার অ্যানড্রেস গ্রয়েনজিগ সর্বপ্রথম এনজিওপ্লাস্টি আবিষ্কার করেন।
এনজিওগ্রাম করে নিশ্চিত হওয়ার পর এ ধরনের সার্জারি করা হয়। ক্যাথেটারের মাধ্যমে একটি বেলুন করোনারি ধমনীর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। বাহিরে থেকে বেলুনটি কে ফোলানো হয়। বেলুনের চাপে করোনারি ধমনী প্রশস্ত হয়। একে বেলুন এনজিওপ্লাস্টি বলে।
এ ধরনের এনজইওপ্লাস্টিতে এক বিশেষ ধরনের লেজার দিয়ে প্লাক কাটা যায়।
এ পদ্ধতিতে ব্লেড ব্যবহার করে করনারি ধমনির লুমেন প্রশস্ত করা হয়।
এটি বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে করনারি ধমনিতে রিং স্থাপন করা হয়।
আজকের টিউন এই পর্যন্তই। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ভালো লাগলে জোসস দিতে ভুলবেন না।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।