মানুষকে ধূলাবালি ও পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে- MAN CREATED FROM DUST AND WATER

মানুষকে ধূলাবালি ও পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে-

MAN CREATED FROM DUST AND WATER

 

পবিত্র কোরআন অনুযায়ী মানুষকে ধূলাবালি ও পানি থেকে তৈরী করা হয়েছে। কখনো কখনো কোরআন মৌলিক পদার্থ গুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে জোড় দিয়েছে আবার কখনো কখনো যুক্তভাবে বর্ণনা করেছে; এমনিতর অসংখ্য ধারনা রয়েছে যে মানুষকে কাঁদামাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।আজকের উন্নত বিজ্ঞান বলছে মানব দেহে যে সকল মৌলিক উপাদান রয়েছে তার সবগুলোই উপস্থিত আছে কাঁদামাটিতে। এই সকল মৌলিক উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে, আয়রন, ক্যালসিয়াম,অক্সিজেন,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, হাইড্রোজেন,ক্লোরিন, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ,সীসা, ফসফরাস, কার্বণ,জিঙ্ক,সালফার,নাইট্রোজেন, ইত্যাদি।আর এটাই মহান আল্লাহর শিল্পগুন যে, এই পদার্থ গুলো থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।

of which man is made, but in the Creator...

الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

১:২ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

 

2- Praise be to God, Lord of the worlds.

1-The Prologue, 2

QUINTESSENCE OF CLAY

কাঁদামাটির সারাংশ

সূধী পাঠক দয়াময়ের কথা ও বাস্তবতার সাথে কোন অমিল নেই;তিঁনি পবিত্র কোরআনে সূরা আল মুমিনুন এর ১২ নং আয়াতে বলছেন,

023.012 وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإنْسَانَ مِنْ سُلالَةٍ مِنْ طِينٍ

০২৩:০১২ আমি মানুষকে কাঁদামাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।

023.012 Man We did create from a quintessence (of clay);

মহান প্রভু এক সুনিপুন হিসেবের মাধ্যামে কাঁদামাটিতে উপস্থিত মৌলিক উপাদানগুলোকে একত্রিত করে মানব দেহ সেৃষ্টি করেছেন।উপাদানগুলো আনুপাতিক হারে সিুবিন্যস্ত হয়েছে আমাদের দেহে।আজকের বিজ্ঞান বলছে,মৌলিক উপাদানগুলো সুনির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যাবস্থিত হয়েছে;আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত আহারিত বস্তু থেকে তা আহরণ করছে এবং অতিরিক্ত অংশ রেচনের মাধ্যামে পরিত্যাগ করছে। আমাদের পরিনত দেহে প্রায় ২ কেজি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন,কমতি হলে দাত ও হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়; প্রায় ১২০ গ্রাম পটাসিয়াম প্রয়োজন,কম হলেই মাংসপেশীতে খিচুনী ও ক্লান্তি দেখা দেয়,তাছাড়াও খুদ্রান্তের গোলযোগ ও হৃদকম্পের সৃষ্টি হয়।জিঙ্ক ২-৩ গ্রামের কম হলে সৃতিশক্তি কমতে থাকে,শরীরে দূর্বলতা দেখাদেয়,কর্যোক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে, স্বাদ ও গন্ধ শক্তি কমে যেতে থাকে;সেলেনিয়ামের অভাবে পেশীকলা দূর্বল হয়ে যায়,রক্তনালী ও হৃদযন্ত্রের পেশীকলা শক্ত হতে থাকে।মহান প্রভু কাঁদামাটি থেকে এ সকল উপাদান সঠিক অনুপাতে সমন্বয় করে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেনে তাঁর কুশলী মেধা দিয়ে।সূধী পাঠক,লক্ষ্য করুন একবারের সৃষ্টিতেই শেষ নয়,জীবন্ত প্রাণীর দেহে সার্বক্ষণিক চলছে এই উপাদানগুলোর ক্ষরণ ও পূরণ।নচেৎ এই যে সুকঠিণ সমন্বয় তা কি আপনা আপনি সম্ভব? অবিশ্বাসীরা বলছে প্রাণ প্রকৃতিতে আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে।কখনেই হতে পারেনা, এ সমন্বয় একমাত্র সর্বশক্তিমান সর্বদর্শী মহান স্রষ্টার সম্পাদনা।সঠিক মাত্রায় ও সযত্ন সম্মিলনের মাধ্যামে প্রাণ সৃষ্টি অদ্বিতীয় পরিকল্পনা।সৃষ্টিজগতের দিকে ভালকরে তাকিয়ে দেখুন,কি সুনিপুন পরিকল্পনা! কত নিঁখুত প্রতিটি সৃষ্টি।আপনার চোখ ফিরাতে পারবেননা,শুধু একবার ভাবুন,কতবড় কুশলী হলে তা সম্ভব।

পানি থেকে সকল জীবনের উদ্ভব

সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ৩০,

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

২১:৩০ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?

30- ...and from water We made all living things. Will they

not believe even then?

21-The Prophets, 30

সূরা আন-নূর আয়াত ৪৫

وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِن مَّاء فَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى بَطْنِهِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى أَرْبَعٍ يَخْلُقُ اللَّهُ مَا يَشَاء إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

২৪:৪৫ আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

45- God created every moving creature from water...

24-The Light, 45

উপরের আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ বলছেন,তিঁনি মানুষকে ও সকল প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। ১৪০০ বছর আগে মানুষ যখন জানতোনা তার সৃষ্টির ইতিহাস, ছিলনা কোন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা তখন পবিত্র কোরআন ঘোষনা করেছে,‘সকল প্রানের উৎস পানি’।আজকের বিজ্ঞান সোচ্চারে বলছে,পানি প্রাণের প্রধান ও মূল জৈবীক উপাদান।প্রাণী কোষের ৬০-৮০% পানি।পানি বিহীন জীবন কখনেই কল্পনা করা যায়না।

সূধী পাঠক,প্রকৃতিতে এত তরল পদার্থ থাকতে মহান আল্লাহ পানিকে প্রাণ সৃষ্টির মূল উপাদান হিসেবে বেছে নিলেন কেন? পানির এমন কি  গুণাগুন রয়েছে?

বিজ্ঞান বলছে,পানির দু’টি মৌলিক উপাদান হল,হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। পানির অনুতে এই মৌল দু’টি এমনই এক অবস্থানে রয়েছে যে,অনুটির আয়তনের মাত্র ১ ভাগ স্থান জুড়ে আছে পরমানু দু’টি,বাকী ৯৯ ভাগই শূণ্যস্থান।সম্ভবত এই বিশাল শূণ্যতাই পানিকে করেছে জীবনের উপযোগী উপাদন।পানি প্রকৃতিতে উৎকৃষ্টতম দ্রাবক; এতে অধিকাংশ জৈব ও অজৈব পদার্থই দ্রবীভূত হতে পারে।এ বড় রহস্যময় ব্যবস্থা,আর এই রহস্যময়তাই প্রাণকে সচল রেখেছে প্রকৃতিতে।পানির অনুর এই শূণ্য স্থানটুকুই প্রাণী কোষকে বাঁচিয়ে রাখছে তার খাদ্য দিয়ে। এ শূণ্যষ্থানের কারণেই পানি উৎকৃষ্ট দ্রাবক।খাদ্যবস্তু পরিপাকের পর প্রাণীকোষের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পানির এই শূণ্যস্থানে অবস্থান নেয়,অবিশ্রভনের মাধ্যামে সেই পানি দেহকোষ প্রবেশ করে আর প্রাণীকোষ সেই খাদ্য গ্রহন করে বেঁচে থাকে্‌ উচ্ছিষ্ট্ পানি রেচনের মাধ্যামে কোষ থেকে রেরিয়ে আসে।এই ভাবেই পানি প্রাণী দেহকে বাঁচিয়ে রাখে। গুটি কতক মৌলিক উপাদানকে পানির সাথে মিশিয়ে প্রাণী কোষ সৃষ্টির কৌশল একমাত্র মহান স্রষ্টার কাছেই নিহিত। বিজ্ঞান তার সকল সাধ্য ও সাধনা দিয়েও তা করতে পারেনি; আর এখানেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর বিশেষত্ব।এটি একমাত্র তারই কৌশল, সেই প্রাণহীন অসীম শূণ্য অজৈব অণুটি দিয়ে প্রাণচঞ্চল একটি প্রাণ অনু তথা প্রাণকোষ তৈরী করেছন।এটি একমাত্র তাঁরই অবাধ ক্ষমতা।

 

সূরা আল হাশর আয়াত ২৪, মহান আল্লাহ বলছেন,

 

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

৫৯:২৪তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও  ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।

 

সূধী পাঠক আমাদের আলোচনার এ পর্যায়ে এসে একটা জটীল প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে; তাহল,প্রথম মানব শিশুটি কিভাবে প্রাণময় হয়েছিল? কাদাঁমাটি থেকে কোন মানব শিশু কি তার দেহ সৌষ্টব নিয়ে সরাসরি উত্থিত হয়েছিল?নাকি অন্য কোন উপায়ে সৃষ্টি হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাব রহস্যে আবৃত;এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন পরিস্কার ভাবে কিছু বলেনি;তবে সার্বিক আলোচনায় যে ধারনা দিয়েছে তাতে বুঝা যায় যে, মানুষ সৃষ্টির প্রথমধাপ শুরু হয়েছে কাঁদা মাটিতে; পর্যায়ক্রমে তা উন্নীত হয়েছে মানবরূপে এবং তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে পরবর্তী বংশধর।সূধী পাঠক আমরা ধীরে ধীরে দেখবো এই ক্রম ধারা। আসুন, আমরা দেখি আজকের বিজ্ঞান প্রথম প্রাণসৃষ্টি নিয়ে কি বলছে?

 

জীবনের উন্মেষ

আমরা জানি জন্ম লগ্নে আমাদের পৃতিবী প্রাণধারনের উপযুক্ত ছিলনা, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এই উত্তপ্ত গোলকটি শীতল হয়ে একসময় জীবন ধারনক্ষম হয়ে উঠে।বিজ্ঞানীগন ধারনা করেন প্রায় ৩.৮ কোটি বছর আগে প্রথম প্রানের উদ্ভব ঘটে। সময়ের ব্যবধানে বিবর্তনের ধারায় উন্নয়নের মাধ্যামে নানা প্রজাতির সৃষ্টি হয়,অপূর্ব সাজে সেজে উঠে এই মাতৃধরা। প্রণীকুলের মধ্যে একটি দল হয়ে উঠে মানবগোষ্ঠী। বিজ্ঞান বলছে এই বিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছিল স্বতস্ফূর্তভাবে,এগিয়ে গেছে প্রাকৃতিক নির্বাচনে;এর জন্যে নিয়ন্ত্রনকারী কোন মহাস্বত্তার  প্রয়োজন হয়নি। কিন' পবিত্র কোরআন বলছে মহাবিশ্বে সকল সৃষ্টি শুরু হয়েছে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশে এবং বিবর্তন এগিয়ে চলছে তাঁরই সক্রিয় নিয়ন্ত্রনে। মহান আল্লাহ্‌ সূরা নিসার ১ নং আয়াতে বলছেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

4:1 হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।

O humans! Be pious (careful of your duty) to your Lord, Who created you from a single self (soul), and from it He created its mate, and from them He has spread a multitude of men and women (Al-Nissa, 4: 1).

প্রচলিত তরজমায় কোরআন গবেষকবৃন্দ বিভিন্ন ভাবে তরজমা করেছেন,অধিকাংশ বাংলা তরজমায় বলা হয়েছে, আল্লাহ্‌ মানব সম্প্রদায়কে একব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন,হাফিজ মনিরুদ্দিন সাহেব এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র ‘ব্যক্তিস্বত্তা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ইংরেজী অনুবাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  soul  শব্দটি ব্যবহার করেছেন;অর্থাৎ ‘এক আত্মা’। ‘এক ব্যক্তি’ ব্যবহার করলে একটি প্রশ্ন দাঁড়ায় যে,একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তি সৃষ্টিতে কোন ধারাবাহিকতা আছে কিনা। এছাড়াও মানব সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্‌ অন্যত্র যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সবগুলিকে একত্রিত করে ভাবলে এই ‘একব্যক্তি’ ধারনাটি এক আত্মা বা একটিমাত্র প্রাণকেই বুঝায়। সূধী পাঠক আমরা প্রাণ সৃষ্টি প্রসঙ্গে বর্ণিত আয়াত গুলো একত্রিত করার চেষ্ঠা করি।

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

15:26 আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।

15.26 . We created the human being from stinking, smooth, (and wet) clay.

সূধী পাঠক লক্ষ্য করুন আয়াত ১৫:২৬ কি বলছে, এখানে আল্লাহ্‌ বলছেন,মানুষকে পচামাটি থেকে তৈরী শুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। এখানে প্রশ্ন দাড়াল একটা পরিপূর্ণ মানুষ কি এই মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে? যদি তাই হয়ে থাকে তবে হয়তোবা খড় কুটা জাতীয় পদার্থ নিয়ে একটা মানব কাঠামো তৈরী করে মহান আল্লাহ্‌ তাতে কাঁদা মাখিয়ে নির্দেশ দ্বারা প্রানবন্ত করেছেন যার মধ্যে সমগ্র তন্ত্র সৃষ্টি হয়ে মানুষকে কর্মক্ষম করেছে (আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন)। যদিও ব্যপারটি বাস্তবতা বিরোধী তথাপি মহান আল্লার পক্ষে সম্ভব। যদি তা না হয়ে থাকে তবে নিশ্চই প্রাণ সৃষ্টির প্রথম পর্যায় অর্থাৎ প্রাণ অনুর সৃষ্টি হয়েছিল; যা থেকে পরবর্তীতে প্রাণী দেহ তৈরী হয়েছে। আজকের বিজ্ঞান বলছে প্রথম জৈব অনুটি সৃষ্টি হয়েছিল অজৈব পদার্থ থেকে। আর কাঁদা মাটিতে জৈব পদার্থ সৃষ্টির সকল উপাংশই রয়েছে। আবার অজৈব পদার্থ আপনা আপনি জৈব পদার্থ তৈরী করেনা,তার জন্যে উপযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি করতে হয়। হতে পারে  পানিতে অজৈব পদার্থ গুলির পঁচন ও পরবর্তীতে বিশুষ্ক করণের মধ্যেই সেই পরিবেশ দেওয়া হয়েছিল, ফলে সৃষ্টি হয়েছিল জৈব অণু;তারপর নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের ধারায় তৈরী হয়েছে প্রোটিন অনু যা হয়তো জটীল প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছে প্রাণের নিয়ন্ত্রক উপাদান ডি এন এ ও আর এন এ; আরও জটীল প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছে কোন এক সরল প্রাণ যাকে বলা যায় এ কোষী জীবন। এই আলোচনায় উপরোক্ত আয়াতে বক্তব্যের সাখে সাথে কোন সাংঘর্ষিক বিষয় নেই। তবে এ কথা বলা যায়না যে,উপরোক্ত আয়াত এই আলোচনার স্বীকৃতি দিচ্ছে। তবুও আমরা বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্য চিন্তাটুকুই করলাম। এবার দেখাযাক অন্যান্ন আয়াত কি বলছে। নীচে  সূরা সেজদাহ’র ৭ নং আয়াতটি লক্ষ্য করুণ,

الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الإنْسَانِ مِنْ طِينٍ

32:7 যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

32.7. (Allah is He) who has made everything He created better, and He began the creation of the human (being) out of clay.

কি পরিস্কার বর্ণনা,‘তিঁনি কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।’ সূধী পাঠক আর কত পরিস্কার ভাবে বলা প্রয়োজন? এখানে বলা হয়েছে,কাঁদা মাটি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ সৃষ্টি করা হয়নি,মানুষকে সৃস্টি করা কাজের সূচনা করা হয়েছে। তিঁনি তাৎক্ষণিক মানুষ সৃষ্টি করেননি,করেছেন দীর্ঘ প্রক্রিার মাধ্যামে। সৃষ্টি কর্মে তাঁর প্রধান লক্ষ্য মানুষ সৃষ্টি,অবশ্য সে কথা তিঁনি পবিত্র কোরআনে অনেক যায়গায় বর্ণনাও করেছেন। আর এই উপলক্ষ্যেই তিনি সৃষ্টি কর্ম শুরু করেছেন,আর এই সৃষ্টি কর্মের প্রয়োজনে তিঁনি মহাবিশ্বকে প্রথমে সাজিয়েছেন মহাজাগতিক বস্তু দ্বারা,তারপর ব্রতী হয়েছেন প্রাণ সৃষ্টিতে,সেই লক্ষ্যে প্রথম প্রাণ অনু সৃষ্টি করেছেন মহাকাশে  সৃষ্ট মহাজাগতিক বস্তুর অপভ্রংশ তথা অজৈব পদার্থ থেকে। আর এই প্রাণ অনু থেকে উৎপাদন করেছেন নানাবিদ জটীল প্রাণ অনু তথা সরল প্রাণী যা প্রয়োজন তার মূখ্য সৃষ্টি মানুষের। সেই সূচনা কর্ম একদিন পূর্ণতা পেয়েছে মানব সৃষ্টিতে। আর সেই মানুষকেই তার সৃষ্টি ইতিহাস জানাবার জন্যে পূর্ণাঙ্গ ইঙ্গিত দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে।

এখন প্রশ্ন হল যিঁনি এই সৃষ্টি ইতিহাসের স্রষ্টা,তিনি কেন মানুষকে এই তথ্য মাত্র ১৪ শত বছর আগে জানতে দিলেন,আবার জানতেই যখন দিলেন তবে কেন ইঙ্গিত আকারে দিলেন, তিনি কি পরিপূর্ণ বর্ণনা জানেননা (মহান প্রভুর কাছে বিনীত নিবেদন,তিনি যেন অপরাদ মার্জন করেন)। সূধী পাঠক, এখানেও সেই বিবর্তনের কথাই লুকিয়ে রয়েছে। আমরা যদি পবিত্র কোরআন একটু মনযোগ দিয়ে পাঠ করি তবে দেখতে পাবো প্রতিটা বিজ্ঞানময় কথার পরেই বলা আছে ‘চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে ইঙ্গিত রয়েছে।’ দয়াময় মানব সম্প্রদায়কে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাকে দিয়েছেন জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারণা,আর তাগিদ দিয়েছেন চিন্তাভাবনা করার,অর্থাৎ অজানাকে জানার চেষ্টা করার পরামর্শ। মানুষের সীমিত জ্ঞানের পরিধীতে অজানা জ্ঞানের তালিকাও নিশ্চই সীমিত। আর সেই সীমিত কাজের জন্যে সম্ভবত দয়াময় একটা নির্দিষ্ট সময়ও বরাদ্ধ রেখেছেন। আর তাই মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌছার একটা নির্দিষ্ট ধাপে এসে দয়াময় তাকে দিয়েছেন প্রজ্ঞাময় কোরআন যাতে রয়েছে শুধুমাত্র ইঙ্গিত,যে ইঙ্গিতের সূত্র ধরে মানুষ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে,বিবর্তিত হবে তার জ্ঞানের ধারা। এই বৈজ্ঞানীক চিন্তা শুরু করার মত মেধা অর্জণে মানব সম্প্রদায়কে পেরিয়ে আসতে হয়েছে সময়ের এক বিশাল পরিধি। হয়তো মানুষের সৃষ্টি থেকে বৈজ্ঞানীক চিন্তা ধারার উপযুক্ত মানসিক বিকাশের জন্যে প্রয়োজন ছিল ঐ সময়টুকু। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে দয়াময় কেন মানুষকে এই মেধা দিয়ে সৃষ্টি করেননি?  হয়তো প্রথম থেকেই মানুষ তার উন্নত মেধা দিয়ে বিজ্ঞান চর্চা শুরু করলে তার পূর্ণাঙ্গ সময়কাল সমাপ্ত হওয়ার আগেই সে চরম শিখরে উঠে যেত,ফলে তার আয়ুষ্কাল যেত কমে (আল্লাই ভাল জানেন)।

আমরা (32:7 যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন) আয়াতটির শাব্দিক অর্থ প্রয়োগ করলে দাঁড়ায়, তিঁনিই উন্নত করেছেন( made good, created better) সকল সৃষ্টিকে যা তিঁনি সৃষ্টি করেছেন,এবং তিঁনি সূচনা করেছেন মানব সৃষ্টি কাঁদা থেকে। এবার আয়াতটির প্রথম অংশের দিকে তাকান,‘তিঁনি উন্নত করেছেন সকল সৃষ্টিকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন’। তার পরেও কি বলতে বাঁধা আছে যে,ক্রম বিবর্তন হচ্ছেনা। বিবর্তন প্রকৃতিগত,কিন্তু' তা আপনা আপনি ঘটছেনা। বৈজ্ঞানীক পরীক্ষা ও পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে,বিবর্তন একটা নির্দিষ্ট নির্দেশনা বা পরিকল্পিত নকশা অনুযায়ী হচ্ছে। বৈজ্ঞানীক পরীক্ষায় দেখাগেছে প্রাণীর বিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হল ডি এন এ তে অবস্থিত জিন। জিন অতি জীঁল প্রক্রিয়ায় প্রাণীর মৌলিক বৈশিষ্টের পরিবর্তন ঘটায়। পবিত্র কোরআন বলছে এই পরিবর্তন হয়ে থাকে নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত নকশা অনুযায়ী।

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ ثُمَّ قَضَى أَجَلاً وَأَجَلٌ مُّسمًّى عِندَهُ ثُمَّ أَنتُمْ تَمْتَرُونَ

6:2 তিনিই তোমাদেরকে মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল নির্ধারণ করেছেন। আর অপর নির্দিষ্টকাল আল্লাহর কাছে আছে। তথাপি তোমরা সন্দেহ কর।

6.2. He is Who has created you from clay, then he spent a term of time (away from you), and (it is) a specific term he determined. Yet, you doubt (his ability)!.

আয়াত ৬:২ লক্ষ্য করুন,বলা হয়েছে,তিঁনি সৃষ্টি করেছেন এবং দুইটি কাল নির্দারন করেছেন,একটি চলমান ও অপরটি তাঁর সাথে; অর্থাৎ পরকাল।

লক্ষ্য করুনআয়াত ২৪: ৪৫,

وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِن مَّاء فَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى بَطْنِهِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى أَرْبَعٍ يَخْلُقُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

24:45 আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

এখানে বলা হয়েছে প্রত্যেক চলন্ত জীবকে আল্লাহ্‌ পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন; আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছি আল্লাহ্‌ ধূলা ও পানির মিশ্রণে সৃষ্ট কাঁদামাটি থেকে প্রাণ অুণুর সৃষ্টি করেছেন আর তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যামে প্রাণকোষ, ও পরে তা আরও বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উন্নত প্রাণী যারা কেউ কেউ বুকে ভর দিয়ে চলে আবার কেউ কেউ দুই পায়ে বা চার পায়ে চলে। এখানে চলন্ত জীব বলতে হয়তোবা ইতর প্রাণীর কথাই বলা হয়েছে; এখানে আরও একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ‘আাল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন’। এখানে পরিস্কার ভবে বুঝানো হয়েছে যে,অজৈব পদার্থ থেকে জৈব অণু সৃষ্টির পর তা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করণের দ্বারা নানা প্রজাতির সৃষ্টি করা হয়েছে। শেষ কথাটি বড়ই চমকপ্রদ ও বিষ্ময়কর। মহান রাব্বুল আলামিন নিশ্চই জানতেন আজকের বিজ্ঞান মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে এই বিবর্তনের ধারাকে আবিস্কার করবে, এবং এই সৃষ্টির স্রষ্টাকে মুছে দিয়ে প্রাকৃতিক নির্বচনকে এনে দাঁড় করাবে,তাই তিনি প্রকৃত চিন্তশীলদের জন্যে বিভ্রান্তীর পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, প্রাকৃতিক নির্বাচন নয়;তিঁনি বলেছেন,‘তিঁনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন’। আমরা বৈজ্ঞানীক আলোচনায় দেখেছি ডি এন এ ও আর এন এ’র মত জটীল অনুকে কোন আকষ্মিকতা দিয়ে পরিবর্তন করা যায়না, তা নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রনের মাধ্যামে নতুন করে তৈরী করতে হয়। আমরা এই জানি প্রত্যেকটি প্রজাতির ডি এন এ সম্পূর্ণ আলাদা। কোন প্রজাতির গঠণ কৌশল সামগ্রিক ভাবে তার ডি এন এ’র মধ্যে লিপিবদ্ধ থাকে আর প্রাণীটি সেই রূপে গড়ে উঠে। এখানে একটা প্রশ্ন তৈরী হতে পারে, সৃষ্টি যদি স্রষ্টার ইচ্ছে মতই হয়ে থাকে তবে বিবর্তনের কথা আসছে কেন? এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখাত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিন্সের  একটি রসিকতার কথা মনে পড়ে গেল, ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে ডিসকভারী চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কোন এক প্রশ্নের জবাবে,তিনি বসিকতা করে বলেছিলেন,আল্লাহ্‌র কি হাত আছে,যে তিনি তৈরী করবেন? সূধী পাঠক, সেই কথার সূত্র ধরেই বলছি, আসলে তিনি সত্যি কথাটাই বলেছেন,তবে সম্পূর্ণ বলেননি। মহান স্রষ্টার হাত পা আছে বলেতো আমাদেরও জানা নেই যে তিনি কোন কিছু তৈরী করবেন! আসলে তিঁনি কোন কিছুই তৈরী করেননা; তিঁনি মহান স্রষ্টা, তিঁনি সৃষ্টি করেন। আমরা যারা তাঁর সৃষ্টি, তাদের হাত পা রয়েছে তারাই পারে কোন কিছু তৈরী করতে। তৈরী করাই আমাদের কর্ম,সৃষ্টি নয়,সে ক্ষমতা শুধু একজনেরই,শুধু তিনিই সৃষ্টি করতে পারেন। হয়তো তর্কের খাতিরে বলতে পারেন হাত ছাড়া কি দিয়ে সৃষ্টি করবেন। সূধী পাঠক, তৈরী আর সৃষ্টির মধ্যে এ টুকুই পার্থক্য। সৃষ্টি হয় আপনা থেকে স্রষ্টার নির্দেশে। আর তৈরী হয় সৃষ্ট বস্ত দিয়ে রূপান্তরের মাধ্যামে।এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল কোথা থেকে কিভাবে? বিজ্ঞান নিজেই তার জবাব দিয়েছে,‘শূণ্য থেকে আপনা আপনি গজিয়ে উঠেছে এই মহাবিশ্ব’ বাকী যে টুকু বলেছে সেটুকু তাদের কল্পনা,কারণ তারা নিজেরাই বিশ্বাস করেনা যে শূণ্য থেকে কিছু হতে পারে আর বাস্তবেও তাই। আর এই ব্যাখা শূণ্যতার মাঝেই আমার সৃষ্টিকর্তার আসনটি পাকাপোক্ত হয়ে আছে। যাকগে সে কথা,আমাদের আলোচ্য বিষয় এটি নয়-। আমরা ভাবছিলাম বিবর্তন নিয়ে। সেই প্রসঙ্গেই বলছিলাম দয়াময়ের হাত নেই তাই তিনি কোন কিছু তৈরী করতে পারেননা,তাতো তিনি তাঁর সৃষ্ট পদার্থের অপদ্রব্য থেকে প্রাণ অনু সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছিল জলে,যা পরবর্তীতে স্থলকেও অধিকার করেছে নিজ প্রয়োজনে। নির্দেশের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় তৈরী হয়েছিল প্রাণ যা আল্লাহ্‌ হাত দিয়ে তৈরী করেননি। আগেই বলেছি সৃষ্ট পদার্থ থেকে তৈরীর প্রক্রিয়াকে বলা হয় রূপান্তর। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া কখনো কখনো হয় স্বল্পকালীন আবার কখনো কখনো হয় দীর্ঘকালীন। দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়াগুলিকে আমরা বলি বিবর্তন। বাস্তবেও আমরা দেখি প্রকৃতিতে রূপান্তর প্রক্রিয়া অত্যান্ত দীর্ঘকালীন,তাই এ ক্ষেত্রে বিবর্তন শব্দটি সহজবোধ্য।

24.45 . Allah has created every animal out of water . Of them (is a category which) walks upon its belly,  (another which) walks upon two legs, and ( a third which) walks upon four . Allah creates what He wills. Allah is Able to do everything (he wants) .

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

15.26 . We created the human being from stinking, smooth, (and wet) clay.

لَقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ

50:22 তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন।

أفَعَيِينَا بِٱلۡخَلۡقِ ٱلۡأَوَّلِ‌ۚ بَلۡ هُمۡ فِى لَبۡسٍ۬ مِّنۡ خَلۡقٍ۬ جَدِيد

50:15 আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? বরং তারা নতুন সৃষ্টির ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করেছে।

50.15. Were We then tired with the first creation? ïay ZvB bq (No), they (nonbelievers) are in confusion about a new creation (resurrection).  Hassan Ali El-Najjar

[50:15] Were we too burdened by the first creation? Is this why they doubt resurrection?  রাশেদ খলিফা

উপরের আয়াতটি লক্ষ্য করুন সূরা ক্কাফের ১৫ নং আয়াতে মহান আল্ল্লাহ্‌ বলছেন, সন্দেহভাজনরা কি ভাবছে,আমি প্রথম সৃষ্টিতেই  ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? শুধু তাই নয় তারা আমার নতুন সৃষ্টিতে সন্দেহ পোষন করছে। কোন কোন অনুবাদক এই নতুন সৃষ্টি বলতে বিচার দিনকে ইঙ্গিত করছেন। সূধী পাঠক একবার ভেবে দেখুননা এ বিচার দিনের ইঙ্গিত কিনা? আয়াতটির প্রথমাংশের দিকে তাকান,যে ভাবধারাটি ফুটে উঠেছে তা হল,তারা কি ভাবছে যে,আল্লাহ্‌ প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়েগেছেন যে আর সৃষ্টি করতে পারবেননা? কিন্তু দূরবর্তী কোন কাজের বেলায় এমনটা ভাবা হয়না কারন ধরে নেওয়া হয় বিশ্রামের ফলে সে পুনরায় কার্যক্ষম হয়ে উঠবে,এটাই স্বাভাবিক। উপরোক্ত আয়াতে পরবর্তী বা নতুন সৃষ্টি বলতে বিচার দিনের কথা ধরে নেওয়ার কোন অবকাশ নেই কারণ প্রথম সৃষ্টি ও বিচার দিবসের মধ্যে সময়ের এক বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এ ছাড়াও আমরা যদি বিচার দিবসকেই ধরে নেই তবে আর একটি বাস্তবতা বিরোধী বিপত্তি এসে হাজির হয়। অর্থাৎ আমরা যদি মনে করি স্রষ্টা প্রথমদফায় সৃষ্টি করে সৃষ্টি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন নতুন সৃষ্টি আবার বিচার দিনেই করবেন তবে তা বাস্তবতা বিরূদ্ধ হয়ে যায়। আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি প্রকৃতি নিত্য নতুন সৃষ্টিতে ভরপুর হয়ে ঊঠছে। মহাকাশে চলছে নিত্যনতুন ধ্বংস ও সৃষ্টির খেলা। তাহলে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সত্য হয়ে দাড়াবে প্রাকৃতিক নির্বাচনে বিবর্তনের পালা। স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা যাবে মিটে। প্রকৃত প্রেক্ষাপট হল ভিন্ন। দয়াময় মহান আল্লাহ্‌র কাছে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সবই এক; সময়ের কাটা নিশ্চল; তিনি জানেন সন্দেহভাজনারা তাঁর সৃষ্টি ক্ষমতাকে প্রকৃতির দুয়ারে তুলে দিয়ে প্রাকৃতিক নির্বচনে বিবর্তনের ধারাকেই সচল রাখবে তাই তিনি উপরুক্ত আয়াতে নতুন সৃষ্টি বলতে সৃষ্টির ধারাকেই সচল রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাছাড়াও শব্দ চয়নইত পরিস্কার করে দিয়েছে,নতুন সৃষ্টি,পুণঃসৃষ্টি নয়। এখানে আরও একটা বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে এই আয়াতগুলি যদি সহজেই বোধগম্য হত তাহলে এগুলো ভাবুকদের ভাববার বিষয় হয়ে উঠতনা। সূধী পাঠক একটি শব্দের অন্তরালে ব্যবহৃত ভাবনাহীণ একটা ধারনা স্রষ্টার সৃষ্টি ধারাকে কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে ভাবতে পারেন? ক্লান্ত স্রষ্টা সৃষ্টিতে অক্ষম হয়ে পড়ায় সৃষ্টি চলে গেছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ন্ত্রনে। পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে  দয়াময় যেন এধরনের গাফিলতি থেকে আমাদেরকে যেন রক্ষা করেন।

সূরা সেজদাহ্‌র ৮ নয় আয়াতে দয়াময় বলছেন,

ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ

32:8 অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

32.8 . Then He made his offspring from a quintessence of despised water (coming out of parents).

“And made his progeny from a quintessence of the nature of a fluid despised.”]

অতঃপর তিনি তার বংশধর তৈরী করেন তুচ্ছ তরল থেকে।

سُلالَةٍ   এই শব্দটির অভিধানিক অর্থ নির্যাস বা সার বস্তু, উৎপত্তিগতভাবে শব্দটি স্ত্রীবাচক বিশেষ্য। সম্ভবত শব্দটি উপরি উক্ত আয়াতে জরায়ুতে সৃষ্ট ডিম্বাণুর কথাই বলা হয়েছে। তাছাড়া শুক্রাণু বুঝাতে نُطْفَةً শব্দটির ব্যবহার হয়েছে। নির্যাস বলতে সাধারনত কোন তরল পদার্থে সারাংশ বুঝিয়ে থাকে। এখানেও হয়তোবা মাতৃ জরায়ুতে নানা তরলের সঙ্গে মিশ্রিত ডিম্বাণুর কথাই বলা হয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি শুক্রাণুও তরল বীর্যের মধে অবস্থান করে ফলে উভয় ক্ষেত্রেই নির্যাস শব্দটি ব্যবহার করা চলে। আজকের বিজ্ঞান বলছে, এক ফোঁটা বীর্যের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন শুক্রাণু অবস্থান করে,তন্মধ্যে কার্যক্ষম হয় একটি। অনুরূপভাবে ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হয় সহস্র সহস্র ডিম্বাণু, কিন্তু কার্যক্ষম হয় একটি। হতেপারে এই ‘সুলালা’ শব্দটি দিয়ে নারী পুরুষ উভয়ের নিঃসৃত তরলের নির্যাসকেই  বুঝানো হয়েছে। আমরা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ থেকেও জানি যে,শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলেই জাইগোট উৎপন্ন হয়।

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالأبْصَارَ وَالأفْئِدَةَ قَلِيلاً مَا تَشْكُرُونَ

32:9 অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

32.9. Then He shaped him (in due proportions), and breathed in him of His Spirit, and made for you hearing, sight, and hearts; little thanks you give.

وَقَدۡ خَلَقَكُمۡ أَطۡوَارًا

71.14. He has created you in diverse (and successive) stages.

71:14 অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে সৃষ্টি করেছেন। Ñ  m~iv byn&

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلاً

40.67 . He is Who created you from the earth soil , then from a nutfah (union of a father’s sperm and a mother’s egg), then from a leech (a fertilized egg sticking to the womb sucking nutrients from it like a leach), then He brings you out (of the womb) as a child.

40:67 তিনি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারও কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর। ( বাংলা তরজমায় কিছু শব্দ্র বিভ্রাট রয়েছে  ইরেজী অংশ দ্রষ্টব্য)  সূরা আল-মু’মিনুন

উপরের আয়াতটি কি বিষ্ময়কর বর্ণনা দিয়েছে। সেই প্রাণ অণু থেকে শুরু করে একেবারে মায়ের গর্ভ থেকে মানব শিশুর জণ্ম পর্যন্ত ধারাবাহিক বর্ণনা। বিবর্তনের এক পরিচ্ছন্ন চিত্র। সন্দেহভাজন অনেকে বলে থাকেন মানবসম্প্রদায়কে সৃষ্টির ব্যাপারে স্ব বিরোধী কথা বলেছে। বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে বর্ণনাগুলি বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকায় কথাগুলিকে স্ববিরোধী মনে হতেই পারে। সন্দেহভাজনদের এই মনোভাব মহান আল্লাহ্‌ আগেই জানতেন তাই সমগ্র বিতর্ক দূর করার জন্যে মানব সৃষ্টির সমগ্র ইতিহাস ধাপে ধাপে একটি আয়াতে বর্ণনা করেছেন,সম্ভবত এই উদ্দেশ্যে যে, এখানেই স্ববিরোধীতার মিমাংশা হয়ে যাবে। আয়াতটি ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখাযায় যে, এটি একটি ধারাবাহিক বিবর্তনের পূর্ণ চিত্র। মাটির অজৈব পদার্থ থেকে জৈব অণু সৃষ্টির মাধ্যামে বিবর্তনের সূচনা এবং ধারাবাহিকতায় পুরুষ ও স্ত্রী মানবের সৃষ্টির মাধ্যামে বংশধর সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং মানব শিশু জন্মের পর বিকশিত মানবরূপে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া ও যবনীকা। আর কোন বিতর্কের অবকাশ নেই যে কোন প্রজাতির সৃষ্টি চক্রে ঐশরিক শক্তির  ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রনই এই মাটির গ্রহটিকে প্রাণের কলকাকলিতে মুখরিত করে তুলেছে আর প্রকৃতিকে করেছে বিস্তৃত।

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلاً

40.67 . He is Who created you from the earth soil , then from a nutfah (union of a father’s sperm and a mother’s egg), then from a leech (a fertilized egg sticking to the womb sucking nutrients from it like a leach), then He brings you out (of the womb) as a child.

40:67 তিনি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদর্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের কারও কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর।  m~iv Avj-gyÕwgb

সূধী পাঠক এর পরেও কি সেই কৌতুহল বিরাজ করছে যে, মহান আল্লাহ খরকুটা দিয়ে মূর্তি গড়ে তাতে মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রাণময় করে তুলেছেন? আমরা জানিনা তিঁনি কি করেছিলেন,তবে তাঁর বর্ণিত আয়াত থেকে আমরা যেটুকু বুঝেছি,তারই সারমর্ম টুকু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভূল কি শুদ্ধ তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। অজ্ঞতার ভুলের জন্য তাঁর কাছে কায়মনে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

সূত্র-প্রবন্দটি বিভিন্ন ওয়েভ সাইটের সহায়তায় পণীত

 

আব্দুল আজিজ খন্দকার

২৪.০৫.২০১৪

 

 

 

Level 0

আমি হৃদয় খন্দকার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 60 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

THANKS BROTHER

আরবি লিখা শিখান?

    @আব্দুর রব:
    এই টাইপের কমেন্টের মানে কি?

ভালো লিখেছেন ভাই।