বিজ্ঞানের খাতা [পর্ব-০৫] :: আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকূল, সুধাইলো না কেহঃ হার্ট ব্লকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পেস মেকার আবিষ্কারের গল্প।

বিজ্ঞানের খাতা

আমার হৃদয় একটা আয়না, তোমার মুখটি ছাড়া কিছুই দেখতে চায়না। মন আছে তাই আমরা মানুষ। যদিও মানুষ সহ সকল প্রাণীর চিন্তা ভাবনার উৎস তার ব্রেইন বা মস্তিষ্ক। কিন্তু আমরা হৃদয় বা হার্টকেই এর কৃতিত্ব দিয়ে থাকি। প্রেমের চিহ্ন হিসেবে আমরা বোটা ছেড়া পান পাতাকে লাভ এর সাইন বলি। প্রেমে লাইন মারতে গিয়ে লাল কার্ড আই মিন ছ্যাকা খেলে আমরা ফেসবুকে গিয়ে তীরবিদ্ধ হার্টের চিত্র আপলোড করি। মানুষের হৃদয়বৃত্তিক আচরণ বিচিত্র। এই মনটা বলেছে আমাকে, সে ভালো বেসেছে তোমাকে। ভাবটা এমন মন না বললে তোমাকে ভালো বাসতাম না।

মানুষের শরীরের সিগন্যাল গুলো বয়ে নিয়ে যায় স্নায়ুতন্ত। নার্ভ বা স্নায়ূ সব জায়গায় আছে। হৃদপিন্ডেও আছে। যখন হৃদপিন্ড তার আশেপাশের স্নায়ু থেকে সঠিক ভাবে সিগন্যাল গ্রহন করতে ব্যর্থ হয় তখন হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহে ঝামেলা হয়ে যায়। এই সমস্যাটাকেই ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় হার্ট ব্লক। গ্রেটব্যাচ এই হার্টব্লক সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজছিলেন। হার্টের মাংসপেশী স্টিম্যুলেট করার জন্য অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বড় এবং cumbersome যন্ত্র ব্যবহার করতেন। গ্রেটব্যাচ চাচ্ছিলেন ছোট একটা ডিভাইস প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই কাজ সম্পাদন করতে।

১৯৫৮ সাল। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে্র গবেষণাগারে বসে গ্রেটব্যাচ সাহেব অসসিলেটর তৈরী করছেন যেটা দিয়ে তিনি পশু-পক্ষীর হৃদ-স্পন্দন শুনতে পাবেন। ভূলক্রমে তিনি একটা ভূল ট্রানজিস্টর বসিয়ে ফেললেন তার যন্ত্রে। একসময় ভূলটা তার নজরে এলো। কিন্তু গ্রেটব্যাচের আগ্রহ বেড়ে গেলো। তিনি দেখতে চাইলেন কি হয়! তিনি আশা করেন নাই যে অসসিলেটর টা কাজ করবে। তবু সুইচ চেপে অন করলেন। তিনি পরিচিত একধরণের ছন্দবদ্ধ নাড়ী স্পন্দন (রাইমিক পালসিং সাইন্ড) শুনতে পেলেন। এটা আর কিছুই না। একদম হৃদস্পন্দনের শব্দ বলে মনে হলো।

গ্রেটব্যাচের আবিষ্কার এখন পেসমেকার নামে পরিচিত। নব উদ্ভাবিত যন্ত্র নিয়ে গ্রেটব্যাচ পানীদেহের উপর ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালালেন। ১৯৬০ সালে প্রথম মানব দেহে পেসমেকার ইমপ্লান্ট করা হয়।

আজকের লেখায় একাধিক ইংরেজী শব্দ বসিয়ে ফেলেছি। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। সাতকাহনে সমরেশ মজুমদার এক জায়গায় এটা নিয়ে কি লিখেচ্ছেন জানেন, “বাঙালীর কাছে ইংরেজী বলে যতটা সুবিধা পাওয়া যায়, ইংরেজের কাছে ততটা যায় না।” আমি তো বাঙালী, সুবিধা আমি পেতেই পারি। দুঃখপ্রকাশের কি আছে!

Level 2

আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস