
যে ছেলেটা ঠিকমত পরতেই পারতোনা। স্কুল থেকে থেকে যাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো সে বানালো আধুনিক বাল্ব। হাজারের ও বেশি পেটেন্ট আজ তার নামে। তিনি হচ্ছেন টমাস আলভা এডিশন। ৬ থেকে ৭ বছর বয়সে তাকে স্কুল এ ভর্তি করা হয়। কিন্তু ৩ মাস যেতে না যেতেই স্কুল থেকে তার মাকে বলা হয় আপনার ছেলে মানুষিক ভাবে পিছিয়ে আছে। ও স্কুলে পড়ার যোগ্যই নয়। ওকে আর স্কুলে পাঠাবেন না। স্কুল থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার মা নেন্সি এডিশন জানতেন যে তার ছেলে বোকা নয়। তাই ছেলেকে তিনি ভরসা দিয়ে বলেছিলেন তুমি পারবে। নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন ছেলের পড়াশুনার ভার। আর সেই ভরসাই জন্ম দিল ইতিহাসের এক বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিশন।
টমাস আলভা এডিশন ১৮৪৭ সালে ১১ই ফেব্রুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর মিলানে জন্ম গ্রহন করেন। এবং মিশিগানের পোর্ট হুরনে বড় হন। তার বাবার নাম স্যামুয়েল এডিশন ও মায়ের নাম ন্যান্সি এডিশন। তাঁদের ৭ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তান ছিলেন এডিশন। এডিশনের বাবা স্যামুয়েল ছিলেন কানাডা থেকে নির্বাসিত একজন রাজনৈতিক কর্মী। স্কুল শিক্ষিকা মায়ের প্রভাব অনেক বেশি ছিল এডিশনের প্রতি।
অল্প বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছিলেন এডিশন। বড় হতে হতে এক রকম বধির হয়ে যান তিনি।
এডিশনের স্কুল জীবন ৩ মাসের বেশি ছিলনা। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। স্কুলের পড়াশুনা তার কাছে একঘীয়েমী মনে হতো। পড়াশুনায় কোন মনোযোগ নেই। শিক্ষকদেড় অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধও হতেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। একদিন সে স্কুল থেকে বাড়িতে আসার সময় একটি চিঠি নিয়ে আসে এবং সে তার মা কে দিয়ে বলে মা এটি স্কুল থেকে দিয়েছে। তার মা চিঠিটি পড়ে এবং সে জিজ্ঞাসা করলে তার মা তাকে হাসতে হাসতে বলে তোমার স্যার লিখেছে আপনার ছেলে পড়াশুনায় খুবই ভালো। আমরা মনে করি যে তার পড়াশুনা আরও ভালো জায়গায় হওয়া উচিৎ। তাই সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি তাকে বাড়ি থেকে পড়ান। এটা শোনার পড়ে এডিশন খুব খুশি হন। তার মা তাকে বাসায় পড়ানো শুরু করেন এবং এডিশন মন দিয়ে পরতে থাকেন। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বই পড়ে ফেলেন তিনি।
বাবা মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন বাড়ীর কাছে পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ করার। হকার হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর একসময় তিনি জানতে পারলেন একটি ছোটো ছাপাখানার যন্ত্র কমদামে বিক্রি হবে। তিনি যে সামান্য অর্থ জমিয়ে ছিলেন তা দিয়েই তিনি ছাপাখানার যন্ত্র কিনে ফেলেন। এডিশন নিজেই 'হেড়াল্ড ' নামের ছোট একটি পত্রিকা বের করা শুরু করেন। একদম নতুন তরতাজা খবর থাকায় ট্রেন যাত্রীরা এডিশনের পত্রিকা পড়া শুরু করেন। সংবাদ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি একাই করতেন। অল্প দিনেই তার কাগজের বিক্রি সংখ্যা বৃদ্ধি পেলো। লাভ হোলো ১০০ ডলার।
এরপর তিনি চলে এলেন নিউইয়র্কে। গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানি টেলিগ্রাফের জন্য এক ধরনের যন্ত্র তৈরি করত যার ফিতার উপর সংবাদ লেখা হতো। এ সময় তার মনে হল এর থেকেও আরও উন্নত যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। তিনি উদ্ভাবন করলেন এক নতুন যন্ত্র। যা আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং উৎপাদন ব্যয় ও কম। তিনি এটি নিয়ে গেলেন কোম্পানির মালিকের নিকট। মালিক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কতো দামে যন্ত্রটি বিক্রি করবেন। এডিশন তাকে বললেন যদিও ৫০০০ ডলার বেশি হয় এবং ৩০০০ ডলার কম হয় তবে কোম্পানি স্থির করুক তারা কি দামে যন্ত্রটি কিনবে। কোম্পানির মালিক এডিশনকে ৪০০০০ ডলার দিয়ে বললেন আশাকরি আপনাকে আমরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। এডিশন তো খুব খুশি হলেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই এডিশন প্রায় ১০০ টির বেশি নতুন আবিস্কার করে তার পেটেন্ট নিলেন। এগুলো বিক্রি করে পেলেন প্রচুর অর্থ।
তিনি বৈদ্যুতিক বাতি, গ্রামোফোন এবং মোশন পিকচার ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। তিনি টেলিগ্রাফ এবং টেলিফোনের উন্নতির জন্যও অবদান রেখেছেন। এডিশন তার ৮৪ বছরের জীবনে মোট ১০৯৩ টি পেটেণ্ট অর্জন করেছিলেন, যা তার অসাধারন উদ্ভাবনী প্রতিভার প্রমাণ।
টমাস আলভা এডিশন ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান।
আমি ঘুটনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 সপ্তাহ 5 দিন যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার লিখতে ভালো লাগে।