
বাংলার গ্রাম, বন্দর বা শহরে ছোট্ট একটি গাছ প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়, যার নাম তুলসী (Ocimum sanctum বা Holy Basil)। আকারে ছোট হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি কিংবা লোকজ চিকিৎসায় তুলসীকে ‘মহৌষধি’ বলা হয়। বিশেষত হাঁচি, কাশি, সর্দি-জ্বরসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় তুলসী অদ্বিতীয়। তুলসীর পাতা, ফুল, বীজ এমনকি শিকড় পর্যন্ত সবকিছুতেই আছে ঔষধি গুণ।
গাছপালার পরিমাণ কমে যাওয়ায় শহুরে জীবনে আজ সবুজের দেখা পাওয়া বেশ কঠিন। কংক্রিটের দালানকোঠায় ঘেরা জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া এনে দিতে পারে ছাদের টবে চাষকৃত গাছপালা। বর্তমানে নগর কৃষি বা ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাদে শুধু শাকসবজি নয়, তুলসীর মতো ঔষধি গাছও অতিসহজে বিশেষ যত্ন ছাড়ােই চাষ করা যায়। তুলসীকে বলা হয় ভেষজ গাছের রাণী। ছোট্ট একটি গাছ হলেও এর গুণ অপরিসীম। বিশেষতঃ হাঁচি, কাশি, সর্দি, জ্বরের মতো সমস্যায় তুলসীর বিকল্প নেই। ছাদে টবে তুলসী চাষ করলে পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন উপকার হয়, তেমনি এটি বাড়ির পরিবেশকেও করে তোলে অক্সিজেনের আধার, মনোরম ও প্রশান্তিময়।
তুলসী দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনপ্রিয় ভেষজ গাছ। আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, লোকজ চিকিৎসা এবং আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত যে তুলসীর প্রতিটি অংশেই রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণ। তুলসীতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ এবং নানা ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। তুলসীর পাতায় ইউজেনল, ক্যারিওফাইলিন, লিনালুল ইত্যাদি তেল থাকে, যা প্রদাহ কমায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এছাড়া ভিটামিন এ, সি, কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামও সমৃদ্ধভাবে পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং হাঁচি-কাশির মতো সমস্যায় দ্রুত আরাম দেয়। শুধু স্বাস্থ্য নয়, তুলসী মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়।
তুলসী হাজার বছরের পুরোনো ভেষজ। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই এটি ধর্মীয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হিন্দুধর্মে তুলসীকে পবিত্র গাছ হিসেবে মানা হয় এবং পূজায় ব্যবহার করা হয়। অনেক ঘরে তুলসীর মঞ্চ তৈরি করে গাছটি প্রতিদিন পূজা করা হয়। শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এটি মানব জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ।
শরীরের সাধারণ অসুখগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হাঁচি, কাশি ও সর্দি। আবহাওয়া পরিবর্তন, ধুলা, ঠান্ডা বাতাস কিংবা ভাইরাসের সংক্রমণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। তুলসী এসব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, তুলসী শরীরের শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
তুলসী শুধু হাঁচি-কাশির মহাঔষধ নয়, আরও বহু রোগ নিরাময়ে কার্যকর। যেমনঃ
তুলসীকে নানা ভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় তুলসী খুব সহজে জন্মায়। সামান্য মাটিতে বা টবে চাষ করা যায়। নিয়মিত পানি দিলেই তুলসী গাছ ভালো থাকে। পাতা শুকিয়ে এয়ারটাইট বোতলে সংরক্ষণ করলে মাসের পর মাস ব্যবহার করা যায়।
টবে তুলসী চাষ করতে খুব বেশি উপকরণ লাগে না। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হলোঃ
এই অনুপাতে মাটি মিশিয়ে টবে ভরতে হবে। চাইলে সামান্য হাড়গুঁড়া বা ছাইও মেশানো যায়।
যদিও তুলসী গাছ খুব শক্তিশালী, তবুও কিছু রোগ-বালাই হতে পারে।
ছাদে টবে তুলসী চাষ শুধু একটি শখ নয়, এটি একটি জীবনধারা। ছোট্ট এই গাছের ভেতরে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবেশ রক্ষার অনন্য রহস্য। আজকের ব্যস্ত ও দূষিত শহুরে জীবনে ঘরে একটি তুলসী গাছ মানে হলো প্রাকৃতিক ফার্মেসি। প্রতিদিনের জীবনে যখন নানা ছোটখাটো অসুখে ভুগি, তখন তুলসীর পাতাই হতে পারে প্রথম সমাধান। তাই প্রতিটি ছাদে, প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি তুলসী গাছ লাগানো উচিত।
আমি ওবায়দুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একজন ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করছি। ক্লাইমেট চেঞ্জ, অ্যাডাপ্টেশন, মিটিগেশন ও রেজিলিয়েন্স বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ। পিএইচডি ডিগ্রিধারী হিসেবে গবেষণা, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, নলেজ ম্যানেজমেন্ট এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।