ছাদ বাগান – পুষ্টি ও অক্সিজেনের যোগানদার

ভবনের ছাদের খালি যায়গায় টব, ড্রাম বা বিশেষ ব্যবস্থায় মাটি এনে তাতে শাক-সবজি, ফল-মূল, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগিয়ে বাগান করাকে ছাদ বাগান বলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত মানুষের জন্য ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র তৈরী করার জন্য দিন দিন চাষাবাদের জমি কমে যাচ্ছে এবং গাছপালা ও কমে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গায় দালান বা বহুতল ভবন নির্মান করার ফলে খোলা জায়গার পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুষ্টি ও অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ছাদ বাগান একটি আধুনিক এবং কার্যকর সমাধান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছাদ বাগান শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং পারিবারিক পুষ্টি, পরিবেশ, অর্থনীতি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ছাদ বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

ছাদ বাগান শুরু করার আগে কিছু মৌলিক জিনিস প্রস্তুত রাখতে হবেঃ

  1. গাছের জন্য টব বা কন্টেইনারঃ বিভিন্ন আকারের টব বা পাত্র অথবা বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাটি সংরক্ষণাগার।
  2. মাটি ও সারঃ ভালো মানের বাগানের মাটি, কেঁচো সার বা জৈব সার।
  3. বীজ বা চারাঃ সবজি, ফল, ফুল ইত্যাদির বীজ, কলম বা চারা।
  4. সেচের ব্যবস্থাঃ পানি দেওয়ার জন্য হ্যান্ড পাম্প, পাইপ বা জলাধার।

ছাদ বাগান করার ধাপ

  1. ছাদের প্রস্তুতি
    ছাদে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা এবং কাঠামো ভার বহন করতে সক্ষম কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
  2. পাত্র ও মাটির ব্যবস্থা
    টব বা কন্টেইনারে মাটি এবং সার মিশিয়ে গাছ লাগানোর জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
  3. ছাদের উপযোগী সবজি, ফল, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছ নির্বাচন
    ছাদে গাছ লাগানোর সময় কম জায়গায় অধিক ফল উৎপাদনকারী এবং কম যত্নের গাছ বেছে হবে। যেমন-বেগুন, টমেটো, ঢেড়স, শসা, করলা, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, মরিচ, লাউ, তুলসি, পেয়ারা, লেবু, আম, কলা, ড্রাগনফল, সজনা, থানকুনি, নিম, গোলাপ ফুল, অর্কিড, বনসাই, নয়নতারা, এলোভেরা, বিলাতি ধনিয়া, পাতাবাহার, ঝুমকো জবা, ইত্যাদি।
  4. বীজ বা চারা লাগানো
    বীজ বা চারা সরাসরি টবের মাটিতে লাগাতে হবে। প্রতিটি গাছের জন্য পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  5. সেচ ও আগাছা পরিষ্কার
    নিয়মিত সেচ প্রদান, প্রয়োজনে সার ব্যবহার করা এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  6. ফসল তোলা
    উপযুক্ত সময়ে ফল, সবজি বা ফুল সংগ্রহ করতে হবে।

ছাদ বাগানের সুবিধা

পরিবেশগত সুবিধা

ছাদ বাগান ছাদের ঠিক নীচে যারা বসবাস করে, তাদের অতিরিক্ত গরম থেকে স্বস্তি দেয়। সূর্য্যের আলো ছাদে গাছ থাকার কারণে সরাসরি ছাদে পড়তে পারেনা, ফলে ছাদ অনেকটাই ঠান্ডা থাকে এবং ছাদের নীচের মানুষগুলোকে স্বস্তিতে রাখে। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া এটি শহরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে, কারণ গাছের ছায়া এবং মাটির উপরের শীতল পরিসর ভবনের ভেতরে তাপ প্রবেশ কমিয়ে দেয়।

অর্থনৈতিক সুবিধা

নিজের ছাদে শাক-সবজি, ফল জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদন করে বিষ মুক্ত শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি ভক্ষণ করে বাজারের খরচ অনেকটাই কমানো যায়। উৎপাদিত ফসলের কিছু অংশ প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করে পারিবারিক সম্পর্ক সুন্দর ও সুদৃঢ় করা যায়। এছাড়া নিজে উৎপাদিত ফসল নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর।

মানসিক সুবিধা

ফাঁকা ছাদের চেয়ে গাছপালাযুক্ত ছাদে সময় কাটালে মানুষের মানসিক চাপ কমতে পারে। ছাদ বাগান অবসর সময় কাটানোর একটি আনন্দদায়ক উপায় হতে পারে। শিশুদের জন্য এটি মাটির কাছে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও শেখার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

ছাদ বাগানের জন্য টিপস

  1. সূর্যের আলো ভালোভাবে পাওয়া যায় এমন স্থানে টব স্থাপন করতে হবে।
  2. জৈব পদার্থ যুক্ত پলি দোঁয়াস মাটি ব্যবহার করতে হবে।
  3. বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেচের জন্য ব্যবহার করা উত্তম।
  4. কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার

ছাদ বাগান কেবল শখের বাগান নয় বরং এটি বাড়ী ও আশেপাশের পরিবেশ রক্ষা, নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এক অমূল্য অবদান রাখতে পারে। এটি একটি ছোট খালি জায়গাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার একটি উত্তম পন্থা। যদি প্রতিটি বাড়ির ছাদ বাগানে পরিপূর্ণ করা যায় তবে শহর কিংবা গ্রাম সব যায়গাই সবুজ, স্বাস্থ্যকর এবং সুখী হয়ে উঠবে।

Level 1

আমি ওবায়দুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি একজন ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করছি। ক্লাইমেট চেঞ্জ, অ্যাডাপ্টেশন, মিটিগেশন ও রেজিলিয়েন্স বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ। পিএইচডি ডিগ্রিধারী হিসেবে গবেষণা, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, নলেজ ম্যানেজমেন্ট এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস