ফোনের বিবর্তন ইতিহাস আদিকাল থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত

প্রকাশিত
জোসস করেছেন

ফোনের ইতিহাস শুরু হয় ১৯শ শতকে, যখন মানুষ দূরবর্তী অবস্থান থেকে সরাসরি কথা বলার প্রযুক্তি আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে ১৮৭৬ সালে, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম কার্যকর টেলিফোন তৈরি করেন। তাঁর তৈরি টেলিফোন ছিল তার-নির্ভর, যার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত রূপান্তরিত হয়ে কণ্ঠস্বরের মতো শব্দ তৈরি করত।

 

১৮৭৬-১৯০০: টেলিফোনের জন্ম ও প্রাথমিক বিকাশ

প্রথমদিকে ফোন শুধু বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ধনীদের জন্য সীমিত ছিল। তখন ফোনে সংযোগ স্থাপনের জন্য ম্যানুয়াল সুইচবোর্ড ব্যবহার হতো, যেখানে অপারেটরদের মাধ্যমে কল সংযোগ করা হতো। ধীরে ধীরে শহরগুলোতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ তৈরি হয়, যা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যোগাযোগ সহজ করে তোলে।

 

১৯০০-১৯৪০: স্বয়ংক্রিয় এক্সচেঞ্জ এবং গ্রামীণ সম্প্রসারণ

১৯০০ সালের দিকে স্বয়ংক্রিয় এক্সচেঞ্জ উদ্ভাবন হয়, যা অপারেটরের প্রয়োজন কমিয়ে আনে। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ফোনের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়েই ফোনের ডিজাইনও আরও ব্যবহারবান্ধব হয়, রোটারি ডায়াল যুক্ত ফোন জনপ্রিয়তা পায়, যা ব্যবহারকারীকে নিজেই নম্বর ডায়াল করার সুবিধা দেয়।

 

১৯৪0-১৯৮০: মোবাইল ফোনের জন্মের প্রেক্ষাপট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেডিও টেলিফোন প্রযুক্তি বিকশিত হয়, যা সৈনিকদের মুভিং অবস্থায় যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়। এই প্রযুক্তিই পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম “কার ফোন” চালু হয়, যা বড় ও ভারী হলেও গাড়িতে বসেই কথা বলা সম্ভব করেছিল।

 

১৯৭৩: প্রথম হাতেগোণা মোবাইল ফোন

১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল, মটোরোলা ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার ইতিহাসের প্রথম হাতে ধরা মোবাইল ফোনে কল করেন। তাঁর তৈরি Motorola DynaTAC 8000X ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা, ১ কেজির বেশি ওজনের, আর একবার চার্জে ২০ মিনিট কথা বলা যেত। এটি মানুষের হাতে মোবাইল যোগাযোগের সম্ভাবনা প্রথমবারের মতো বাস্তবে এনে দেয়।

 

১৯৮০-১৯৯০: ১ম প্রজন্মের (1G) মোবাইল ফোন

১৯৮৩ সালে Motorola DynaTAC বাজারে আসে, শুরু হয় ১ম প্রজন্মের অ্যানালগ মোবাইল ফোনের যুগ। তখন ফোনগুলো বড়, ব্যাটারির চার্জ অল্প সময়ের জন্য থাকত, আর কলের মান ছিল সীমিত। কিন্তু ব্যবসায়ী ও ধনীদের কাছে এই ফোন ছিল স্ট্যাটাস সিম্বল।

 

১৯৯০-২০০০: ২য় প্রজন্মের (2G) ডিজিটাল বিপ্লব

১৯৯১ সালে ফিনল্যান্ডে প্রথম 2G নেটওয়ার্ক চালু হয় GSM প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা কলের মান বাড়ায়, টেক্সট মেসেজিং (SMS) শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক রোমিং সম্ভব করে। এই সময় ফোনের আকার ছোট হতে শুরু করে, যেমন Nokia 3310, যা কম দামে ও টেকসই ফোন হিসেবে বিশ্বে জনপ্রিয় হয়।

 

২০০০-২০০৭: ২.৫G/৩G এবং মাল্টিমিডিয়া

২.৫G প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মোবাইলে ইন্টারনেট (GPRS/EDGE) আসে, আর ৩G প্রযুক্তি ২০০১ সালে চালু হয়, যা ভিডিও কল, দ্রুত ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল ব্যবহার সহজ করে। ফোনে ক্যামেরা, MP3 প্লেয়ার, রঙিন ডিসপ্লে যোগ হয়। Sony Ericsson T68i, Nokia 6600-এর মতো ফোন তখন বাজার মাতায়।

 

২০০৭: স্মার্টফোনের নতুন দিগন্ত

২০০৭ সালে অ্যাপল প্রথম iPhone বাজারে আনে, যা কিপ্যাড ছাড়া মাল্টিটাচ স্ক্রিন, ওয়েব ব্রাউজিং, মিউজিক, ভিডিও ও অ্যাপের সুবিধা দেয়। এটি মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। এরপর গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসে, Samsung, HTC, LG-এর মতো কোম্পানি স্মার্টফোনের দৌড়ে নামে। স্মার্টফোন একে একে টাচস্ক্রিন, মাল্টিকোর প্রসেসর, হাই-রেজুলিউশন ডিসপ্লে, অ্যাপ স্টোর ইকোসিস্টেম, এবং শক্তিশালী ক্যামেরা পেয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

 

২০১0-এর দশক: স্মার্টফোনের প্রসার ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা

২০১০ সালের পর থেকে স্মার্টফোনের দাম কমে, ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়, ফলে উন্নয়নশীল দেশেও ফোন ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বড় স্ক্রিন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আইডি, AI, ক্লাউড স্টোরেজ, 4G/5G ইন্টারনেট সংযোগ স্মার্টফোনকে এক আধুনিক কম্পিউটারের সমকক্ষ করে তোলে। ফোনে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, অনলাইন কেনাকাটা – সবই এখন হাতের মুঠোয়।

 

২০২০ ও তারপর: ৫G, ফোল্ডেবল ফোন, IoT সংযোগ

৫G প্রযুক্তি মোবাইলে আল্ট্রাফাস্ট ইন্টারনেটের যুগ শুরু করেছে। একসঙ্গে হাজার হাজার ডিভাইস সংযুক্ত থাকা সম্ভব হচ্ছে, যা স্মার্ট হোম, স্মার্ট কার, স্মার্ট সিটি গড়তে সাহায্য করছে। Samsung Galaxy Fold, Huawei Mate X-এর মতো ফোল্ডেবল ফোন প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। AI, Augmented Reality (AR), Virtual Reality (VR) মোবাইল অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করছে।

 

উপসংহার

টেলিফোন থেকে স্মার্টফোন – এই দীর্ঘ যাত্রা আমাদের যোগাযোগকে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছে। যেখানে এক সময়ে মানুষের জন্য কেবল কথা বলাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য, আজ সেটি হয়ে গেছে আমাদের কাজ, বিনোদন, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সঙ্গী।

Level 1

আমি তানবীন শুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 সপ্তাহ 5 দিন যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস