কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI (Artificial Intelligence) হলো এক ধরনের প্রযুক্তি যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণে যন্ত্র বা সফটওয়্যারকে চিন্তা করতে, সিদ্ধান্ত নিতে ও শেখার ক্ষমতা প্রদান করে। এটি বর্তমানে প্রযুক্তির জগতে একটি আলোচিত ও প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষেত্র, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।
AI মূলত এমন একটি প্রযুক্তি যা কম্পিউটার বা যন্ত্রকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করে যাতে তারা তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে, সমস্যা সমাধান করতে পারে, এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। মানুষের মতো চিন্তা করার এই ক্ষমতা একে শুধু একটি সফটওয়্যার না, বরং “চিন্তাশীল” প্রযুক্তিতে পরিণত করেছে।
AI সাধারণত দুইভাবে বিভক্ত:
১. Narrow AI (সীমিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) – যা নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে, যেমন ভয়েস রিকগনিশন (Siri, Google Assistant), ইমেইল স্প্যাম ফিল্টার ইত্যাদি।
২. General AI (সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) – যা মানব বুদ্ধিমত্তার মতো বহু জটিল কাজ একসাথে করতে পারে। তবে এটি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।
১. স্বাস্থ্যসেবা: AI রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। এক্স-রে বা MRI রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে চিকিৎসককে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
২. শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের শেখার ধরন অনুযায়ী কনটেন্ট সাজিয়ে দেয়, এবং শিক্ষককে ছাত্রদের অগ্রগতি বিশ্লেষণের সুযোগ করে দেয়।
৩. ব্যবসা ও বিপণন: গ্রাহকের আচরণ বিশ্লেষণ করে কোম্পানিকে কাস্টমার-সেন্ট্রিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
৪. পরিবহন: স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, যেমন Tesla-তে ব্যবহৃত হচ্ছে AI প্রযুক্তি।
৫. বিনোদন ও সোশ্যাল মিডিয়া: Netflix, YouTube, TikTok-এর মতো প্ল্যাটফর্ম AI ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট সাজায়।
দ্রুত ও নির্ভুল বিশ্লেষণ: AI বিপুল পরিমাণ ডেটা দ্রুত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
মানব-শ্রমের বিকল্প: পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো AI সহজেই করতে পারে, ফলে মানুষ সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দিতে পারে।
২৪/৭ কার্যক্ষমতা: AI-চালিত সিস্টেম নিরবিচারে কাজ করতে পারে ক্লান্তিহীনভাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার: মহাকাশ গবেষণা, খনি, বা বিপজ্জনক শিল্পকারখানায় AI ব্যবহার করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যায়।
যদিও AI অনেক সুবিধা দেয়, তবে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে:
চাকরি হারানোর আশঙ্কা: অনেক পেশা, যেমন কাস্টমার সার্ভিস বা ডেটা এন্ট্রি, AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে।
নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন: AI যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তার দায় কার? AI যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে এর প্রভাব সমাজে কেমন হবে?
ডেটা নিরাপত্তা: AI নির্ভর করে বিশাল পরিমাণ ডেটার ওপর। এই ডেটা যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
AI প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি আরও স্মার্ট হবে এবং আরও বেশি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, AI চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এর জন্য প্রয়োজন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সঠিক আইন-কানুন এবং নৈতিকতা মেনে AI-এর ব্যবহার।
AI একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি, যা মানুষের জীবনকে আরও সহজ, দ্রুত ও কার্যকর করতে সহায়তা করছে। তবে এর সুফল পেতে হলে আমাদের চাহিদা ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর মধ্যেই AI-এর প্রকৃত সার্থকতা।
আমি রাকিবুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 মাস 2 সপ্তাহ যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।