ভাসমান উইন্ড টারবাইন

Level 1
02, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া, বগুড়া

ভাসমান উইন্ড টারবাইন: নবায়নযোগ্য শক্তির ভবিষ্যৎ

 

ভূমিকা:

 

জ্বালানির সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। সৌর ও বায়ু শক্তি এখন কেবল বিকল্প নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বায়ু শক্তির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে “ভাসমান উইন্ড টারবাইন” বা “Floating Wind Turbine” প্রযুক্তি, যা সমুদ্রের গভীরে স্থাপন করা হয় এবং স্থলভাগের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে শক্তি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

 

 

-

 

উইন্ড টারবাইন কী?

 

উইন্ড টারবাইন হলো এক ধরনের যন্ত্র যা বাতাসের গতিশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে এবং পরে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। এটি মূলত তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত — ব্লেড, রটার এবং জেনারেটর। বাতাসের কারণে ব্লেড ঘোরে, যা রটরকে চালিত করে এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত জেনারেটর বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

 

স্থলভাগে এবং উপকূলে স্থাপন করা উইন্ড টারবাইন প্রচলিত হলেও, এগুলোর স্থাপনা নির্দিষ্ট গভীরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে যেখানে স্থায়ী ভিত্তি তৈরি করা কঠিন, সেখানে “ভাসমান উইন্ড টারবাইন” একটি কার্যকর সমাধান হয়ে উঠেছে।

 

 

-

 

ভাসমান উইন্ড টারবাইন কী?

 

ভাসমান উইন্ড টারবাইন এমন একটি টেকনোলজি, যেখানে উইন্ড টারবাইনকে একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্মে স্থাপন করা হয় এবং সেটিকে নোঙ্গর করে সমুদ্রের গভীর পানিতে রাখা হয়। এটি সাধারণত ৬০ মিটার বা তার চেয়ে গভীর পানিতে স্থাপন করা হয় যেখানে প্রচলিত স্থির ভিত্তির টারবাইন স্থাপন করা সম্ভব নয়।

 

এই প্রযুক্তি টারবাইনের ভিত্তি (foundation) হিসেবে ভাসমান কাঠামো ব্যবহার করে, যা পানির উপর ভাসে এবং বিশেষভাবে নোঙর বা মোড়িং সিস্টেমের মাধ্যমে সমুদ্রতলে বাঁধা থাকে। এর ফলে এটি সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে পারে।

 

 

-

 

প্রধান উপাদান ও প্রযুক্তি:

 

ভাসমান উইন্ড টারবাইনের মূলত তিন ধরনের ভাসমান ভিত্তি দেখা যায়:

 

1. সেমি-সাবমারসিবল (Semi-submersible): এই ধরনের ভিত্তি পানির ওপরে ভাসমান থাকে এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পানির নিচে কিছুটা অংশ ডুবে থাকে। এটি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ।

 

 

2. স্পার বয়া (Spar-buoy): এটি একটি লম্বা এবং ভারী সিলিন্ডার আকৃতির কাঠামো, যার একটি বড় অংশ পানির নিচে ডুবে থাকে। এটি গভীর পানির জন্য উপযুক্ত।

 

 

3. টেনশন লেগ প্ল্যাটফর্ম (Tension-leg platform): এই ধরনের ভিত্তি পানির উপর ভাসে এবং টান টান তারের মাধ্যমে সমুদ্রতলে বাঁধা থাকে, যা কম দুলুনি এবং উচ্চ স্থায়িত্ব প্রদান করে।

 

 

 

 

-

 

কেন ভাসমান উইন্ড টারবাইন গুরুত্বপূর্ণ?

 

১. স্থানের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম

 

স্থলভাগ বা উপকূলীয় অঞ্চলে জায়গার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেখানে একাধিক প্রকল্প একসাথে বাস্তবায়ন কঠিন। কিন্তু সমুদ্রের বিশাল এলাকায়, বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে, প্রচুর জায়গা পাওয়া যায় যেখানে ভাসমান টারবাইন স্থাপন করা সম্ভব।

 

২. উচ্চ বায়ু গতি

 

গভীর সমুদ্রে বায়ুর গতি বেশি এবং স্থিতিশীল থাকে, যা অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে, ভাসমান টারবাইন থেকে অধিক কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।

 

৩. কম সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব

 

স্থলভাগে স্থাপন করা টারবাইন মানুষের বসবাস, কৃষি বা প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু সমুদ্রে, বিশেষ করে গভীর অঞ্চলে এই ধরনের সামাজিক বা পরিবেশগত বিরোধ তুলনামূলকভাবে কম।

 

৪. বিস্তৃত সম্ভাবনা

 

বিশ্বের অনেক দেশই উপকূলবর্তী, কিন্তু তাদের স্থলভাগ সীমিত। তাদের জন্য ভাসমান উইন্ড টারবাইন একটি বড় সম্ভাবনা, যেমন জাপান, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি।

 

 

-

 

চ্যালেঞ্জ:

 

যদিও সম্ভাবনা অনেক, ভাসমান উইন্ড টারবাইন প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

 

উচ্চ খরচ: এর নির্মাণ, পরিবহন ও স্থাপন খরচ অনেক বেশি। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই খরচ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।

 

রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতা: সমুদ্রের প্রতিকূল পরিবেশে যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল।

 

প্রযুক্তিগত জটিলতা: ভাসমান কাঠামো এবং নোঙরের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন।

 

বিদ্যুৎ পরিবহন সমস্যা: সমুদ্র থেকে স্থলভাগে বিদ্যুৎ পরিবহন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গভীর সমুদ্র থেকে।

 

 

 

-

 

বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি:

 

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ ভাসমান উইন্ড টারবাইনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প:

 

হায়উইন্ড স্কটল্যান্ড (Hywind Scotland): এটি বিশ্বের প্রথম ভাসমান উইন্ড ফার্ম, যেটি ২০১৭ সালে চালু হয় এবং ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

 

ফ্রান্স, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রকল্পগুলো: এসব দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে গিগাওয়াট-পর্যায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

 

জাপান ও চীন: ভূমিকম্পপ্রবণ ও গভীর উপকূলীয় অঞ্চল থাকায় তারা ভাসমান টারবাইনের দিকে ঝুঁকছে।

 

 

 

-

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট :

 

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগরে অফশোর উইন্ড টারবাইনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ভাসমান প্রযুক্তি এখনো বাস্তবায়নের পথে নেই, ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির চাহিদা পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সরকারের নবায়নযোগ্য শক্তির নীতিমালায় এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

 

 

-

 

উপসংহার :

 

ভাসমান উইন্ড টারবাইন হলো নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব। এটি কেবল কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে নয়, বরং ভবিষ্যতের শক্তি নিরাপত্তায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটলে এটি সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধান হয়ে উঠবে। এখনই সময় ভাসমান উইন্ড টারবাইনকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করার — একটি সবুজ ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য।

Level 1

আমি মোঃ সজীব ইসতিয়াক। 02, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া, বগুড়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 সপ্তাহ 3 দিন যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস