কার কার অভিনয় করতে ভালো লাগে? আসেন দেখি অভিনয়ে কেমন ক্যারিয়ার

ছোটবেলায় কোন নায়ক বা নায়িকাকে নকল করে তার মত হবার চেষ্টা কম বেশি আমাদের প্রায় সবারই ছিল। ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। অনেকের মনেই তাই বেশ ছোট বয়স থেকেই অভিনয় করার একটা সুপ্ত বাসনা তৈরি হয়। কিন্তু পরে, বিভিন্ন কারনে দেখা যায় সে ইচ্ছাটা আর পূরন হয় না। আবার অনেকেই ঠিক জানেন না, অভিনয়কে কি পেশা হিসাবে নেয়া সম্ভব কি না। নিলেই বা সেটা কীভাবে সম্ভব?

অভিনয় একটি শিল্প। অন্য সব শিল্পের মতোই এটিও আয়ত্তের জন্য অধ্যবসায় এবং চর্চার কোন বিকল্প নেই। তবে কেউ যদি মনে করেন অভিনয় করতে হলে খুব সুন্দর মুখশ্রী, লম্বা-চওড়া শরীর এসবের প্রয়োজন, সেটা ভুল। অভিনয়ের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হলো অবজারভেশন ক্ষমতা বাড়ানো। একজন মানুষ তখনই ভাল অভিনেতা যখন তিনি একজন ভাল দর্শক। দর্শক হিসেবে অবলোকন করার ক্ষমতা যত সূক্ষ্ম হবে, অভিনয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রায়ন তত সহজ এবং জীবন্ত হবে।

বাচন ভঙ্গি এবং উচ্চারনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অভিনয়ের জন্য। অনেকেই মনে করেন অভিনয়ের জন্য শুদ্ধ উচ্চারন চর্চার প্রয়োজন খুব একটা নেই, কিন্তু এটা ভুল কথা। যিনি একটি সংলাপ শুদ্ধ উচ্চারনে বলতে পারেন, তিনি সেটিকে ইচ্ছে মত পরিবর্তন করে প্রয়োজনের সময় অন্যভাবেও(যেমন- আঞ্চলিক টানে) বলার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু উচ্চারনে শুদ্ধতা সংলাপ প্রদানে আত্মবিশ্বাস এবং প্রানের সঞ্চার করে। উচ্চারন সংক্রান্ত দুর্বলতা দূর করতে অভ্যাসের বিকল্প নেই।

অভিনয় শেখার জন্য বাংলাদেশে তেমন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তবে অনেক পেশাদার থিয়েটার অভিনয়ের উপর কোর্স করাচ্ছে। এসব কোর্স শেষে সার্টিফিকেটও দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে গ্রুপগুলো এখান থেকেও সদস্য গ্রহন করে। মূলত এই কোর্সগুলো অভিনয় শেখার জন্য বেশ ভাল ভুমিকা রাখে।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক, নাট্যতত্ত্ব নিয়ে পড়ানো হয়। বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিষয়ে পড়ানো হয়। মোদ্দাকথা, অভিনয় সম্পর্কে হাতে কলমে শেখার কিছু জায়গা রয়েছে তবে সে সুযোগ মোটামুটি ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ।

বর্তমানে মিডিয়াতেও অভিনয়শিল্পীদের বেশ রমরমা অবস্থা যাচ্ছে। দিন দিন চ্যানেল সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে কাজের পরিমান। কিন্তু সেই হারে বাড়ছে না ভাল মানের অভিনেতা অভিনেত্রী। তাই, আপনার ভেতরেই যদি থাকে অভিনয়ের সুপ্ত বাসনা, দেখুন একবার চেষ্টা করে।

✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿

একজন অভিনয় শিল্পির দেয়া কিছু পরামর্শ তুলে ধরলাম..... হয়তো আপনাদের কাজে লাগবে (দুঃখিত অভিনয় শিল্পির নাম জানি না। তিনি যে ব্লগে লিখেছেন সেখানে কোন নাম দেয়া নেই। আমি কপি পেস্ট করেছি মাত্র)

এখন আসেন… আপনাদের শুটিং এর আগে এবং শুটিং চলাকালে অভিনয় সংক্রান্ত কিছু টিপস দেই । ভয় পাবেন না, বেশিরভাগ পয়েন্ট গুলো Google চাচার কাছ থেকে সংগ্রহ করা। আমি অল্প বিস্তর সংযোজন করেছি মাত্র।

✿✿শুটিং পূর্ব টিপসঃ

১। স্ক্রিপ্ট পড়ুনঃ অভিনয়ের সর্ব প্রথম স্টেপ হল আপনাকে স্ক্রিপ্ট মন দিয়ে পড়তে হবে। (মঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)।

২। ডিরেক্টরের সাথে কথা বলুনঃ ডিরেক্টরের সাথে চরিত্র নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। চরিত্রটি বুঝে নিন এবং ডিরেক্টর আপনার কাছ থেকে কি কি এক্সপেক্ট করছে তাও জেনে নিন।

৩। চরিত্র বিশ্লেষণঃ স্ক্রিপ্টের চরিত্রের নাম কি? সে কোথায় থাকে? কিভাবে কথা বলে? তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা কি? তার পোশাক কেমন? তার আচরণ কেমন? ইত্যাদি আদ্যোপান্ত সবকিছু চরিত্র সম্পর্কে বিশ্লেষণ করুন। প্রয়োজনে ডিরেক্টরকে বারংবার বিরক্ত করুন ।

৪। চরিত্র ধারণঃ চরিত্রটি নিজের মাঝে ধারণ করুন এবং লালন করুন। নিজেকে উক্ত চরিত্রে কল্পনা করুন। চরিত্রের চাহিদানুযায়ী কথা বলুন এবং পোশাক পরিধানের চেষ্টা করুন।

৫। লোকেশন ভ্রমণঃ সম্ভব হলে শুটিং স্পট ঘুরে আসুন শুটিং এর আগেই। এতে করে চরিত্র ধারণে সুবিধা হবে।

৬। কো-অ্যাক্টরদের সাথে সাক্ষাৎঃ শুটিং এর আগে যদি কো-অ্যাক্টরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে উপকৃত হবেন।

৭। প্রপস সম্পর্কে ধারণাঃ শুটিং এ কি প্রপস ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন। প্রয়োজনে সেই প্রপস নিয়ে রিহার্স করুন।

৮। রিহার্সেল বা প্রি-শুটিং: আমাদের দেশের পরিচালকেরা সাধারণত রিহার্সেল বা প্রি-শুটিং এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না (তারা বেশিরভাগই নিজেরে ‘কিছু একটা হয়ে গেছি’ টাইপ বলে মনে করে; আসলে কিছুই পারে না  )। অথচ ভাল অভিনয় এবং ভাল মেকিং এর জন্য রিহার্সেল / প্রি-শুটিং আবশ্যক। পরিচালক সে ধরণের ব্যবস্থা না রাখলে আপনাকে নিজে নিজেই রিহার্স করতে হবে। শুধু ডায়ালগ ডেলিভারি ই রিহার্স করবেন না, বডি মুভমেন্ট, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, ভয়েস এক্সপ্রেশন ইত্যাদি সব কিছু রিহার্স করবেন। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন প্র্যাকটিস করার জন্য আদর্শ হচ্ছে আয়নার ব্যবহার। সবচেয়ে ভাল হয় যদি বড় কোন আয়নার (মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখা যায় এমন) সামনে রিহার্স করেন। রিহার্সেলে নিজে সন্তুষ্ট হলে এবার নিজস্ব ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ডিং এর মাধ্যমে এক্সপ্রেশন চেক করুন। ক্যামেরাতেই রেকর্ড করতে হবে এমন কোন কথা নাই, আপনার কম-দামী ঝাপসা মোবাইলেও ভিডিও রেকর্ড করতে পারেন।

✿✿শুটিং সময়কালীন টিপসঃ

১। ডিরেক্টরকে শুনুনঃ ডিরেক্টর পুরো প্রোডাকশনের চিত্র জানেন। তাই তারা যা করতে বলেন তা বুঝেশুনেই বলেন। অতএব, ডিরেক্টরের সমালোচনা বা পরামর্শ গুরুত্বের সাথে নিন। তাদের সাথে কাজের সময় অযথা তর্ক করবেন না (মাইরও দিবার পারে ) । পরিচালকের কোন ডিসিশন আপনার কাছে ভুল মনে হলে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন…না শুনলে, চেপে যান (ডিরেক্টরের উপরে হোন্ডার মত আবার চাইপা বইসেন না, বলতে চাইছি চুপ কইরা যান ) ।

২। আপনি বিশেষ কেউ ননঃ শুটিং স্পটে নিজেকে বিশেষ কেউ ভাবা থেকে বিরত থাকুন। আপনি প্রধান চরিত্রে থাকলেও পুরো প্রোডাকশন টিমের এফোর্ট ছাড়া সিনেমাটি নিশ্চয়ই বানানো সম্ভব নয়। প্রোডাকশন টিমের সাথে যুক্ত ছোট-বড় সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করুন।

৩। কো-অ্যাক্টরের প্রতি মনোযোগঃ আপনি শুধু নিজের সংলাপ বলায় মনোযোগী হলে চলবে না, কো-অ্যাক্টরের প্রতিও মনোযোগী হন। যার সাথে অভিনয় করছেন তাকে সংলাপ শেষ করার সুযোগ দিতে হবে। নতুবা, ওভার ল্যাপিং হবে। এমন সব ধরণের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা কো-অ্যাক্টরকে বিরক্ত করে বা অস্বস্তিতে ফেলে। ( শুটিং এর সময় সহ-অভিনেতার সাথে টাংকি মারা নিষিদ্ধ । শুটিং এর পর ইচ্ছা হইলে টাংকি মারতেই পারেন)।

৪। ক্যামেরা এঙ্গেল এবং দূরত্বঃ বেশিরভাগ প্রফেশনাল ক্যামেরার কাজ সুনির্দিষ্ট হয় এবং এগুলো ডিটেইলসে করা হয়। যখন ক্লোজ শট নেয়া হয়, আপনার সামান্য নড়াচড়ার কারণে পুরো শট টাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওয়াইড শটের ক্ষেত্রে শরীর নড়াচড়ার জন্য আপনি তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীনতা পাবেন।

৫। বাস্তবিকভাবে সংলাপ বলুনঃ সাধারণভাবে যেভাবে কথা বলেন, সংলাপও ঠিক সেভাবেই বলবেন। মঞ্চের অভিনয় করতে গেলে জোরে কথা বলতে হয় কিন্তু ক্যামেরার সামনে সাধারণভাবেই কথা বলুন। ফিসফিস করে কথা বলার প্রয়োজন হলে তাই বলুন। সাউন্ড ডিপার্টমেন্ট আপনার ভয়েসের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নেবে।

৬। ক্যামেরা ফলো করবেন নাঃ নিজের মত অভিনয় করে যান। ক্যামেরা আপনাকে ফলো করবে, আপনি ক্যামেরাকে ফলো করবেন না। তবে, ডিরেক্টরের নির্দেশ থাকলে ক্যামেরা ফলো করতে পারেন।

৭। অভিনয় করবেন নাঃ ব্যাপারটা হল, আপনি অভিনয় করবেন ঠিকই। কিন্তু অভিনয় করছেন বলে যেন মনে না হয়। চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করুন।

৮। তাড়াহুড়ো করবেন নাঃ শুটিং এর সময় রিল্যাক্স থাকুন। তাড়াহুড়ো করবেন না। নইলে কাজ খারাপ হবে।

৯। এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণঃ ক্লোজ শটের সময় অতিরিক্ত চোখের পলক ফেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। আই-ভ্রু বেশি কুচকাবেন না । নিচের দিকে বেশি না তাকানোই ভাল। বেশি সমস্যা হলে কো-অ্যাক্টরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। ( এমনে চোখাচোখি করতে গিয়াই মনে হয় নায়ক-নায়িকা দের মধ্যে ইয়ে হয়ে যায়। তাই, সাবধান।

১০। মুখের পেশী শিথিলকরণঃ ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের সময় মুখের পেশী শিথিল রাখার চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব।

পরিশেষে…অভিনয়কে আগে ভালোবাসুন। এরপরই অভিনয়কে নিজের মাঝে ধারণ এবং লালন করতে পারবেন। পর্যবেক্ষণ শক্তি বাড়ান। আপনার চারপাশের মানুষ লক্ষ্য করুন। তারা কিভাবে কথা বলে, চলাফেরা করে, বিড়ি টানে, খাওয়া-দাওয়া করে, ঝগড়া করে, হাসে… তাদের মুদ্রা দোষ গুলোও খেয়াল করে দেখবেন। আর অভিনয়ের ক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হল… ভুল করেও অভিনয় করবেন না; BE NATURAL… । সবশেষে একটা পরামর্শ দিয়ে শেষ করি… আয়নাকে কখনোই কাছ ছাড়া করবেন না। এক্সপ্রেশন ইম্প্রুভ করার জন্য আয়নার বিকল্প আর কিছুই নাই।
✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿

[[[ হয়তো অনেক তথ্য অসম্পূর্ন; আশা করি আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে তা সুধরে দিবেন। ভালো লাগলে শেয়ার ও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করুন। আপনার বন্ধুকে ‘আমার লক্ষ্য’ সম্পর্কে বলুন। ]]]

******************************************* একটু লক্ষ্য করুন*************************************************************

আমাদের পোস্টের অনেক কন্টেন্ট বিভিন্ন ওয়েব সাইট, ব্লগ অথবা অন্যান্য উৎস হতে সংগ্রহ করা। আমাদের উদ্দেশ্য সকলের উপকার করা।

আমার লক্ষ্যের কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য নেই। এটি একটি অলাভজনক সংগঠন। শুধুমাত্র আপনাদের উৎসাহই আমাদের কাজের প্রেরণা।

এক্সপার্টস দের মূল্যবান উপদেশ সর্বোপরি সকলের সুচিন্তিত পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।

ফেসবুকে আমরাঃ https://www.facebook.com/amr.lokkho

ওয়েবে আমরাঃ http://amarlokkho.com/

 

আমার লক্ষ্য’ এর ক্যারিয়ার বিষয়ক অন্যান্য টিউনসঃ

রেডিও জকি (RJ) হবেন নাকি? আসুন দেখি একনজর > কিভাবে রেডিও জকি হওয়া যায়

আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান ? কি হবেন? অ্যাডভোকেট না বিচারক নাকি সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার ?

সাংবাদিক হতে চান? আসেন দেখি সাংবাদিক হওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন

চলুন দেখি ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে কেমন ক্যারিয়ার।

আসুন আমরা একনজরে দেখে নিই পাইলট হতে কি লাগে

আমার জীবন.. আমার লক্ষ্য (আসুন ভবিষ্যতের জন্য সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিই)

Level 0

আমি Md_Nadim_Hossain। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 63 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভালো লাগল |