বাংলাদেশের বাইক [পর্ব-২৮] :: হোন্ডা কোম্পানীর রিভোলিউশন , আজ আমরা যে হোন্ডাকে দেখছি তার অতীত কী ?

বাংলাদেশের বাইক এর ২৮ তম পর্বে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম । আশা করি সবাই ভাল আছেন । আজ আমরা একটু অন্যরকম একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হবে হোন্ডা কোম্পানীর উত্থান কাহিনী নিয়ে । আসলে হোন্ডা একটা চরম ব্রান্ড যার নাম শুনলেই তার গুণগাণ আর করা লাগে না । নামেই কেটে যায় । তো , আসলে এর পেছনের কাহিনী টা কী ? কীভাবে হোন্ডা কোম্পানী এত ভাল একটা পজিশনে চলে গেল বাইকের জগতে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করব । হোন্ডা এতটাই জনপ্রিয় যে , এখন মোটরবাইক বলতে অনেকে শুধু হোন্ডাকেই বোঝে । আর যিনি এই কোম্পানীটি  তৈরী করেছিলেন, তার নামটি হচ্ছে ‘সইচিরো হোন্ডা’!!

জাপানের হামামাতসু ছোট শহরে তাঁতী মা আর কামার বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া এক কিংবদন্তী-মিঃ হোন্ডা। বাবার একটি সাইকেল মেরামতের দোকান ছিল-ছোট্ট সইচিরো বাবাকে দোকানে সহায়তা করতো। সে সময় জাপানে একটি নিয়ম ছিল, বার্ষিক পরীক্ষার রিপোর্টটি ছাত্রদের দিয়ে দেওয়া হতো- আর তা প্রত্যেকের বাড়ী থেকে অভিভাবককে দেখিয়ে পারিবারিক-সীল মেরে পুনরায় স্কুলে জমা দিতে হতো। তিনি ভাল ছাত্র ছিলেন না, তাই নিজেই নকল সীল বানিয়ে, সীল মেরে জমা দিতেন। এই বিষয়টি ধরা পড়ার পর, বাবার কাছে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল।

১৯২২ সালে স্কুল শেষ করে তিনি চাকুরী খুজতে থাকেন এবং পেয়েও যান-রাজধানী টোকিওর একটি গাড়ী মেরামতের দোকান, ‘আর্টো শুকাই’ এ সহকারী হিসেবে। বয়স কম, কোন অভিজ্ঞতা নেই-কাজ শুধু ধোয়া-মোছা এবং ষ্টাফদের খাওয়া দাওয়া তৈরী। তবে মালিকের অনুমতি নিয়ে, তাদেরই অন্য একটি দোকানে রেসিং-কার ডিজাইনে সহযোগীতার কাজ করতে থাকে রাত-ভর।

১৯২৩ সালে এক ভুমিকম্পে দোকানের গ্যারেজে আগুন ধরলে, তিনি একাই অতি দামী ৩টি রেসিং-কার রক্ষা করে মালিকের নেক নজরে পড়ে যায়। তারপর থেকে মালিকের সঙ্গে সরাসরি রেসিং-কার ডিজাইনে সহযোগীতার কাজ করতে থাকে।

১৯২৪ সালে জাপান রেসিং-কার প্রতিযোগীতায় ১ম স্থান অধিকারী টিমে মেকানিক হিসাবে ছিল হোন্ডা। পরবর্তী ০৫ বছরে হোন্ডা ‘আর্টো শুকাই’ কে টোকিওর একটি জনপ্রিয় সার্ভিস সেন্টারে পরিনত করেন। সার্ভিস সেন্টারটির বেশ কয়েকটি শাখা খোলা হয় এবং এর একটি শাখায়, প্রধান হিসাবে কাজ শুরু করেন ২১ বছর বয়সী হোন্ডা। কিন্তু তার ভ্রত ছিলো অনেক দূর পাড়ি দেওয়ার, তাই চাকুরীর পাশাপাশি নিজের সব জমানো টাকা খরচ করে, এমনকি স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে, গাড়ীর পিষ্টন বানানো শুরু করেন। কিন্তু তার বানানো পিষ্টনগুলো তেমন ভাল হচ্ছিলো না-তিনি উপলব্ধি করলেন তার কারিগরী জ্ঞানটুকু আরো বাড়ানো দরকার। তাই তিনি এ বয়সেও একটি টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন।

১৯৩৬ সালে একটি গাড়ী দুর্ঘটনায় হোন্ডার একটি হাত ভেঙ্গে যায় এবং হাসপাতালে শুয়ে থেকে তিনি ২টি খারাপ সংবাদ শুনতে-১ম টি, টয়োটা কোম্পানীতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো, তার এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) পিষ্টনের মধ্যে মাত্র ৩টি কোয়ালিটি কন্ট্রোলে পাশ করে এবং ২য়টি তাকে টেকনিক্যাল স্কুল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর।

সুস্থতার পর, ভেঙ্গে না পড়ে ১৯৩৭ সালে হোন্ডা নিজেই ‘টোকাই সিক’ নামে একটি কোম্পানী দিয়ে নতুন উদ্যোমে পিষ্টন বানানো শুরু করেন এবং কোয়ালিটি ভাল করে, সেই টয়োটা কোম্পানীতেই সরবরাহ করতে থাকেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধকালীন সময়ে, শুধু টয়োটাতেই প্রায় ৪০% পিষ্টন সাপ্লাই করতেন। কিন্তু ১৯৪৫ সালে, যুদ্ধের শেষের দিকে তার কারখানার শহরে আমেরিকান বিমান বাহিনী বোমা ফেলে প্রচুর ক্ষতিসাধন করে। ফলে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি টয়োটা কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেন মাত্র সাড়ে চার লাখ ইয়েনে। তারপর বছরখানিকের জন্য পর্দার আড়ালে চলে যান।

১৯৪৬ সালে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হোন্ডা টেকনোলজি রিসার্স ইনষ্টিটিউট’ পরবর্তী ২ বছরে যাকে ‘হোন্ডা মোটর কোম্পানী’তে রূপান্তর করেন। তিনি একটি সাধারন বাই-সাইকেলে ছোট একটি ছোট আর্মি রেডিও র জেনারেটর ইঞ্জিন লাগিয়ে তৈরী করেন হোন্ডার ১ম মোটর সাইকেল, যার তেলের ট্যাংকটি ছিল ছোট একটি পানির বোতল দিয়ে তৈরী  এবং এই বোতলের ভেকর ফির অয়েল নামক একপ্রকার তেল ইউজ করা হয়েছিল  ।সেই সময় জাপানে এই ফির অয়েল এর খুবই প্রাচুর্য ছিল । ফলে হোন্ডা কোম্পানী এই সময় তাদের প্রায় ১৫০০ এই বাইক বিক্রি করে যে বাইকের নাম ছিল ‘choo-choo’ এবং এই নামে বাইকটাকে ডাকা হত বাইকের সাউন্ডের উপর ভিত্তি করে । তারপর হোন্ডা এই ইন্জিনের বদলে তাদের নিজস্ব ডিজাইনের একটা ২ স্ট্রোক ইন্জিন পরিচালিত একটা বাইক বের করে । এটাই প্রথম হোন্ডার ভাল ইন্জিনের কোন বাইক ছিল । এর ২ বছর পর হোন্ডা কোম্পানীর নতুন নামকরণ করা হয় “ হোন্ডা মোটর কোম্পানী” ।

তারপর ১৯৪৯ সালে হোন্ডা “দ্যা ড্রিম” নামে একটা টু স্ট্রোক ইন্জিন এর বাইক বাজারে ছাড়ে । এবং এর ২ বছর পর হোন্ডা ৪ স্ট্রোক বাইক উৎপাদন শুরু করে এবং ১৯৫৮ সালে হোন্ডার Super Cub নামের একটা মডেলের বাইক আমেরিকাতে আসে । এবং তখন হোন্ডা কোম্পানী জাপানের ৫০ টি কোম্পানী এবং সারা বিশ্বের ২০০ টি বাইক উৎপাদনকারী কোম্পানীর সাথে টক্কর দিয়ে ফ্রন্ট লাইনে চলে আসে ।

এর পর থেকে হোন্ডাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । বিশ্বের বড় বড় সব কোম্পানীরা তখন হোন্ডার সাথে চুক্তি করতে জাপানে আসত এবং হোন্ডার এই বাইকের বিজনেসের খ্যাতি তখন সারা বিশ্ব জোড়া । আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই যার জয় জয়কার শুধু মোটর সাইকেল নয়, গাড়ী, জেনারেটর, মেরিন মেশিনারিজ, এমনকি জেট-বিমানও তৈরী করছে এই কোম্পানী।

ব্যর্থতা মানে নিচে পড়ে যাওয়া নয় এ যেন হয়, নব-উদ্যোমে প্রবলতর করে নিজেকে সাজানো সামনে এগুনো!!

সৌজন্যে: Bikebd.com

Level 0

আমি বাইক বিডি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 74 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আপনার সব পর্ব আমার ভালো লাগছে কারন এগুলো কাজের

Level 0

Bro japani Honda er valo bike er rivew den please?