বাংলাদেশের বাইক [পর্ব-২৭] :: বাইকের সাসপেনশন সিস্টেমের সাতকাহন ( চিত্র সহ )

বাংলাদেশের বাইক এর ২৭ তম পর্বে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম । আশা করি সবাই ভাল আছেন । আজ আমরা কোন বাইকের রিভিউ বা কোন কমপেরিসন রিভিউ দেখব না । আজ আমরা একটু বাইকের ভেতরের বা্ গভীরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । আজ আমাদের আলোচনার টপিক হবে কোন বাইকের সাসপেনশন সিস্টেম । বর্তমানে সব বাইকের সাসপেনশন সিস্টেম রয়েছে । তবে , কোনটা ভাল , কোনটা মন্দ । কিন্তু কোন কোন বা বস্তু বা কীসের উপর ভিত্তি করে এই  সাসপেনশন সিস্টেম এর ক্লাসিফাই করা হয় তা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না । অনেকে হয়ত সাসপেনশন সিস্টেম কী সেটাই জানে না । তো , আমরা আজ এই বিষয় নিয়ে একটা ঘাটাঘাটি করব এবং আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব এটা সম্পর্কে আপনাদের বোঝাতে চেষ্ট করব ।   তো , চলুন , আমরা আমাদের মূল টপিকে ফিরে যাই ।

মোটরবাইক সাসপেনশন মূলত কী :

মোটরসাইকেল সাসপেনশন হল বহু ম্যাকানিক্যাল পার্টসের সমন্বয়ে তৈরী এমন একটা সিস্টেম যেটা বাইক চলার সময় রাস্তার বিভিন্ন আঘাত বা উচু নিচু রাস্তায় চলার সময় বাইককে আপনার জন্য বিভিন্ন ঝাকা ঝুকি কমফোর্টেবলি কনট্রোল করে এবং আপনাকে একটা সুন্দর রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেয় । বাইকের সাসপেনশন সিস্টেম আরও বাইকের হ্যান্ডেলিং ও ব্রেকিং এও অনেক সহায়তা করে এবং বিষয়গুলো সহজ করে দেয় ।

মূলত সাধারণ যে বাইকগুলো বাংলাদেশে বা আশেপাশে পাওয়া যায় সেগুলো ফ্রন্ট সাসপেনশন হিসেবে এক জোড়া ফর্ক টিউব ব্যাবহার করে এবং রেয়ার সাসপেনশন হিসেবে একটা সুইং আর্ম এর সাথে একটা বা দুইটা সংঘর্ষ প্রতিরোধক ইউজ করে ।  এবার আসুন , আমরা এই সাসপেনশন গুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নিই । তার আগে এই সাসপেনশনগুলোর কয়েকটি পিক আপনারা দেখে নিন ।

ফ্রন্ট সাসপেনশন ( টেলিস্কোপিক ফর্ক) :

সাধারণত বর্তমানের বাইকগুলোতে ফ্রন্ট সাসপেনশন হিসেবে টেলিস্কোপিক ফর্ক ইউজ করে । এই ফর্কটি একটি বড় হাইড্রোলিক সংঘর্ষ প্রতিহতকারী যন্ত্র এবং ইন্টারনাল কয়েল স্প্রিং দ্বারা তৈরী হয় । এই টাইপের সাসপেনশন বাইকের সামনের চাকাকে খুবই সহজে এবং আরামদায়কভাবে উচু নীচু হতে সহায়তা করে এবং রাইডারকে একটা খুবই আরামদায়ক রাইডিং প্রোভাইড করে ।

এই ফর্কের নীচের অংশ চাকার ফ্রন্ট এক্সেলের এর সাথে যুক্ত থাকে যাকে রাউন্প করে সামনের চাকাটি ঘুরে । এই টেলিস্কোপিক ফর্কে আপার পোরশান টা যেটা সাধারণত ফর্ক টিউব হিসেবে পরিচিত সেটা ফর্ক বডির ভেতর আপ ডাউন করে যেটা ফর্কের নীচের দিকে থাকে । ফর্ক টিউবগুলো সবসময়ই খুবই স্মুথ হয় যাতে এটা খুবই সসহজে স্লাইড করতে পারে ।

আপসাইড ডাউন ফর্ক :

আপসাইড ডাউন ফর্ক হল জাস্ট উপরে যে ফর্কের বিবরণ দিলাম তার উল্টো একটা সিস্টেম । এটা প্রচলিত ফর্কের উল্টোভাবে সেট করা থাকে । মানে উপরের দিকটা নীচের দিকে আর নীচের দিকটা উপরের দিকে । এটাতে স্লাইডার বডিটা যেটা সাধারণত নীচের দিকে থাকে সেটা উপরে হ্যান্ডেল এর সাথে যুক্ত থাকে এবং সাধারণ ফর্কের উপরের দিকটা নীচের চাকার এক্সেল এর সাথে যুক্ত থাকে । এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে , কেন এই আপসাইড ডাউন ফর্ক ইউজ করা হয় ।

হ্যা , এর কিছু সুবিধাও আছে , অসুবিধাও আছে । সেগুলো নীচে বর্ণণা করা হল :

 সুবিধা :

১. এটা বাইকের অপ্রোজনীয় ভরটা অনেক কমিয়ে দেয় ।

২. এটা কোন বাইকে থাকলে সেটা হ্যান্ডেলিং করা খুবই সুবিধা হয় অর্থাৎ এটা বাইকের হ্যান্ডেলিং পাওয়ার অনেক বাড়িয়ে দেয় ।

অসুবিধা :

১. এই আপসাইড ডাউন ফর্কগুলো সাধারণ ফর্কের থেকে অনেক দামী ।

২. এই ধরণের ফর্ক ইউজ করলে অনেকসময় ওয়েল সীল ভেঙে যায় এবং যার জন্য সম্পূর্ণ এই ফর্কই দায়ী থাকে ।

রেয়ার সাসপেনশন :

প্রচলিত বাইকগুলোতে মূলত ২ ধরণের রেয়ার সাসপেনশন রয়েছে । সেগুলো হল :

১. Twin-shock, regular swingarm

২. Monoshock Regular swingarm

এখন এই সাসপেনশন সিস্টেমটা বুঝতে হলে আপনাকে সুইংআর্ম সম্পর্কে একটু জানতে হবে । সুইংআর্ম হল এমন একটা জিনিস যার উপর পুরো পেছনের এক্সেলটা দৃঢ়ভাবে বসানো থাকে । এটাকে অনেক সময় সুইমিং ফর্কও বলা হয়।  এটা ভার্টিক্যালি ওঠানামা করে এবং এটা সাসপেনশনকে খুবই সহজে খারাপ বা উচুনিচু রোডে আরামদায়কভাবে স্লাইড করতে সহায়তা করে ।

১. Twin-shock, regular swingarm :

এটাতে একটা  H  শেপড সুইং আর্ম থাকে যেটা বাইকের সামনের দিকে ফ্রেমের সাথে উঠানামা করে । এবং এর অন্য সাইডে বেসিক কয়েল স্প্রিং থাকে যেটা সাসপেনশন প্রোভাইড করে । আর আঘাতগুলো  কয়েল স্প্রিং ইউনিটের মধ্যেই থেকে যায় । এই স্টাইলে সাসপেনশনগুলো মুলত ওজন এর কথা মাথায় রেখে অনেক নতুন হাই পারফমেন্সের বাইকে এই ধরণের সাসপেনশন ইউজ করা হয় না কারণ এটা বাইকের ওজনের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না এবং এই ধরণের সাসপেনশনগুলো খুব একটা শক্ত বা স্ট্রং না আর এই সিস্টেমের সাসপেনশনগুলো এক্সট্রিম রাইডিং কন্ডিশনে অনেকসময় বেকে যায় এবং ভাল ভাবে কাজ করে না ।  এবং এটা ডেভলপ করার একমাত্র উপায় হল এর সাথে কিছু এক্সট্রা মেটাল যোগ করা এবং যেটা আপনকে অনেক খরচ করাবে ।

২. Monoshock Regular swingarm :

মনোশক রেগুলার সুইং আর্ম গুলো হল মূলত ইয়ামাহা এর একটি উদ্ভাবন এবং হোন্ডার ভার্সনের ক্ষেত্রে এটাকে প্রো-লিংক বলা হয় । এই ধরণের সাসপেনশনগুলো মূলত বাইকের ওজন একটু কমানোর জন্য রেয়ার সাসপেনশন রিডিজাইন করা হয় এবং এক্ষেত্রে কয়েল স্প্রিং দুউটার বিপরীতে ১ টা ইউজ করা হয় । মনোশক সাসপেনশন সিস্টেমে কয়েলস্প্রিং কে নীচের দিকে সুইংআর্ম এর সাথে লিংক করানো থাকে এবং এটা সাধারণত বসার সিটের নীচে সেট করা থাকে । এই ধরণের মনোশক সাসপেনশন সিস্টেম বাইকের ওজন অনেক রিডিউজ করে এবং এটার বাইকের স্পীডও অনেক ইনক্রেস করে ।

কখন বুঝবেন আপনার সাসপেনশন সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে ?

অনেকগুলো কন্ডিশন এর ক্ষেত্রে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার সাসপেনশন সিস্টেম ড্যামেজ হয়ে গেছে ।

১. বাইকটি যদি আগের থেকে নীচু হয়ে যায় ।

২. যদি নয়েজ সৃষ্টি করে ।

৩. যদি সাসপেনশন সিস্টেম বেশ ভেজা বা তেলতেলে না থাকে ।

৪. যদি কোন পার্টস ভেঙে যায় ।

৫. যদি হ্যান্ডেলিং এ কোন সমস্যা দেখা যায় ।

সৌজন্যে : bikebd.com

Level 0

আমি বাইক বিডি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 74 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস