
বাংলাদেশের বাইক এর ২৪ তম পর্বে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম । আশা করি সবাই ভাল আছেন । আজ আমরা কোন বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে একটু আলোচনা করব । বাংলাদেশে যেসব বাইক রয়েছে এর মধ্যে মূলত ২ ধরণের ব্রেকিং সিস্টেম রয়েছে । ড্রাম ব্রেক ও ডিস্ক ব্রেক । তো , আসলে এই দুই ধরণের ব্রেকের মধ্যে পার্থক্যটা আসলে কী বা কেন এই দুই ধরণের ব্রেক ইউজ করা হয় অনেেক তা না জেনেই ইউজ করে । জাস্ট জানে , ডিস্ক ব্রেকের কন্ট্রোল ভাল , ড্রাম ব্রেকের কন্ট্রোল হাই পারফরমেন্সের বাইকের ক্ষেত্রে খুব একটা ভাল না । তবে কেন এই সমস্যা ? এদের গঠনে এমন কী পার্থক্য রয়েছে যে এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয় ।
বা দেখা যায় , বাংলাদেশে বা যেকোন স্থানে ৫০ থেকে ১৩৫ সিসির বাইকে ড্রাম ব্রেক থাকে , কিন্তু ১৫০ সিসি বা তার উপরের সিসির বাইকগুলো ডিস্ক ব্রেক ইউজ করে । এর কারণই বা কী ? বা , এদের গঠনে কী পার্থক্য রয়েছে ? তবে তার আগে আমরা এই দুটি ব্রেকের গঠন ও ম্যাকানিজন নিয়ে একটু আলোচনা করব ।ফলে আপনাদের বিষয়টা বুঝতে অনেকটা সুবিধা হবে । এসব ই হবে আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ।
ড্রাম ব্রেক হল এমন এক ধরণের ব্রেকিং সিস্টেম যেখানে একটা ড্রাম শেপড বস্তুর উপর এক জোড়া প্যাড ব্যাবহৃত হয় ঘর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য , এবং এই একজোড়া প্যাড ড্রাম টাকে দুদিক থেকে চেপে ধরে , ফলে বাইকের গতি কমে আসে বা বাইকটি থেমে যায় ।

ড্রাম ব্রেকে মুলত প্যডজোড়া ড্রাম শেপড বস্তুটির অভ্যন্তরে বল প্রোয়োগ করে থাকে । এই ড্রাম শেপড বস্তুটি মূলত কাস্ট আয়রণ দিয়ে তৈরী এবং এটা তাপ সুপরিবাহী এবং ক্ষয় প্রতিরোধক । এই ড্রামটি বাইকের চাকার সাথে ঘুরতে থাকে । যখন চালক ব্রেক পুশ করে , তখন ব্রেক প্যাড দুটি চোরে এই ড্রামের অভ্যন্তরে বল প্রয়োগ করে । ফলে চাকাটির ঘূর্ণণ আস্তে আস্তে কমে আসে । এই ব্রেক সু বা ব্রেক প্যাড মুলত খুবই শক্তিশালী আয়রণ দিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে এবং যখন ব্রেকিং করা হয় তখন ড্রাম ব্রেকের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে তাপ উৎপন্ন হয় এবং বাইকটি থেমে যায় । যখন রাইডার ব্রেক ছেড়ে দেয় তখন ব্রেক প্যাড দুটি আবার নিজের স্থানে ফিরে যায় ।

ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেম হল এমন এক ধরণের বেকিং সিস্টেম যেখানে মূলত একটা কাষ্ট আয়রণের গোলক বা ডিস্ক ব্যাবহার করা হয় এবং ব্রেক প্যাডের কাজ থাকে এই ডিস্ককে জোরে চাপ দিয়ে প্রচন্ড ঘর্ষণ বল তৈরী করা যার ফলে বাইকটির গতি থেমে যায় । এই ডিস্ক মূলত বাইকের চাকার সাথে লাগানো থাকে । এখন এই বিশাল পরিমাণ গতিশক্তিতে স্থিতী শক্তিকে পরিণত করতে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় যেটা সাথে সাথেই বের হয়ে যায় বা প্রকৃতিতে মিশে যায় ।

এই টাইপের ব্রেক গুলো মূলত হাই পারফরমেন্স বাইকের ক্ষেত্রে ইউজ করা হয় । এখন এই ব্রেক দ্বারা বাইকের চাকাকে থামানো জন্য যেসব ঘর্ষণ সৃষ্টিকারী বস্তু দ্বারা ব্রেক প্যাডপি তৈরী করা হয় সেগুলো একটা একটা ডিভাইসের উপর লাগানো থাকে যেটাকে ব্রেক ক্যালিপার বলা হয় , এইটা মূলত অনেক সিস্টেমে ব্রেক প্যাডের উপর বল প্রয়োগ করে । এই বল প্রয়োগটা অনেক ভাবে হতে পারে , যেমন ,ম্যাকানিক্যালি, হাইড্রোলিক্যালি , বাতাস ইউজ করে , বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ভাবে দুই ব্রেক প্যডের উপর চাপ সুষ্টি করে প্রভৃতি । এই ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেমটা অনেকভাবে ডিজাইন করা হয়ে থাকে । কিছু কিছূ ডিস্ক দুটি পাখার জয়েনিং এর মাধ্যমে তৈরী হয় , কিছু কিছু সলিড হয় । আবার কিছু কিছু ডিস্ক এর মধ্যে ছিদ্র বা গর্ত থাকে । বাইকের ডিস্কের সাইজ মূলত বাইকের ওজন , ডাইমেনশন পারফরমেন্স প্রভৃতির উপর ডিপেন্ড করে বড় বা ছোট হয়ে থাকে । এই ছিদ্রগুলো ডিস্কে দেওয়া হয়ে থাকে মূলত তাপের কারণে । অতিরিক্ত তাপের কারলে অনেকসময় ডিস্ক বেকে বা ভেঙে যেতে পারে । কিন্তু ছিদ্র বা গর্ত থাকলে সেটা সম্ভব হয় না । এর কারণ আমরা ৯-১০ এর ফিজিক্স বইতে পড়েছিলাম ।

মূলত আগেরকালের বাইকগুলোতে বেশীরভাগইড্রাম ব্রেক ব্যাবহার করান হত । কিন্তু , বর্তমানে এসে হাই পারফরমেন্স বাইকগুলোতে ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহৃত হয় । কিন্তু , কেন ? ডিস্ক আর ড্রামের ভেতর তফাৎটা কোতায়। এর জন্য আমাদের ওকটু লেখার উপরের দিকে ফিরে যেতে হবে । আমরা বলেছিলাম উভয় ব্রেকই উচ্চ গতিশক্তিকে স্থিতী শক্তিতে পরিণত করতে প্রচুর ঘর্ষণ উৎপন্ন করে যার ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় । এখন যে টাইপের ব্রেক দ্রুততার সাথে এই উৎপন্ন তাপ নিঃসরণ বা বাইরে বের করে দিতে পারবে সেই ব্রেকিং সিস্টেমেরই বাইকের গতি থামানোর পাওয়ার বেশী থাকবে ।এখন আপনি যখন হাইওয়েতে থাকবেন বা ব্রেক ঘন ঘন পুশ করার দরকার হবে তখন আপনার বাইকের ড্রাম ব্রেক দূর্বল বা অকেজো হয়ে যেতে পারে । কারণ এর তাপ নিঃসরণ ক্ষমতা অনেক কম । ফলে আপনার ব্রেক ফেইলুর বা এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে । এই ধরণের ঘটনাকে ব্রেক ফেড বলা হয় ।
কিন্তু এইক্সেত্রে ডিস্ক ব্রেকগুলো ডিস্ক ঠান্ডা করার জন্য এক ধরণের এয়ার কুলিং সিস্টেম ইউজ করে বা অনেক ডিস্ক ব্রেক ভিন্ন ভিন্ন ধাতুর বা ওই ধরণের কম্পোনেন্টের সমন্বয়ে তৈরী করা হয় শুধুই এই তাপ নিঃসরণের জন্য । ফলে এইক্ষেত্রে ডিস্ক ব্রেক অনেক ভাল পারফরমেন্স দেয় ।আর ডিস্কগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য দুই দিক থেকে দুটি প্যাড ইউজজ করা হয় যেটাতে মাল্টিপল ক্যালিপারের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয় , ফলে এটার স্টপিং পাওয়ার সবদিক থেকে অনেক বেশী থাকে ।
অতএব আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি ডিস্ক ব্রেক ড্রাম ব্রেকের থেকে অনেক উন্নত ও ভাল । তবে আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে , বাংলাদেশের হাই পারফরমেন্সের বাইক গুলোতে পেছনের চাকাতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ড্রাম ব্রেক ইউজ করা হয় ? কারণ হল , মূলত সামনের ব্রেকের মাধ্যমেই বাইক বেশী স্লো হয়ে থাকে সবসময় , আর ব্রেক ধরার নিয়ম হল দুটি ব্রেকই একসাথ অস্তে আস্তে পুশ করা । ফলে এক্ষেত্রে পেছনের ব্রেকের উপর চাপ কম পড়ে । তাই এসব বাইকের ক্ষেত্রে পেছনের ড্রাম ব্রেক কোন সমস্যা করে থাকে না ।
সৌজন্যে : bikebd.com
আমি বাইক বিডি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 74 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাল…………চালিয়ে যান।