করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

করোনা ভাইরাস কি?

আপনি যদি মনে করে থাকেন এটি একটি নতুন প্রজাতির ভাইরাস তাহলে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। করোনা ভাইরাস অনেক রকম প্রজাতি আছে যার মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে আক্রমণ করতে পারে। ২০১৯-এনকোভি এর জন্য এই সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে সাতে।

সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সারা পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর সংক্রমিত হয়েছিল ৮০৯৮জন। আপনি কি জানেন সেটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস?

সার্সের ভয়াবহতা এখনও বিশ্ববাসী ভুলতে পারেনি তাই হয়তো নতুন ভাইরাস প্রচণ্ড ভীতি তৈরি করতে পেরেছে। ওয়েলকাম ট্রাস্টের চিকিৎসক জোসি গোল্ডিং বলেছেন, ”এ ধরনের রোগ মোকাবেলায় আমরা এখন অনেক বেশি প্রস্তুত। ”

নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্করতা

প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে রোগটি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন নয়। এই রোগের লক্ষণগুলো অন্যান্য অসুস্থতার সাথে অনেকটাই মিলে যায়। যেমন- সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বর। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অনেক সময় অর্গান বিপর্যয়ের মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ৪০+ বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের সাবধানে থাকা উচিত কারণ তাদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মেডিক্যাল মাস্ক

মেডিক্যল মাস্ক নিয়ে ডাক্তারদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, আপনি যদি করোনা নেগেটিভ হয়ে থাকেন তাহলে মেডিক্যল মাস্ক না পরলেও চলবে। মেডিক্যল মাস্ক করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের, তাদের সেবাকারী নার্স ও ডাক্তারদের অবশ্যই পড়তে হবে। নাহলে এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ কী?

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক উলহাউস বলেছেন “আমরা যখন নতুন কোনো করোনা ভাইরাসদেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষণ গুলো কতটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা সাধারন ফ্লু মতো কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়”

করোনা ভাইরাসের পূর্ববর্তী লক্ষণসমূহ

  • ১। সর্দি
  • ২। গলা ব্যথা
  • ৩। কাশি
  • ৪। মাথা ব্যাথা
  • ৫। জ্বর
  • ৬। হাঁচি
  • ৭। অবসাদ
  • ৮। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

লক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক?

ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, এরপর শুকনো কাশি দেখা যেতে পারে। এক সপ্তাহ ধরে কোন চিকিৎসা না নেয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এই সময় অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় নিবিড় চিকিৎসার জন্য।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বয়সভেদে হালকা ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ বলেছেন ”যখন আমরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে দেখতে পাই, আমরা বোঝার চেষ্টা করি লক্ষণগুলো কতটা মারাত্মক। এটা ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণগুলোর চেয়ে একটি বেশি, সেটা উদ্বেগজনক হলেও, সার্সের মতো অতোটা মারাত্মক নয়, ”

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে বিশ্ব?

  • উহান থেকে আসা ভ্রমণকারীদের মেডিকেল পরীক্ষা করছেন দক্ষিণ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ দেশ।
  • এখন পর্যন্ত চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মারা গেছে ইটালিতে। সেখানে ১ কোটি ষাট লাখ মানুষকে এখন কোয়ারেন্টিনের আওতায় নিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ বিয়ের অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্যসহ ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত, সিনেমা, নাইট-ক্লাব, ব্যায়ামাগার, খেলাধুলার আসর, সুইমিংপুল, যাদুঘর ইত্যাদি বন্ধ।
  • নিউইয়র্কে শহরের গভর্নর স্টেটটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
  • জাপানের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে উচ্চ-ঝুঁকির দেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন ইতালি ফেরত।

বাংলাদেশে একমাত্র রোগতত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট – আইইডিসিআর করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে পারে।

রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টেকটিউনসউটের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ  সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হয়েছে। এতে করে সারা বাংলাদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন কিছু বলা যাবে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। জনসমাগমের মধ্যে না যেতে পরামর্শ দেব। বাসায় থাকাই ভালো। গণপরিবহন ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেব। প্রত্যেকের মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানোর কোনো দরকার নেই। আক্রান্ত রোগী ও রোগীকে যিনি সেবা দেবেন শুধু তারাই মাস্ক পরবেন। ’

এখন জনসাধারণের কি করণীয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও শিষ্টাচার মেনে কাশি বা হাঁচি দেওয়ার (হাঁচি বা কাশির সময় রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকা) বিকল্প নেই। এ জন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন করছি। ”

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তবে আমরা সব সময় বলেছি, প্রস্তুতির কোনো শেষ নেই। আমরা সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনো রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট করেছি। এখন আইসোলেশনের জন্য আলাদা হাসপাতাল খুঁজে দেখা হচ্ছে, যেন শুধু করোনা রোগীদের সেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। ঢাকার বাইরেও এমন হাসপাতাল খুঁজে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে যদি রোগী আরও বৃদ্ধি পায়, আমরা আশঙ্কা করছি না এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু যদি রোগী আরও বৃদ্ধি পায়, স্কুল, কলেজ বা কমিউনিটি সেন্টারে যদি হাসপাতাল করার প্রয়োজন হয়, সেই পরিকল্পনা আমাদের নেওয়া আছে। ’

নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ইনশাআল্লাহ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। সরকার ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। ”

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় কি?

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ

যেহেতু এখনও কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি তাই আমাদের সকলকে অনেক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। রোজকার জীবনের সামান্য কিছু পরিবর্তন আমাদের এই রোগ থেকে বাঁচাতে পারে।

  • যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বিশেষ করে বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন।
  • সবুজ শাক সবজি খাওয়া বাড়িয়ে দিন। কারণ এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, মিনারেল ও ফাইবার রোগ প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করতে পারে।
  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার একটু বেশি করে খান। যেমন- মিষ্টি কুমড়া।
  • টক জাতীয় ফল বেশি খান। যেমনঃ লেবু, কমলা। এতে আছে ভিটামিন সি যা সর্দি, কাশি, জ্বরের ক্ষেত্রে খুবই উপকারি। তাছাড়া শরীরের উপকারী শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে ভিটামিন সি।
  • রসুনের পরিমাণ বাড়াতে পারেন খাদ্যতালিকায়। রসুনে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ঠান্ডা লাগা ও ইনফেকশেন দূর করতে খুবই উপকারী।
  • নিয়মিত টক দই খান কারণ, এটি রোগের সঙ্গে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার।
  • হলুদ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে সুতরাং প্রতিদিন খাবারে হলুদ ব্যবহার করুন অথবা কাঁচাও খেতে পারেন।
  • অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মধুর উপকারিতা তো সবাই জানি। এখন থেকে প্রতিদিন এক চা চামচ মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন
  • মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ বলা হয় কালিজিরাকে। সাধারণ সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, জ্বর, যেকোনো ধরনের শারীরিক দুর্বলতা কাটাতেও কালিজিরার জুড়ি নেই। খাদ্যতালিকায় অন্তত এক বেলা ২ চিমটি কালিজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

করোনা ভাইরাসের ইতি ঘটুক

করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীর অনেক মানুষই এখন মৃত্যু ঝুঁকিতে আছে। আমরা সবার সুস্থ ও সুন্দর জীবনের কামনা করছি। আমাদেরকে সব ধরনের সতর্কতা আর সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

আপনার যদি এই ভাইরাস নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে টিউমেন্ট করতে ভুলবেন না।

Level 0

আমি সাদমান আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস