মধ্যযুগকে কালের বিবর্তনের শ্রেষ্ঠ ধারা বলা হয়ে থাকে কিন্তু এই বিবর্তনের অকল্পনীয় উন্নতির মাঝেও যে পৈচাশিক কিছু কল্পকাহিনীর ঘটনা রয়েছে তা হয়ত সবারই অজানা। চলুন জেনে নেই সেই পৈচাশিক কিছু কল্পকাহিনীর ঘটনা।
মধ্যযুগ বলতে মূলত ৪৭৬ থেকে ৮০০ সালকে বোঝানো হয়। মধ্যযুগের পৈচাশিক কল্পকাহিনীর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যে পৈশাচিক পদ্ধতিতে হত্যা করা হতো তার কথাই আজ বলব।
মধ্যযুগের পৈশাচিক কিছু মৃত্যুদণ্ড ব্যবস্থা
হাতির পায়ে পিষ্ট করে হত্যা : মৃত্যদণ্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতি টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্ভাবিত, সুদূর কোনো দেশের পদ্ধতি নয়। এ পদ্ধতিতে বিশাল আকৃতির হাতি তার পা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথা থেঁতলে দিতো। এক্ষেত্রে আবার হাতিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, যাতে সে ধীরে ধীরে পায়ের চাপ বাড়ায়। যাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ কষ্ট ভোগ করে মারা যায়।
"হাতির পায়ে পিষ্ট করে হত্যা"
পুড়িয়ে হত্যা : পুড়িয়ে হত্যা করার পদ্ধতি শুরু হয় মুলত জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে মারার পর থেকে। সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ১৯ বছর। ১৪৩১ সালের ৩০ মে তাকে হত্যা করা হয়। জোয়ান অব আর্ক ছিলেন পূর্ব ফ্রান্সের একজন সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মানো বাক্তি যিনি ফরাসী সেনাবাহিনীর জন্য বিরল যুদ্ধজয় এনে দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই ফ্রান্স তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূমি পুনুরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়। তিনি সপ্তম চার্লসের ক্ষমতারোহনের পেছনেও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন। অথচ দেশের জন্য এতো গৌরব বয়ে আনা সত্বেও তাকে বার্গুনডিয়ানরা আটক করে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে একটি খৃষ্টান আদালতের রায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। তার মৃত্যুর ২৪ বছর পর সপ্তম চার্লসের উদ্যোগে পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস তার পুনর্তদন্তে জোয়ানকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন এবং তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়।
"জোয়ান অব আর্ক"
সিদ্ধ করে হত্যা : ১৫৩২ সালে ইংল্যান্ডের অষ্টম হেনরি মৃত্যুদণ্ডের এ পদ্ধতি চালু করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাক্তিকে প্রথমে একটি পানি ভর্তি পাত্রে রাখা হতো. এরপর পাত্রের নিচে আগুন দিয়ে পানি গরম করে ধীরে ধীরে সিদ্ধ করা হতো. বন্দির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পানি ফোটানো হতো। এ পদ্ধতিতে শেষ যাকে হত্যা করা হয় তিনি ছিলেন ভারতের শিখ শহীদ যাকে দিল্লিতে সিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। পাশবিক এ মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতি ১৬৭৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
সিদ্ধ করে হত্যা
চামড়া ছিঁড়ে মৃত্যুদণ্ড : এ পদ্ধতিটি মাক্সিকোর এজেক্ট (Aztecs) জাতি চালু করে। এ পদ্ধতিতে জীবন্ত অবস্থায় বন্দির ধীরে ধীরে সমস্ত শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হতো। কষ্ট বাড়ানোর জন্য মাঝে মাঝে উন্মুক্ত স্থানে লবণ মাখানো হতো। এটি ছিলো একটি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সার্বজনীন পদ্ধতি। ১৩০৩ সালে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে কিং এডওয়ার্ডের বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে যাওয়ার সময় সন্ন্যাসী ডাকাতদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হন। অতঃপর ৪৮ জন সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গির্জার কর্মচারী ঘণ্টাবাদক সহ মোট ৩ জন সন্ন্যাসীকে ডাকাতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাদের চামড়া ছিঁড়ে হত্যা করে চামড়া গির্জার দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় দৃষ্টান্ত হিসাবে।
চামড়া ছিঁড়ে মৃত্যুদণ্ড
করাতে কেটে মৃত্যুদণ্ড :এই পদ্ধতিটি চালু ছিলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ এশিয়তেও। এক্ষেত্রে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে উল্টো করে দুই পা দুই দিকে ফাঁক করে বেঁধে রাখা হতো। এরপর মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির যৌনাঙ্গ বরাবর করাত রেখে দেহকে মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো। আর উল্টো করে ঝোলানোর কারণে ব্যক্তিটির মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত পেতো, যাতে তিনি শরীরের মাঝ বরাবর কেটে ফেলার ব্যথা সম্পূর্ণটাই অনুভব করতে পারে। মধ্যযুগের অমানবিক মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
করাতে কেটে মৃত্যুদণ্ড
লিং চি : মৃত্যুদণ্ডের এ পদ্ধতিটি চিনে চালু ছিলো। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে লোকালয়ে এনে বেঁধে ফেলা হতো। এরপর একজন জল্লাদ বিশেষ ছুরি দিয়ে ওই ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে মাংস কেটে নিত। দীর্ঘক্ষণ ধরে অধিক যন্ত্রণা ভোগ করে শেষে ব্যক্তিটি মারা যেত।
লিং চি
সূচে চড়িয়ে হত্যা : এ পদ্ধতিতে উলঙ্গ করে বন্দির হাত-পা বেঁধে তার পায়ু পথে সুচালো একটি দণ্ড ঢুকিয়ে তাকে তার উপর বসিয়ে দণ্ডটি খাঁড়া করে দেওয়া হতো। বন্দি তার নিজের শরীরের ভারে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে যেত। অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না করে ভোঁতা রাখা হত যাতে হৃৎপিণ্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি মারা না যায়। এতে অপরাধী প্রচন্ড কষ্টে মারা যেত। এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে অনেক সময় লাগত এমনকি এক থেকে দু’দিন সময়ও লাগত।
সূচে চড়িয়ে হত্যা
ক্যাথরিনের চাকা : এটি ফ্রস্নকিশ এর সময়কালে ফ্রান্স ও রোমানে প্রচলিত ছিল। এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একটি চাকার সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হতো। এরপর চাকাটি খুব জোরে ঘোরানো হতো। তখন জল্লাদ ঘূর্ণায়মান ব্যক্তির শরীরে চাবুক বা লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকতো। এরপর জল্লাদ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির হাতে ও পায়ে পেরেক ঠুকে দিতো। পুনরায় চাবুক দিয়ে আঘাত করা হত। এরপর পেরেক ঠোকা অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে শহরের মাঝে জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখতো, যাতে সবাই এ নির্মমতা দেখতে পায়।
ক্যাথরিনের চাকা
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে হত্যা : চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে ইংল্যান্ডে এ শাস্তির রেওয়াজ চালু হয়। দোষীর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধারালো ছুরি দিয়ে একে একে বিচ্ছিন্ন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। আবার ব্যভিচারী মহিলাকে উলঙ্গ করে বেঁধে তার স্তন গোল চাকতির ন্যায় বিশেষ লোহা (Breast Ripper) গরম করে ছিঁড়ে ফেলা হত। অতপর এভাবেই তাকে বেঁধে রাখা হত। এতে করে সাময়িক ভাবে না মারা গেলেও মারাত্মক ইনফেকশনে এক সপ্তাহের মধ্যে সে মারা যেত।
Breast Ripper
ক্রিমিনাল স্যান্ডউইচ :পারস্যরা অপরাধীদের জন্য এ পদ্ধতি আবিস্কার করে। এ পদ্ধতিতে প্রথমে অপরাধীকে উলঙ্গ করে মধুর মধ্যে চুবান হয় অতপর তাকে একটি বাক্সে ঢূুকান হয় এক্ষেত্রে কেবল তার মাথা এবং হাত বাহিরে থাকে। অতপর তাকে ঝোপঝাড়ে অথবা জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। ফলে কিছুদিনের মধ্যে পোকামাকড় তার শরীরের সমস্ত মাংস খেয়ে ফেলে এবং তার মৃত্যু হয়।
আমি ইসমাইল যায়েদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 8 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।