সাইবার ক্রাইম !! সতর্ক হবার সময় এখনি, নতুন টার্গেট মোবাইল ফোন ইউজারা !

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। অফুরন্ত সম্ভাবনার পাশাপাশি যার সমস্যাও অনন্ত। সমসাময়িক অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হল সাইবার অপরাধ। সাইবার অপরাধের জটিল সংজ্ঞায়নের মধ্যে না গিয়েও বলা যায় যে সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যকলাপই সাদামাটাভাবে সাইবার অপরাধ। অন্যান্য অপরাধের মত সাইবার অপরাধেরও ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক স্থিতিকে বিনষ্ট করে সমাজ ।

কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশের অনলাইন জগতকে একটি ভিডিও চিত্র নিয়ে তোলপাড় সৃষ্ঠি হয়। ভিডিওতে দেখা যায় একটি ছেলে একটি মেয়েকে প্রেম নিবেদনের ভঙ্গিমায় কাছে গিয়ে মেয়েটির গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়। পরে সেই ছেলেটির পরিচয় প্রকাশ পায়। জানা যায়, সৃজন এই ক্লিপ তার নিজের ইউটিউব একাউন্টে আপলোড করে। এতোদিন এই ক্লিপ তেমন প্রচার না পেলে ও কিছুদিন পূর্বে মাসুদ রানা নামের এক ছেলে ফেইসবুকে আপ্লোড করে যা অতিদ্রুত পুরো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে অনুসন্ধানে আসল পরিচয়সহ আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত এই ভিডিওটির প্রকাশের সাথে জড়িত ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে । এই তো গেল নারী ও ব্যাক্তিগত হয়রানীর কথা, চলুন বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম এর নতুন ও অত্যাধুনিক অধ্যায়ের দিকে যাইঃ

এই জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করে এলাকার এক বড় ভাই রুবেল রাহমানের বাংলালিংক নম্বরে একটি ফ্লেক্সিলোড আসে ৫০ টাকা। একটু পরেই তাকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, ভুল করে তার তার নাম্বারে টাকা চলে গেছে, টাকা যেন ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে বের হন। এরপর তার মোবাইলে দুটি মিসড কল আসে পর পর। তিনি ওই নম্বরে ফোন ব্যাক করে টাকা ফেরত দিচ্ছেন বলে জানান। এই কল ব্যাক করার পর তিনি টের পান তার ফোন থেকে আর কোনো আউটগোয়িং কল হচ্ছে না। ফোন রিস্টার্ট করার পর স্ক্রিনে লেখা দেখতে পান, সিম আনরেজিস্টার্ড। পরে তিনি তার ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে দেখেন, অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডও পরিবর্তন হয়ে গেছে। তিনি বিষয়টি বাংলালিংককে জানালে ফোনের মাধ্যমে কোনো ব্যাংকিং লেনদেন করলে সেই ব্যাংকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলা হয়। ব্যাংকের গ্রাহকসেবা শাখায় যোগাযোগ করলে দ্রুত তার ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বন্ধ করতে বলা হয়। ব্যাংকে একদিন পর গিয়ে দেখেন তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৩ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

টেলিটকের একটি থ্রিজি মডেম কিনে সঙ্গে একটি সিমকার্ড পাওয়া যায় ফ্রি। সিম কার্ডটি আগে থেকেই চালু করা ছিল। ব্যবহারকারী গত ৫ মার্চ ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার জন্য রিচার্জ করার পর দেখতে পান তার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো কারণ ছাড়াই ব্যালান্স কমে যাচ্ছে। পরে টেলিটকের গ্রাহক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই নম্বর থেকে ইন্টারন্যাশনাল মেসেজ যাচ্ছে। পরে তিনি তার নম্বরের সিডিআর রিপোর্ট সংগ্রহ করে দেখেন, তার পরিচিত লোকাল নম্বরের বাইরে একাধিক মেসেজ গেছে বিদেশে। কীভাবে বিদেশে মেসেজ গেল, তার সদুত্তর মেলেনি। সম্প্রতি +২ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে ফোন করে প্রতারণার ঘটনাও ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই নম্বরে ফোন ব্যাক করলেই ফোন নম্বরটি থেকে দ্রুত ব্যালান্স কমতে থাকে।

সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে সাইবার অপরাধের মাত্রা গত এক বছরেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অপরাধীদের কারিগরি দক্ষতার চেয়ে পুলিশের দক্ষতার অভাবের কারণে এসব অপরাধ মোকাবেলার ক্ষেত্রে পুলিশকেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে বলেও বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত ওই সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। সেমিনারে সাইবার অপরাধ হিসেবে যেসব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে তার প্রায় সবই অনলাইনে বিকৃত ছবি, ভুয়া তথ্য কিংবা অশ্লীল ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনা। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ বলতে এখন পর্যন্ত পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল ছবি, ভিডিওর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনাকেই বোঝানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা কিংবা অপরাধের শিকার হলে প্রতিকারের উপায় যেমন রাখা হচ্ছে না, তেমনি ৫০ বছর আগে যে বিষয়গুলো ফৌজদারি আইন থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে দেশের আইনে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখিয়ে আইনের প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে বেশি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুটি ওয়েবসাইটে সিম কার্ড ক্লোনিং কীভাবে করতে হয়, কোন কোন সফটওয়্যার প্রয়োজন তার বিস্তারিত টিউটোরিয়াল দেওয়া আছে স্বভাবত কারনেই আমি লিংকটা দিলাম না , অনেকেই এর অপব্যবহার করতে পারেন । তবে দুটি লিংকে টিউটোরিয়ালের সঙ্গে লেখক ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, 'এটি শুধু ক্লোনিং শেখানোর জন্য, কেউ এটি শিখে অপরাধ করলে লেখক দায়ী নয়।'

সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ট্রেড মাইক্রোর একটি গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, চীনে মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন এবং জিএসএম মডেম হ্যাক করার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চীনের ৮১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং তারাই সাইবার অপরাধীদের সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। ভুয়া অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের লোভ দেখিয়ে ফোন ব্যবহারকারীকে ফাঁদে ফেলে তার সিম ক্লোনিং করে একই নম্বর যেমন মেসেজ পাঠানো এবং কল করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি গ্রাহকের ই-মেইল পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পিন নম্বর প্রভৃতি হ্যাক করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় তাইওয়ান ও চীনের একটি সংঘবদ্ধ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতচক্র ধরা পড়ে যারা প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছিল চীন ও তাইওয়ান থেকে।
ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে সাইবার ক্রাইম। যার মধ্যে হ্যাকিং ও নারী অবমাননাসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ ভয়ংকর ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনি সময় এই সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে জানার, জানলেই কেবল আপনি এর প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করতে পারবেন ।

ফেসবুকে আমি এবং আমার পার্সোনাল ব্লগ  এই টিউন টি সম্পর্কিত যে কোন মন্তব্য আমাকে আরও উৎসাহিত করবে পরবর্তী ব্লগ লিখতে ।।

Level 0

আমি ইমতিয়াজ বিন আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।

Level 0

Valo lkcn

Level 0

সচেতন হওয়ার সময় এখনই

সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ অনেক কাজের টিউন