এটা অত্যন্ত ভাগ্য ও গর্বের বিষয় যে আমরা আল্লাহর অশেষ কৃপায় রোজা রাখতে পেরেছি এবং আগামীতেও পারবো ইনশাল্লাহ। এখন (রমযান মাসে) মসজিদগুলি প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। ছট-বড় সকলে মিলে আনন্দের সহিত মসজিদে আসে সালাহ বা নামায আদায় করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আর মাত্র কয়েক দিন পর রোজা শেষ হতে না হতেই মুসুল্লি একেবারে কমে যাবে, মসজিদ গুলি আবারও খালি হয়ে যাবে। কিন্তু হে সম্মানিত রোজাদারবৃন্দ আপনারা কি জানেন যে আপনি যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় না করেন তাহলে আপনি কাফেরে পরিণত হবেন এবং আপনার রোজা তথা সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। কি জেনে আশ্চর্য হচ্ছেন ? জী হাঁ, নবী করিম (সঃ)স্বয়ং একথা বলেছেন (এ বিষয়ে একটু পরেই আলোচনায় আসছি, ইনশাল্লাহ )। এখন প্রশ্ন হতেপারে তাহলে বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশ মেনামাজির সংখ্যা এত বেশি কেন? এর একটাই উত্তর অজ্ঞতা। অজ্ঞতা ইসলামের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে , অজ্ঞতা বেনামাজির প্রতি হুকুম ও আহকাম সম্পর্কে। তাই এই অজ্ঞতা দূর করার নিমিত্তে ইসলামে সালাতের সালাতের গুরুত্ব , নামায ত্যাগ কারির প্রতি শরিয়তি বিধান কি সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্যবহুল আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ইসলামে সালাতের গুরুত্ব
নামায হল ইসলামের সর্বপ্রথম ফরযকৃত এবাদত যা আল্লাহ সুভহানুয়াতালা মিরাজের সময় আসমানে নবী করিম (সঃ) কে স্পেশাল উপহার হিসাবে প্রদান করেন। ১এটি এমন একটি এবাদত যা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ও সংখ্যায় প্রত্যেক নবীগনের উপর ফরয ছিল। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করা যায়। ২ এবং সাগিরা গুনাহগুলি ঝরে যায়। ৩ কেবল নামাযই একমাত্র এবাদত যা বালিগ হওয়ার পূর্বেই আদায় করা শুরু করতে হয়। ৪ এটি একমাত্র এবাদত যার কোন বদল চলেনা। এবং যেকোনো মূল্যে যেকোনো পরিস্থিতিতে (কেবল মেয়েদের হায়েজ ও নেফাস ছাড়া ) দিনে পাঁচবার নামায আদাই করা আবশ্যিক (ফরয)। ৫ তাই হাদিসে বেনামাজিকে কাফের বলা হয়েছে। ৬এবং বলা হয়েছে নামায ঠিক না থাকলে কেয়ামতের মাঠে কারও কোন আমলই কাজে আসবেনা। ৭ সে কারণে আল্লাহ তালা বিশেষ গুরুত্ব আরোফ করে কোরআনে সর্বাধিকবার নামায সম্পর্করে আলোচনা করেছেন। এছাড়া নবী করিম (সঃ) নামাযকে ইসলামের মুল খুঁটি বলে বর্ণনা করেছেন। ৮এবং বলেছেন পৃথিবী থেকে নামায বিলুপ্ত হলে ইসলামও বিলুপ্ত হবে। ৯ সে কারণেই হয়তো তিনি মৃত্যুর আগে মুহূর্তেও বার বার নামায সম্পর্কে উম্মতকে সচেতন করে গেছেন। ১০ তাই এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
নামায ত্যাগের পেছনে কিছু শয়তানী প্ররোচনা ও তার জবাব
মুসলিমগন সাধারণত কয়েকটি শয়তানী প্ররোচনার কারণে ইসলামিক অনুশাসন ও নামায থেকে দূরে থাকে। অনেকে মনে করেন বর্তমানে ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব নয়। মনে রাখবেন এইরূপ ধারণা পোষণ করার অর্থ হল কুফরি করা। কেননা আল্লাহতালা বিশ্ব ও বিশ্বের যাবতীয় বিষয়ের সৃষ্টিকর্তা। এবং সেই মহাজ্ঞানী আল্লাহই দুনিয়ায় সুষ্ঠভাবে জীবন জাপনের জন্য ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা দান করেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত। ১১ তাছাড়া আমদের ভালো মন্দ তিনিই ভালো যানেন। ১২ তাই বর্তমানেও ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব এর জন্যে প্রয়োজন ইসলামিক শরিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং তার উপর দৃঢ় বিশ্বাসের।
নামায ত্যাগের ক্ষেত্রে আনেকে মনে করেন যে নামাজীকে সমস্ত পাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে হবে, তানাহলে নামায হবে না। তাই তারা মনে করে যে পরে এক সময় সমস্তকিছু ছেড়ে ছুড়ে একবারে নামায ধরবো। মনে রাখবেন এটি শয়তানের একটি বড় অস্ত্র। যদি তাই হয় তাহলে জুমার নামায হয় কীভাবে? আসলে নামাযই মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। ১৩ আমরা জানি দুই নামাযের মধ্যেকার সাগিরা গুনহগুলি নামাযের মাধ্যমে ঝরে যায়। ১৪ এমন কি নবী(সঃ) বলেন, তাহাজ্জুদের জন্য রাত্রি জাগরণ চোরকে চুরি থেকে নিবৃত্ত করবে। ১৫
তাই বলা যেতে পারে যে কেও পাপ থেকে দূরে থাকতে চাই তাহলে তাকে প্রথমে নামায আদায় করা শুরু করতে হবে।
অনেকে আবার মনে করেন যে, পার্থিব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নামায পরিত্যাগে কোন দোষ নেই এবং তারা ব্যস্ততার ওজুহাত পেষকরে। একথা পুরপুরি ঠিক নয়। মনে রাখবেন পার্থিব কোন কাজ নিয়মিত আপনাকে ইসলাম পালন বিশেষকরে নামায আদায়ে নিবৃত্ত করলে তা আপনার জন্য হারাম হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহতালা মূলত তার এবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ১৬ পরকালই আসল, এ দুনিয়া তো আসলে খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয়। ১৭ তাছাড়া তিনিই তো জীবিকা দাতা এবং তিনি যাকে খুশী তা দান করেন। ১৮ তাই আল্লাহতালা সতর্ক করে বলেনঃ “মুমিনগণ! তমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। [ সূরা মুনাফিকুন(৬৩)/ ৯ ]
অপরদিকে হাদিসে ক্বুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “হে আদমের সন্তান! আমার ইবাদতে মন ঢেলে দাও তবে আমি তোমার বক্ষ সম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দারিদ্র দূর করে দিব। আর যদি তুমি তা না কর তবে তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দ্বারা পরিপূর্ণ কোরে দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না। ” (আহমদ, ইবনে মাজা)
প্রকৃত অর্থে বেনামাজি কারা ?
বেনামাজির প্রতি শরীয়তী বিধান কি তা জানার পূর্বে প্রকৃত বেনামাজিকে সে সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেননা, আনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদাই না করেও নিজেদের নামাজি বলে মনে করে। তবে কোরআন ও হাদিসে প্রত্যহ নামায পাঁচ ওয়াক্ত। ১৯ তাই উপযুক্ত কারণ ছাড়া প্রতি নিয়ত এক ওয়াক্ত নামায পরিত্যাগ কারিও বেনামাজির অন্তর্ভুক্ত এবং যারা মাঝে-মধ্যে সালাহ আদায় করে কিংবা একেবারেই না করেও নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে, হয় তারা উন্মাদ কিংবা প্রবৃত্তির (খেয়ালখুশির) অনুসারী। ২০ তাদের আবস্থা হল কুকুরের মত। ২২ এরা নিজেদের খেয়াল খুশিকে ‘এলাহ’ বা ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছে যা মুশরিকতার পরিচয়। ২১ আর শির্ককারীর সমস্ত আমল বরবাদ হয় এবং আল্লাহতালা মুশরিক ক্ষমা করবেন না। ২৩
বেনামাজি কি ইমানদার
আনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদাই না করেও বলে আমার ঈমান ঠিক আছে। কিন্তু ইসলামে ঈমান তিনটি মৌলিক বিষয়ের নাম এক অন্তরে বিশ্বাস; দুই মুখে স্বীকার; তিন আমলের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ঈমান বা বিশ্বাস আছে কিনা তা আমল দ্বারা প্রমাণ দিতে হবে। এবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সর্বাবস্থায়ী আবশ্যিক এবাদত হল সালাহ বা নামায যা ঠিক না থাকলে সমস্ত আমল বাতিল বলে গণ্য হবে। তাই বেনামাজিদের এই দাবি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর তার পরে তো নয়ই স্বয়ং আল্লাহ ও তার রসূল(সঃ) স্পষ্টভাবে তাদের মুশরিক এবং কাফের (অবিশ্বাসী) বলেছেন। আল্লাহ পাক কোরআনে বলেনঃ
“সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় করো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয় না” [সূরা আর রূম(৩০)/৩১]
“যারা পরকালে বিশ্বাস করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারা স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে” [সূরা আল-আনাম(৬)/৯২]
“নিঃসন্দেহে তারাই আল্লার মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি [সূরা আত তওবা (৯)/১৮ ]
এই আয়াত গুলি থেকে প্রমাণিত যে বেনামাজিরা মুখে দাবি করলেও প্রকৃত অর্থে তারা ইমানদার বা বিশ্বাসী নয়।
অপরদিকে আল্লাহতালা বলেনঃ “এমন লোকেরা, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে বিরত রাখে না । তাঁরা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে” [সূরা আন-নূর(২৪)/৩৭]
“সে সমস্ত লোক যারা নামায প্রতিষ্ঠা এবং আমার প্রদত্ত রুযী থেকে ব্যয় করে তারাই হল সত্যিকারের ইমানদার [আল-আনফাল(৮)/৩-৮]
বেনামাজি যে ইমানদার হতে পারেনা তার স্পষ্ট দলিল হল রসূল(সঃ)এর হাদিস ও সাহাবিদের উক্তি । কেননা তাঁরা তাদের স্পষ্টভাবে কাফের বলেছেন। রসুল(সঃ) বলেনঃ بَيْنَ الرَّجُلِ وَالْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ “(মুসলিম)ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হল নামায ত্যাগ করা” [মুসলিম:১১৬ ,মিশকাতঃ৫৬৯]
لْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ “আমাদের মাঝে আর তাদের( অমুসলিম বা কাফের দের) মাঝে চুক্তি হল নামায, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে যাবে” [নাশাই,তিরমিজি,ইবনে মাজা, আহমদ:২১৮৫৯, মিশকাতঃ৫৭৪(বাংলাঃ৫৭২) ]
সাহাবিদের মধ্য থেকে মুলিমজাহানের দ্বিতীয় খলীফা ওমর বিন খাত্তাব(রাঃ) বলেনঃ لصَّلاَةَ تَرَكَ لِمَنْ لْإِسْلاَمِ فِي اَحَظَّ “যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ইসলামে কম বা বেশি কোন অংশ নেই” । [ মুআত্বা মালেক ]
এ ছাড়া প্রখ্যাত তাবেই আব্দুল্লাহ বিন শাক্কীক আল বোকাইলি (রঃ) বলেন, “নবী (সঃ)এর সাহাবি গণ নামায ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাওকে কাফের মনে করতেন না” । [তিরমিজি, মিশকাতঃ৫৭৯ ]
আর কাফেরদের সম্পর্কে আল্লাহতালা বলেনঃ তাদের মৃত্যু হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি মধ্য দিয়ে। ২৪ তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তত আছে যাতে তারা চিরকাল থাকবে ও কোন সাহায্য কারি পাবেনা এবং তার বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য করতাম। ২৫
বেনামাজির আখেরাতে বিপত্তি
বেনামাজিরা কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থাই উপস্থিত হবে। ২৬ তারা সেখানে ফেরাউনের মতো বড় বড় কফের নেতাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। ২৭ সেদিন তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবেনা। ২৮ সে সেদিন সর্বপ্রথম সালাতের বিচার হবে। সালাতে যারা গাফেল তারা এতে উত্তীর্ণ হতে পারবেনা। ২৯ রসুল(সঃ) বলেন, “অতঃপর সেদিন মহান আল্লাহ স্বীয় পায়ের পর্দা উন্মোচন করবেন, তখন প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি যারা পৃথিবীতে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহকে সিজদাহ্ করেছিল তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে- তারা আল্লাহর জন্য সিজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যারা মানুষকে দেখানোর জন্য, মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করেছিল তারা সিজদাহ্ করতে পারবে না। তাদের পৃষ্ঠদেশ শক্ত হয়ে যাবে- বাঁকা হবে না। যখনই তারা সিজদাহ্ করার ইচ্ছা করবে তখনই পিছনের দিকে চিৎ হয়ে উল্টে পড়ে যাবে (বুখারি ও মুসলিম)।
যে ব্যক্তির নামায ঠিক নেই তার অন্য কোন আমলের মূল্য নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিয়ে ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হচ্ছে নামায। যদি নামায গ্রহণীয় হয় তবে সমস্ত আমল গ্রহণীয় হবে। আর নামায যদি প্রত্যাখ্যাত হয় তবে যাবতীয় আমল প্রত্যাখ্যাত হবে। (হাসান সনদে ত্ববরাণী, সহীহ্ জামে সগীর, সিলসিলা সহিহাঃ১৩৫৮)
এছাড়া মহানবী (সঃ) বলেছেন , "নামায ৩ ভাগে বিভক্ত; এক তৃতীয়াংশ পবিত্রতা, এক তৃতীয়াংশ রুকু এবং আর এক তৃতীয়াংশ হল সিজদাহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থ রূপে আদায় করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবে এবং তার অন্যান্য সমস্ত আমলও কবুল করা হবে। আর যার নামায রদ্দ্ করা হবে, তার অন্য সকল আমলকে রদ্দ্ ক'রে দেওয়া হবে। " [বাযযার, সিলসিলা সহীহাহ ২৫৩৭]
বেনামাজি জান্নাতের আশা করতে পারেনা। কেননা কেবল নামাজিরায় এর দাবীদার। এব্যাপারে আল্লাহতালা বলেনঃ “এবং যারা তাদের সাক্ষ্যদানে সরল-নিষ্ঠাবান এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান,তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে। অতএব,কাফেরদের কি হল যে, আপনার দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে। ডান ও বাম দিক থেকে দলে দলে। তাদের প্রত্যেকেই কি আশা করে যে, তাকে নেয়ামতের জান্নাতে দাখিল করা হবে ? কক্ষনো নয় [ সূরা আল-মারিজ(৭০)/৩৩-৩৯] ৩০
নামায পরিত্যাগ জাহান্নাম লাভের একটি প্রধান কারণ হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ
“বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না’[সুরা আল-মুদাসসির(৭৪)/৪২-৪৩]
কেয়ামতের মাঠে বেনামাজিদের ভয়ঙ্কর ব্যক্ত করে আল্লাহতালা বলেনঃ “সে বিশ্বাস করেনি এবং নামায পড়েনি; পরন্তু মিথ্যারোপ করেছে ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। অতঃপর সে দম্ভভরে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়েছে। তোমার দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। অতঃপর, তোমার দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। , [ সূরা আল-কিয়ামাহ(৭৫)/৩১-৩৫]
বেনামাজি দের জন্য দুনিয়াবি বিধান
আমারা জানি মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই তবে বেনামাজি এর আওতাই আসে না। কেননা আল্লাহ বলেন “অবশ্য তরা যদি তওবা করে নামায আদাই করে , তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। [ আত-তওবা(৯)/১১ ]
শুধু তাই নয়, বেনামাজি যদি তওবা করে নামায আদায়ে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তবে সেক্ষেত্রে সরকারী আইন প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করা যাবে এব্যাপারে ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম সাফিই (রহঃ), ইমাম ইবনে হাম্বল (রহঃ) সহ প্রাই সকল ইমামই ঐক্য মত পোষণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, কেবল ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এক্ষেত্রে তাকে জেলে বন্দি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ৩১
এছাড়া আরবের বিখ্যাত আলেম, এককালীন লাজমা দায়মা ফতওয়া বোর্ডের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘হূক্মে তারকুস সলাহ্’ বানামক গ্রন্থে নামায ত্যাগকারীকে কাফের ও মুরতাদ হিসেবে উল্লেখ করে, তার জন্য মোট ছয়টি বিধান সমূহের উল্লেখ করেনঃ
* ১) বেনামাজি কোন মসুলিম মেয়ের অভিভাবকত্ব করতে পারবে না।
দলিল: ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, সঠিক বুদ্ধি সম্পন্ন ওয়ালী ব্যতীত বিবাহ হবে না । আর সব চেয়ে জঘন্য নির্বুদ্ধিতা হল নামায ত্যাগ করা আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন “ইব্রাহীম নবীর ধর্ম থেকে ঐ ব্যক্তিই বিমুখ হবে যে নিতান্ত বোকা । [ সূরা আল-বাকারা(২)/১৩০]
* ২) সে নিকটাত্মীয়দের মিরাশ থেকে বঞ্চিত হবে।
দলিলঃ لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ “মুসলিম কাফেরের ওয়ারিশ হবে না এবং কাফের মুসলিমের ওয়ারিশ হবে না৷ [ বুখারি ও মুসলিম]
* ৩) সে মক্কা ও তার হারাম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।
দলিলঃ “হে মুমিনগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে৷” [ সূরা তাওবাহ ২৮ আয়াত ]
* ৪) তার যবেহকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া হারাম।
দলিলঃ খাযিন তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন – قل الخازنفي تفسيره اجمعوا عاى تهريم ذباءح المجوس وساءر اهلالشر من مشركي المرب وعبلة الا صنامومن لاكتاب له বিদ্বানগণ ঐকমত পোষণ করেছেন যে, অগ্নি পূজারী, শির্কপ্রন্থী, আরবের মুশরিক, প্রতিমা পূজারী ও কিতাব হীনদের জবেহকৃত পশু হারাম।
*৫) তার জানাযা পড়া, মাগফিরাত ও রহমতের জন্য দুআ করা হারাম।
দলিলঃ “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফরমানদেরকে পথ দেখান না। [সূরা তওবা(৯)/৮০]
“আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবোরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রসূলের প্রতিও। বস্তুত তারা না ফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। [ আত তওবা(৯)/৮৪ ]
"নবী এবং অন্যান্য মুমিনদের জন্য জায়েজ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে৷ যদিও তারা আত্মীয়ই হোক না কেন, একথা প্রকাশ হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী৷" [সূরা তাওবাহ (৯)/ ১১৩ আয়াত ]
*৬) কোন মুসলিম মেয়েকে তার সাথে বিবাহ দেয়া হারাম।
দলিলঃ " যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন নারী, তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিও না৷ মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্যে বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যে বৈধ নয়৷" [ সূরা মুমতাহিনাহ্ (৬০): ১০]
প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ যোগ্য যে, মুগনি গ্রন্থের ৬ খণ্ডের ২৯৮-৩৪০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে বেশিরভাগ ইমাম ও ওলামাদের মত অনুযায়ী বিবাহের আগে থেকে বা বিবাহের পরে স্বামী বা স্ত্রী কিংবা উভয়েই যদি নামায ত্যাগী হয় তবে বিবাহ বাতিল হবে বলে যুক্তি পেশ করেছেন। অবশ্য এবিষয়ে আলেমদের মধ্য মতানৈক্য রয়েছে ।
তবে যারা নামায আদায় করেন না তারা নিরাশ হবেন না। আপনাদের জন্য এখন তওবার দরজা এখনো খোলা আছে।
মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [ সূরা আল-ফুরকান(২৫)/৭০]
তবে আল্লাহ মৃত্যু কালীন তওবা কবুল করেন না। ৩২ এবং সেই দিন কার কবে কোথায় আসবে সেই জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারও নেই। ৩৩ তাই এখনই তওবা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় শুরু করে দিন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। কেননা ইমান আনার পরেও মানুষ পুনরায় কাফের হতে পারে। ৩৪
আপনাদের কাছে আরও অনুরোধ নামায সঠিক নিয়মে কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আদায় করুন। আপনার নামায যেন মুনাফিকের নামযের ন্যায় না হয়। ৩৫ তা না হলে আপনার জন্য অয়েল জাহান্নাম নির্ধারিত। ৩৬ আর মুনাফিক দের স্থান জাহান্নামের নিম্নস্তর এবং সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। ৩৭
এর পরেও যদি আপনি এই আহ্বানে সাড়া না দেন তাহলে আপনার সম্পর্কে আল্লাহ তালা বলেনঃ “আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর,তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ,তারা নির্বোধ। [সূরা আল মায়েদা (৫)/৫৮]
আল্লাহ আমাদের ও সকল মুসলিমদেরকে নিয়মিত সঠিকভাবে নামায আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমীন।
[ [ বিষয়টি আন্যদেরকাছে শেয়ার করুন মুসলিম হিসাবে এটি আপনার দায়িত্ব ।
এতে করে আপনি আমোলকারির সমপরিমাণ সোওয়াবের আধিকারি হবেন ইনশাল্লাহ। ৩৮]
=======================================================================================
১.বুখারিঃ৩৪২, মিশকাতঃ২৯ ২.আলাক(৯৬)/১৯, মুসলিমঃ৭৪৪ ৩.মুসলিমঃ৪৯৭ ও ৩৪৪,আহঃ৯৭৭৭,২০৫৬৭,মিশকাতঃ১২৩৪ ৪.মিশকাতঃ৫২৭ ৫.বাকারাঃ(২)/২৩৮, নিসা(৪)/১০১-১০৩ ৬.মুসলিমঃ১১৬ ৭.সিলসিলা সহীহাঃ২৫৩৭ ৮.তিরমিজিঃ৩৫৪১ ৯.আহমদঃ,সহি আল জামেঃ৫০৭৫,৫৪৭৮ ১০.আহমদঃ৫১৫৬,এবনে মাজাঃ২৬৯৮ ১১.আহজাবঃ(৩৩)/৪০ ১২. বাকারা(২)/২১৬ ১৩.আনকাবুত(২৯)/৪৫ ১৪.৯-এর রেফারেন্স ১৫.আহমদঃ৯৭৭৭, মিশকাতঃ১২৩৭ ১৬.যারিয়াত(৫১)/৫৬ ১৭.আনকাবুত(২৯)/৬৪, হাদিদ(৫৭)/২০ ১৮.যারিয়াত(৫১)/৫৮, মায়েদা(৫)/১১৪ এবং আন-নুর(২৪)/৩৮ ১৯.হুদ(১১)/১১৪, রুম(৩০)/১৭-১৮; বুখারিঃ৩৪২,মিশকাতঃ২৯ ২০.কাসাস(২৮)/৫০, কাহাফ(১৮)/২৮, মারইয়াম(১৯)/৫৯, ত্বোয়া-হা(২০)/১৬ ২১.আরাফ(৭)/১৭৬ ২২.ফুরকান(২৫)/৪৩, জাসিয়া(৪৫)/২৩ ২৩.আন-আম(৬)/৮৮, যুমার(৩৯)/৬৫ এবং নিসা(৪)/৪৮, মায়েদা(৫)/৭২, ২৪.আনফাল(৮)/৫০ ২৫.আহযাব(৩৩)/৬৪-৬৬ ২৬.ত্বোয়া-হা(২০)/১২৪ ২৭.আহমদঃ৫৬৭৬,মিশকাতঃ৫৭৮ ২৮.ইমরান(৩)/২২, কাসাস(৪)/১২৩, ২৯.কলম(৬৮)/৪২-৪৩ ৩০.এই প্রকার আরো কুরানের আয়াতঃ আম্বিয়া(২১)/২৩, মুমিনূন(২৩)/৮-১১ ৩১.আলকাবাইরঃ৪০পৃঃ ,মিরক্বাতঃ২/১১৩-১৪ পৃঃ ৩২.নিসা(৪)/১৮ ৩৩.লোকমান(৩১)/৩৪ ৩৪. মুনাফিকূন(৬৩)/৩, ইমরান(৩)/৯০ ৩৫.নিসা(৪)/১৪২, তাওবাহ(৯)/৫৪ ৩৬.মাউন(১০৭)/৪-৬ ৩৭.নিসা(৪)/১৪৫ ৩৮.মুসলিমঃ২৬৭৮
=======================================================================================
*** *** মুহাম্মদ বিন সালেহ আল ওসাইমীন(রহঃ) এর "সালাত ত্যাগকারীর বিধান” বা "হুক্মে তারকুস সলাহ্" বইটি এখান থেকে ডাউনলোড করুন।
**ফেসবুকে আমার ঠিকানা https://www.facebook.com/nasim.firoz.5
আমি নাসিম ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 49 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।