ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র যখন রিকশাচালক (যিনি সত্যি কারের দেশপ্রেমিক) !!!!!!

আমার এই পোস্টটি মোটেই  Tech রিলেটেড কোন পোস্ট নয়। কিন্তু পোস্ট টি পড়ার পর শেয়ার না করে পারলাম না। আসল পোস্ট এর reference নিচে অ্যাড করে দিয়েছি।


ধানমন্ডিতে গিয়েছিলাম কিছু কাজে। বাসায় ফিরব বলে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছি, রিকশা পাচ্ছিলামনা। যে রিকশাই দেখি, রিকশাওয়ালা ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ চেয়ে বসে। মেজাজটা এমনিতেই খারাপ কারণ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলছিলাম। হঠাৎ একজন হ্যাঙলা পাতলা মতন ছেলে আমার সামনে রিকশা নিয়ে এসে বলল,“স্যার কোথায় যাবেন?” আমি একটু অবাক হলাম, কারণ রিকশাওয়ালারা সচরাচর স্যার বলে না, “মামা বলে”; আমি তাকে বললাম বকশিবাজার যাব, বোর্ড অফিসের পাশে। সে আমারকাছে ঠিক ঠিক ভাড়া চাইল। আমি মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লাম, মনে করলাম এতক্ষণ পরে মনে হয় আধ্যাত্নিক সাহায্য এসে হাজির হয়েছে। যাইহোক বেশি চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি রিকশাই উঠে পড়লাম। মনে মনে বললাম “আহ্‌! এখন একটু শান্তিমত মানুষ দেখতে দেখতে বাসায় যাওয়া যাবে”; ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে রিকশায় যাওয়াকে অনেক এনজয় করি। তবে সেদিনের রিকশা ভ্রমনটা একটু আলাদা ছিল। খেয়াল করছিলাম রিকশাওয়ালা অনেক সাবধানে চালিয়ে যাচ্ছিল। কাউকে গালি দিচ্ছিল না। অন্যের রিকশার সাথে লাগিয়ে দেওয়ার আগেই ব্রেক করছিল। কেউ তাকে গালি দিলে সে কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিজের রিকশা চালানোতে ব্যস্ত ছিল। কিছুক্ষন পরে একটু অবাক হলাম, রিকশা যখন ঠিক ঢাকা কলেজের সামনে আসল, তখন রিকশাওয়ালা মুখে কাঁধের গামছাটা ভাল করে পেচিয়ে নিল। তার চেহারা ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না। ভেতরে ভেতরে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম, ভাবছিলাম এইবুঝি ছিনতাইকারী ধরবে। নিজেকে সামলিয়ে নিতে রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলা শুরুকরে দিলাম। সেই একই রকমের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলাম, “মামা বাড়ি কোথায়?” সে একিরকম উত্তরদিল, রংপুর। পরের প্রশ্ন করার আগেই বলল “স্যার বেশিদিন হয় নাই রিকশা চালাই”; স্বভাবতই জিজ্ঞাসা করলাম ঢাকা আসছ কবে? সে উত্তর দিল, “দুই বছরের কিছু বেশি হয়ছে”; এভাবেই অনেক কথা হল। একসময় হঠাৎ চালাতে গিয়ে আমার পায়ে টাচ্‌ লাগায় সে বলল,“সরি স্যার”; একটু অবাক হলাম তারম্যানার দেখে। তাকে প্রশ্ন করতেদেরি করলাম না, “বললাম তুমি কি পড়ালেখা কর?” সে বলল, “স্যার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, ঢাকা কলেজে”; হতভম্ব হয়ে গেলাম। তার পোশাক আশাক চলন গড়ন আবার নতুন করে দেখা শুরু করলাম। দেখলাম পড়নে একটা প্যান্ট অনেক ময়লা, শার্টের কিছু জায়গায় ছেঁড়া। স্বাস্থ্য এতই কম যে মনে হয়, অনেক দিন না খেয়ে আছে। কৌতুহলবশত প্রশ্ন করলাম তুমি রিকশা চালাও কেন? সে বলল, তারা তিন বোন, এক ভাই। তার বাবা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে, মা ছোট থেকেই নেই। আগে বাবা দেশে দিনমজুর ছিল। এখন বাবা মারা যাওয়ার পরে তার তিন বোনকে সে ঢাকায় নিয়ে এসেছে, স্কুলে ভর্তি করিয়েছে, থাকে কামরাঙ্গির চরে, একটি রুম ভাড়া নিয়ে। কিছুদিন আগে তার দুইটি টিউশনি ছিল এখন একটিও নেই। সংসার চালানোর জন্য টাকা নেই যথেষ্ট, তাই উপায় না পেয়ে রাতের বেলা রিকশা চালাতে বের হয়েছে। মাঝে মাঝেই বের হয় এমন। তবে অনেক ভয়ে থাকে, যখন সে ঢাকা কলেজের পাশে দিয়ে যায়। পরিচিত কেউ দেখে ফেললে ক্লাস করাটা মুশকিল হয়ে যাবে। নিজে থেকেই বলল, “আমাকে হয়তো বলবেন অন্য কিছু করোনা কেন?” তারপর নিজে থেকেই উত্তর দেওয়া শুরু করল, পোলাপাইন অনেকে দেখি রাজনীতি করে, অনেক টাকা পায়, আবার অনেকে প্রতিদিন একটা করে মোবাইলের মালিকও হয়। কিন্তু আমার এমন কিছু করতে মন চায় না। সবসময় মনে করি একটা কথা, এই দেশকে কিছু না দিতে পারি কিন্তু এই দেশের কাছে থেকে জোর করে কিছু কেড়ে নিব না। আমার কাছে দেশ মানে আপনারা সবাই। আপনাদের সাথে কোন বেয়াদবি করা মানে দেশের সাথে নিমকহারামি করা। এই যে দেখেন আপনারা আছেন বলেই তো আমি এখন রিকশা চালায়ে কিছু টাকা আয় করতে পারছি। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে বলল স্যার চলে আসছি। আমি তাকে কিছু বেশি টাকা জোর করেই হাতে ধরিয়ে দিলাম। মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। বাসায় এসে কোন কথা না বলেই শুয়ে পড়লাম বিছানায়।

মনে মনে ভাবছিলাম দেশপ্রেমটা আসলে কি? আমরা যখন অনেক বড় বড় কথা বলি, অনেক অনেক বড় বড় লোকের উদাহরণ দেই, বলি যে, “কি বিশাল দেশপ্রেমের উদাহরণ” কিন্তু আজকে যা দেখলাম, তা থেকে আমার মাথায় প্রোগ্রাম করা দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা বদলে গেল এবং কিছুটা অবাকই হলাম এইটা ভেবে, পাঠ্যবইয়ে কোথাও দেশসেবার কোন বিশদ উদাহরণ দেখিনাই বাস্তব ক্ষেত্রে। যা পড়েছি সবই তো এখন ইতিহাস। এখন অনেক বড়, দেশের সেবা করতে গেলে আসলে আমাদের কি করা উচিৎ? ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবার পরে ছোট মস্তিস্ক থেকে কিছু ছোট ছোট উত্তর মিলেছেঃ
আমার কাছে মনে হয়েছে দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষকে ভালবাসা, আর দেশের সেবা মানে দেশের মানুষের সেবা করা।

অনেকের কাছে দেশের সেবা করা মানে হল শুধু গ্রামে গিয়ে গরিব শ্রেনীর মানুষকে সাহায্য করা, স্কুল তৈরি করে দেওয়া, রাস্তার পাশে খেতে না পারা ছেলেমেয়েকে খাওয়ানো, পড়ানো, শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। এইসব অবশ্যই ভালকাজ, দেশের সেবা, কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এইরকমের কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করতে পারিনা। তারমানে কি আমরা প্রতিনিয়ত দেশের সেবা করতে পারব না? আরেকটু চিন্তা করে উপলব্ধি করা যায় যে, আমরা প্রতিনিয়ত যা করছি আমাদের কর্মজীবনে, সেটাকে ঠিকমত করাটাই হল দেশপ্রেম।

আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশকে স্বাধীন করে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছেন, এই আমানতকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটাই হচ্ছে দেশপ্রেম।

Reference 1
Reference 2

Level 0

আমি জি এম নাজমূল হোসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 17 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

এই রকম রিকশাচালক ছাত্র দেশে অনেক আছে কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই ।

ভাইয়া কিছু মনে করবেন না প্রথমে আমার নিজের একটা ঘটনা শেয়ার করব এরপর একটা গানের কয়েকটা লাইন,এই টিউনটা স্টিকী করার আবেদন রইল সাথে।

১. বেশ অনেক বছর আগে আমিও একটি রিকশাচালক এর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম যিনি মাস্টার্স পরছেন আর চাকরি হারিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন।এদের দেখলে খুব ইচ্ছা হয় জড়িয়ে ধরতে কিন্তু ভয় পাই যদি ভুলেও এতে তারা কষ্ট পান

২.দেশ মানে কেউ ভোরের স্লেটে লিখছে প্রথম নিজের নাম
হাওয়ার বুকে দুলছে ফসল একটু বেঁচে থাকার দাম

সব মানুষের স্বপ্ন তোমার চোখের তারায় সত্যি হোক
আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক

যে দেশে এখনও এমন কিছু দেশপ্রেমিক জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সে দেশের আগানো কেউ রুখতে পারবেনা।নিজের স্থান থেকে একটা করে ভাল কাজ আমরা করলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।সেই নতুন দিনের শুভকামনায় তাই বসে থাকি

জি এম নাজমূল ভাই আল্লাহ বলছে হে মানুষ তুমি অন্য মানুষের ভাল চাও, তাহলে আমি আল্লাহ তোমার জন্য ভাল চাবো।

    নিভৃতে থাকা এসব দেশপ্রেমিককে সালাম । তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিই বা করার আছে আমার।

Level 0

Ai kothata amader mone rakha dorkar je.
Ami jodi ekjoner upokar korte na pari, tahole khoti korbo kon odhikare.

ভাই লেখাটা আমি আরো মাস খানেক আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম। আমি ঢাকা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। কিন্তু খুব বেশি অবাক হইনি। কারন, আমি জানি পাবলিক বা ঢাকা সিটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে, এবং যারা রংপুর, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগা এসব জেলা থেকে এসেছে তারা কতটা সহজ সরল আর সাদাসিধা হয়। আমি এমন অনেকেই চিনি যারা চা স্টলে চা বিক্রি করে আর প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্ট এসে বলে, ওই দুই কাপ চা দেও তো!! আসলে এটা রুপক অর্থে বললাম। কারো মনে কষ্ট নেয়ার দরকার নেই। সে যাক্‌গে, এটা ওর সাময়িক বিরম্ভনা। আশা করি দ্রুতই কেটে যাবে আর, ও ভালো কিছু টিউশনি যোগাতে পারবে।
শুভকামনা রইলো পোস্টদাতা এবং পোস্টের হিরোর জন্যে!!

Level 0

লেখাটা পড়ে সত্যিই মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল, এত কষ্ট করেও সে পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছে

hmmmmmmmmm ami j ki bolbo bujhte parchi nah

Share Korar jonno Tnx 😀

দেশ একজনের বাপের আর একজনের জামাইর……। দেশের মানুষ, আপনি আর আমি ঢেউটিন…।।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ……।।

লেখাগুলো পরে মনটা খারাপ হয়ে গেল।আশা করি সে পরে থাকবে না এই অবস্থাতে।
এই লেখা সমাজের উচু শ্রেণীদের পরলে আরো ভাল হত। ধন্যবাদ।

এতিমদের জন্য আমার শুভ কামনা রইল। তারা যেন মনকে শক্ত করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার জন্য ও………

Level 0

এই ছেলের কথা শুনে কষ্ট লাগে এত কষ্ট করে সে লেখাপড়া করে যাচ্ছে বোনদের জন্য নিজের জন্য। এর প্রতিদান হয়তো সে পাবে কিংবা পাবে না। অথচ একই বয়সী ছেলেরা অযথা অর্থ নষ্ট করছে এটা সেটা করে 🙁 নীতি নৈতিকতা যে কোন পর্যায়ের মানুষকেই বড় করে তুলতে পারে সে চায়ের দোকানদান হোক কিংবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করে হোক।

Level 2

“আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশকে স্বাধীন করে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছেন, এই আমানতকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটাই হচ্ছে দেশপ্রেম।”—–সব কথার শেষ কথা এটাই .

আমি কিছু বলার মত কোন ভাষা খুজে পাচ্ছি না ।

দাদা কি লিখবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমি যে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। নিজের অজান্তেই দু’চোখের কোণ বেয়ে বাদলের ধারা বইতে লাগল। উপদেশ রইল নেতা নামের সেই সব ভন্ড জানোয়ারদের জন্যে, যা ঐ ছেলের পদযুগলে মাথা ঠুকিয়ে শিখে নে দেশপ্রেম কাকে বলে।

হায় রে বাঙ্গালী !!! কি পারিস তোরা ? শুধু দেখেই যেতে পারিস,সাহায্য করতে নয় । এখন আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি,দোয়া করছি কিন্তু সাহায্য করার লোক নাই । বহত দুঃখ লাগতাছে,করার কিচ্ছু নাই । দেখি বড় হইয়া এই ধরণের মানুষরে সাহায্য করতে পারি কি না । দোয়া থাকলো আপনার জন্য আর আপনার সিনেমার হিরোর জন্য !!!

Level 0

পড়তে পড়তে চোখে পানি এসেগিয়েছিল। কি নিয়ে আমরা এত বড়াই করি? কিভাবে আমরা পারি ডিজে ক্লাব কিংবা বড় বড় রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ডেট করতে! যেখানে আমাদের সমবয়সী ভাই এরকম কষ্ট করে জীবন নির্বাহ করছে।

Level 0

এ দরনের কিছু মানুষ আছে বলেই দেশটাতে বাছতে ইচ্ছে করে। ওদের মনের কথা শুনার জন্য । আসলে এমন মানুষ আমাদের দেশে আরও অনেক আছে কিন্তুু আমরা তাদের জন্য কিছু করতে পারিনা। সরকার বাদ দেন আমাদের দেশে অনেক কুটিপতি লোক আছে যারা কুকুরের পিছনে ডেলি ৫০০০ হাজার টাকা খরচ করতে পারকে বাট ঘরের কাজের মেয়ে কে ভালো একটা জামা কিনে দিতে তার কষ্ট হয়।