মনোবিজ্ঞান বা সাইকোলজির মতে, যে ৪টি কথা কখনই কাউকে বলবেন না বা বলা উচিতও নয়

টিউন বিভাগ মনোবিজ্ঞান
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। বন্ধুরা, আজকে আমি আমার অন্যান্য টিউন এর চাইতে এক এক ব্যতিক্রমী টিউন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। যেখানে আমার নিত্যদিনকার সব টিউন থাকে টেকনোলজি নিয়ে, সেখানে আজকের টিউনটি সাইকোলজি বিষয়ক। আশা করছি বরাবরের মতো আজকের টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে।

বন্ধুরা আজকের এই টিউনে আমি আলোচনা করব ব্যতিক্রমী কিছু কথা। এই টিউনে আমি সাইকোলজির কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যেখানে আজকের টিউনের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, "কোন কোন বিষয়গুলো সম্পর্কে অন্যদেরকে জানানো উচিত নয় বা বলা উচিত নয়"। তবে আজকের টিউনটি অনেক দীর্ঘ হতে চলেছে; কিন্তু আজকের এই টিউনে আমি যেসব বিষয় গুলো বলবো সেগুলো সমস্তই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আর এজন্য অবশ্যই আপনাদেরকে সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে দেখার অনুরোধ করছি। এতে করে আপনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে পারেন যে কোন বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত নয় বা শেয়ার করা উচিত নয়। চলুন তবে আজকের টিউনটি শুরু করি।

১. নিজের ভবিষ্যৎ ও লক্ষ্যের কথা কাউকে না বলা

আপনার সাথে কি এমন হয়েছে যে, আপনি সবে মাত্র কয়েকদিন হল সকালবেলা উঠে ব্যায়াম করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছেন বা দৌড়াতে যেতে শুরু করেছেন; এবার সেখানে একজন বন্ধুর সঙ্গে কথায় কথায় বলে ফেললেন যে আমি তো এখন রোজ সকালবেলা দৌড়াচ্ছি। এবার হয়তো বা আমি একমাসের মধ্যে 5 থেকে 10 কেজি ওজন কমিয়েই ছাড়বো। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার বন্ধু বলল যে ভালো তো, তবে আমিও কয়েক দিন এভাবে শুরু করেছিলাম; কিন্তু কয়েকদিন যাবার পর আর ভালো লাগেনা। আর কোন একটি অজানা কারণে পরবর্তীতে আপনিও আর দৌড়াতে যাওয়া চালু রাখতে পারেন না। আর আপনার সাথে এমন টি কেন হয় জানেন?

আমরা যখন নিজেদের লক্ষ্যের ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করি তখন সেই মুহূর্ত থেকে আমাদের মাঝে একটি গর্বিত এবং তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি কাজ করতে থাকে। এটা আসলে সেই লক্ষ্যটি পূরণ হবার পর যে তৃপ্তি পাওয়া যেত, তখন সেই অনুভূতিই প্রায় কাজ করে। যার কারণে সেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিয়ে পূরণ করার আগেই শুধুমাত্র অন্যদের সঙ্গে সেটি নিয়ে কথা বলেই সেই লক্ষ্যটি নিয়ে আমাদের খিদেটা অনেকটাই কমে যায়। ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সেই লক্ষ্যটি পূরণ করার কাজটিই বন্ধ করে দেই। সাইকোলজিরা এই বিষয়টিকে বলে সোশ্যাল রিয়েলিটি (Social Reality)।

তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো এটাই যে, সেই লক্ষ্যটি পূরণ হবার পরেই কাজটির কথা অন্য কাউকে বলা বা আলোচনা করা। আর তাছাড়া আপনি যদি বড় বড় সব স্বপ্নের কথা বলে সে গুলোকে পূরণ করতে না পারেন তবে তাহলে এরকম অনেক মানুষ ঘাপটি মেরে বসে থাকবে আপনার সেই ব্যর্থতাকে মনে করে দেবার জন্য। যেখানে তারা আপনাকে নিয়ে অনেক ঠাট্টা করবে। তাই সবচাইতে ভালো হয় যদি আপনি আপনার লক্ষ্যটাকে পূরণ না করে অন্য কাউকে বলেন।

এই কথাটি কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কাজের জন্য নয়। বরং আপনি যদি এমন কোন কাজ করেন যেটি প্রায় অসম্ভব বটে কিংবা অনেক দুঃসাধ্য; সেসব কাজের ক্ষেত্রে আপনি সেই কথাটি অন্য কাউকে না বললেও হবে। কেননা সেই অসম্ভবকে আপনি যদি সম্ভব করার কাজটি শুরু করতে চান এবং সেই কাজটি আপনি শুরু করেন তবে অনেক মানুষই থাকবে যারা আপনাকে বাধা দিবে। আপনার চারপাশে হয়তো বা এমনও মানুষ রয়েছে যারা আপনার সব সময় ভালো চায়না। আর এক্ষেত্রে আপনি যদি তাদের কাছে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলে দেন তবে তারা তো আপনার কাজটিকে ভেস্তে দেবার সবরকম চেষ্টাই করবে।

তাই আপনি সকালবেলা দৌড়ান অথবা ভবিষ্যতের জন্য কোন কাজ করুন; এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে না খুব প্রয়োজন ছাড়া অন্য কাউকে আপনার আইডিয়ার আর কথা বলা। কিন্তু আপনি যদি ব্যবসায়িক আইডিয়া বা অন্য কোন এমন আইডিয়া খুঁজে বের করেন যেটি অন্য একজনার সঙ্গে শেয়ার করলে ভালো হবে তবে সেক্ষেত্রে এটি করতে পারেন। কেননা কোন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনার যে আইডিয়া রয়েছে অন্য কারো কাছে আপনার চাইতেও অনেক ভাল আইডিয়া থাকতে পারে। এছাড়া সেই ব্যবসার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে অন্য কেউ অনেক অভিজ্ঞ হতে পারে। তবে দুঃসাধ্য এবং ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্যের ব্যাপারে অন্য কাউকে না বলাই অনেক ভালো।

আর এতে করে আপনি যদি সেই কাজে সফল হয়ে যান তবে ভবিষ্যতে আপনি সেই কাজটির ফলাফল সম্পর্কে আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনকে সারপ্রাইজ এর মত করে জানাতে পারবেন। ‌যেখানে শুধুমাত্র আপনার সাফল্যই নয়, বরং আপনার কাজটি ও সঠিকভাবে হবে। যেখানে আপনি যদি অনেক লোককে বলে কাজটি করতেন, তবে কাজ করার সময় অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ও পরতে পারতেন। কেননা আপনি যে কাজটি করছেন সেটা ভাল হল নাকি মন্দ হলো এটি অবশ্যই সেই মানুষেরা দেখবে এবং এক্ষেত্রে আপনার কাজের মানসিকতা হারাতে পারে

২. আপনার আর্থিক অবস্থার কথা কাউকে বলবেন না

হয়তোবা আপনি এবং আপনার বন্ধু প্রায়ই এদিক ওদিক খাবার জন্য বের হন। এতদিন আপনার সেই বন্ধু হয়তোবা জানতো আপনার এবং তার ইনকাম একই। এক্ষেত্রে খাবার খেতে গিয়ে আপনাদের দুইজনের যে বিল হতো, তা আপনার বন্ধু এবং আপনি হয়তোবা সমান করে দিতেন। কিন্তু আপনার যে বর্তমানে প্রমোশন হয়েছে সেটি আপনার বন্ধু জানতো না। কিন্তু যেদিন থেকে আপনার বন্ধু জানতে পারল যে আপনার বেতন দ্বিগুণ হয়েছে, সেদিন থেকে সে কোন জায়গায় বিল পরিশোধ করার আগে আপনাকে বলবে; "এই যে বন্ধু তোর তো এখনো অনেক ইনকাম, আমাদের খাবারের বিল টা তো তুই দিতে পারিস"।

এবার এমনও হবে যে, কিছুদিন পরে সে আপনার থেকে বিশাল পরিমাণ টাকা ধার চাইবে। এক্ষেত্রে আপনি জানেন যে আপনার সেই বন্ধুটি পরবর্তীতে আপনাকে টাকা দিতে অজুহাত করবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও আপনার কিছু করার থাকবে না, কেননা আপনি সেই মুহূর্তে তাকে বলে দিয়েছিলেন যে আপনার বেতন অনেক পরিমাণে। আপনি যে ক্ষেত্রে কোনো বাহানা দিয়ে তার কাছ থেকে পরিত্রান পাবেন সেটি সম্ভব নয়। কেননা সে সেই মুহূর্তে জানে যে, আপনার মাসিক আয় কত।

আবার এক্ষেত্রে অনেক সময় উল্টোও হতে পারে। অনেক সময় দেখা গেল যে, আপনার সেই চাকরিতে চলে গেল অথবা আপনি সেই চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন চাকরিতে যোগ দিলেন। এবার সেই চাকরিতে হয়তোবা আপনার বেতন আগের চাকরির থেকে অনেক কম কিংবা তার অর্ধেক হয়েছে। এবার আপনি যদি সেই বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার চাইতে যান তবে সে আপনাকে ক্ষেত্রে ইগনোর করতে পারে; কেননা সে সেই মুহুর্তে ও ধরেই নিয়েছে যে আপনার কাছে এই মুহূর্তেও অনেক টাকা রয়েছে। তাহলে টাকা বেশি থাকলেও বিপদ। আবার টাকা কম থাকলেও বিপদ।

তবে আমি এখানে বলছি না যে কাউকে আপনি সাহায্য করবেন না। আপনাকে অবশ্যই বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কে সাহায্য করা উচিত। তবে আমি এখানে পরিস্থিতির কথা বললাম। যেমন ধরুন, আপনি যদি অন্য কোন চাকরিতে ও যোগ দেন এবং সেখানে যদি আপনার বেতন কম হয়, তবে এক্ষেত্রে আপনার সেই বন্ধুটি আর সেই কথা বিশ্বাস করবে না। এছাড়া আপনি যদি কোনো আর্থিক সংকটে ও পড়েন তবে সে ক্ষেত্রেও তারা বিশ্বাস করতে চাইবে না যে আপনার কাছে কম পরিমাণে টাকা রয়েছে। কেননা আপনি ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন যে আপনার মাসিক বেতন অনেক পরিমাণে এবং আপনার আয় ও অনেক।

তাই আপনার কাছে বর্তমানে কত টাকা রয়েছে এবং আপনার মাসিক ইনকাম কত সেটি ঢাকঢোল পিটিয়ে কাউকে বলার দরকার নেই। কারণ এতে আপনার সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না। শুধু যে আপনার বেশি টাকা থাকলেই সেই কথাটি কাউকে বলা যাবে না এমন নয়। বরং আপনার কাছে যদি কম পরিমাণ টাকা থাকে এবং আপনি যদি অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে যান, তবে এক্ষেত্রে ও আপনার উচিত হবে না সেই কথাটি আপনার প্রতিবেশি কিংবা অন্য কাউকে বলার। এখানে আমি এই কথাটি কেন বলছি, সেটি হয়তো বা আপনি জীবনের কোনো না কোনো সময়ে লক্ষ্য করেছেন।

কোন সময় আপনি যদি অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে যান, তবে এক্ষেত্রে দেখবেন আপনার প্রতিবেশি কিংবা কাছের মানুষগুলো তখন আপনাকে বেশি পাত্তা দিবেনা। কেননা সেই মুহূর্তে যদি আপনার সঙ্গে মিল দিতে হয়, তবে অবশ্যই আপনাকে অর্থ দিয়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করতে হবে। আর আপনার যদি এমন পরিস্থিতি থাকে যে আপনার কাছে কোন অর্থ নেই এবং ভবিষ্যতে দেবার মতো কোনো পরিস্থিতি তবে তো আপনাকে আর কোন পাত্তাই দিবে না। আপনি যে তার কাছ থেকে ধার নিবেন, সেটি যদি আপনি দিতে না পারেন এই ভেবে তারা আপনাকে ধার দিতে চাইবে না। যেরকম একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে, "সুসময়ে সকলেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়"।

আপনার যখন অনেক পরিমান টাকা ছিল তখন হয়তবা তারা আপনাকে বন্ধু পরিচয় দিয়ে ঠিকই খাবারের বিলটি দিয়ে নিয়েছে। ‌ কিন্তু আপনার যখন বেশি পরিমাণে অর্থ থাকবে না তখন সে আপনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে। কেননা সেই মুহুর্তে আপনার সঙ্গে চলাফেরা করার জন্য অবশ্যই তাকে বিল দিতে হবে। ‌ এক্ষেত্রে আপনার বন্ধু যদি কিপটা হয় তবে তো আর কথাই নেই। সে আপনাকে দেখলে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার সবরকম চেষ্টাই করবে। এখানে আমি আপনাকে আপনার বন্ধু উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি; কিন্তু আপনি যখন সংসার জীবনে চলে যাবেন তখন এক্ষেত্রে আপনার এটি হতে পারে আপনার প্রতিবেশী, যারা আপনাকে আপনার অভাবের সময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে।

উপরে বলা আমার এই কথাটি কিন্তু সর্বক্ষেত্রে সঠিক নাও হতে পারে। যদিও এই বিষয়টি আমাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আর এই জন্যই আমি এই বিষয়টি বললাম। যেখানে আপনার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনের মানসিকতা ভিন্ন হতে পারে। তবে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি লক্ষ্য করে থাকি যে, কেউ যদি অভাবে পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে অনেক মানুষই রয়েছে যারা এটা ভাবে যে তাদেরকে সাহায্য করলে ভবিষ্যতে সেই টাকাটি তারা কিভাবে দেবে। তাই আপনার উচিত হবে যদি আপনি কোন সময় অর্থ সংকটে পড়েন তবে বেশিরভাগ সময় সেই কথাটি আপনজন ব্যতীত বেশি কাউকে ঢোল পিটিয়ে বলতে যাবেন না।

আর আপনি যদি আপনার অভাবের কথা কাউকে ঢোল পিটিয়ে বলতে চান, তবে এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করার বিপরীতে আপনাকে অবহেলার চোখেই বেশি দেখা হবে। এই বিষয়টি হয়তোবা আপনি বাস্তব জীবনেও অনেক লক্ষ্য করেছেন। তাই আপনার যদি বেশি পরিমাণ সম্পদ থাকে এক্ষেত্রে ও সে কথাটি কাউকে যেমন বলা উচিত নয়; তেমনি ভাবে আপনি যদি বেশি পরিমাণে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে যান, সে কথাটি ও বেশি লোককে জানানো উচিত নয়। তাই আপনার কাছে এই মুহূর্তে কত টাকা রয়েছে সেই কথাটি কাউকে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার দরকার নেই।

এখন আপনি যদি বলেন যে আমার কাছে কোটি কোটি টাকা রয়েছে এবং আমি চাইলেই এই বাড়িটি কিনে নিতে পারি, তবে দেখবেন কিছুদিন পর আপনি এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন যখন আর্থিক সংকটে পড়বেন। তখন দেখবেন যে কিছু মানুষ বদলে যায় এনার তো অনেক টাকা এবং তিনি চাইলে তো অনেক কিছু কিনে নিতে পারে; সেই ব্যক্তি হয়তো বা মিথ্যা কথা বলছে যে তার কাছে টাকা নেই। এক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি টাকা কেউ ধার চাইতে আসে এবং আপনি যদি সত্যিই আর্থিক সঙ্কটে পড়ে থাকেন তবে এক্ষেত্রে তারা আপনাকে ভুল বুঝে চলে যাবে। কেননা আপনি তো আগেই তাদেরকে আপনার আর্থিক অবস্থার কথা বলে দিয়েছেন।

৩. নিজের দুর্বলতা এবং কৌশলগুলো কাউকে বলা উচিত নয়

আপনার দুর্বলতা এবং কৌশল গুলো কাউকে বলা উচিত হবে না। একমাত্র যাকে আপনি অন্ধের মত বিশ্বাস করতে পারেন শুধুমাত্র তাকেই আপনার কথাগুলো বলতে পারেন; যেমন ধরুন, আপনার মা-বাবা। অনেক সময় আমরা একটি মানুষকে প্রিয় বন্ধু ভেবে তাকে আমাদের সমস্ত দুর্বলতার দিক এবং আমাদের ভালো দিক বা কৌশলগুলোকে বলে থাকি। সেই প্রিয় বন্ধুটি যে কখন আপনার অপ্রিয় বন্ধু হয়ে যাবে সেটি আপনি টেরও পাবেন না। অন্যদিকে কেউ যদি তার দুর্বলতা এবং কৌশল গুলো আপনার কাছে শেয়ার করে তবে এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে না সেই কথাগুলো অন্য কারো কাছে শেয়ার করার।

আপনি যদি কারো কথা এভাবে করে অন্য কারো কাছে গিয়ে বলেন তবে সে ব্যক্তি ও আপনাকে আর তার কোনো কথা বলতে চাইবে না। শুধু সেই ব্যক্তি নয়, বড় আপনি যাকে সেই কথাটাই বলবেন সে ব্যক্তি ও আপনাকে তার কোন কথাই বলতে চাইবে না। কেননা আপনি যে বন্ধুর কথাটি তার কাছে গিয়ে বলেছেন; এমনও তো হতে পারে যে, তার কথাও আবার অন্য কাউকে গিয়ে বলবেন। আপনি যাকে গিয়ে কারো নামে কথা বলেছেন বা কারও দুর্বলতার কথা বলেছেন, সে ব্যক্তি ও এটা ভেবে আপনাকে কিছু বলবে না যে আপনিও তার কথাটি অন্য কাউকে বলতে পারেন। যেটি একটি সাধারণ ধারণা বিষয়।

আর এভাবে করে সকলেই জেনে যাবে যে, আপনি অন্যের কথা একে অপরকে বলেন। আর এভাবে করে মানুষজন আপনার উপর থেকে বিশ্বাস হারাতে থাকবে। ফলে আপনি সমাজের কাছে হয়ে যাবেন একজন অবিশ্বাসী মানুষ। এছাড়া আপনি যদি মুসলিম ধর্মালম্বী হয়ে থাকেন তবে এই বিষয়টি অবশ্যই জেনে থাকবেন যে, কারো দোষ ত্রুটি অন্য কাউকে বলা হচ্ছে গীবত। আর এটি হচ্ছে অনেক বড় একটি গুনাহ এবং যেটি ক্ষমা পাওয়ার জন্য অবশ্যই সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা নিতে হবে।

এছাড়া এখানে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, আপনার নিজের দুর্বলতা এবং কৌশল কে অন্য কারো কাছে না বলা। এবার আপনি বলতে পারেন যে আমি কেন আমি আমার দুর্বলতার কথা অন্য কাউকে বলবো না?

আপনি যদি আপনার কোনো দুর্বলতাও কথা অন্য কাউকে বলেন, তবে তারা সেই ক্ষেত্রে আপনার সেই দুর্বলতার সুযোগ খুঁজতে থাকবে। আর আপনি যদি কোনো দুর্বলতাও কথা আপনার কোন শত্রুকে বলে দেন তবে সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি আপনার অবশ্যই সেই দুর্বলতা ফাঁদ পাততে থাকবে। সে চাইবে আপনি যেন সেই সমস্যায় পড়েন এবং সেই ব্যক্তি আপনার দুর্বলতায় আঘাত করতে থাকবে। আপনার একেবারেই উচিত হবে না যে আপনি আপনার দুর্বলতার কথা অন্য কাউকে বলা। যাতে করে আপনি সমস্যা থেকে তো বরং উঠবেনই না, এতে করে বরং আরও ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

তবে যদি আপনার কোনো দুর্বলতা কথা কাউকে বলতেই হয়, তবে এক্ষেত্রে আপনার আপনজন ব্যতীত অন্য কাউকে সেটি শেয়ার করা উচিত নয়। মনে করুন, আপনার পরিবারে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোন ঝগড়া লেগেছিল। ঝগড়া হবার এক পর্যায়ে আপনার স্ত্রী আপনাকে কোন রকমের অপ্রাসঙ্গিক কথা বললো এবং আপনি সেই কথাটি বাহিরের অন্য কাউকে গিয়ে বললেন। এবার কিছুদিন পরে নিশ্চয়ই আপনার পরিবারের সেই সমস্যাটা মিটে যাবে, কিন্তু আপনি যাদের কে আপনার স্ত্রীর নামে যে সব কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো তারা তখনো স্মরণ রাখবে এবং আপনার পরিবার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য কিংবা ধারণা করতে পারে।

তাই আপনার ব্যক্তিগত কোনো তথ্য সম্বন্ধে অন্য কাউকে বলা একেবারেই উচিত নয়। এতে বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এছাড়া উচিত হবে না আপনি আপনার কোনো বিশেষ কৌশল কে অন্য কাউকে বলার। কৌশল তো সবসময় কৌশল ই থাকে। আরে সেই কথাটি যদি আপনি জনে জনে প্রকাশ করে বেড়ান তবে এক্ষেত্রে সেটি আর কৌশল থাকলো না।

আপনি যদি আপনার নিজের সমস্যার কথাগুলো অন্য কাউকে বলেন তবে এক্ষেত্রে আপনি সমাধান পাবার বিপরীতে সেটিতে উপহাসের পাত্র ও হতে পারেন। যেখানে আপনার সেই ব্যক্তিগত তথ্যটি কেউ শুনলে তা বিষয়ভেদে উপহাসের কারণ হতে পারে এবং আপনি উপহাসিত হতে পারেন।

৪. লোকসভায় কারো দোষ-ত্রুটি উদঘাটন না করা

ভাবুনতো যখন কেউ আপনাকে মুখের ওপর বলে দিল যে, 'তুই না খুব বেশি কথা বলিস'। অথবা এরকমই কিছু অন্য কথা বলে দিল। এবার আপনি নিশ্চয় এটা ভাবতে শুরু করেন যে, তারও কি একটি খুঁত বের করা যায়। কোন ব্যক্তি যদি কোন ভুল কাজও করে এবং তাকে যদি আপনি সেই কাজটি সম্পর্কে বলেন তবে এক্ষেত্রে ও সেই ব্যক্তি সেটি ভালোভাবে নিবে না। আর আপনি যদি কোন ব্যক্তিকে বলেন যে, "তুই খুব বেশি কথা বলিস"; তবে সেই ব্যক্তি কম কথা বলার পরিবর্তে আরো বেশি কথা বলবে তা সম্পর্কে এই মন্তব্য করার জন্য।

তাই কোন ব্যক্তির সামনে তার সম্বন্ধে কোন নেগেটিভ মন্তব্য করে লাভ হয় না। আর এতে করে শুধু শত্রুর সংখ্যাই বাড়ে। যেখানে আপনি কারো সম্বন্ধে বাজে মন্তব্য করলে সেই ব্যক্তি সেটিকে খন্ডন করার চেষ্টা করবে এবং সে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে তার ক্ষেত্রে এই গুণটি নেই। ধরুন, আপনি যদি কোন ব্যক্তি কে বলেন যে, "তুমি বেশি কথা বল"; তবে সে পরবর্তীতে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে সে অহেতুক কোন কথা বলে না। আর যদি সেটা নাও বলে এক্ষেত্রে সে মনঃক্ষুন্ন হবে।

তাই কাউকে যদি কোনো উপদেশ দিতে হয় তবে এক্ষেত্রে একান্ত তার সঙ্গে কথা বলা দরকার। যদি কয়েকজন মানুষের সামনে তার দোষ-ত্রুটিগুলো তাকে বলা হয় তবে এক্ষেত্রে সে মন খারাপও করতে পারে। আর এতে করে সেই ব্যক্তি আপনার ওপর একটি শত্রুতার মত ভাব তৈরি করতে পারে। তাই কারণ দোষ-ত্রুটির সম্বন্ধে উপদেশ দেবার জন্য তাকে একান্ত দেখে নিয়ে বুঝানো দরকার। এতে করে আপনার ওপর সেই ব্যক্তির রাগ হয়তোবা অনেকটাই কমে যাবে।

আপনি যদি লোকসভায় কারো দোষ ত্রুটি উদঘাটন করতে চান তবে এক্ষেত্রে আপনারও সে ক্ষেত্রে সম্মান থাকবে না। সেই ব্যক্তি যদি আপনার বিরুদ্ধে তখন কোন কথা বলে তখন এক্ষেত্রে আপনার ও সম্মানে আঘাত লাগতে পারে। যাই হোক এটি আমাদের উচিত হবে না যে, কারো দোষ ত্রুটি অন্য কারো সামনে উদ্ঘাটন করে তাকে লজ্জা দেবার। যদি তাকে বলতে হয় তবে একান্তই ডেকে নিয়ে বলাই অনেক শ্রেয়।

তাই অবহেলিতদের অপমান হবার কথা গোপন রাখুন। আপনার একটি কথা একজন ব্যক্তিকে অন্যদের মাঝে হাস্যকর উপাদানে পরিণত করতে পারে। যা সেই ব্যক্তির গর্ববোধে আঘাত করতে পারে। তাই অন্যের ব্যাপারে কথা বলার সময় অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত।

শেষ কথা

আমরা দৈনন্দিন চলার পথে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার মাঝে বিভিন্ন কথাই বলে থাকি। যে সব কথাগুলোর মাঝে কোনটি থাকে প্রয়োজনীয় আবার কোনটি হয়তোবা অপ্রয়োজনীয়। আমাদের উচিত হবে না যে কোন অপ্রয়োজনীয় কথা কাউকে বলার। কোন একটি কথা বলার আগে আমাদের ভেবেচিন্তে বলতে হবে যে, এই কথাটি দ্বারা আমার কি উপকার হবে কিংবা তার কি উপকার হবে। যদি আমরা এই বিষয়টিকে মাথায় রাখতে পারি তবে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে কিংবা কথা বলার মাঝে যে সব কথাগুলো বলে থাকি সেগুলোতে কোন ঝামেলায় পড়ব না।

ঝামেলা বলতে, এতে করে আমরা যেমন অনেক ক্ষেত্রেই সংকটের হাত থেকে উত্তরণ হতে পারব; ঠিক তেমনি ভাবে অন্যের সম্মানও রক্ষা পাবে। তবে এখানে আপনার কথাটি অন্য কাউকে বলে অর্থনৈতিক সংকটের পড়ার বিষয়টি শুধুমাত্র আমরাই নির্ধারণ করতে পারিনা। যেখানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আল্লাহর হাতে। আমরা শুধুমাত্র সচেতন হওয়া মাত্র। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্পদ দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার থেকে সম্পদ কেড়ে নেন। এছাড়া উপরে বলা কথাগুলো আপনার আত্মীয়-স্বজন এবং আপনার বন্ধু-বান্ধব এর ক্ষেত্রে ভিন্ন ও হতে পারে।

তো বন্ধুরা, এই টিউনটি আমার অন্যান্য টিউন এর চাইতে একদমই ব্যতিক্রম। আশা করছি যে, অন্যান্য টিউনের মতোই আজকের এই টিউনটি ও আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আর আপনার কাছে যদি টিউনটি সত্যিই ভালো লেগে থাকে তবে টিউনটিতে একটি জোসস করবেন এবং সেইসঙ্গে আপনার মতামত জানাতে টিউনমেন্ট করবেন। আর এ রকমই ব্যতিক্রমধর্মী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক টিউন দেখার জন্য আমাকে অবশ্যই ফলো করে রাখবেন। কেননা আমি নিয়মিত আপনাদের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নানা টিউন নিয়ে হাজির হই।

আজকের টিউনের সম্পর্কে আলোচনা তবে এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী টিউনে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ‌আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস