শুধু ক্যামেরা কিনে বাসায় নিয়ে এলেই তো আর ছবি তুলতে পারবেন না, তাই না? সাথে অন্তত একটা লেন্স লাগবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো- কি লেন্স কিনবেন তা কি ঠিক করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরও অনেকটা ক্যামেরা সিলেকশনের মতই। আপনি কি কাজ করবেন তার উপর ভিত্তি করেই লেন্সের সাজেশন দিতে হবে।
লেন্স কেনার জন্য আপনাকে আসলে কয়েকটা বিষয় আগে থেকে জেনে নিতে হবে। এছাড়া কিছু বিষয় বিবেচনা করে এরপর লেন্স কিনতে হবে।
বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি। আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে।
০১. ফোকাল লেংথ
লেন্সের অপটিক্যাল সেন্টার এবং ক্যামেরা সেন্সরের মধ্যকার দূরত্বকে ফোকাল লেংথ বলা হয়। ফোকাল লেংথ মিলিমিটারে (mm) পরিমাপ করা হয়। লেন্সের গায়ে mm এককে যে মান দেখা যায়, সেটাই মূলত ফোকাল লেংথ।
বস্তু থেকে আসা আলোকরশ্মি লেন্সের সেন্টারে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাকে বলা হয় Angle of View। ফোকাল লেংথের মান পরিবর্তনের সাথে সাথে এই অ্যাঙ্গেল অব ভিউ পরিবর্তিত হয়। ফোকাল লেংথের মান যত কমতে থাকে, অ্যাঙ্গেল অব ভিউয়ের মান তত বাড়তে থাকে। অ্যাঙ্গেল অব ভিউয়ের মান যত বাড়তে থাকে, তত বেশি এরিয়া কাভার হয়। আবার, কমতে থাকে ফটো কাভারিং এরিয়াও কমতে থাকে।
এই ফোকাল লেংথের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন প্রকার লেন্সের নামকরণ হয়। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন। কোন টাইপ ফটোগ্রাফির জন্য কোন ফোকাল লেংথের প্রয়োজন হয়, তা বুঝতে পারবেন বলে আশাকরি।
০২. অ্যাপারচার (Aperture)
লেন্সের হোল কিংবা বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো লেন্সের ভিতর দিয়ে ক্যামেরা সেন্সরে প্রবেশের দ্বারকেই মূলতে Aperture বলে। অ্যাপারচারকে f number দিয়ে প্রকাশ করা হয়, যা f-stops নামেও পরিচিত। লেন্সের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশের রাস্তায় একটি ডায়াফ্রাম থাকে। f এর মান পরিবর্তনের সাথে সাথে এই ডায়াফ্রাম নির্ধারিত আলোকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়ার পাশাপাশি বাকি আলোর প্রবেশপথ রুদ্ধ করে দেয়।
নিচের ছবিটি খেয়াল করুন। দেখুন, f stop যত ছোট হবে অ্যাপারচার এর পরিমাণ তত বড় হবে যার ফলে লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশের পরিমাণ তত বাড়বে এবং ছবির আউটপুট তত উজ্জ্বলতর হবে।
আবার, f stop ভ্যালু যত বড় হবে অ্যাপারচার এর পরিমাণ তত ছোট হবে যার ফলে লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশের পরিমাণ তত কমবে এবং ছবিতেও আলোর পরিমাণ কমবে।
অর্থাৎ, f-stop এর ভ্যালু কম হলে লো লাইটে তুলনামূলক ভাল আউটপুট পাওয়া যায়। যেমন: একটা 5০mm f2.8 লেন্সের চাইতে 50mm f1.4 লেন্স দিয়ে আলো প্রবেশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় লো লাইট পারফরম্যান্স অপেক্ষাকৃত ভাল।
শুধু তাই না। আমজনতার ধারণা - ক্যামেরা মানেই ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করে ছবি তুলে। f-stop এর ভ্যালু কমতে থাকলে কিন্তু সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করার পরিমাণ বাড়ে। যদিও এর সাথে বেশ কিছু ফ্যাক্টর জড়িত। সেই ফ্যাক্টরগুলো অন্য কোন লেখায় বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।
০৩. প্রাইম লেন্স/জুম লেন্স
প্রাইম লেন্স এবং জুম লেন্সের পার্থক্য মূলত এদের ফোকাল লেংথে। প্রাইম লেন্সের ফোকাল লেংথ ফিক্সড অর্থাৎ এই লেন্সে জুম ইন-আউট করা যায় না। যেমন: 35mm f1.4 লেন্সের ফোকাল লেংথ 35mm-ই। জুম করা যায় না বলে ফটোগ্রাফারকে আগাতে বা পিছাতে হয়।
অন্যদিকে, জুম লেন্সের ফোকাল লেংথ পরিবর্তনশীল অর্থাৎ, এই লেন্সে জুম ইন-আউট করা যায়। যেমন: 70-200mm জুম লেন্সের ফোকাল লেংথ 70mm থেকে 200mm পর্যন্ত পরিবর্তন করা যায়। সাবজেক্টের কাছে যাওয়া ছাড়াই জুম করে সাবজেক্টকে কাছে নিয়ে আসা যায়।
০৪. ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন
ক্যামেরা বডিতে এই ফিচার থাকলে লেন্সে না থাকলেও প্রবলেম নেই। তবে বডিতে এই ফিচার না থাকলে লেন্সে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফিচারের গুরুত্বটা বেশি বুঝা যায় লো লাইটে এক্সপোজার ঠিক রাখতে শাটার স্পিড কমিয়ে ছবি তোলার বেলায়। এ সময় হাত সামান্য কাঁপলেই ছবিটা নষ্ট হয়ে যায়।
Sony লেন্সে OSS, Nikon লেন্সে VR, Fujifilm এ OIS এবং Tamron লেন্সে VC লেখা হিসেবে এই ফিচারটি নিশ্চিত করা হয়।
০৫. ওয়েদার সিলিং
এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফিচার। আপনার লেন্সটিতে যদি ওয়েদার সিলিং না থাকে, তাহলে এর ভিতর ধুলাবালি এবং বৃষ্টির ঢুকে যেতে পারে। ফলে লেন্সটির ক্ষতি হতে পারে। এই ফিচার থাকলে হালকা ডাস্ট কিংবা অল্প বৃষ্টিতে লেন্স সুরক্ষিত থাকে। তবে এই ফিচার থাকলেও লেন্স পানির নিচে ডুবিয়ে কিংবা এর উপর ধুলাবালি মেখে টেস্ট করা অনুচিত।
০৬. Compatibility
যে লেন্সটি কিনবেন তা আপনার ক্যামেরার সেন্সর সাইজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা আগে থেকেই যাচাই করে নেয়া উচিত। আপনার ক্যামেরা যদি ক্রপ সেন্সর বডি হয় তাহলে এতে ক্রপ সেন্সরের জন্য নির্মিত লেন্সগুলোর পাশাপাশি ফুল ফ্রেম বডির লেন্সও ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু ফুল ফ্রেম বডিতে ক্রপ সেন্সরের জন্য নির্মিত লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ছবির কোয়ালিটি কমে যায়।
০৭. বাজেট
দামি ক্যামেরা বডি কিনে সব টাকা শেষ করার চাইতে তুলনামূলক সস্তা বডি কিনে বাকি টাকা লেন্সে বিনিয়োগ করাটাই ভাল। ক্যামেরা বডির চাইতেও লেন্স অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দামি ক্যামেরা বডির সাথে লো কোয়ালিটির লেন্স ব্যবহার করলে ছবির আউটপুট ভাল পাবেন না। তার চেয়ে বরং মোটামুটি মানের বডির সাথে ভাল লেন্সে ব্যবহার করলে অনেক ভাল আউটপুট পাবেন। যেটাকে বলা যায় near perfection।
আশাকরি আমার এ লেখায় আমি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, লেন্স কেনার ক্ষেত্রে আপনার কি কি বিষয় জানা উচিত কিংবা কি কি বিষয় দেখে কেনা উচিত।
আজ এ পর্যন্তই।
ইন শা আল্লাহ আবার আসছি নতুন কোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
আমি সাইফুল্লাহ সাকিব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 5 টিউনারকে ফলো করি।
I am a Mechanical Engineer. Besides my profession, I like writings and do photography.