কিভাবে আপনি সঠিক একটি কম্পিউটার প্রসেসর নির্বাচন করবেন? Core i3, i5 নাকি i7?

টিউন বিভাগ পিসি বিল্ডিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কেনার পূর্বে আমরা প্রসেসর নির্বাচন করা নিয়ে বেশ অনেকটাই সিদ্ধান্তহীনতাই ভুগি। আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না যে আমাদের কাজের জন্য ইন্টেলের কোন প্রসেসর ও কোন জেনারেশন এর প্রসেসর নেয়া সঠিক হবে। প্রসেসর বাছাই করার পূর্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা থাকে তাহলে প্রসেসর বাছাই করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। যেমন – প্রসেসরের জেনারেশন, কোর, থ্রেড, ক্যাশ মেমোরি, ক্লক স্পীড ইত্যাদি। আজকে সে বিষয়গুলো সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। এই আর্টিকেলটিতে আমরা ইন্টেলের (Intel) প্রসেসর গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক…

প্রসেসরের জেনারেশন

প্রসেসর কেনার পূর্বে প্রসেসরের জেনারেশন সম্পর্কে আমাদের জানতে হয়। ইন্টেল প্রায় বছরখানেক পর পরই তাদের প্রসেসরের জেনারেশন আপগ্রেড করে থাকে। যেমন এই আর্টিকেলটি যখন পাবলিশ হচ্ছে সেই সময়ে ইন্টেলের 11th Generation এর প্রসেসর সবচেয়ে উন্নত। মূলত প্রসেসরের জেনারেশন আপগ্রেড করার কারণ হলো প্রসেসরের টেকনোলজিকে উন্নত করা। প্রসেসরের জেনারেশন এর ক্ষেত্রে আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনতে পায় যে অমুক প্রসেসর ১৪ ন্যানোমিটারে তৈরি, তমুক প্রসেসর ২০ ন্যানোমিটারে তৈরি ইত্যাদি। কিন্তু প্রসেসরে এই ন্যানোমিটারের কাজটা আসলে কি তা আমরা অনেকেই সঠিকভাবে জানি না। একটি প্রসেসরের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর থাকে, এই ট্রানজিস্টর গুলোর সাইজ অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এগুলোর সাইজকে ন্যানোমিটারে প্রকাশ করা হয়।

সাধারণত প্রসেসরের জেনারেশন আপগ্রেড হওয়ার সাথে সাথে এর মধ্যে থাকা ট্রানজিস্টর গুলোর সাইজকে আরো ক্ষুদ্র করা হয়। প্রসেসরের ট্রানজিস্টর গুলোর সাইজ যত কম ন্যানোমিটারের হবে সেই প্রসেসরটি ততো ভাল হবে এবং কাজ করার গতি ততো বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে প্রসেসরটি কম ইলেকট্রিক পাওয়ার খরচ করবে ও সুযোগ সুবিধাও বেশি পাওয়া যাবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে প্রসেসরের জেনারেশন যত উন্নত হবে সে প্রসেসরটি ততো ভাল পারফর্মেন্স দিতে পারবে। এজন্য সব সময় চেষ্টা করুন লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসর বাছাই করতে।

NM

প্রসেসর কোর

ইন্টেল তাদের প্রসেসর গুলোকে কোর অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছে যেমন - Intel Core i3, Core i5, Core i7, Core i9 ইত্যাদি। সাধারণত প্রসেসরের এই মডেল নাম্বার গুলো বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রসেসরের কোর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় যেমন – ডুয়েল কোর (২ টি), কোয়াড কোর (৪ টি), হেক্সা কোর (৬ টি) ও অক্টা কোর (৮ টি) ইত্যাদি।

বিঃদ্রঃ প্রসেসর এর মডেল নাম্বার এর সাথে কোর সংখ্যার মিল খোঁজার প্রয়োজন নেই। যেমন - Core i3 প্রসেসরে তিনটি কোর থাকবে এমন ধারণা সঠিক নয়।

processor model

থ্রেড ও হাইপার থ্রেডিং

প্রসেসরের থ্রেড হলো একটি প্রসেসরের কোরের ভার্চুয়াল সংস্করণ। প্রসেসরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফিজিক্যাল কোরগুলোকে ভার্চুয়াল কোর (থ্রেড) - এ বিভক্ত করা হয়। মনে করুন একটি প্রসেসরে চারটি কোর ও চারটি থ্রেড রয়েছে এবং অন্য আর একটি প্রসেসরে চারটি কোর ও আটটি থ্রেড রয়েছে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে দ্বিতীয় প্রসেসরে হাইপার থ্রেডিং ব্যবহার করা হয়েছে। হাইপার থ্রেডিং এমন এক ধরনের টেকনোলজি যা প্রসেসরের কাজ করার গতিকে আরো দ্রুত করতে সাহায্য করে। যেসব প্রসেসরের থ্রেড সংখ্যা কোর সংখ্যা থেকে দ্বিগুণ বা বেশি হয় সেগুলোতে হাইপার থ্রেডিং সুবিধা থাকে। এজন্য প্রসেসর বাছাই করার সময় হাইপার থ্রেডিং সুবিধা যুক্ত প্রসেসর নেয়ার চেষ্টা করুন।

প্রসেসর ক্যাশ মেমোরি

একটি প্রসেসরের ক্যাশ মেমোরি যত বেশি হবে প্রসেসর ততো দ্রুত কাজ করবে। আমরা কম্পিউটারে সাধারণত যে ডাটা গুলো নিয়ে বেশি কাজ করে থাকি সেগুলো ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। যাতে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সেগুলোকে অ্যাক্সেস করতে পারি। এটি প্রসেসরের অত্যন্ত পাওয়ারফুল একটি মেমোরি। এই মেমোরির সাইজ সাধারণত ২ এমবি থেকে ১২ এমবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেসব প্রসেসরের কোর সংখ্যা বেশি সাধারণত সেগুলোর ক্যাশ মেমোরিও বেশি হয়ে থাকে।

প্রসেসর ক্লক স্পীড

প্রসেসরের ক্ষেত্রে এই ক্লক স্পীডও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি প্রসেসরের ক্লক স্পীড যত বেশি হবে সেটির কাজ করার ক্ষমতাও ততো বেশি হবে। প্রসেসরের ক্লক স্পীডকে ৩.০০ গিগাহার্জ, ৩.৫০ গিগাহার্জ, ৪.২০ গিগাহার্জ ইত্যাদি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

আপনার কাজের জন্য কোন প্রসেসরটি নেয়া উচিত?

আপনি কি ধরনের কাজ করবেন তার উপর ভিত্তি করেই আপনাকে প্রসেসর বাছাই করতে হবে। আপনি যদি বেসিক ইউজার হন যেমন - অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ওয়েব ব্রাউজিং ও নরমাল কিছু গেমিং করতে চান তবে Core i3 প্রসেসর নিতে পারেন। আপনার কাজ যদি এর থেকে আরো কিছুটা অ্যাডভান্সড হয় যেমন ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ইত্যাদি তাহলে Core i5 প্রসেসর আপনার জন্য। আর যদি এর থেকে অ্যাডভান্সড ইউজার হন যেমন 4k ভিডিও এডিটিং, প্রফেশনাল গেমিং এর মত কাজ গুলো করতে চান তাহলে Core i7 আপনার জন্য ভাল হবে।

আপনি যদি এর থেকেও ভাল মানের প্রসেসর নিতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে Core i9 প্রসেসর। সব দিক বিবেচনা করে আপনার বাজেটের মধ্যে ভাল একটি প্রসেসর আপনাকে নিতে হবে। তবে আপনি যদি বাজেটের মধ্যে বেসিক কাজ সহ অ্যাডভান্সড কাজগুলো যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, 1080p ভিডিও এডিটিং, 1080p গেমিং ইত্যাদি ভালভাবে করতে চান তাহলে Core i5 প্রসেসর আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল অপশন হতে পারে।

প্রসেসর কেনার পূর্বে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখুন এবং আপনার বাজেটের মধ্যে কোর ও থ্রেড সংখ্যা বেশি নিয়ে লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসর নেয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়া ভাল প্রসেসর নির্বাচন করার জন্য আপনি ইন্টারনেটে রিভিউ দেখতে পারেন। তাহলেই আপনি সঠিক একটি প্রসেসর বাছাই করতে সক্ষম হবেন।

Level 0

আমি রুহুল আমিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই।